বিচার বিভাগ সংস্কার কমিশনের ৩২ বিষয়ে সুপারিশ
বিচার বিভাগ সংস্কার কমিশনের ৩২ বিষয়ে সুপারিশ নিয়ে চূড়ান্ত প্রতিবেদন আগামীকাল বুধবার অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূসের কাছে জমা দেবে কমিশন। ইতোমধ্যে কমিশন নানা বিষষে তাদের মতামত দিয়েছেন। খসড়া প্রতিবেদনে যে যে প্রস্তাব করা হয়েছিল চূড়ান্ত প্রতিবেদনে তেমন পরিবর্তন হচ্ছে না বলে জানা গেছে। কমিশনের এই প্রতিবেদন বাস্তবায়ন হলে, বিচার বিভাগের শৃঙ্খলা আসবে। বিচার বিভাগের দুর্নীতি কমবে। কমিশন সূত্রে এ খবর জানা গেছে।
ছয়টি সংস্কার কমিশনের মেয়াদ বর্ধিত করে সরকার। কমিশনগুলোর মেয়াদ ১৫ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত বর্ধিত করে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ থেকে প্রজ্ঞাপন জারি করা হয়। বিচার বিভাগ সংস্কার কমিশন ১৫ ফেব্রুয়ারি না গিয়ে তার ১০ দিন আগেই ৫ ফেব্রুয়ারি দাখিল করছে। কমিশনের প্রস্তাবে রয়েছে, বিচার বিভাগের বিকেন্দ্রীকরণ ও সম্প্রসারণের লক্ষ্যে রাজধানীর বাইরে বিভাগীয় সদরে হাইকোর্টের স্থায়ী বেঞ্চ স্থাপনের প্রস্তাব করছে বিচার বিভাগ সংস্কার কমিশন।
উপজেলা পর্যায়ে দেওয়ানি ও ফৌজদারি আদালতের কার্যক্রম সম্প্রসারণের জন্য প্রস্তাব রয়েছে খসড়া সার সংক্ষেপে। বাণিজ্যিক বিরোধ নিষ্পত্তির জন্য পৃথক বাণিজ্যিক আদালত স্থাপনে যথাযথ বিধান সংবলিত আইন প্রণয়ন করতে হবে এবং দেওয়ানি কার্যবিধিসহ অন্যান্য আইনের প্রয়োজনীয় সংশোধনী আনতে হবে। আপিল বিভাগের অবসরপ্রাপ্ত বিচারপতি শাহ আবু নাঈম মোমিনুর রহমানকে প্রধান করে আট সদস্যের এ কমিশন গঠিত হয় গত ৩ অক্টোবর।
কমিশনের অন্যান্য সদস্য হলেন বিচারপতি মো. এমদাদুল হক, বিচারপতি ফরিদ আহমদ শিবলী, সাবেক বিচারক মো. মাজদার হোসেন, সাবেক বিচারক সৈয়দ আমিনুল ইসলাম, অধ্যাপক মহফুজুল হক সুপন, অ্যাডভোকেট তানিম হোসেইন শাওন এবং শিক্ষার্থী আরমান হোসাইন।
বিচার বিভাগ সংস্কার কমিশনের সদস্য সাবেক জেলা ও দায়রা জজ মাসদার হোসেন জনকণ্ঠকে বলেন, আশা করছি ৫ ফেব্রুয়ারি প্রধান উপদেষ্টার কাছে আনুষ্ঠানিকভাবে প্রতিবেদনটি দিতে পারব। আমাদের প্রতিবেদন একদম প্রস্তুত। গত বারের দেওয়া প্রতিবেদনে তেমন পরিবর্তন হবে না। বিচার বিভাগ সংস্কার কমিশন ১৫ ফেব্রুয়ারি না গিয়ে তার ১০ দিন আগেই ৫ ফেব্রুয়ারি দাখিল করছে। বিচার বিভাগের সংস্কার কমিশনের এই প্রতিবেদন বাস্তবায়ন হলে, বিচার বিভাগের শৃঙ্খলা আসবে।
প্রথম কথা হলো বিচারবিভাগের শৃঙ্খলা ফিরে আসবে। বিচার বিভাগের দুর্নীতি রোধের জন্য শক্ত বিধান করা হচ্ছে আশা করা যায় বিচার বিভাগ বিভাগের দুর্নীতি কম (রিডিউজড) হবে। স্বতন্ত্র বিচার বিভাগ প্রতিষ্ঠার পাশাপাশি বিচার বিভাগের কাজে স্বচ্ছতা, জবাবদিহি ও গতিশীলতা আনতে আমরা বিস্তারিত প্রতিবেদন তুলে ধরেছি।
