ঢাকা, বাংলাদেশ   বুধবার ০৫ ফেব্রুয়ারি ২০২৫, ২২ মাঘ ১৪৩১

হঠাৎ করেই রাজনীতির মাঠে আলোচনায় আওয়ামী লীগ!

প্রকাশিত: ২৩:১২, ৪ ফেব্রুয়ারি ২০২৫; আপডেট: ২৩:৩১, ৪ ফেব্রুয়ারি ২০২৫

হঠাৎ করেই রাজনীতির মাঠে আলোচনায় আওয়ামী লীগ!

ছবি : সংগৃহীত

সম্প্রতি নাগরিক টিভির সাথে অনলাইনে যুক্ত হন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক রাশেদ আলম। সমসাময়িক রাজনৈতিক প্রসঙ্গ, আওয়ামী লীগের মাঠে ফেরা, জুলাই অভূত্থানে শহীদ ও আহতদের বিচার, জাতীয় ঐক্য এবং নির্বাচন নিয়ে রাজনৈতিক দলগুলোর তৎপরতাসহ নানা বিষয়ে কথা বলেন তিনি।

তার কাছে শুরুতেই জানতে চাওয়া হয়, আওয়ামী লীগের নানান ধরনের তৎপরতা আমরা দেখতে পাচ্ছি। আন্দোলনের মুখে নানান লোকের হতাহতের পাশাপাশি গত ১৫ বছর ধরে গুম, খুন রয়েছে। অনিয়ম-দুর্নীতি রয়েছে। কিন্তু সেগুলো নিয়ে খুব বেশি অনুশোচনা আমরা তাদের চোখে দেখতে পাচ্ছি না বা তাদের কন্ঠে এ বিষয়টাকে আপনি কি করে দেখছেন?

জবাবে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক রাশেদ আলম বলেন, হ্যাঁ, আপনি যথার্থই বলেছেন। গত ১৬-১৭ বছরে আমরা যে রাজনীতির নামে যে অপরাজনীতি আমরা দেখেছি, আমরা আওয়ামী লীগকে যে ফ্যাসিস্ট কাঠামো দেশে তৈরি করতে দেখেছি, আমরা যে ইলেকশন এবং ভোটিং যে রাজনীতি বলে কিছু আছে বাংলাদেশের গণতন্ত্রের, আমরা জানি, গণতন্ত্রের একটি পূর্ব শর্ত হচ্ছে ইলেকশন ব্যবস্থা। সেই ইলেকশন ব্যবস্থার ডিস্ট্রাকশন আমরা দেখেছি। হিউম্যান রাইটস গণতন্ত্রের আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ উপাদান, সেখানে মানুষকে মানে অবর্ণনীয়, অসংখ্য মানুষকে গুম, হয়রানি এবং হত্যা এবং সর্বশেষ জুলাই এবং আগস্টে যে গণহত্যা, যেটা আমি বলি যে পাকিস্তান রাষ্ট্র যে ১৯৭১ এর পরে সবচেয়ে বড় গণহত্যা সংঘটিত হয়েছে এই ২০২৪। এই সবগুলোর দায়ভার কিন্তু আওয়ামী লীগের উপরেই বর্তায়। এবং আওয়ামী লীগ একটা রাজনৈতিক দল যার একটা গৌরব উজ্জ্বল ইতিহাস রয়েছে, সেই ইতিহাস পুরোপুরি ম্লান আজকে এবং এই রাজনৈতিক দলের আজকে যে অ্যাক্টিভিটিস গুলো, তারা আবারো মাঠে নামার যে পায়তারা বা আবারো মাঠে নামছে এটা মূলত হচ্ছে যে, আমাদের এই অন্তর্বর্তীকালীন সরকার এই বিপ্লব পরবর্তী পদক্ষেপগুলো দেরি করার কারণে এবং  যারা এই কর্মকাণ্ড করেছে এবং বিশেষ করে গণহত্যা এবং ইলেকশন থেকে শুরু করে, ম্যানিপুলেশন থেকে শুরু করে গণতান্ত্রিক ব্যবস্থাকে হুমকিতে ফেলার কারণে তারা যে দোষী, এই দোষ এবং এই পেনাল্টি তাদেরকে বিচারে আওতায় না আনার কারণে মনে হচ্ছে যে, এই অপরাজনীতি এখন আবার শুরু করেছে আওয়ামী লীগ।

কিন্তু বিচারের আওতায় কেন আনা হচ্ছে না, এই সরকার তো বলেছিল যে সবকিছুর বিচার করা হবে কিন্তু সেটা খুব একটা কেন চোখে পড়ছে না আমাদের বা আপনাদের?

