ঢাকা, বাংলাদেশ   বুধবার ০৫ ফেব্রুয়ারি ২০২৫, ২২ মাঘ ১৪৩১

শিক্ষার্থীদের পড়ার টেবিলে ফিরে যাওয়ার অনুরোধ

গুচ্ছ ভর্তি পরীক্ষায় যুক্ত হতে পারে ২০ বিশ্ববিদ্যালয়

স্টাফ রিপোর্টার

প্রকাশিত: ২৩:১৫, ৪ ফেব্রুয়ারি ২০২৫

গুচ্ছ ভর্তি পরীক্ষায় যুক্ত হতে পারে ২০ বিশ্ববিদ্যালয়

গুচ্ছ ভর্তি পরীক্ষায় যুক্ত হতে পারে ২০ বিশ্ববিদ্যালয়

বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনের (ইউজিসি) ফটক বন্ধ। কাচের দেওয়ালের ওপাশে ইউজিসির কর্মকর্তা-কর্মচারীরা। এপাশে বিক্ষুব্ধ শিক্ষার্থী। এর মধ্যেই শিক্ষার্থীদের সঙ্গে ইউজিসির কর্মচারীদের দুর্ব্যবহার। তাতে শিক্ষার্থীরা আরও উত্তপ্ত। তারা জোরালো গলায় বলছিলেন, আমাদের সঙ্গে এমন আচরণ করবেন না। দুর্ব্যবহার করলে ইউজিসির একটি ইটও অবশিষ্ট থাকবে না।

তখনো ফটক ধরে বল প্রয়োগ করতে থাকেন আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীরা। বচসার একপর্যায়ে শিক্ষার্থীদের সামনে আসেন ইউজিসি সদস্য অধ্যাপক তানজীমউদ্দিন খান। তার সঙ্গে   যোগ দেন গুচ্ছ পরীক্ষা কমিটির আহ্বায়ক ও মাওলানা ভাসানী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক আনোয়ারুল আজীম আখন্দ। এ সময় তারা ছাত্রদের আশ্বস্ত করার চেষ্টা করেন। তবে শিক্ষার্থীরা ছিলেন অনড়।
শনিবার ২৪ বিশ্ববিদ্যালয়ের সমন্বয়ে গুচ্ছ পদ্ধতির ভর্তি পরীক্ষা বহাল রাখার দাবিতে দুপুর ১২টা থেকে ইউজিসি ভবনের প্রধান ফটকের সামনে অবস্থান নেন ভর্তিচ্ছু শিক্ষার্থীরা। ‘রেভ্যুলেশন ফর জিএসটি’ ব্যানারে তারা এ কর্মসূচি পালন করছেন। শিক্ষার্থীরা জানান, ২৪ বিশ^বিদ্যালয়ের উপাচার্য সভায় বসেছেন জানতে পেরেই তারা আন্দোলনে এসেছেন।

এ সময় শিক্ষার্থীরা জানান, আমরা আপনাদের (উপাচার্যদের) আশ্বাসে পড়ার টেবিলে ফিরে গিয়েছিলাম। কিন্তু এর পরও একাধিক বিশ্ববিদ্যালয় পৃথক আকারে ভর্তি বিজ্ঞপ্তি জারি করছে। তাহলে আশ্বাসের ফল কি হলো? আমরা আপনাদের মুখে ভালো ভালো কথা শুনতে চাই না। আমরা চাই সিদ্ধান্ত।
তখন ইউজিসির সদস্য ও অধ্যাপক আনোয়ারুল আজীম আখন্দ জানান, ২০টার নিচে গুচ্ছ ভর্তি পরীক্ষা হবে না। আমরা এটুকু আশ^াস দিচ্ছি। তখন শিক্ষার্থীরা বলেন, আপনারা আগেও ২২ টি ভার্সিটির কথা বলেছিলেন। এখন ২০টার কথা বলছেন আদৌ কিছু হবে কি না সেটা আমরা বুঝছি না।
শিক্ষার্থীরা জানান, টাকার অভাবে আমরা ভর্তি আবেদন করতে পারছি না। গুচ্ছ ভর্তি পরীক্ষা হলে ১৫০০ টাকা লাগে। আর না হলে টাকা লাগবে আবেদনে ৫০ হাজার। কিভাবে আমরা আবেদন করব। এ সময় ভর্তি কমিটির আহবায়কের সঙ্গে এক শিক্ষার্থীর বচসা হয়। তখন আহবায়ক এক শিক্ষার্থীকে ধমক দেন। এবং ওই শিক্ষার্থী কোন কলেজের তা জানতে চান।

