ঢাকা, বাংলাদেশ   সোমবার ০৩ ফেব্রুয়ারি ২০২৫, ২০ মাঘ ১৪৩১

আলোচনায় মেহরীন সারাহ মনসুর

প্রকাশিত: ২২:২৫, ২ ফেব্রুয়ারি ২০২৫; আপডেট: ২২:৩৬, ২ ফেব্রুয়ারি ২০২৫

আলোচনায় মেহরীন সারাহ মনসুর

ছবি: সংগৃহীত।

মেহরীন সারাহ মনসুর, বর্তমানে বিলাসী জীবনযাপনের জন্য আলোচিত নাম। যিনি বাংলাদেশের অর্থনৈতিক সংকট মোকাবিলার দায়িত্বে থাকা অন্তবর্তীকালীন সরকারের কেন্দ্রীয় ব্যাংকের গভর্নর আহসান এইচ মনসুরের কন্যা। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে তার জীবনযাত্রার চিত্র একেবারে ভিন্ন বাস্তবতা উপস্থাপন করে।

তার একটি নেকলেসের মূল্য ৫০ হাজার মার্কিন ডলার, যা বাংলাদেশি মুদ্রায় প্রায় ৬১ লাখ ৫০ হাজার টাকা, এবং একটি ব্যাগের দাম ১০ হাজার মার্কিন ডলার, অর্থাৎ প্রায় ১২ লাখ ৩০ হাজার টাকা। সংযুক্ত আরব আমিরাতে তার রয়েছে আলিশান ফ্ল্যাট, দামি গাড়ি, এবং ওয়াশিংটন ডিসিতে কাচ ও স্টিলের তৈরি একটি চারতলা বাড়ি। এছাড়া দুবাই, লন্ডন ও যুক্তরাষ্ট্রে তার উল্লেখযোগ্য বিনিয়োগ রয়েছে।

মেহরীন সারাহ মনসুরের বিলাসী জীবনযাপন বিষয়টি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে স্পষ্ট দেখা যায়। তার অ্যাকাউন্টে সমুদ্রসৈকতে ছুটির দিন কাটানোর, ডিজাইনার পোশাক পরিধান করার, দামি গাড়ি চালানোর এবং প্রথম শ্রেণির ফ্লাইটে ভ্রমণের নানা ছবি প্রকাশিত হয়েছে। 

৩১ জানুয়ারি, ইন্টারন্যাশনাল পলিসি ডাইজেস্টের সাংবাদিক টিম লারকিন মেহরীন সারাহ মনসুরের জীবনযাপন নিয়ে এ অনুসন্ধানী প্রতিবেদন প্রকাশ করেছেন। একই বিষয়ে এসএসটিভি ডট প্রেস নামক গণমাধ্যমেও প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়েছে।

ইন্টারন্যাশনাল পলিসি ডাইজেস্টের ওয়েবসাইটে উল্লেখ করা হয়েছে, পত্রিকাটির অফিস ভার্জেনিয়ার রিচমন্ডে অবস্থিত এবং ২০১১ সালে প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল। এর এডিটর ইন চিফ জন লাইম্যান।

প্রতিবেদনে আরও বলা হয়েছে, মেহরীন সারাহ মনসুরের শৈশব কাটে ওয়াশিংটন ডিসির কাছে।যেখানে তিনি একটি ক্যাথলিক গার্লস স্কুলে পড়াশোনা করেন এবং বিলাসী জীবনযাপনে অভ্যস্ত হন। তিনি একাধিক ফ্যাশন ম্যাগাজিনের প্রচ্ছদে স্থান পেয়েছেন, উচ্চমানের ব্র্যান্ডের পোশাক পরিধান করেছেন এবং অভিজাত চাকরি ও ব্যবসায় সুযোগ পেয়েছেন। বর্তমানে মেহরীন দুবাইয়ে বসবাস করেন এবং তাকে প্রায়ই ফ্যাশন ইভেন্ট, বিলাসবহুল গাড়ির প্রদর্শনী এবং ক্রিপ্টোকারেন্সি গালায় দেখা যায়। তিনি নিজেকে উদ্যোক্তা হিসেবে পরিচয় দেন।

তবে, তার একমাত্র জনহিতকর প্রকল্প "The Watchers Foundation", যা সুবিধাবঞ্চিত শিশুদের খাদ্য, শিক্ষা ও স্বাস্থ্যসেবা দেওয়ার প্রতিশ্রুতি দিয়েছিল, তা অনেক বছর ধরে নিষ্ক্রিয় হয়ে আছে। এর ফেসবুক পেজ ২০২৩ সাল থেকে নিষ্ক্রিয় এবং ওয়েবসাইটে লেখা রয়েছে “শীঘ্রই চালু হবে।”

জীবনের শুরুতে নিজেকে উদ্যোক্তা হিসেবে গড়ে তোলার কয়েক দফা চেষ্টা করেছেন মেহেরীন। ব্লগার, ফ্যাশন ডিজাইনার, জুয়েলারি ব্যবসায়ী- কি না হওয়ার চেষ্টা করেছেন তিনি। ২০ বছর বয়সের আগে ঢাকায় তিনি নিজেকে রেস্তোরাঁ ব্যবসায়ী হিসেবেও দাঁড় করানোর চেষ্টা করেছেন। কম মূল্যে সবার জন্য তিনি খাবারের ব্যবস্থা করতে চেয়েছিলেন। ২০২০ সালের ২৪ সেপ্টেম্বর গুলশানের হর্স অ্যান্ড হর্স রেস্তোরাঁয় অভিযান চালিয়ে বিপুল পরিমাণ বিদেশি মদ জব্দ করেছিল মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তর। ওই অভিযানের পর পরই মেয়ের পক্ষে সরব হয়েছিলেন আহসান এইচ মনসুর।

অভিযোগ রয়েছে, তৎকালীন গোয়েন্দা সংস্থার প্রভাব খাটিয়ে মেয়েকে মামলা থেকে বাদ দিয়েছেন ‘পরিচ্ছন্ন ইমেজের’ আহসান এইচ মনসুর। 

এছাড়া, ইন্টারন্যাশনাল পলিসি ডাইজেস্ট-এর অনুসন্ধানে বলা হয়েছে, দেশের একটি শীর্ষস্থানীয় দৈনিকের প্রতিবেদনে জানানো হয়েছে, আওয়ামী লীগ সরকারের মন্ত্রী-এমপি, সুবিধাভোগীসহ ৪৬১ জন বাংলাদেশির দুবাইয়ে গোপন সম্পদের মালিকদের যে তালিকা গণমাধ্যমে প্রকাশ হয়েছিল, সেখানে কিছু গুরুত্বপূর্ণ বাংলাদেশি উদ্যোক্তার নাম বাদ দেওয়া হয়। মেহরীন সারাহ মনসুর ওই তালিকায় অন্যতম।

বাংলাদেশের অর্থনৈতিক সংকট মোকাবিলা করতে যেখানে তার বাবা দায়িত্ব পালন করছেন, সেখানে মেহরীন সারাহ মনসুর দুবাইয়ে বিলাসী জীবনযাপন করছেন, যা প্রশ্ন তুলছে।

সায়মা ইসলাম

×