জবাবে তিনি বলেন, এখানে আসলে বিপ্লব, গণঅভ্যুত্থান পরবর্তীতে যে সরকারটি সেটার রূপরেখা বা সেটা কি, এটাকে আসলে গণঅভ্যুথান পরবর্তীতে একটা বিপ্লবী সরকারের যে আশঙ্কা আমাদের মাঝখানে ছিল, সে জায়গাতে একটা বিশাল জাতীয় ঐক্যের দরকার ছিল আমার কাছে মনে হয়। কিন্তু বিপ্লব পরবর্তী সময়ে বিপ্লবের পূর্বের যে জাতীয় ঐক্যের মাধ্যমে আমরা এই ফ্যাসিস্ট সরকারকে এখানে হটাতে পেরেছি, সেই পরবর্তী সময়ে এই যে জাতীয় ঐক্যটি বিশেষ করে ছাত্র জনতার এবং এই আন্দোলনের মাধ্যমে যে সরকারটি পরিবর্তন হয়েছে এবং যে ফ্যাসিস্ট সরকারকে আমরা বিদায় করতে পেরেছি, সেখানে রাজনৈতিক দলগুলোর যে অখন্ড সমর্থন, বিশেষ করে গত ১৭ বছরে যে অপরাজনীতিগুলো হয়েছে সেটার ব্যাপারে যে জাতীয় ঐক্য এবং জাতীয় ঐক্যমতের অভাবের কারণে আমার কাছে মনে হচ্ছে যে এই সুযোগটি তৈরি হয়েছে আওয়ামী লীগের জন্য। তারা দেশের বাহিরে বসে এবং দেশের ভিতরে বসে যে বিশৃঙ্খলা এবং অস্থিতিকর পরিবেশ তৈরি করার পায়তারা চালাচ্ছে। দেশের বাইরে বসে মিসইনফরমেশন ডিসইনফরমেশন এবং দেশের বিরুদ্ধে যে প্রোপাগান্ডা বিশেষ করে সামাজিক মিডিয়াতে, ইউটিউবে আমরা দেখেছি। তারপর হচ্ছে এক্স, টুইটার এবং ফেসবুকে তারা এই অপরাজনীতি এখনো চালিয়ে যাচ্ছে। কারণ আমরা এটা মূলত বলতে পারি যে, তাদের যে বিচারের আওতায় না আনতে পারা এবং বিচার ব্যবস্থায় যারা দোষী, বিশেষ করে গত ১৭ বছরের যে নির্যাতন আমরা দেখেছি, সেটার পরিপূর্ণ বিচার না হওয়ার কারণে আমার কাছে মনে হয় যে এটি সংঘটিত হচ্ছে বর্তমানে।

রাজনীতিবিদরা এমনকি বিএনপির অনেকেই মনে করেন আওয়ামী লীগকে নিষিদ্ধ করা উচিত নয়, জনগণই তাদের ভাগ্য নির্ধারণ করে দেবে ব্যালট পেপারের মাধ্যমে নির্বাচনে, তাহলে তাদের বিচার কিভাবে হবে? রাজনীতির মাঠে আওয়ামী লীগের ফিরে আসাটা কতটা সম্ভব বলে আপনি মনে করেন?