ইতোমধ্যে কমিশন একটি প্রাথমিক প্রতিবেদন আইন মন্ত্রণালয়ে পাঠিয়েছে। পূর্ণাঙ্গ প্রতিবেদন বুধবার দেওয়া হবে। এ কমিশন ১৫ জানুয়ারি প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূসের কাছে তাদের প্রতিবেদন জমা দেয়। এর পর বিভিন্ন ক্ষেত্রে গঠিত ছয়টি সংস্কার কমিশনের মেয়াদ আগামী ১৫ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত বাড়ানো হয়। এ বিষয়ে প্রজ্ঞাপন জারি করে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ। গত ৬ অক্টোবর সংবিধান সংস্কার কমিশন গঠন করা হয়েছিল।
৩ অক্টোবর অন্য পাঁচটি সংস্কার কমিশন গঠন করে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ থেকে প্রজ্ঞাপন জারি করা হয়। সব ক’টি কমিশনকে প্রতিবেদন দাখিলের জন্য ৯০ দিন সময় দেওয়া হয়েছিল। পরে সময় বাড়ানো হয়। এর মধ্যে গত ১৫ জানুয়ারি সংবিধান, নির্বাচন ব্যবস্থা, দুর্নীতি দমন কমিশন ও পুলিশ সংস্কার কমিশন তাদের প্রতিবেদন প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসের কাছে জমা দেয়।
গত ২৭ অক্টোবর সুপ্রিম কোর্ট প্রশাসন থেকে একটি ধারণাপত্রসহ বিচার বিভাগের জন্য পৃথক সচিবালয় গঠনের প্রস্তাব আইন, বিচার ও সংসদবিষয়ক মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হয়। খসড়া প্রতিবেদনে রয়েছে, (১) সুপ্রিম কোর্টে বিচারক নিয়োগ, শৃঙ্খলা ব্যবস্থা এবং অপসারণ (২) অধস্তন আদালতে বিচারক নিয়োগ, পদোন্নতি, বদলি শৃঙ্খলা ব্যবস্থা ও অপসারণ (৩) সুুপ্রিম কোর্ট সচিবালয় স্থাপন এবং বিচার বিভাগের প্রশাসনিক ও আর্থিক স্বাধীনতা নিশ্চিত করণ (৪) বিচার বিভাগের বিকেন্দ্রীকরণ ও সম্প্রসারণ (৫) স্থায়ী ও স্বতন্ত্র সরকারি অ্যাটর্নি সার্ভিস গঠন (৬) স্বতন্ত্র ফৌজদারি তদন্ত সংস্থা গঠন, (৭) বিচার বিভাগ সংশ্লিষ্ট সংবিধানের বিধানগুলোর সংশোধনী (৮) অধস্তন আদালতের সাংগঠনিক কাঠামো, জনবল, নিয়োগ পদ্ধতি এবং নতুন পদ সৃজন (৯) পর্যাপ্ত বাজেট, ভৌত অবকাঠামো ও লজিস্টিক সাপোর্ট (১০) বিচার কার্যক্রমে তথ্য প্রযুক্তি ব্যাবহার, (১১) বিচার বিভাগের দুর্নীতি প্রতিরোধ এবং স্বচ্ছতা জবাবদিহিতা ও সুশাসন বাস্তবায়ন (১২) আইনগত সহায়তা কর্যক্রমের প্রসার ও কার্যকারিতা বৃদ্ধি (১৩) বিকল্প বিরোধ নিষ্পত্তি (১৪) জমে থাকা মামলার নিষ্পত্তি বা মামলা জট (১৫) বিচারক ও সহায়ক জনবলের প্রশিক্ষণ (১৬) সামাজিক ও নৈতিক মূল্যবোধের উন্নয়ন ও গণসচেতনা সৃষ্টি (১৭) কমিশিনের বিবেচনাধীন অন্যান্য বিষয়সমূহ।
