ঢাকা, বাংলাদেশ   মঙ্গলবার ০৪ ফেব্রুয়ারি ২০২৫, ২২ মাঘ ১৪৩১

ভারত কখনো বাংলাদেশকে আক্রমণ করলে নিজেই বিভক্ত হয়ে যাবে?

প্রকাশিত: ১৫:১৪, ৪ ফেব্রুয়ারি ২০২৫

ভারত কখনো বাংলাদেশকে আক্রমণ করলে নিজেই বিভক্ত হয়ে যাবে?

চারদিকে যেন শুধু যুদ্ধ আর যুদ্ধ এই যুদ্ধের বিষাক্ত বাতাস যেন ভারত বাংলাদেশে এসে পড়েছে। কারণ সাম্প্রতিক সময়ে ভারতের সব চাইতে বড় মাথাব্যথার কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে বাংলাদেশের রাজনৈতিক পটপরিবর্তন। বাংলাদেশ আর কারও নিয়ন্ত্রণে নেই। এ যেমন বিজেপি নেতা শুভেন্দু কয়েকদিন আগেই দাবি করেছিলেন কয়েকটা ড্রোন পাঠিয়ে বাংলাদেশ দখল করে নিবেন তারা। আর বাংলাদেশকে পরোক্ষ ভাবে দখল করার হুমকি দিয়ে আসছে প্রতিনিয়ত। যদিও এগুলোকে রাজনৈতিক বক্তব্য বলি উড়িয়ে দেওয়া যায়। কিন্তু আসলেই যদি ভারত এমনটা করার চিন্তা করে থাকে তাহলে কী পরিস্থিতি দাঁড়াবে?

বাংলাদেশ কি পারবে পৃথিবীর চতুর্থ বৃহত্তম ভারতের মতো সামরিক দানবের মুখোমুখি হতে, নাকি ভারত বাংলাদেশকে আক্রমণ করলে নিজেই বিভক্ত হয়ে যাবে। আলাদা হয়ে যেতে পারে সেভেন সিস্টার। 

ভারতীয় সেনাবাহিনীর সংখ্যা প্রায় ১৩ লাখ যা চীনের পর পৃথিবীর দ্বিতীয় সর্বোচ্চ সৈন্যের অধিকারী দেশ। তবে ভারতের সেনাবাহিনীর একটা বড় অংশ তাদের অভ্যন্তরীণ নিরাপত্তায় নিয়োজিত আছে। কাশ্মীর, মধ্যপ্রদেশ এবং পূর্বাঞ্চলের সাতটি রাজ্যের যাদেরকে আমরা সেভেন সিস্টার হিসেবে জানি সেখানকার বিদ্রোহীদের দমন করতে ভারতসেনাবাহিনীর একটা বিশাল অংশ সেখানে নিয়োজিত আছে। আর তাদেরকে সেখানে থাকতে হবে। তা না হলে সেভেন সিস্টারসহ আরও বেশ কিছু রাজ্য বিভক্ত হয়ে যাওয়ার প্রবল সম্ভাবনা আছে।

অন্যদিকে পাকিস্তান সেনাবাহিনীর সৈন্য সংখ্যা সব কিছু মিলিয়ে সংখ্যা প্রায় সাত লক্ষের কাছাকাছি। যাঁদের একটা বড় অংশ সবসময় ভারতকে আক্রমণ করার সুযোগ খুঁজতে মুখিয়ে থাকে। আর এতে করে ভারতীয় সেনাবাহিনীর অন্ততপক্ষে সেখানে আট লাখ সৈন্য প্রয়োজন। পাকিস্তান এবং নিজেদের অভ্যন্তরীণ সঙ্কট মোকাবেলা করতেই এখানেই শেষ না ভারতের।অবশ্যই চীনের আগ্রাসন থেকে বাঁচার জন্য তিন লাখ সেনাবাহিনী চীন-ভারত সীমান্তের সব সময় মোতায়েন রাখতে হয়। কিন্তু অবশিষ্ট দুই লাখ সৈন্য নিয়ে ভারত যদি বাংলাদেশে আক্রমণ করতে চায় তবে সেটা ভারতের জন্য কাল হবে। নিজের পায়ে নিজেই কুড়ুল মারার মতো হবে। কারণ সামরিক বিশেষজ্ঞরা মনে করেন কোনও দেশকে দখল করতে গেলে সে দেশের শক্তির চাইতে তিনগুণ সৈন্য থাকা প্রয়োজন। মজার ব্যাপার হল, আপনি যুদ্ধবিমান দিয়ে শত্রুর দেশকে শুধু ধ্বংসই করতে পারবেন৷ কিন্তু দখল নিতে গেলে অবশ্যই আপনাকে সেখানে মোতায়েন করতে হবে পদাতিক বাহিনী।