এর জবাবে তিনি বলেন, প্রথমত আমাদেরকে জিজ্ঞেস করতে হবে যে, আওয়ামী লীগ কি গণতান্ত্রিক ব্যবস্থায় বিশ্বাস করে কিনা। আওয়ামী লীগ কি জনগণের ভোটের এই ব্যবস্থাতে বিশ্বাস করে কিনা। আওয়ামী লীগ কি ফ্রি এন্ড ফেয়ার ইলেকশন এই কাঠামোতে বিশ্বাস করে কিনা। আওয়ামী লীগ কি বহুদলীয় গণতান্ত্রিক যে ঐতিহ্য, যে কালচার এগুলোতে বিশ্বাস করে কিনা। এই জিনিসগুলোকে আসলে আমাদের বর্তমানে বিরোধীদের দল যারা এই ধরনের কথাগুলো বলছে, তাদেরকে এই প্রশ্নগুলোর উত্তর দিতে হবে। আসলে আওয়ামী লীগ কি এই রাজনৈতিক যে কর্মকাণ্ড, যে গণতান্ত্রিক কালচার, এই কালচার গুলোতে আওয়ামী লীগ কতটুকু দায়িত্ব পালন করেছে। গত ১৭ বছর আমরা দেখেছি যে, তিন-তিনটি লিডিং ইলেকশনে মানুষের যে ভোটাধিকার, আজকে যে তরুণ প্রজন্ম, যারা প্রায় গত ১৫ বছর ধরে ভোট দিতে পারেন না এবং ইভেন আওয়ামী লীগের. যারা আওয়ামী লীগ করে. তারাও তো গত ১৬-১৭ বছর তিনটি ইলেকশনে কোন ভোট দেয় নাই। সো ভোটারলেস ইলেকশন কন্ডাক্ট করা এবং যেটা গণতন্ত্রের জন্য সবচেয়ে বড় হুমকিস্বরূপ, সেই গণতন্ত্রেই যে পার্টি বিশ্বাস করে না, তার রাজনৈতিক, গণতান্ত্রিক রাজনীতি করার অধিকারের প্রশ্ন আসবে কেন এটা আমার কাছে পুরোপুরিভাবে অবান্তর মনে হয়।

রাজনৈতিক পুনর্বাসন বা আবারো পুনরায় রাজনীতিতে ফিরে আসার জন্য আওয়ামী লীগের এখন কি করা উচিত বলে মনে করেন? কারণ তাদের একটা বড় সমর্থক গ্রুপ রয়েছে দেশে, তারা কি মানুষের আস্থা ফিরে পাবে বা সেই প্রক্রিয়াটা কি ধরনের হতে পারে বলে মনে করেন?

