ঢাকা, বাংলাদেশ   মঙ্গলবার ০৪ ফেব্রুয়ারি ২০২৫, ২২ মাঘ ১৪৩১

মার্চে আসছে তীব্র লোডশেডিং?

প্রকাশিত: ১০:৪৭, ৪ ফেব্রুয়ারি ২০২৫

মার্চে আসছে তীব্র লোডশেডিং?

ছবি: সংগৃহীত

শীত বিদায় নিয়েছে। আসন্ন গ্রীষ্মে সাড়ে চার কোটি গ্রাহক পুড়বে লোডশেডিংয়ের তাপে। শীতের মধ্যেই বিদ্যুতের ইঁদুর দৌড়ে উদ্বিগ্ন শিল্পোদ্যোক্তা ও ব্যবসায়ীরা। ইতোমধ্যে দেশের শহরাঞ্চলে গরম পড়া শুরু হলেও গ্রামাঞ্চলে শীত কিছুটা রয়ে গেছে। এরই মধ্যে ফিরল লোডশেডিং।

আগামী মাস থেকে বিদ্যুতের সংকট আরও বাড়বে বলে শঙ্কা প্রকাশ করেছেন বিশেষজ্ঞরাও। এক সময় ভুলতে বসা লোডশেডিং গত বছরের জুলাই মাসে ঘোষণা দিয়ে ফিরে আসে। সে সময় বলা হয়েছে, অক্টোবর নাগাদ শীত এলে পরিস্থিতি স্বাভাবিক হবে। কিন্তু তা ভুল প্রমাণিত হয়। শীতের ভরা মৌসুমেই এবার সাক্ষাৎ লোডশেডিংয়ের। শীত মৌসুমে বিদ্যুতের গড় চাহিদা ১০ হাজার মেগাওয়াট কিন্তু উৎপাদন ৯ হাজারের মেগাওয়াটের কাছাকাছি। বাকিটা লোডশেডিং করতে হয়। শীতে বিদ্যুতের চাহিদা কম হলেও তা সরবরাহ করতে হিমশিম খাচ্ছে বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ড-পিডিবি।

সংশ্লিষ্টরা জানান, কয়লা সংকটে কয়েকটি বিদ্যুৎকেন্দ্রের উৎপাদন বন্ধ থাকায় এই সংকট তৈরি হয়েছে। ইউক্রেন-রাশিয়া সংকট, বিশ্ববাজারে জ্বালানি দাম বৃদ্ধি, দেশে ডলার সংকট, ডলারের বিপরীতে টাকার মান হ্রাসসহ নানা কারণে সরকার গত বছর থেকেই তরলীকৃত প্রাকৃতিক গ্যাসের (এলএনজি) আমদানি বন্ধ করেছে। এর পর থেকে তীব্র লোডশেডিংয়ের কবলে পড়ে পুরো দেশ। শীতের প্রভাবে নভেম্বর থেকে চাহিদা কমতে থাকে বিদ্যুতের। ফলে নভেম্বরে আর লোডশেডিং দেখা যায়নি। তবে ডিসেম্বরের শেষ দিকে তাপমাত্র কিছুটা বৃদ্ধি পেলেও তেমন লোডশেডিং চোখে পড়েনি। সাময়িক স্বস্তির পর জানুয়ারির শুরু থেকে আবারও লোডশেডিং দেখা দেয়।

ব্যবসায়ীরা বলছেন, গত বছর জুলাইয়ে এলাকাভিত্তিক লোডশেডিং ঘোষণা দেয় সরকার। তখন দেশে উৎপাদন কমেছে অর্ধেকের কম। বহু শ্রমিক কর্ম হারিয়েছে। সামনের গ্রীষ্মে কি দশা হবে তা আল্লাহই ভালো জানে বলে মন্তব্য করেন এক ক্ষুদ্র শিল্পোদ্যোক্তা। সম্ভাব্য লোডশেডিংয়ে শঙ্কিত ক্ষুদ্র-মাঝারি-বৃহৎ শিল্প উদ্যোক্তারা।