সুপ্রিম কোর্টে বিচারক নিয়োগ, শৃঙ্খলা ব্যবস্থা এবং অপসারণ ॥ রাষ্ট্রপতি আপিল বিভাগের কর্মে প্রবীণতম বিচারককেই প্রধান বিচারপতি নিয়োগ করবেন। অর্থাৎ প্রধান বিচারপতি নিয়োগের প্রক্রিয়ায় রাষ্ট্রপতির কোনো স্বেচ্ছাধীন ক্ষমতা থাকবে না। বা নির্বাহী বিভাগের কোনো প্রভাব থাকবে না। এই লক্ষ্যে সংবিধানের ৪৮(৩), ৫৫(২) এবং ৯৫(১) অনুচ্ছেদ সংশোধনের প্রস্তাব করা হয়েছে।
অধস্তন আদালতে বিচারক নিয়োগ, পদোন্নতি, বদলি শৃঙ্খলা ব্যবস্থা ও অপসারণ ॥ সংবিধানের ১১৬ অনুচ্ছেদের বণিত মতে সুপ্রিম কোর্টের পরামর্শ প্রদানকারী ভূমিকা পরিবর্তন করতে হবে। এবং বিচারকদের নিয়ন্ত্রণ (কর্মস্থল নির্ধারণ ও পদোন্নতি, ছুটিমঞ্জরি এবং বেতন ভাতা ও আর্থিক সবিধা নিয়ন্ত্রণ) ও শৃঙ্খলা বিধান সুপ্রিম কোর্টের ওপর ন্যস্ত করতে হবে। (খ) এ বিষয়ে সুপ্রিম কোর্টের নিয়ন্ত্রণ তিষ্টার জন্য মাসদার হোসেন মামলায় প্রদত্ত ১২ দফার নির্দেশনার আলোকে প্রণীত বিভিন্ন চাকরি বিধিতে প্রয়োজনীয় সংশোধনী আনতে হবে।
সুপ্রিম কোর্ট সচিবালয় স্থাপন ॥ সংবিধানের ২২ অনুচ্ছেদে ঘোষিত নির্বাহী বিভাগ থেকে বিচার বিভাগের পৃথকীকরণের মূল নীতিকে মাসদার হোসেন মামলার রায়ের আলোকে অর্থবহ বাস্তবায়নের লক্ষ্যে কমিশন সুপারিশ তুলে ধরেছে। এতে বলা হয়েছে, সুপ্রিম কোর্ট সচিবালয়ের জন্য পৃথক অবকাঠামো, জনবল ও লজিস্টিক সাপোর্ট নিশ্চিত করতে হবে।
বিচার বিভাগের পূর্ণাঙ্গ স্বাধীনতা নিশ্চিতকরণ এবং সর্বোপরি নির্বাহী বিভাগ থেকে বিচার বিভাগকে সম্পূর্ণরূপে পৃথকীকরণের জন্য ৃথক সুপ্রিম কোর্ট সচিবালয় স্থাপন করতে হবে। এ জন্য একটি আইন বা অধ্যাদেশ প্রণয়ন করতে হবে।
জমে থাকা মামলার নিষ্পত্তি বা মামলাজট হ্রাস ॥ মামলা জট নিরসনে বা ভবিষ্যতে মামলা নিষ্পত্তির ক্ষেত্রে সম্ভাব্য জট নিরসন কল্পে প্রয়োজন বিচার বিভাগের দীর্ঘ মেয়াদি ও স্বল্প মেয়াদি সংস্কার প্রয়োজন। এ বিষয়ে কমিশন প্রস্তাব করেছে, বিচার প্রক্রিয়া এবং বিচার প্রক্রিয়ার সঙ্গে সরাসরি যুক্ত ব্যক্তি বা গোষ্ঠী বিশেষত, বিচারক, ফৌজদারি মামলার তদন্ত কর্মকর্তা এবং প্রসিকিউটর এবং বিচারঙ্গনে রাজনৈতিক প্রভাবমুক্ত করতে হবে।
সুপ্রিম কোর্টের প্রাতিষ্ঠানিক স্বাধীনতা নিশ্চিতকরণ করতে হবে। সুপ্রিম কোর্টের বিচারক নিয়োগে স্বচ্ছতা, দক্ষতা এবং গ্রহণযোগ্যতা নিশ্চিতকরণের জন্য একটি কমিশন গঠন, বিচার ব্যবস্থা সম্পর্কে সচেতনা বৃদ্ধি। স্বল্প মেয়াদির মধ্যে অধিকসংখক ফৌজদারি আপিল, ফৌজদারি রিভিশন, দেওয়ানী আপিল ও দেওয়ানী রিভিশন নিষ্পন্নাধীন আছে এ রূপ জেলাসমূহে অবসরপ্রাপ্ত সৎ, দক্ষ এবং সুস্বাস্থ্যের অধিকারী জেলা জজগণকে ২/৩ বছর মেয়াদে চুক্তিভিত্তিক নিয়োগ প্রদান করা যেতে পারে। এক্ষেত্রে ন্যূনতম ১০০০টি আপিল/রিভিশন বিচারাধীন আছে এ রূপ জেলাতে চুক্তিভিত্তিক জেলা জজগণকে নিয়োগ করা যেতে পারে।
