
চীন এখন তৈরি করবে বিশ্বের সবচেয়ে বড় বাঁধ। যেটি হবে বড় জলবিদ্যুৎ বাঁধ। যার শক্তি হবে থ্রি গর্জেস বাঁধ এর চেয়েও তিনগুণ বেশি। যার ফলে পুরো উপমহাদেশের জীবনধারা পাল্টে যাবে।
বেজিংয়ের এই ঘোষণার পরই এবার একই নদীতে বাঁধ দেওয়ার পরিকল্পনা প্রকাশ করল ভারতও। অনেকটা পাল্টাপাল্টি বাঁধ তৈরির প্রকল্প দিল চীন ও ভারত ।বলা যায় ভারত চীনের পানি যুদ্ধ।এই বাঁধ ভারতের দক্ষিণে বাংলাদেশের উপকূলে এবং তিব্বতের মালভূমির কাছাকাছি কোটি কোটি মানুষের জীবনকে সংকটে ফেলতে পারে।
বাংলাদেশ ও ভারতের ভেতর দিয়ে বয়ে চলা এসব চুয়ান্ন টি নদীর মালিক প্রতিবেশী দুই দেশ। এসব নদীর মধ্যে ভারত অনেক নদীতেই বাঁধ দিয়ে পানি চলাচলে নিয়ন্ত্রণ করছে। যার ফলে বর্ষা মৌসুমে বাংলাদেশ বন্যা কবলিত হয়ে পড়েছে। আর শুষ্ক মৌসুমে তীব্র পানির সমস্যায় পড়ছে মাটিতে দেশটি।
আন্তঃসীমান্ত নদীতে ভারত খেয়ালখুশি মতো বাঁধ নির্মাণ করে বাংলাদেশকে পানির ন্যায্য হিস্যা থেকে বঞ্চিত করে। তেমনই আবার ভারতের উজানে চীনের অবস্থান। সেখানেও চীন নিজেদের ইচ্ছে খুশিমত ব্যারেজ নির্মাণ করছে।এশিয়ার এই অঞ্চলটি নদীর সভ্যতায় সমৃদ্ধ হলেও নদীর পানি বণ্টনে সভ্য কায়দায় হয় না বললেই চলে।
কেননা চীন, ভারত ও বাংলাদেশের মধ্য দিয়ে প্রবাহিত নদীর পানি প্রবাহ আটকে দিচ্ছে নিজের মতো করে। এক্ষেত্রে চীন সব থেকে এগিয়ে রয়েছে। তারপরই ভারত ও নদীতে ব্যারেজ দিয়ে একই কাজ করছে। আর এসব ক্ষেত্রে ভাটির দেশকে জানানোর কোনও প্রয়োজন মনে করছে না উজানের দেশগুলো।
লাদাখের সংঘাতের পর ভারতকেও কোনও তথ্য দেয়নি চীন। ভারত ও বাংলাদেশকে জানিয়ে উজানে বাঁধ নির্মাণ করছে। এ সবের মধ্যে পদ্মা নদীর উজানে গঙ্গায় বাদ দিয়েছে ভারত। তিস্তার উজানে ব্যারেজ নির্মাণ করেছে দেশটি। এই নদীর পানির হিস্যা নিয়ে দীর্ঘদিন ধরেই আলোচনায় রয়েছে। চুক্তি না হওয়ার কারণে পানি বঞ্চনার দুঃখ বাংলাদেশকে ভোগাচ্ছে প্রতি বছরই নয়।
জলবিদ্যুৎ উৎপাদনের জন্য ব্রহ্মপুত্র নদের উজানে অবস্থিত তিব্বতে বিশ্বের সবচেয়ে বড় বাঁধ নির্মাণ পরিকল্পনার অনুমোদন দিয়েছে চীন। এই বাঁধ নির্মিত হলে বর্তমান বিশ্বের বৃহত্তম জলবিদ্যুৎ কেন্দ্র হবে এটি। চীনের থ্রি গর্জেস ড্যাম এর চেয়েও তিনগুণ বেশি বিদ্যুৎ উৎপাদিত হবে নতুন এই ড্যাম থেকে।