জবাবে রাশেদ আলম বলেন, দেখুন সবচেয়ে বড় কথা হচ্ছে যে, এই যে গণহত্যাটা, গত জুলাই মাসে সংঘটিত হয়েছে, এটার নজির আমরা পৃথিবীর ইতিহাসে যদি ইজিপ্টের দিকে দেখতে পাই। যখন মিশরের সিসি ক্ষমতায় আসে, মুরসী সমর্থকদের উপর এভাবে হেলিকপ্টার দিয়ে গুলি করা হয়েছে, স্নাইপার দিয়ে গুলি করা হয়েছে মানে অসংখ্য মানুষকে হত্যা করা হয়েছে। আমাদের এখানেও প্রায় ৩০০০ মত মানুষ নিহত হয়েছে, শহীদ হয়েছেন এবং প্রায় ৩৫ হাজারেরও বেশি আহত হয়েছেন। এই বিশাল সংখ্যক মানুষকে হত্যা করার পরও যে একটি রাজনৈতিক দল তাদের কোন প্রায়শ্চিত্ব বা তাদের কোন দায় নেওয়ার কোন কালচার আমি দেখতে পাইনি। তারা গত ১৭ বছরের যে দুর্নীতি বা দেশ থেকে টাকা পাচার, এগুলোর তো কোন তারা এখন পর্যন্ত তাদের মধ্যে আমি কোন রিপেন্টেন্স বা অনুশোচনা দেখতে পাইনি। কোন দল থেকে কোন দায় নিয়ে কোন বক্তব্য আমরা দেখতে পাই না। এটার মূল যদি তারা এই জিনিসগুলো যদি তাদেরকে দায়বদ্ধ করা না যায়, তাহলে পুনরায় তারা একই অপরাজনীতি বাংলাদেশে আবারো শুরু করতে পারবে। তো আমার কাছে মনে হয়, এই অপরাজনীতি রুখে যাওয়ার জন্য আমাদের ইস্পাত কঠিন জাতীয় ঐক্য খুব দরকার। আমাদের এই ছাত্র জনতার যে আত্মত্যাগ, এই আত্মত্যাগকে কোনভাবে ম্লান হতে দেওয়া যাবে না। যারা শহীদ হয়েছেন, যারা আহত হয়েছেন, এই পরিবারগুলোর সাথে বিশ্বাসঘাতকতা করা হবে। যদি আমরা এই অপকর্ম এবং এই হত্যার রাজনীতি, যেটা আমরা পৃথিবীর ইতিহাসে প্যালেস্টাইনে ঘটছে, ঘটেছে। আমরা দেখেছি কাশ্মীরে ঘটেছে, যেটা ইজিপ্টে ঘটেছে, এই ধরনের গণহত্যার চিত্র বাংলাদেশে আমরা, ৭১ এর পরে এই প্রথম ২৪ এ দেখলাম। এত বড় গণহত্যার পরেও যদি তাদেরকে আমরা দায়বদ্ধ করতে না পারি, তাহলে ভবিষ্যতেও আমরা একই জিনিসের পুনরাবৃত্তি দেখতে পারি। সো এই বিচারহীনতা সংস্কৃতি থেকে আমাদের বের হয়ে আসতে পারবে। আমি বলি নাই যে, আওয়ামী লীগের সকলেই এই অপকর্মের জন্য দায়ী কিন্তু যারা মূল হোতা এবং যারা নির্দেশদাতা এবং যারা আমরা দেখেছি যে পুলিশ বাহিনীর সাথে সাথে রাস্তায় নেমে জনগণের উপর গুলি করেছে, প্রকাশ্যে অস্ত্র হাতে নিয়ে জনগণকে হত্যা করেছে, তাদেরকে যদি আমরা বিচারের আওতায় আনতে না পারি এবং যারা এই রাজনীতির দোসর ছিল, তাদেরকে যদি এটলিস্ট আমরা বিচারের আওতায় না আনতে পারি, তাহলে একই কালচারের পুনরাবৃত্তি বাংলাদেশ, বাংলার জনগণকে আবারও দেখতে হতে পারে। সো আমার কাছে মনে হয়, এই ব্যাপারে কোন আপোষ নয় এবং আমি একজন রাজনৈতিক বিশ্লেষক হিসেবে নয় বরং একজন সাধারণ জনগণ হিসেবে বলতে পারি, এটা আমাদের শহীদের প্রতি এক ধরনের অবমাননা হবে যদি আমরা এটা না করতে পারি।

এটা করার জন্য জাতীয় ঐক্যের প্রতি আপনি গুরুত্ব দিয়েছেন কিন্তু শেখ হাসিনার পতনের ছয় মাস পার হতে চলল, এরপরে সে যে জাতীয় ঐক্য কোনভাবে আর গঠিত হবে বলে মনে করেন? কারণ এরই মধ্যে বিভিন্ন রাজনৈতিক দল তাদের নিজেদের এজেন্ডা গুলো সামনে আনছে, বিএনপি নির্বাচন চাইছে, দ্রুততম সময়ে আওয়ামী লীগ ফিরে আসার চেষ্টা করছে, আর বর্তমান সরকার নানামুখী চ্যালেঞ্জ মোকাবেলা করছে। শুধু রাজনীতির ক্ষেত্রে নয়, আমরা জানি যে ঢাকা শহরে প্রতিদিন কোথাও না কোথাও কেউ না কেউ, কোনো না কোন ধরনের ইস্যু নিয়ে তারা আন্দোলন করছে, নানা ধরনের দাবি-দাওয়া তারা তুলছে, কিভাবে সম্ভব জাতীয় ঐক্য তৈরি করা, যেটা আসলে খুব দরকার ছিল বলছেন আপনি?