বিচার বিভাগ বিকেন্দ্রিকরণ ও সম্প্রসারণ ॥ প্রতিবেদনের সার-সংক্ষেপে বলা হয়েছে, রাজধানীর বাইরে বিভাগীয় সদরে হাইকোর্ট বিভাগের স্থায়ী বেঞ্চ স্থাপনের জন্য কিছু আইনি বৈশিষ্ট্য ও বাস্তব বিষয়ের প্রতি লক্ষ্য রেখে সংবিধানের ১০০ অনুচ্ছেদ প্রতিস্থাপন এবং সংশ্লিষ্ট বিষয়ে বিধিমালা প্রণয়ন ও সংশোধনের মাধ্যমে সুনির্দিষ্ট বিধান অন্তর্ভুক্তের প্রস্তাব করা হচ্ছে।
খসড়া সারসংক্ষেপে কমিশন বলেছে, প্রতিটি স্থায়ী বেঞ্চ কোনো কোনো এলাকা থেকে উদ্ভূত মামলা গ্রহণ করতে পারবে, তা সুনির্দিষ্ট করে দিতে হবে। তবে বিচারকাজ পরিচালনা এবং রায়, আদেশ, নির্দেশ ইত্যাদি প্রদানের ক্ষেত্রে হাইকোর্ট বিভাগের এখতিয়ারের পূর্ণাঙ্গতা বজায় রাখতে হবে। অর্থাৎ স্থায়ী বেঞ্চগুলো স্থাপনের কারণে দেশব্যাপী কর্তৃত্ব প্রয়োগের ক্ষেত্রে হাইকোর্ট বিভাগের এখতিয়ার কোনো ভৌগোলিক সীমারেখা দিয়ে বিভাজিত হবে না এবং রাষ্ট্রের একক চরিত্র ক্ষুণœ হবে না।
প্রধান বিচারপতি স্বতঃপ্রণোদিতভাবে কোনো স্থায়ী বেঞ্চেব বিচারাধীন মামলার কোনো পক্ষের আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে কোনো যৌক্তিক কারণে বা ন্যায়বিচারের স্বার্থে উক্ত মামলা অন্য কোনো যথাযথ বেঞ্চে স্থানান্তর করতে পারবেন। স্থায়ী বেঞ্চগুলো সুষ্ঠুভাবে পরিচালনার জন্য আদালত ও সহায়ক কার্যালয় বিচারক ও সহায়ক জনবলের জন্য উপযুক্ত বাসস্থানসহ প্রযোজনীয় অবকাঠামো স্থাপন এবং প্রয়োজনীয় বাজেট বরাদ্দ নিশ্চিত করতে হবে।
এ ছাড়া আরও প্রস্তাব করা হয়েছে, সবগুলো স্থায়ী বেঞ্চ একই সঙ্গে কার্যকর করা কঠিন বিবেচিত হলে প্রয়োজনে অগ্রাধিকার ভিত্তিতে পর্যায়ক্রমে বিভাগীয় সদরগুলোতেও স্থায়ী বেঞ্চ কার্যকর করা যেতে পারে। সুপারিশে বলা হয়েছে, প্রতিটি স্থায়ী বেঞ্চ কোন কোন এলাকা থেকে মামলা নিতে পারবে তা সুনির্দিষ্ট করে দিতে হবে। তবে বিচারকার্য পরিচালনা এবং রায়, আদেশ, নির্দেশনা দেওয়ার ক্ষেত্রে হাইকোর্ট বিভাগের পূর্ণাঙ্গতা বজায় রাখতে হবে।
উপজেলা পর্যায়ে আদালত সম্প্রসারণ : উপজেলা পর্যায়ে ে দেওয়ানি ও ফৌজদারি আদালতের কার্যক্রম সম্প্রসারণের জন্যও প্রস্তাব করছে বিচার বিভাগ সংস্কার কমিশন। সার-সংক্ষেপে বলা হয়েছে, উপজেলা সদরের ভৌগোলিক অবস্থান ও বৈশিষ্ট্য, জেলা-সদর থেকে দূরত্ব ও যাতায়াত ব্যবস্থা, জনসংখ্যার ঘনত্ব এবং মামলার চাপ বিবেচনা করে কোন উপজেলায় আদালত স্থাপিত হবে তা নির্ধারণ করতে হবে।
