ছবি: সংগৃহীত
রাতের অন্ধকারে কাবুলের একটি নির্জন কক্ষে আলোচনার এক গোপন পর্ব। একদিকে তালেবান সরকারের শীর্ষ নেতা অন্যদিকে ভারতের শীর্ষ কূটনীতিক। কেউ কি ভেবেছিল এই দুই পক্ষ কোনোদিন এক টেবিলে বসবে?
অথচ এখন বাস্তবতা বলছে ভারত তালেবানদের সাথে সম্পর্ক গড়ে তুলছে। আর পাকিস্তান বাংলাদেশের নতুন সরকারের দিকে বন্ধুত্বের হাত বাড়াচ্ছে।
দক্ষিণ েএশিয়ার চিরপ্রতিদ্বন্দ্বী দুই দেশ ভারত ও পাকিস্তানের কারণে এই অঞ্চলের কূটনৈতিক দৃশ্যপট বদলে যাচ্ছে। কিন্তু কেন?
শত্রুর শত্রু আমার বন্ধু। ১৯৪৭ সালের দেশভাগ থেকে শুরু করে একাধিক যুদ্ধ। ভারত ও পাকিস্তানের সম্পর্ক সবসময়ই বৈরি। পাকিস্তান আফগানিস্তানের তালেবানদের লাগাম টেনে ধরতে ব্যর্থ হয়েছে বলে অভিযোগ করেছে। আর ভারত এই সুযোগেই এগিয়ে গেছে। জানুয়ারিতে দুবাইয়ে ভারতের শীর্ষস্থানীয় কূটনৈতিক বিক্রম মিস্ত্রি তালেবানের পররাষ্ট্রমন্ত্রী আমির খান মুত্তাকের সঙ্গে দেখা করেছেন।
ভারত বলছে তারা কেবল আফগান জনগণের সঙ্গে সম্পর্ক দৃঢ় করছে। তবে বিশেষজ্ঞরা বরছেন ভিন্ন কথা। ওয়াশিংটনের ন্যাশনাল ডিফেন্স ইউনিভার্সিটির অধ্যাপক হাসান আব্বাসের মতে ভারত চায়না যে তালেবান এমস কোনো গোষ্ঠীকে প্রশ্রয় দিক যারা তাদের জন্য হুমকি হয়ে উঠবে। একই সঙ্গে এটি পাকিস্তানকে চাপে রাখার একটি কৌশলও।
কিন্তু ভারত শুধু তালেবানদের সাথে সম্পর্ক গড়েই থেমে নেই। তারা চাবাহার বন্দরের মাধ্যমে আফগানিস্তানের সঙ্গে বাণিজ্য সম্প্রসারণের পরিকল্পনাও করছে যা পাকিস্তানের গোয়াদার বন্দরের পাশেই অবস্থিত।
বাংলাদেশ-পাকিস্তান পুরনো শত্রু, নতুন বন্ধু। অন্যদিকে অভ্যুত্থানের পর বাংলাদেশের রাজণৈতিক মঞ্চেও নাটকীয় পরিবর্তন এসেছে। সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ক্ষমতা হারানোর পর ভারতে আশ্রয় নেয় নেন। আর বাংলাদেশের নতুন সরকার ইসলামাবাদের সঙ্গে সম্পর্ক পুনর্গঠনের দিকে এগিয়ে যায়। সাম্প্রতিক মাসগুলোতে পাকিস্তানের সঙ্গে বাংলাদেশের সরাসরি বাণিজ্য শুরু হয়েছে। সামরিক কর্মকর্তারা একে অপরের দেশে সফর করছেন। এমনকি সামরিক প্রশিক্ষণ নিয়েও আলোচনা হয়েছে।
১৯৭১ সালের রক্তক্ষয়ী যুদ্ধের মাধ্যমে যে বাংলাদেশ পাকিস্তানের কাছ থেকে স্বাধীনতা অর্জন করেছিল সেই দেশটি কিভাবে আজ পাকিস্তানের সাথে আবার বন্ধুত্বের দিকে এগোচ্ছে? এটি কি শুধুই কূটনৈতিক কৌশল, নাকি বৃহত্তর আঞ্চলিক পরিকল্পনার অংশ?
দক্ষিণ এশিয়ার নতুন কূটনৈতিক সমীকরণ ভারত ও পাকিস্তানের প্রতিদ্বন্দ্বিতা শুধু দুই দেশের মধ্যে সীমাবদ্ধ নেই। এটি গোটা দক্ষিণ এশিয়ার ভূরাজনীতিকে নতুন মাত্রা দিচ্ছে। ভারত তালেবানদের সাথে সম্পর্ক উন্নত করছে। চীনের বেল্ট এন্ড রোড ইনিশিয়েটিভকে চ্যালেঞ্জ জানাচ্ছে আর পাকিস্তান নতুন মিত্র খুজছে। দক্ষিণ এই নতুন সমীকরণ কি দীর্ঘস্থায়ী হবে নাকি এটি শুধু সময়ের একটি অস্থায়ী চাল? পরিস্থিতি প্রতিনিয়ত প্রতিনিয়ত বদলাচ্ছে। একসময়ের শত্রুরা বন্ধু হচ্ছে আবার পুরনো মিত্রদের মধ্যে দূরত্ব তৈরি হচ্ছে। এটাই কি দক্ষিণ এশিয়ার ভবিষ্যৎ?
ভিডিও লিংক: https://www.youtube.com/watch?si=yiV7CMY_YnjzI5k3&v=eEg_bFODFSc&feature=youtu.be
শিহাব