আর তাই ভারতের দুই লাখ সৈন্য দিয়ে বাংলাদেশকে দখলে নেওয়া সম্ভব না।কারণ বাংলাদেশের সেনাবাহিনীর সংখ্যাও একেবারে কম না। আর তাই বলাই যায়, এই পরিস্থিতিতে ভারতীয় সেনাবাহিনীর জন্য বাংলাদেশকে আক্রমণ করা অসম্ভব হয়ে দাঁড়াবে৷

তবে এখানে চীন, পাকিস্তান নিজেদের স্বার্থে ভারতকে সীমান্ত থেকে দূরে ব্যস্ত রাখতে বাংলাদেশকে অস্ত্র দিয়ে সহযোগিতা করার সম্ভাবনা অনেক বেশি, যা ভারতের জন্য কাল হয়ে দাঁড়াতে পারে। কিন্তু ভারতের সক্ষমতা কিন্তু এখানেই শেষ না। কারণ তাদের আছে পৃথিবীর অন্যতম আধুনিক এবং বিশাল শক্তির বিমান বাহিনী। তবে মজার ব্যাপার হল, তাঁদের সেখানে রয়েছে বেশ দুর্বলতা।কারণ তাঁদের পর্যাপ্ত যুদ্ধবিমান আছে ঠিকই কিন্তু লজিস্টিক সহযোগিতা করার সক্ষমতা অতটা নেই৷ কারণ ভারতীয় বিমানবাহিনীর কাছে মাত্র ১০ টি হেভিওয়েট পরিবহন বিমান এবং ৩০ টা মিডিয়াম ক্যাটাগরির লজিস্টিক বিমান রয়েছে। অথচ ভারতের মতো একটা বিশাল দেশে সৈন্য এবং রসদ মোতায়েন করতেই কিছু ট্রান্সপোর্ট বিমান কোনও ভাবেই যথেষ্ট হবে না। যেমন ২০২০ সালে চীনের সংঘর্ষের সময় ভারতের ট্রান্সপোর্ট ফ্লাইটের অভাব স্পষ্ট হয়ে উঠেছিল। বেশ কয়েক সপ্তাহ সময় লেগে ছিল ভারতের সৈন্য এবং সরঞ্জাম মোতায়েন করতে।এর ফলে বাংলাদেশের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করতে গেলে ভারতের বিমান বাহিনীর লজিস্টিক ফ্লাইট কোনো বড় ভূমিকা পালন করতে পারবে না। তবে ভারতীয় বিমানবাহিনীর কাছে সব মিলিয়ে পাঁচশ যুদ্ধবিমান আছে এবং এতে কোনো সন্দেহ নেই এত সংখ্যক বিমান দিয়ে তাঁরা অল্প কিছু সময়ের মধ্যেই কিছু একটা করতে পারে। কারণ বাংলাদেশের কাছে এমন কোনও শক্তিশালী যুদ্ধবিমান নেই, যা ভারতীয় ফাইটার জেটগুলিকে মোকাবেলা করতে পারবে। সেই সাথে নেই তেমন কোনও শক্তিশালী আকাশ প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা।