স্থায়ী ও স্বতন্ত্র সরকারি অ্যাটর্নি সার্ভিস গঠন ॥ রাজনৈতিক বিবেচনায় অস্থায়ীভাবে সরকারি আইন কর্মকর্তা নিয়োগের পরিবর্তে একটি স্থায়ী অ্যাটর্নি সার্ভিস প্রতিষ্ঠা প্রয়োজন বলে কমিশন মনে করে। এরূপ অ্যাটর্নি সার্ভিসের উদাহরণ প্রতিবেশী দেশগুলোসহ পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে রয়েছে। প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, প্রস্তাবিত সার্ভিসের দুটি ইউনিট থাকবে।
এর মধ্যে সহকারী অ্যাটর্নি জেনারেল, ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল এবং অতিরিক্ত অ্যাটর্নি জেনারেলদের সমন্বয়ে সুপ্রিম কোর্ট ইউনিট গঠিত হবে। পাশাপাশি সহকারী জেলা অ্যাটর্নি, সিনিয়র সহকারী জেলা অ্যাটর্নি, যুগ্ম জেলা অ্যাটর্নি, অতিরিক্ত জেলা অ্যাটর্নি এবং জেলা অ্যাটর্নির সমন্বয়ে গঠিত হবে জেলা ইউনিট।
স্বতন্ত্র ফৌজদারি তদন্ত সংস্থা ॥ ফৌজদারি মামলা তদন্তের জন্য পৃথক স্বতন্ত্র তদন্ত সংস্থা গঠনের প্রস্তাব দিয়েছে বিচার বিভাগ সংস্কার কমিশন। ক্রিমিনাল ইনভেস্টিগেশন সার্ভিস বা ফৌজদারি তদন্ত সার্ভিস নামে এই সংস্থা হবে পুলিশ বাহিনী থেকে আলাদা একটি কাঠামো।
এ বিষয়ে প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, পুলিশ বাহিনীর অধীনে প্রচলিত তদন্ত ব্যবস্থা এবং তাতে নিয়োজিত জনবলকে সংগঠিত করার মাধ্যমে বিচার ব্যবস্থায় তদন্ত প্রক্রিয়ার যথাযথ ভূমিকা নিশ্চিত করার লক্ষ্যে একটি স্বতন্ত্র, কার্যকর, দক্ষ, নির্ভরযোগ্য, জনবান্ধব এবং প্রভাবমুক্ত তদন্ত সংস্থা গঠন প্রয়োজন বলে কমিশন মনে করে।
তদন্ত সংস্থায় নিয়োজিত জনবল পুলিশ বাহিনী থেকে সম্পূর্ণ আলাদা হবে। তাদের নিয়োগ, চাকরির শর্তাবলি, নিয়ন্ত্রণ, ও আনুষঙ্গিক বিষয় একটি স্বতন্ত্র সংগঠন ও প্রাতিষ্ঠানিক কাঠামোভুক্ত হবে। মামলা হওয়ার পরই কেবল তদন্ত সংস্থা কাজ শুরু করবে।
বিকল্প বিরোধ নিষ্পত্তি ॥ বিশ্বের অন্যান্য দেশের মতো বিকল্প বিরোধ নিষ্পত্তি বিষয়ে আরবিট্রেশন, নেগোসিয়েশন, মেডিয়েশন, কম্প্রোমাইজ ইত্যাদি পদ্ধতি অবলম্বন বিষয়ে বেশকিছু আইনে বিধান করা সত্ত্বেও এ সকল পদ্ধতির প্রয়োগ এবং সুফল আশানুরূপ নয়। এই বাস্তবতার আলোকে বেশ কিছু সুপারিশ করা হযেছে।
যার মধ্যে রয়েছে, আইন সহায়তা প্রদান আইন, ২০০-রহিতক্রমে আইনগত সহায়তা ও মেডিয়েশনের বিধান সংবলিত আইনগত সহায়ত ও মধ্যস্থতা সেব প্রদান অধ্যাদেশ, ২০২৫ প্রণয়ন করতে হবে। মধ্যস্থতাকারীদের ফি পরিশোধের বিধান ও য়িমাবলি সংবলিত নীতিমালা প্রণয়ন করতে হবে। সালিশ আইন ২০০১ এর অধীনে পরিচালিত সালিশের ক্ষেত্রে অনুসরণীয় কার্য পদ্ধতি নির্ধারণ করে বিধিমালা প্রণয়ন করা আবশ্যক।