তবে এই প্রকল্পের জেরে তিব্বতে ভাটির দেশ ভারত ও বাংলাদেশের লাখো লাখো মানুষের পানি পাওয়া নিয়ে শঙ্কা তৈরি হবে।এই বাঁধটি ইয়ারলুং জাংপো নদীর নিচের প্রবাহে নির্মাণ করা হবে। সেখান থেকে প্রতি বছর তিনশ বিলিয়ন কিলোওয়াট ঘণ্টা বিদ্যুত্ উত্ পাদন হবে। ২০২০ সালেচীনের রাষ্ট্রায়ত্ত জলবিদ্যুৎ কোম্পানি পাওয়ার কনস্ট্রাকশন কর্পোরেশন অব চায়নার দেওয়া একটি অনুমোদন থেকে এই তথ্য জানা যায়।
বর্তমানে বিশ্বের বৃহত্তম বাঁধটি হল চিনের মধ্য অঞ্চলে অবস্থিত থ্রি গর্জেস ড্যাম। এখান থেকে বছরে ৮৮ দশমিক ২ বিলিয়ন কিলোওয়াট ঘণ্টা বিদ্যুৎ উৎপাদন হয়। নতুন এই বাদে উত্পাদন ক্ষমতা থ্রি গর্জেস ড্যাম এর চেয়েও তিনগুণ বেশি হবে না৷।
ইয়ার্লুং জাংলো নদীটি গলিত হিমবাহ এবং পাহাড়ের ঝরনা থেকে উৎপত্তি। হিমালয়ের পানি রেখা দিয়ে প্রবাহিত নদীটি ভারতের অরুণাচল প্রদেশ এবং আসাম রাজ্যের মধ্য দিয়ে প্রবাহিত হয়ে বাংলাদেশে প্রবেশ করেছে। বাংলাদেশ ও ভারতে এই নদীটি ব্রহ্মপুত্র নামে পরিচিত। এই কারণে ভারত ও বাংলাদেশ এই বাঁধ নির্মাণ নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছে। প্রকল্পটি স্থানীয় বাস্তুতন্ত্র ও নদীর নিম্ন ধারে পানির প্রবাহ ও পথ পরিবর্তন করতে পারে বলে নিজেদের শঙ্কার কথা জানিয়েছে দেশ দুটি।
তবে চীনের দাবি তিব্বতে জলবিদ্যুত্ প্রকল্প গুলো পরিবেশ বা নদীর নিম্নপ্রবাহে পানির সরবরাহের উপর কোনও বড় রকমের প্রভাব ফেলবে না। ইয়ারলুং নদী বা ব্রহ্মপুত্রের উজানে চীন এরই মধ্যে জলবিদ্যুৎ উৎপাদন শুরু করেছে এবং আরও প্রকল্পের পরিকল্পনা করছে দেশটি ।
আন্তর্জাতিক গণমাধ্যমে এটিকে সুপার ড্যাম বলা হচ্ছে। জলবিদ্যুৎ প্রকল্পটি চীনের বৃহত্তম থ্রি গর্জেস ড্যাম এর চেয়েও তিনগুণ এবং বিশ্বের মধ্যে সবচেয়ে বড় জলবিদ্যুৎ প্রকল্প। এখানে ৬০ মিলিয়ন কিলোওয়াট অর্থাৎ ৬০ গিগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদন হবে যা বিরাট দক্ষযজ্ঞ।
তিব্বতের শান্নান জেলা থেকে বাদ দিয়ে ব্রহ্মপুত্রের পানি আটকিয়ে জলাভাবে থাকা উত্তর পশ্চিম ও উত্তরাঞ্চলের নেওয়ার কথা রয়েছে।ন তিব্বত ছাড়াও চিন, ভারত, ভুটান এবং বাংলাদেশের মধ্য দিয়ে নিম্নমুখী প্রবাহিত হয়। ইয়ার্লুং জাংবো নদীটি যা ব্রহ্মপুত্র নামে ভারতের অরুণাচল প্রদেশ এবং আসাম হয়ে প্রবেশ করে বাংলাদেশে বিরল এই নদীর নিম্ন ভাগে বাঁধ নির্মানের সিদ্ধান্ত ঘিরে ব্যাপক উদ্বেগ তৈরি হচ্ছে। ভাটির দেশ গুলোতে সংখ্যা৷ বাটির কারণে পাল্টে যেতে পারে নদীর নিম্নভাগের পানি প্রবাহ এবং গতিপথ।