পরে শিক্ষার্থী জানান, তিনি নটরডেমের শিক্ষার্থী। তখন তিনি জানান যে, তিনিও নটর ডেমের। এরপর বারবার শিক্ষার্থীরা সিদ্ধান্ত জানতে চান। তখন ইউজিসি ও উপাচার্যরা এখান থেকে তাদেরকে চলে যেতে অনুরোধ করেন। তখন ইউজিসি সদস্য তানজীমউদ্দিন বলেন, এই ঘটনা নিয়ে অনেক ষড়যন্ত্র হচ্ছে। কোন ছাত্রলীগ বা যুবলীগ তোমাদের ওপর হামলা করলে কি হবে? শিক্ষার্থীরা কোনো যুক্তিই মানতে নারাজ।
এসময় শিক্ষার্থীরা জানান, জগন্নাথ ভার্সিটি ভর্তি কার্যক্রম শেষ করে ফেলেছে। আমাদের বক্তব্য পরিষ্কার/ক্লিয়ার। আমরা গুচ্ছ চাই। তখন উপাচার্যরা বলেন তোমরা পড়ালেখায় মন দাও। রাস্তায় থেকে তোমরা তোমাদের উজ্জ্বল ভবিষ্যৎ নষ্ট করো না। বাচ্চাদের বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ে ছোটাছুটি করার কষ্ট আমরা বুঝি। শিক্ষা উপদেষ্টা, মন্ত্রণালয় ও ইউজিসি নানাভাবে উপাচার্যদের চাপ দিয়েছে। এরপরও কিছু বিশ^বিদ্যালয় গুচ্ছ থেকে বের হওয়ার পাঁয়তারা করছে।
তবে আন্দোলনকারীরা জানান, শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ^বিদ্যালয়, খুলনা বিশ^বিদ্যালয় ও হাজী দানেশ বিশ^বিদ্যালয় ও কুমিল্ল বিশ^বিদ্যালয়কে কোনভাবেই গুচ্ছের বাইরে রাখা যাবে না। এরই মধ্যে জগন্নাথ বিশ^বিদ্যালয় একটি ভর্তি পরীক্ষা সম্পন্ন করেছে। যেটি হলো চারুকলা। গুচ্ছের সময়ও এমনটাই হত। তবে এখনো বিশ^বিদ্যালয়টির গুচ্ছে যুক্ত হওয়ার সুযোগ রয়েছে।
এদিকে মঙ্গলবার ২৪ বিশ^বিদ্যালয়ের ভিসিরা বৈঠকে বসেন। সেখান থেকে প্রাথমিকভাবে সিদ্ধান্ত আসে অন্তত ২০টি বিশ^বিদ্যালয় গুচ্ছ ভর্তি পরীক্ষায় যুক্ত থাকবে। খুব শীঘ্র গুচ্ছ ভর্তির বিজ্ঞপ্তিও প্রকাশ করা হবে।
গুচ্ছ ভর্তি পরীক্ষা কমিটির আহ্বায়ক মাওলানা ভাসানী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. আনোয়ারুল আজীম আখন্দ এ তথ্য জানালেও এখনই তালিকা প্রকাশ করেননি। যদিও একপর্যায়ে ফটকের সামনে অবরোধ করা শিক্ষার্থীরা ফিরে গেছেন। বৈঠক শেষে গুচ্ছ ভর্তি পরীক্ষা কমিটির আহ্বায়ক অধ্যাপক আনোয়ারুল আজীম আখন্দ বলেন, শিক্ষার্থীদের দাবির সঙ্গে আমরাও একমত।

সে লক্ষ্যে কাজ করছি। কয়েকটি বিশ্ববিদ্যালয় বের হয়ে গেলেও অন্তত ২০টি বিশ্ববিদ্যালয় গুচ্ছ পদ্ধতির ভর্তি পরীক্ষায় অংশ নেবে। আজকের সভায় এটি সিদ্ধান্ত হয়েছে।
তিনি বলেন, পরীক্ষার দিন-তারিখ ঠিক করা হয়েছে। খুব শীঘ্র আরেকটি সভায় গুচ্ছ পদ্ধতির ভর্তি পরীক্ষার বিজ্ঞাপ্তি প্রকাশ নিয়ে সিদ্ধান্ত হবে। আশা করছি, পরবর্তী গুচ্ছ অত্যন্ত সফলতার সঙ্গে আমরা আয়োজন করতে পারবো।
গুচ্ছ ভর্তি কমিটির আহ্বায়কের ঘোষণার পর আন্দোলনরত শিক্ষার্থী আবদুল মালেক সিয়াম বলেন, শিক্ষকরা আমাদের আশ্বস্ত করেছেন। তারা যেকোনো মূল্যে অন্তত ২০টি বিশ্ববিদ্যালয় নিয়ে গুচ্ছ ভর্তি পরীক্ষা নেওয়া হবে বলে জানিয়েছেন। তাদের আশ্বাসে আজকের মতো অবরোধ তুলে নিয়েছি।
এদিকে, বৈঠকের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী- আগামী ২৫ এপ্রিল ‘সি’ ইউনিটের (ব্যবসায় শিক্ষা শাখা) ভর্তি পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হবে। ২ মে ‘বি’ ইউনিট (মানবিক) এবং ৯ মে ‘এ’ ইউনিটের (বিজ্ঞান) ভর্তি পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হবে। ভর্তি বিজ্ঞপ্তি, আবেদন ফিসহ অন্যান্য বিষয় পরে সভা করে সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে এবং তা গুচ্ছ ভর্তির অফিসিয়াল ওয়েবসাইট ও গণমাধ্যমে শীঘ্র প্রকাশ করা হবে।

×