সংশ্লিষ্টরা বলছেন, জ্বালানি সাশ্রয় করার জন্যই কম বিদ্যুৎ উৎপাদন করা হচ্ছে। আপাতত এই লোডশেডিং মেনে নেয়া ছাড়া কোনো উপায় নেই। চলতি শীতের মৌসুমেও দেখা দিয়েছে লোডশেডিং। বিদ্যুতের উৎপাদন, সঞ্চালন এবং বিতরণ সবই ঠিক আছে; কোথাও কোনো দুর্ঘটনার খবর পাওয়া যায়নি। তবুও প্রতিদিন গ্রাম-শহর সবখানে লোডশেডিং হচ্ছে।

বিদ্যুৎ বিতরণ কোম্পানির কর্মকর্তারা বলছেন, তাদের বিতরণ ব্যবস্থায় কোনো সমস্যা নেই। সংকট যা কিছু সব উৎপাদনে। ইতোমধ্যে সরকার দুই দফায় ৪০ শতাংশ বিদ্যুতের দাম বাড়িয়েছে। নিরবচ্ছিন্ন বিদ্যুৎ সরবরাহ না দিয়ে দাম বাড়নোতে অসন্তোষ গ্রাহকের। বিতরণ কোম্পানি ঢাকা ইলেকট্রিক সাপ্লাই কোম্পানি (ডেসকো) বলছে, গত ১১ ফেব্রুয়ারি তারা ৮৫ মেগাওয়াট লোডশেডিং করেছে। একই দিন পল্লী বিদ্যুতায়ন বোর্ড (আরইবি) দুপুর ২টার দিকে ৪১৮ মেগাওয়াট লোডশেডিং করেছে। এদিন বিকাল ৪টায় সারা দেশে আরইবির

লোডশেডিং ছিল ৪৫০ মেগাওয়াট। এভাবে দিন-রাতের যখনই উৎপাদন কম হচ্ছে, তখনই লোডশেডিং করতে বলা হচ্ছে। সাধারণত শীতে বড় কোনো বিপর্যয় ছাড়া লোডশেডিং করা হয় না। সেখানে এবার শীত গ্রাহকের জন্য খানিকটা বিদ্যুৎ বিড়ম্বনা বয়ে এনেছে।

ডিপিডিসির ব্যবস্থাপনা পরিচালক বিকাশ দেওয়ান বলেন, দিনের বেলা ১২টার দিকে লোডশেডিং করতে বলা হয় ২০০ মেগাওয়াট। বিকালে তা তুলে নিতে বলা হয়। রাতে আবার লোডশেডিং হবে কি-না জানতে চাইলে তিনি বলেন, সেটা তো বলতে পারছি না। উৎপাদন কম হচ্ছে তাই লোডশেডিং হচ্ছে। রাজধানীর বাইরে প্রতিদিন দুই থেকে তিন ঘণ্টা লোডশেডিং থাকছে— এমনটাই জানিয়েছেন স্থানীয়রা। চট্টগ্রামের বিস্তৃত অঞ্চলজুড়ে গত এক সপ্তাহ ধরে চলছে এই লোডশেডিং। বিশেষ করে সন্ধ্যায় ঘরে যখন আলোর দরকার হয় তখন থেকেই শুরু হয় লোডশেডিং। চলে রাত দেড়টা পর্যন্ত। এতে আসন্ন এসএসসি পরীক্ষার্থীদের পড়ালেখার প্রস্তুতিতে ব্যাপক সমস্যা হচ্ছে। লোডশেডিংয়ের কারণে নগরীর ঘরে ঘরে মশাসহ নানা রকম পোকামাকড়ের উপদ্রব বেড়ে গেছে। সন্ধ্যার পর থেকে লোডশেডিংয়ের কারণে নগরীর হোটেলসহ ব্যবসা প্রতিষ্ঠান অন্ধকারে ডুবে থাকছে।

শিহাব

×