ড. মুহাম্মদ ইউনূস
প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূস আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর প্রধানদের উদ্দেশে বলেছেন, এ বছরটি বাংলাদেশের জন্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ এবং এ অবস্থায় আইনশৃঙ্খলা বাহিনীগুলোকে যুদ্ধ পরিস্থিতির মতো সতর্ক থাকতে হবে। আমরা কাউকে বিশৃঙ্খলা ও নৈরাজ্য সৃষ্টি করতে দেব না।
এ সময় বাংলাদেশের আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি বিঘিœত করার যে কোনো চেষ্টার বিরুদ্ধে নিরাপত্তা প্রধানদের সতর্ক থাকার নির্দেশ দেন তিনি। এছাড়া মানুষ যেন অনলাইনে মামলা করতে পারেন সে ব্যবস্থা গ্রহণের নির্দেশও দিয়েছেন ড. ইউনূস।
সোমবার রাষ্ট্রীয় অতিথি ভবন যমুনায় নিরাপত্তা প্রধানদের সঙ্গে উচ্চ পর্যায়ের বৈঠকে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি পর্যালোচনাকালে প্রধান উপদেষ্টা এ কথা বলেন। স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা লেফটেন্যান্ট জেনারেল (অব) জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী, প্রধান উপদেষ্টার বিশেষ সহকারী খোদা বক্স চৌধুরী, স্বরাষ্ট্র সচিব নাসিমুল গণি ও পুলিশ প্রধানসহ বিজিবি, র্যাব, ডিএমপি, কোস্ট গার্ড ও স্পেশাল ব্রাঞ্চের কর্মকর্তারা এ সময় উপস্থিত ছিলেন।
বৈঠকে প্রধান উপদেষ্টা দেশের আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিবিড়ভাবে পর্যবেক্ষণ করতে একটি কমান্ড সেন্টার স্থাপনে পুলিশ ও আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে নির্দেশ দিয়েছেন। প্রধান উপদেষ্টা বলেন, নিরাপত্তা সংস্থাগুলোকে অবশ্যই সর্বাধুনিক যোগাযোগ সরঞ্জামের সর্বোচ্চ ব্যবহার করতে হবে, যাতে তারা কোনো পরিস্থিতিতে দ্রুত হস্তক্ষেপ করতে পারে।
সিনিয়র সুরক্ষা কর্মকর্তাদের উদ্দেশে তিনি বলেন, আমাদের একটি কমান্ড সেন্টার বা একটি কমান্ড হেডকোয়ার্টার স্থাপন করতে হবে, যা সব পুলিশ ও সুরক্ষা সংস্থাগুলোর মধ্যে সমন্বয় করবে। নতুন কমান্ড কাঠামো দক্ষতার সঙ্গে এবং নিবিড়ভাবে দেশের সব সংস্থা, থানা এবং সব আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর মধ্যে যোগাযোগ স্থাপন করবে।
প্রধান উপদেষ্টা বলেন, ক্ষমতাচ্যুত স্বৈরশাসক শেখ হাসিনার সাঙ্গোপাঙ্গরা নৈরাজ্য সৃষ্টি ও অপপ্রচারের অপচেষ্টায় বিপুল পরিমাণ অর্থ ব্যয় করছে। আমাদের সতর্ক থাকতে হবে। এই অপপ্রচারের বিরুদ্ধে সবাইকে লড়াই করতে হবে।
এ সময় প্রত্যেক নাগরিকের মানবাধিকার রক্ষা এবং ধর্মীয় বা জাতিগত সংখ্যালঘুদের ওপর যে কোনো হামলা প্রতিহত করতে বিশেষ ব্যবস্থা নিতে নিরাপত্তা প্রধানদের নির্দেশ দেন তিনি। ড. ইউনূস বলেন, ধর্মীয় সংখ্যালঘুদের নিরাপত্তা দিতে না পারলে বিশ্বে ভাবমূর্তি মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হবে। এ বিষয়েও আমাদের অনেক স্বচ্ছ হতে হবে।