তবে এখানেও ভারতের জন্য বিপদ রয়েছে। কারণ ভারতের বেশিরভাগ যুদ্ধবিমান কাউন্টার স্ট্রাইক মিশন পরিচালনা করতে সক্ষম না।হ্যাঁ, ভারতের কাছে আছে ২০০ ৭০ এসি 30 ফাইটার। এছাড়া মিগ ২১ এবং জাগুয়ার ফাইটার জেট। কিন্তু মজার ব্যাপার হল, এগুলো বর্তমানের আধুনিক যুগে কিন্তু বেশ পুরনো মডেল। ভারতীয় বিমানবাহিনীর একমাত্র কার্যকরী এট্যাক মিশন বিমান হল মিরাজ ২০০০ এবং ডাসাল্ট রাফাল যুদ্ধবিমান। কিন্তু এদের সংখ্যাও প্রয়োজনের তুলনায় খুবই কম। তাছাড়া ডাসাল্ট রাফাল এর মতো যুদ্ধবিমান গুলো কিন্তু বাংলাদেশের ব্যবহার করার মতো সুযোগ নেই৷ কারণ ভারতের কাছে মাত্র ৩৬ টি রাফাল ফাইটার জেট আছে এবং এগুলো মূলত চীন এবং পাকিস্তানকে মোকাবেলা করার জন্য প্রতিনিয়তই ভারতকে প্রস্তুত রাখতে হয়। তাই বলাই যায় ভারতীয় বিমান বাহিনীর জন্য বাংলাদেশের ব্যবহার করা যেতে পারে এমন যুদ্ধবিমানের সংখ্যা খুব বেশি না।

ভারতের বিমান বাহিনী একদিকে যুদ্ধবিমানের সঙ্কটে ভুগছে, অন্যদিকে পাকিস্তানের কাছে রয়েছে বিপুল সংখ্যক জেট এবং এফ 16 এফ ১৭  যুদ্ধবিমান। যার সামনে ভারতীয় রাফায়েল যুদ্ধবিমান ও যথেষ্ট কার্যকরী হওয়ার সম্ভাবনা খুবই কম। এদিকে চীনের বিমানবাহিনীর তুলনায় ভারতের বিমানবাহিনীর সামরিক শক্তি অনেক পিছিয়ে। সুতরাং মিরাজ 2000 দিয়ে বাংলাদেশে আক্রমণ চালানো ভারতের জন্য অসম্ভব। ভারতের বিমান মাত্র কয়েকটা স্থানে সাপোর্ট দিতে সক্ষম হবে, যা প্রয়োজনের তুলনায় একেবারেই কম। তাছাড়া গ্রাউন্ড স্ট্রাইক মিশনের সিস্টেমের কারণে নিয়মিত যুদ্ধবিমান ধ্বংস হবে। যার ফলে ভারতীয় বিমান বাহিনীর শক্তি ধীরে ধীরে কমে যাবে৷ 

