জাতীয় প্রেস ক্লাবের জহুর হোসেন চৌধুরী মিলনায়তনে আয়োজিত সংবর্ধনা অনুষ্ঠান
বাংলাদেশের মূলধারার গণমাধ্যমে ইসলামপ্রিয় লেখক ও সাংবাদিকদের যথাযথ মূল্যায়ন হয় না বলে মন্তব্য করেছেন দৈনিক আমার দেশ-এর সম্পাদক ড. মাহমুদুর রহমান। তিনি বলেন, বাংলাদেশে বিশিষ্টজন হতে হলে ভারতপন্থী ও ইসলামবিদ্বেষী হওয়া বাধ্যতামূলক হয়ে দাঁড়িয়েছে। তবে ৫ আগস্টের ‘জুলাই বিপ্লব’ এই বাস্তবতা বদলানোর সুযোগ সৃষ্টি করেছে।
রবিবার (২ ফেব্রুয়ারি) জাতীয় প্রেস ক্লাবের জহুর হোসেন চৌধুরী মিলনায়তনে আয়োজিত এক সংবর্ধনা অনুষ্ঠানে তিনি এসব কথা বলেন। মানারাত ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটির জার্নালিজম অ্যান্ড মিডিয়া স্টাডিজ বিভাগ* প্রতিষ্ঠার ১২তম বর্ষপূর্তি উপলক্ষে এই সংবর্ধনার আয়োজন করা হয়।
অনুষ্ঠানে দেশের তিনজন বিশিষ্ট সম্পাদককে সংবর্ধনা দেওয়া হয়। তারা হলেন:
আলমগীর মহিউদ্দীন, সম্পাদক, দৈনিক নয়া দিগন্ত
আবুল আসাদ, সম্পাদক, দৈনিক সংগ্রাম
ড. মাহমুদুর রহমান, সম্পাদক, দৈনিক আমার দেশ
অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি ছিলেন এডভোকেট মতিউর রহমান আকন্দ, যিনি মানারাত ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটির বোর্ড অব ট্রাস্টিজের অন্যতম সদস্য। সভাপতিত্ব করেন বিশ্ববিদ্যালয়ের ভারপ্রাপ্ত উপাচার্য প্রফেসর ড. মোহাম্মদ আবদুর রব।
এছাড়া, স্বাগত বক্তব্য দেন জার্নালিজম অ্যান্ড মিডিয়া স্টাডিজ বিভাগের প্রধান রফিকুজ্জামান।
শুভেচ্ছা বক্তব্য রাখেন:
বাংলাদেশ ফেডারেল সাংবাদিক ইউনিয়নের মহাসচিব কাদের গনি চৌধুরী
ঢাকা সাংবাদিক ইউনিয়নের (ডিইউজে) সভাপতি মো. শহিদুল ইসলাম
ড. মাহমুদুর রহমান বলেন, "নব্বই শতাংশ মুসলমানের দেশ হওয়া সত্ত্বেও ইসলামপ্রিয় লেখক ও সাংবাদিকরা তাদের মেধার যথাযথ মূল্যায়ন পান না। এ ক্ষেত্রে ওআইসিও কার্যকর কোনো ভূমিকা নেয়নি। মুসলিম লেখকরাও পশ্চিমা বিশ্বের পুলিৎজার কিংবা নোবেল পুরস্কারের দিকে তাকিয়ে থাকেন, যা মুসলিম বিশ্বের ব্যর্থতাকে প্রকাশ করে।"
তিনি আরও বলেন, "আবুল আসাদ ও আলমগীর মহিউদ্দীনের মতো খ্যাতনামা সাংবাদিকরা সঠিক মূল্যায়ন পাননি। তবে ৫ আগস্টের ‘জুলাই বিপ্লব’ এই বাস্তবতা বদলানোর সুযোগ তৈরি করেছে। মানারাত ইউনিভার্সিটি আজকের সংবর্ধনার মাধ্যমে সেই পরিবর্তনের উদ্যোগ নিচ্ছে।"
বাংলাদেশের সাংবাদিকতার ইতিহাস প্রসঙ্গে ড. মাহমুদুর রহমান বলেন, "১/১১-র সময় দেশে ভারতের দালাল সরকার ক্ষমতায় ছিল। অনেকে ভেবেছিলেন সেই সরকার দুর্নীতির বিরুদ্ধে লড়াই করছে। কিন্তু আমি তাদের ষড়যন্ত্র বুঝতে পেরে নয়া দিগন্ত-এর সম্পাদকীয় পাতায় নিয়মিত লিখতে শুরু করি। এর ফলে ডিজিএফআইয়ের চাপ ও হুমকির মুখেও নয়া দিগন্ত আমার লেখা প্রকাশ অব্যাহত রাখে।"
তিনি আরও বলেন, "সংগ্রাম সম্পাদক আবুল আসাদ শুধুমাত্র ইসলামপ্রিয় হওয়ার কারণে তার মেধার যথাযথ স্বীকৃতি পাননি, যা দুঃখজনক।"
সংগ্রাম সম্পাদক আবুল আসাদ বলেন, "বাংলাদেশে হলুদ সাংবাদিকতার জন্য সাংবাদিকরা দায়ী নন। বরং দায়ী তারা, যারা সাংবাদিকদের নিয়ন্ত্রণ করে কিংবা আরও ওপরের অবস্থানে রয়েছেন।"
প্রধান অতিথি এডভোকেট মতিউর রহমান আকন্দ বলেন, "সংবর্ধিত তিন গুণী সম্পাদকের মধ্যে তিনটি গুরুত্বপূর্ণ বৈশিষ্ট্য রয়েছে—সততা, দক্ষতা ও নৈতিকতা। তাদের অবদানের জন্য আমরা কৃতজ্ঞ।"
সভাপতির বক্তব্যে প্রফেসর ড. মোহাম্মদ আবদুর রব বলেন, "সংবর্ধিত তিন সম্পাদক জীবন্ত কিংবদন্তি। তাদের নতুন করে পরিচয় করিয়ে দেওয়ার প্রয়োজন নেই। তারা শুধু বাংলাদেশ নয়, পুরো এশিয়ার সাংবাদিকতার ইতিহাসকে সমৃদ্ধ করেছেন।"
অনুষ্ঠানের শেষে সংবর্ধিত তিন সম্পাদকের হাতে ক্রেস্ট তুলে দেওয়া হয়। বর্ষপূর্তি উপলক্ষে কেক কাটার মাধ্যমে অনুষ্ঠানের সমাপ্তি ঘোষণা করা হয়।
দু’দিনব্যাপী এই আয়োজনের দ্বিতীয় দিন (৩ ফেব্রুয়ারি ২০২৫, সোমবার) সকাল ১০টায় মানারাত ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটির আশুলিয়া ক্যাম্পাসে জার্নালিজম অ্যান্ড মিডিয়া স্টাডিজ বিভাগের প্রাক্তন ও বর্তমান শিক্ষার্থীদের অংশগ্রহণে সেমিনার ও মিলনমেলা অনুষ্ঠিত হবে।
সায়মা ইসলাম