প্রধান উপদেষ্টা মুসলমানদের পবিত্র রমজান মাসে খাদ্য ও নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের দাম স্থিতিশীল রাখার প্রয়াসে চাঁদাবাজদের বিরুদ্ধে অভিযান চালানোর জন্য পুলিশকে নির্দেশ দিয়েছেন।
সভায় পুলিশের মহাপরিদর্শক (আইজিপি) বাহারুল আলম বলেন, জুলাই ও আগস্ট মাসে শেখ হাসিনার নিরাপত্তা বাহিনীর হাতে নৃশংসতা ও হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় দায়ের করা হত্যা মামলাগুলো তদারকির জন্য পুলিশ ১০টি টিম গঠন করেছে। প্রধান উপদেষ্টা পুলিশকে এই মামলাগুলো দ্রুত নিষ্পত্তি করতে এবং এতে কোনো নিরপরাধ লোক যাতে হয়রানির শিকার না হয়, তা নিশ্চিত করার নির্দেশ দেন।
পুলিশ প্রধান বাহারুল আলম বলেন, গণঅভ্যুত্থানের সময় ভারতে পালিয়ে যাওয়া শেখ হাসিনার বিষয়ে রেড নোটিস জারির চেষ্টায় বাংলাদেশ ইন্টারপোলের কাছে আবেদন করেছে। আমরা একটা অনুরোধ রেখেছি। আশা করছি, শীঘ্রই সাড়া পাব।
ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের (ডিএম) কমিশনার শেখ মো. সাজ্জাদ আলী বলেন, পুলিশি নিরাপত্তা জোরদার করায় রাজধানীতে ছিনতাই ও ছিনতাইয়ের ঘটনা কমে এসেছে। আমাদের প্রচেষ্টা অব্যাহত থাকবে।
অনলাইনে মামলা নেওয়ার নির্দেশ পুলিশকে ॥ সাধারণ মানুষ যেন অনলাইনে মামলা দায়ের করতে পারেন সে ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য পুলিশকে নির্দেশ দিয়েছেন অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূস।
রাষ্ট্রীয় অতিথি ভবন যমুনায় সোমবার আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ে এক উচ্চ পর্যায়ের বৈঠকে তিনি এই নির্দেশ দেন। প্রধান উপদেষ্টা বলেন, বর্তমানে নিকটবর্তী থানায় যাওয়ার পরই এফআইআর দায়ের করা যায়। পদ্ধতিটি জটিল এবং অপব্যবহারের সুযোগ থেকে যায়।
প্রধান উপদেষ্টা বলেন, পুলিশের উচিত ৯৯৯ নম্বরের মতো একটি বিশেষ ব্যবস্থা তৈরি করা, যাতে অভিযোগকারীরা দেশের যে কোনো প্রান্ত থেকে মামলা দায়ের করতে পারেন।
যত তাড়াতাড়ি সম্ভব অনলাইনে এফআইআর দায়ের করার জন্য একটি নতুন ফোন নম্বর চালু করতে পুলিশ প্রধান বাহারুল আলমকে নির্দেশ দিয়ে তিনি বলেন, এ ব্যবস্থায় মামলা করতে গিয়ে মানুষ যে ঝামেলার মুখোমুখি হয়, তা হ্রাস করবে।
প্রধান উপদেষ্টা অনলাইনে মামলা দায়েরের বিষয়ে প্রশ্নের উত্তর দেওয়ার জন্য একটি নিবেদিত কল সেন্টার স্থাপন করতেও পুলিশ প্রধানকে নির্দেশ দিয়েছেন। তিনি বলেন, যারা অনলাইনে মামলা করতে হিমশিম খাবেন, তারা সহজেই যেন কল সেন্টারের সহায়তা নিতে পারেন।