ছবিঃ সংগৃহীত
২০২৪ সালে বাংলাদেশ থেকে বিদেশে কর্মী পাঠানোর সংখ্যা উল্লেখযোগ্যভাবে কমেছে, যা আমি প্রবাসী ডিজিটাল অভিবাসন প্ল্যাটফর্মের বার্ষিক প্রতিবেদনে প্রকাশিত হয়েছে। প্রতিবেদন অনুসারে, ২০২৪ সালে মোট ১০,০৯,১৪৬ জন বাংলাদেশি কর্মী বিদেশ গিয়েছেন, যা ২০২৩ সালে ১৩,৯০,৮১১ জনের তুলনায় ২৭.৪ শতাংশ কম।
তবে এই হ্রাসের মাঝেও একটি ইতিবাচক পরিবর্তন লক্ষ্য করা গেছে। ২০২৩ সালের তুলনায় গত বছরে বিএমইটি নিবন্ধনে নারীদের অংশগ্রহণ দ্বিগুণেরও বেশি বেড়েছে। ২০২৩ সালের মতো ২০২৪ সালেও বাংলাদেশি অভিবাসীদের শীর্ষ গন্তব্য ছিল সৌদি আরব, যেখানে মোট অভিবাসনের ৬২.১৭% (প্রায় ৬,২৭,০০০ কর্মী) গিয়েছেন। সৌদি আরবে বিভিন্ন খাতে, বিশেষত অবকাঠামো নির্মাণে দক্ষ ও অদক্ষ শ্রমিকের চাহিদা ছিল।
এদিকে, বাংলাদেশি কর্মীদের দ্বিতীয় বৃহত্তম গন্তব্য মালয়েশিয়ায় অভিবাসন উল্লেখযোগ্যভাবে কমেছে। ২০২৪ সালে মাত্র ৯৩,০০০ কর্মী মালয়েশিয়ায় গিয়েছেন, যা দেশটির নতুন শ্রমনীতির ফলশ্রুতি। ২০২৪ সালের মে মাসের পর থেকে মালয়েশিয়াতে অভিবাসন ব্যাপকভাবে কমে যায়।
অভিবাসন হ্রাসের পেছনে নানা অর্থনৈতিক ও রাজনৈতিক কারণে সৃষ্টি হওয়া অস্থিরতা উল্লেখযোগ্য ভূমিকা রেখেছে। ২০২৪ সালে দেশব্যাপী কারিগরি প্রশিক্ষণ কেন্দ্রে ভর্তি হওয়া শিক্ষার্থীর সংখ্যা কমে দাঁড়িয়েছে ১,১২,১৬৬-এ, যা ২০২৩ সালে ছিল ২,৩৬,২৭০। এই পতন বিশ্বব্যাপী শ্রম বাজারে কর্মীর চাহিদা হ্রাসের সাথে সম্পর্কিত।
তবে আমি প্রবাসীর ২০২৪ সালের প্রতিবেদন অনুযায়ী একটি গুরুত্বপূর্ণ পরিবর্তন হচ্ছে নারীদের বিএমইটি নিবন্ধনের সংখ্যা বৃদ্ধি। ২০২৩ সালে মোট বিএমইটি নিবন্ধনে নারী অভিবাসীদের হার ছিল ২.৭৮%, যা ২০২৪ সালে বেড়ে ৪.৭৯% হয়েছে।
আমি প্রবাসীর প্রতিষ্ঠাতা ও ব্যবস্থাপনা পরিচালক তারিক ই. হক বলেন, "নারীদের বিএমইটি নিবন্ধনের সংখ্যা বৃদ্ধি প্রমাণ করে যে, বাংলাদেশের নারীরা আন্তর্জাতিক ক্যারিয়ার গড়তে আরও আত্মবিশ্বাসী হয়ে উঠছেন। এটি শ্রম বাজারে নারী-পুরুষ বৈষম্য দূরীকরণের লক্ষ্যে একটি ইতিবাচক পরিবর্তন। সঠিক প্রশিক্ষণ ও সহায়তার মাধ্যমে আমরা বিদেশে আরও দক্ষ কর্মী পাঠাতে পারবো।"
২০২৪ সালে বিএমইটি নিবন্ধনের মোট সংখ্যা ছিল ৭,৯৮,২৭৬, যা ২০২৩ সালের ৬,৬০,০৮৮টি নিবন্ধনকে ছাড়িয়ে গেছে। যদিও বাংলাদেশি পুরুষরা এখনও বৈদেশিক শ্রমবাজারে আধিপত্য বজায় রেখেছেন, নারীদের আগ্রহ বৃদ্ধি নতুন সম্ভাবনার দ্বার উন্মোচন করেছে। প্রতিবেদনটিতে নারীদের পেশা নির্বাচনের পরিবর্তনও তুলে ধরা হয়েছে, যেখানে এখন নারীরা প্রযুক্তি সংশ্লিষ্ট পেশার দিকে ঝুঁকছেন। কম্পিউটার অপারেশন, গ্রাফিক ডিজাইন এবং অটোক্যাড ড্রাফটিং-এর মতো কোর্সে নারীদের অংশগ্রহণ বেড়েছে। গত বছর সাতশরও বেশি নারী 'দক্ষ কর্মী' হিসেবে বিদেশে গেছেন, যা উচ্চ বেতনের চাকরির জন্য নারীদের দক্ষতা অর্জনের ইঙ্গিত দেয়।
সবমিলিয়ে, ২০২৪ সালে অভিবাসন সংখ্যা হ্রাস পেলেও বিএমইটি নিবন্ধন বৃদ্ধি এবং নারীদের অংশগ্রহণের বৃদ্ধির ফলে বাংলাদেশের শ্রমশক্তিতে ইতিবাচক পরিবর্তন দেখা যাচ্ছে। বিশেষজ্ঞদের মতে, উন্নত প্রশিক্ষণ ব্যবস্থা, লিঙ্গ বৈষম্যহীন নিয়োগ নীতি এবং উন্নত বৈদেশিক শ্রম চুক্তি বাংলাদেশের এই খাতকে পুনরুজ্জীবিত করতে সহায়ক হবে এবং ভবিষ্যতে দক্ষ জনশক্তির রপ্তানি মাধ্যমে রেমিট্যান্স প্রবাহকে টেকসই করতে সাহায্য করবে।
মারিয়া