যাতে নেতিবাচক প্রভাব পরতে পারে ভারত এবং বাংলাদেশে। ধারণা করা হচ্ছে বাঁধটি নির্মাণের ফলে বাস্তুচ্যুত হতে পারে৷ বহু মানুষ এমনকি ঝুঁকিতে পড়তে পারে তিব্বতের নিম্নভাগের পানি সরবরাহ ব্যবস্থায় নয়।
বেজিংয়ের এই ঘোষণার পর এবার একই নদীতে বাঁধ দেওয়ার পরিকল্পনা প্রকাশ করল ভারতও। অনেকটা পাল্টাপাল্টি প্রকল্প দিলেও চীন ও ভারত বিশ্বের এই দুই পরাশক্তি চীন ও ভারত বাঁধ নির্মাণে একই অবস্থানে অবস্থান করছে। ভারতের অরুণাচল রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী পেমা খান্ডু সিয়াং আপার মাল্টিপারপাস প্রজেক্ট বাস্তবায়নের কথা জানিয়েছেন। চীনের পর ব্রহ্মপুত্র নদে ভারত বাদ দিলে সঙ্কটে পড়বে ভাটির বাস্তুতন্ত্র।
৩ দেশের মধ্যে দিয়ে প্রবাহিত আন্তর্জাতিক নদী ব্রহ্মপুত্রে চিনের প্রকল্পে ব্যয় হবে আনুমানিক ১,১৩,০০০ কোটি রুপি ভারতীয় সংবাদমাধ্যম দ্য হিন্দুর প্রতিবেদন থেকে এ তথ্য জানা গেছে। এই বাঁধ ভ্রমণ পুত্র নদীর প্রবাহ পরিবর্তন করতে পারে।
এতে ভারতের উত্তরপূর্বাঞ্চলীয় রাজ্যগুলো বিশেষ করে অরুণাচল প্রদেশ ও আসামের কৃষি, জলবিদ্যুৎ উৎপাদন এবং পানির প্রাপ্যতা বাধাগ্রস্ত হবে বলে জানিয়েছে আন্তর্জাতিক প্রাণী বিশেষজ্ঞরা।
পদ্মা ছাড়া বাংলাদেশের আরেক বিরোধ নদী ব্যবস্থা হল ব্রহ্মপুত্র। হিমালয় পর্বত দেশের মতোই চীনের তিব্বত থেকে নেমে ভারতের অরুণাচল এবং আসাম প্রদেশ হয়ে বাংলাদেশের একদম বুক চিরে প্রবাহিত হচ্ছে। এমনিতেই দীর্ঘদিন ধরে তিস্তা নদীর পানির ন্যায্য হিস্যা নিয়ে বাংলাদেশ ভারতের মধ্যে আলোচনার টেবিল পর্যন্ত আটকে রয়েছে। এর কোনও সুরাহা হচ্ছে না। তার উপর চীন এই নদীর উজানে বাঁধ নির্মাণ করে নতুন করে সমস্যার জন্ম দিল।এতে করে ভারতে ব্যাপক ক্ষতি হবে বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা। তেমনই ভাটির দেশ বাংলাদেশেও এই বাঁধের প্রভাব পড়বে বলে মনে করছেন তারা।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, চীন, ভারত এবং বাংলাদেশের মধ্যে পানি বণ্টন নিয়ে একটি সমন্বিত কৌশল প্রয়োজন। তা না হলে ভবিষ্যতে এই বাঁধ প্রকল্প দক্ষিণ এশিয়ায় নতুন সঙ্কটের জন্ম দিতে পারে।
ফুয়াদ