এর জবাবে তিনি বলেন, এখানে আপনাদের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রয়েছে। মিডিয়া এবং পাবলিক ইন্টেলেকচুয়াল এবং এই সাংস্কৃতিক কর্মী, যারা এই বিষয়গুলো বারবার তুলে ধরবেন। আমাদের এই জুলাই আগস্ট পরবর্তী সময়, মাত্র পাঁচ মাস বা ছয় মাস অতিক্রান্ত হয় নাই কিন্তু এখনই আমরা এই বিপ্লবের যে রক্তপাত এবং বিপ্লবের যে শহীদ এবং আহত পরিবারগুলোকে ভুলতে বসেছি এবং তাদের যে আত্মত্যাগকে ভুলতে বসেছি।

এবং আহত যারা, সুচিকিৎসার জন্য তারা রাজপথে আন্দোলন করছেন, তারা যমুনা ঘেরাও করছেন, এগুলো বা কেন হচ্ছে? যারা সবচাইতে বেশি প্রায়োরিটি পাওয়ার কথা, এই আন্দোলনে যারা আহত হয়েছেন, রক্ত ঝরিয়েছেন, অনেকে পঙ্গু হয়েছেন, তারা কেন সুচিকিৎসা পাচ্ছে না? তাদেরকে কেন রাজপথে আন্দোলন করতে হয়?

জবাবে তিনি বলেন, এটাই, অন্তবর্তীকালীন সরকারের আসলে প্রায়োরিটি ঠিক করা উচিত। তারা সবগুলো কাজ করতে পারবে না, আমারও কাছে মনে হয়। কিন্তু যেটা একদমই নয় এবং সেই কাজগুলো তারা অবশ্যই করতে হবে, তা না হলে অন্তর্বতী সরকারের যে ক্ষমতায় আসা যেখানে নিরঙ্কুশ জনসমর্থন ছিল, এই অন্তর্বর্তীকালীন সরকার, বিপ্লব পরবর্তী একটা গণঅভ্যুত্থানের যে সরকার, এটার প্রতি একটা বিপুল মানুষের কিন্তু আস্থা ছিল। সো প্রথম একটা ম্যান্ডেট ছিল, তাদের এই হত্যাকারীদের বিচার এবং যারা আহত হয়েছে, তাদেরকে সুচিকিৎসার ব্যবস্থা করা, আমার কাছে মনে হয় প্রায়োরিটি বেসিসে এবং পরবর্তী ধাপে আসবে রাজনৈতিক সংস্কার এবং ইলেকশন। সো প্রায়োরিটি বেসিসে এই কাজগুলো করা দরকার। আমাদের কাছে মনে হয়, যে রুটিন ওয়ার্ক বা ডেভেলপমেন্ট ওয়ার্ক গুলো এখনই প্রায়োরিটি না দিয়ে বরং এই কাজগুলো করা অত্যন্ত দরকার জাতীয় ঐক্য তৈরি করার জন্য। আর জাতীয় ঐক্য তৈরি করার জন্য আমি যেটা বললাম, মিডিয়া এবং এই যে আমাদের যে জুলাই স্মৃতি জাদুঘর হচ্ছে বিভিন্ন ইউনিভার্সিটিতে, বিভিন্ন পাবলিক প্লেসগুলোতে, এগুলো বেশি বেশি প্রচার করা দরকার। এই শহীদদেরকে আমরা কোনভাবে ভুলা যাবে না। এই স্মৃতিগুলো যাতে পুনরায় লাইভ হয়ে উঠে, পুনরায় জীবন্ত হয়ে ওঠে, সেই কাজগুলো আমার কাছে মনে হয় মিডিয়া করে তুলবে এবং তাহলেই রাজনৈতিক দলগুলো তাদের যেই বিভেদ বা ভোটের রাজনীতি বা ভবিষ্যতে ক্ষমতায় আসার যে লোভ এবং ব্যালট বক্সে তাদের যে প্রচুর মানুষ তাদের পক্ষে ভোট দেবে, এই আশা-আকাঙ্ক্ষা বাদ দিয়ে বা রাজনৈতিক লোভ-ক্ষোভ বাদ দিয়ে এই যে বিপ্লবকে সম্মুন্নত করার যে উপলব্ধি তাদের মধ্যে তৈরি হবে, আমার কাছে মনে তাহলেই আমরা এই ঐক্যকে তৈরি করতে পারবো।

আওয়ামী লীগ এবং নিষিদ্ধ ছাত্রলীগের কর্মী সমর্থক এর চোরাগুপ্তা মিছিল আমরা দেখতে পাই বা দেয়াল লেখন দেখা যাচ্ছে, বিভিন্ন দেয়ালে তারা “জয় বাংলা” লিখছে, সরকার কি এক্ষেত্রে নমনীয় আচরণ করছে বলে মনে করেন?