তবে এর মানে এই নয় যে, বাংলাদেশের সামরিক শক্তি একদম পিছিয়ে আছে।বাংলাদেশও মিলিটারি শক্তির দিক থেকে যথেষ্ট শক্তিশালী একটা দেশ৷ তা ছাড়া বাংলাদেশ সেনাবাহিনী প্রতিনিয়ত নতুন নতুন অস্ত্রশস্ত্র ক্রয়ের দিকে মনোযোগী হচ্ছে।সেই সাথে আপনাকে এটাও মনে রাখতে হবে বাংলাদেশ সেনাবাহিনী বর্তমানে দক্ষিণ এশিয়ার তৃতীয় বৃহত্তম শক্তিশালী বাহিনী এবং সেই বাহিনীর দেশের যে কোনও বিপদের সময় নিজেদের সবকিছু দিয়ে লড়াই করতে প্রস্তুত। এমনকি এটা বললে ভুল হবে না যে বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর পেশাদারিত্ব এবং দক্ষতা ভারতীয় সেনাবাহিনীর চাইতেও অনেক এগিয়ে। কারণ বাংলাদেশ সেনাবাহিনী এখন পর্যন্ত পৃথিবীর ৪৩টি  দেশে প্রতিনিয়ত যুদ্ধ করার অভিজ্ঞতা লাভ করেছে। বিপরীতে ভারতীয় সেনাবাহিনীর যুদ্ধের অভিজ্ঞতা আন্তর্জাতিকভাবে খুবই সীমিত। বাংলাদেশ সেনাবাহিনী জাতিসংঘের অধীনে প্রায় অর্ধশতাধিক দেশে সরাসরি যুদ্ধের অভিজ্ঞতা অর্জন করেছে। এতে তাদের দক্ষতা এবং অভিজ্ঞতা ভারতীয় সেনাবাহিনীর চাইতে অনেকটা বেশিই বলা যায়। তা ছাড়া পেশাগত দক্ষতার পাশাপাশি বাংলাদেশ সেনাবাহিনী অত্যাধুনিক সমরাস্ত্র ক্রয়ের দিকে ধাবিত হচ্ছে। বিশেষ করে বিভিন্ন আগ্রাসন মোকাবেলায় বাংলাদেশ পৃথিবীর বিভিন্ন দেশ থেকে যুদ্ধ ট্যাঙ্ক, যুদ্ধবিমান এবং অন্যান্য সমরাস্ত্র সংগ্রহ করছে, যা বাংলাদেশে নিরাপত্তা ব্যবস্থা আরও মজবুত করবে। এমনকি বাংলাদেশ তুরস্কের কাছ থেকে বেশ কিছু সংখ্যক বর্তমান পৃথিবীর সবচাইতে অত্যাধুনিক ড্রোন বায়রাক্তার টিবি২ কিনেছে।সেইসাথে সমরাস্ত্রের উৎপাদন বাড়ানো এবং বাইরের দেশ থেকে আধুনিক অস্ত্র ক্রয়ের মাধ্যমে বাংলাদেশ সেনাবাহিনী আরও শক্তিশালী হওয়ার চেষ্টা করছে।

২০৩০ সালের মধ্যে নতুন অস্ত্র বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর বহরে যুক্ত হবে, যা বাংলাদেশকে এক নতুন উচ্চতায় পৌঁছে দেবে। তাছাড়াও বাংলাদেশের সেনা বাহিনীর কৌশলগত শক্তি বৃদ্ধি করতে সবচাইতে গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ গুলোর মধ্যে একটি হলো ট্যাঙ্ক।সম্প্রতি বাংলাদেশ চীন থেকে চুয়ান্ন টা অত্যাধুনিক উভচর ট্যাংক অর্ডার করেছে। পানিতে এবং মাটিতে দুই জায়গাতেই বেশ কার্যকরী ভাবে চলতে পারে এই ট্যাঙ্কগুলো। এমনভাবে তৈরি যা তীব্র স্রোতে অনায়াসেই চলতে পারে। এগুলো বিশেষ ধরনের হামলা চালানোর জন্য অত্যন্ত কার্যকরী, যা বাংলাদেশের প্রতিরক্ষা শক্তি আরও মজবুত করবে। আর তা ছাড়া চীন ভারতের কাছে এই ট্যাঙ্কগুলো বিক্রিও করবে না।

ভারতের জন্য রয়েছে অশনি সংকেত। কারণ বাংলাদেশের সাথে যুদ্ধে ব্যস্ত থাকলে চীন এবং পাকিস্তান অবশ্য ভারতের মানচিত্রে আক্রমণ করতে দ্বিধা বোধ করবে না। আর সেভেন সিস্টার আলাদা হওয়ার জন্য তাদের নিরস্ত্র আন্দোলনকে হয়তো সশস্ত্র আন্দোলনের পরিণত করতে পারে। 

তাই বিজেপি নেতাদের এসব হুমকিকে বাংলাদেশের জনগণ তোয়াক্কা করে না।তারা মনে  করছেন ৭১ এ ও তারা দেখিয়ে দিয়েছিলেন কিভাবে পরাশক্তির বিরুদ্ধে যুদ্ধ করে বিজয় চিনিয়ে আনতে হয়।

ফুয়াদ

×