ঢাকা, বাংলাদেশ   রোববার ০২ ফেব্রুয়ারি ২০২৫, ১৯ মাঘ ১৪৩১

তরুণরা বিশ্বকে পাল্টে দিতে পারে ॥ প্রধান উপদেষ্টা

বিশেষ প্রতিনিধি

প্রকাশিত: ২৩:৫৭, ১ ফেব্রুয়ারি ২০২৫

তরুণরা বিশ্বকে পাল্টে দিতে পারে ॥ প্রধান উপদেষ্টা

প্রধান উপদেষ্টা

প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূস তরুণদের উদ্দেশ করে বলেছেন, তরুণরা অসীম সম্ভাবনাময় এবং তারা পুরো বিশ্বকে পাল্টে দিতে পারে। আমরা (তরুণরা) কেবল কয়েক বছরের মধ্যে পুরো বিশ্বকে পাল্টে দিতে পারি। এই কক্ষে যারা বসে আছেন, তাদের দিয়েই এটি সম্ভব। এটি খুব সহজ একটি কাজ।
শনিবার ঢাকায় হোটেল ইন্টারকন্টিনেন্টালে ৯ম সোশ্যাল বিজনেস ইয়ুথ সামিটে বক্তৃতাকালে তিনি এসব কথা বলেন। সামিটে ২৫টি দেশের প্রতিনিধিরা অংশগ্রহণ করছেন।
প্রধান উপদেষ্টা বলেন, ‘হাজার মাইলের যাত্রা শুরু হয় প্রথম পদক্ষেপ দিয়ে, কিন্তু আসল প্রশ্ন হলো দ্বিতীয় পদক্ষেপে কীভাবে আরও উন্নতি করা যায়।’
জুলাই বিপ্লবের সময় ছাত্র-জনতার আত্মত্যাগের কথা উল্লেখ করে অধ্যাপক ইউনূস বলেন, ‘একটি ফ্যাসিবাদী শাসনকে উৎখাত করতে এক হাজারেরও বেশি তরুণ তাদের জীবন উৎসর্গ করেছেন, আর আহতদের অনেকে হাত-পা হারিয়েছেন।
তাদের এই আত্মত্যাগ কেবল একটি নতুন বাংলাদেশ গড়ার লক্ষ্যে।’
জুলাই বিপ্লবকে ঐতিহাসিক আন্দোলন আখ্যা দিয়ে ড. ইউনূস বলেন, ‘আজ পুরো দেশই একধরনের জাদুঘরে পরিণত হয়েছে এবং জাতি তরুণদের স্বপ্ন বাস্তবায়নের জন্য প্রতিশ্রুতিবদ্ধ।’ 
তরুণদের আত্মত্যাগের বিনিময়ে অর্জিত নতুন বাংলাদেশে প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস বিশ্বের ২৫টি দেশ থেকে আগত প্রতিনিধিদের স্বাগত জানান।
তরুণদের ভালো কিছু করার স্বপ্ন দেখার আহ্বান জানিয়ে প্রধান উপদেষ্টা বলেন, ‘আপনারা ৯ম সোশ্যাল বিজনেস ইয়ুথ সামিটে অংশগ্রহণ করেছেন। আপনারা প্রথম ধাপ সম্পন্ন করেছেন। এখন প্রশ্ন হলো, আমরা দ্বিতীয় ধাপে কীভাবে নিজেদের আরও উন্নত করতে পারি। তৃতীয় ধাপে কীভাবে আরও আত্মবিশ্বাসী হতে পারি। এই ধাপগুলো গ্রহণের মাধ্যমে হাজার মাইলের যাত্রা সম্পন্ন হবে এবং আমরা এই যাত্রা সফলতার সঙ্গে সম্পন্ন করতে পারব বলে বিশ্বাস করি।’
তিনি তরুণদের উদ্দেশে বলেন, ‘আপনারা যদি চিন্তা করেন, স্বপ্ন দেখেন, তাহলে তা ঘটবেই। আপনি যদি স্বপ্ন না দেখেন, তাহলে তা কখনোই ঘটবে না।’
ক্ষুদ্রঋণের যাত্রার কথা স্মরণ করে অধ্যাপক ড. ইউনূস বলেন, ডায়রিয়ার প্রকোপের সময় আমরা ওরাল স্যালাইন তৈরির একটি সহজ ফর্মুলা তৈরি করি এবং মানুষকে এটি তৈরি করার উপায় জানাই, যাতে এই মহামারি প্রতিরোধ করা যায়। তিনি বলেন, সামাজিক ব্যবসা খুবই সহজ ধারণা।

ব্যবসা মানে শুধু লাভ বৃদ্ধি করা নয়; আরেক ধরনের ব্যবসা হতে পারে এমন একটি ব্যবসা যা সামাজিক সমস্যার সমাধান করবে। টাকা উপার্জন করা হয়তো আনন্দের, কিন্তু অন্যকে খুশি করা হলো পরম আনন্দের। আর সে কারণেই সামাজিক ব্যবসার ধারণা এসেছে।
স্বাস্থ্য খাতকে সামাজিক ব্যবসার একটি বৃহৎ ক্ষেত্র উল্লেখ করে প্রধান উপদেষ্টা বলেন, ফার্মাসিউটিক্যাল শিল্প একটি সামাজিক ব্যবসা হওয়া উচিত, কারণ এটি মানুষের জীবনের সঙ্গে জড়িত। তিনি সবাইকে তাদের চিন্তাভাবনার মধ্যে সামাজিক ব্যবসার ধারণা অন্তর্ভুক্ত করার আহ্বান জানিয়ে বলেন, ‘মানুষ এটি করবে, কারণ অন্যের সমস্যা সমাধান করাই পরম আনন্দের উৎস।’
তরুণদের সামাজিক ব্যবসার উদ্যোগ নিয়ে আসার আহ্বান জানিয়ে অধ্যাপক ইউনূস বলেন, ‘দাতব্য কার্যক্রমের একটি মাত্র জীবনচক্র থাকে, কিন্তু সামাজিক ব্যবসার জীবনচক্র অন্তহীন। এক হলো- সমস্যার সমাধান করা যায়, কিন্তু টাকা বারবার পুনরায় ঘুরে আসতে থাকে। আমরা যেমন নতুন বাংলাদেশ গড়ছি, তেমনি আমরা একটি নতুন বিশ্ব গড়ারও প্রতিশ্রুতি নিচ্ছি।’

×