জবাবে তিনি বলেন, এখানে আসলে যেটা হচ্ছে যে আমার কাছে মনে হয় যে, জুলাই পরবর্তী সময়ে আমাদের যে আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীতে যেটা পুনর্গঠনে কিছুটা জটিলতা তৈরি হয়েছে আমরা জানি। এবং আমাদের এজেন্সি গুলো যেগুলো হচ্ছে যে গোয়েন্দা সংস্থাগুলো বা আমাদের যে এই এজেন্সি গুলোর কিছুটা দুর্বলতা আমরা জানি। যেটা পুনর্গঠনের ক্ষেত্রে সমস্যা ফেস করছে দেশ। তো এটা আমার কাছে মনে হয়, স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা এবং আমাদের প্রধান উপদেষ্টার অত্যন্ত দ্রুততার সাথে এটা পুনর্গঠন করে, এই জিনিসগুলো জোরদার করা দরকার এবং আমাদের এই বাহিনীগুলো শান্তি, আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীগুলোর যে কার্যক্রম, এই জিনিসগুলো যাতে রোধ করা যায়, যেসব জায়গায় এসবগুলো ঘটছে এবং যাদেরকে এখনো ধরা সম্ভব হয় নাই, তাদেরকে ট্র্যাক করা এবং যারা যাদের হাতে এখনো অস্ত্র আছে, সে অস্ত্রগুলো উদ্ধার করা।

আওয়ামী লীগের বিরুদ্ধে কঠোর হলে কূটনৈতিক চাপ বাড়তে পারে, এমন কোন শঙ্কা রয়েছে বলে কি মনে করেন আপনি?

সর্বশেষ রাশেদ আলম বলেন, না, সেটা কূটনৈতিকভাবে আমাদেরকে মনে হয় মোকাবেলা করতে হবে। আমরা যে আওয়ামী লীগের যে গণহত্যার বিচার, সেই বিষয়গুলোকে আন্তর্জাতিক কূটনৈতিক মহলে তুলে ধরতে হবে। আমরা জানি যে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পরে ইতালিতে এবং জার্মানিতে, ফ্যাসিস্টদের এগেন্স্টে যে একটা ঐক্য তৈরি হয়েছিল এবং সে বিচার ব্যবস্থার একটা স্ট্যান্ডার্ড স্থাপিত হয়েছে। আমরা কেন আওয়ামী লীগের ক্ষেত্রে একই কাঠামো তৈরি করতে পারবো না! তো আন্তর্জাতিক কূটনৈতিক মহলে আমাদেরও একই মেসেজ দিতে হবে যে, এটা কোন রাজনৈতিক দলের কর্মকাণ্ড হতে পারে না। যে গণহত্যা তার দেশের জনগণের উপর চালায় এবং এক ধরনের গণতান্ত্রিক ব্যবস্থাতে যে দল বিশ্বাস করে না, সে দলের রাজনৈতিক অধিকারের প্রশ্ন আসবে কেন! সে দল তো অবশ্যই নিষিদ্ধ না হলে তাদেরকে বিচারের আওতায় আনতে হবে এবং তাদের যে রাজনৈতিক কর্মকাণ্ড অবশ্যই আপাতত এই বিচার না হওয়া পর্যন্ত লিমিটেড করতে হবে। এ কারণে আমার কাছে মনে হয়, কূটনৈতিকভাবে এই জিনিসগুলোর উত্তর দিতে হবে। আমাদের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সেখানে অনেক বেশি দায়িত্ব রয়েছে।

মো. মহিউদ্দিন

×