ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ০৭ মার্চ ২০২৫, ২৩ ফাল্গুন ১৪৩১

বিশ্ব ইজতেমায় এবার হলো ৩৬টি যৌতুকবিহীন বিয়ে

আখেরি মোনাজাত আজ দ্বিতীয় পর্ব শুরু কাল

মোস্তাফিজুর রহমান টিটু/নুরুল ইসলাম, টঙ্গীর বিশ্ব ইজতেমা ময়দান থেকে

প্রকাশিত: ২৩:০২, ১ ফেব্রুয়ারি ২০২৫

আখেরি মোনাজাত আজ দ্বিতীয় পর্ব শুরু কাল

বিশ্ব ইজতেমায় আখেরি মোনাজাত আজ

কহর দরিয়াখ্যাত টঙ্গীর তুরাগ পাড়ের বিশ্ব ইজতেমাস্থল এখন দেশ-বিদেশের লাখ লাখ মুসল্লিদের পদচারণায় মুখরিত। শিল্প নগরী টঙ্গী এখন যেন ধর্মীয় নগরীতে পরিণত হয়েছে। এ পর্বের দ্বিতীয় দিন শনিবার অনুষ্ঠিত হয়েছে বিশ্ব ইজতেমার অন্যতম আকর্ষণ যৌতুকবিহীন বিয়ে। রবিবার আখেরি মোনাজাতের মধ্য দিয়ে শেষ হবে মুসলিম বিশ্বের দ্বিতীয় বৃহত্তম জমায়েত এবারের বিশ্ব ইজতেমার প্রথম পর্বের প্রথম ধাপের তিনদিন।

এদিন সকাল ৯টা হতে সাড়ে ৯টার মধ্যে আখেরি মোনাজাত অনুষ্ঠিত হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। বিশ্ব তবলিগ জামাতের শীর্ষ মুরব্বি বাংলাদেশের হাফেজ মাওলানা জোবায়ের আখেরি মোনাজাত পরিচালনা করবেন বলে জানিয়েছে আয়োজক কমিটি। ইজতেমা ময়দানে বিদেশী নিবাসের পূর্বপাশে বিশেষভাবে স্থাপিত মঞ্চ থেকে এ মোনাজাত পরিচালনা করা হবে।

মোনাজাতে বিশে^র সকল মানুষের সুখ, শান্তি ও কল্যাণ কামনা করে দোয়া করা হয়। এতে প্রায় ২৫-৩০ লাখ ধর্মপ্রাণ মুসল্লি অংশ নেবেন বলে আশা করছেন ইজতেমা আয়োজক কমিটি। এদিকে আখেরি মোনাজাতে মুসল্লিদের আসা ও যাওয়া নিরাপদ করতে শনিবার দিবাগত মধ্যরাত থেকে মোনাজাত অনুষ্ঠান পর্যন্ত ইজতেমা ময়দানগামী সড়কসমূহে যানবাহন চলাচলে বিধিনিষেধ আরোপ করেছে পুলিশ।
এবারের ইজতেমার প্রথম পর্বের প্রথম ধাপের দ্বিতীয় দিন শনিবার আল্লাহ প্রদত্ত বিধিবিধান ও রাসূল (স) প্রদর্শিত তরিকা অনুযায়ী জীবন গড়ার আহ্বান জানিয়ে দেশ-বিদেশের লাখ লাখ ধর্মপ্রাণ মুসল্লি জিকির আসকার, ইবাদত বন্দেগি আর ধর্মীয় ভাবগম্ভীর পরিবেশে পবিত্র কুরআনের আলোকে গুরুত্বপূর্ণ বয়ানের মধ্য দিয়ে অতিবাহিত করেছেন। মহান আল্লাহ তায়ালার নৈকট্য লাভের ব্যাকুলতায় দ্বীনের দাওয়াতে মেহনত করার জন্য ইসলামের মর্মবাণী সর্বত্র পৌঁছে দেওয়ার লক্ষ্য নিয়ে ধর্মপ্রাণ মুসল্লিরা দলে দলে ছুটে আসছেন টঙ্গীর তুরাগ তীর ইজতেমা ময়দানে।

শনিবারও টঙ্গী অভিমুখী বাস, ট্রাক, ট্রেন, লঞ্চসহ বিভিন্ন যানবাহনে ছিল মানুষের ভিড়। রবিবার আখেরি মোনাজাতের আগ পর্যন্ত মানুষের এ ঢল অব্যাহত থাকবে। ইতোমধ্যে ইজতেমা ময়দান পূর্ণ হয়ে গেছে। মূল প্যান্ডেলে স্থান না পেয়ে অনেক মুসল্লি নিজ উদ্যোগেই প্যান্ডেলের বাইরে পলিথিন সিট ও কাপড়ের শামিয়ানা টানিয়ে তাতেই অবস্থান নিয়েছেন। সৃষ্টিকর্তার বন্দনা, আরজ-গুজার, শোকরানা আর ইবাদত বন্দিগীতে মশগুল মানুষের কলরব।

সৃষ্টিকর্তার দিদার লাভের জন্য ধর্মপ্রাণ মুসলমানরা হেঁটে, বাস ও ট্রেনে করে টঙ্গীর তুরাগ তীরে বিশ্ব ইজতেমা ময়দানে সমবেত হয়েছেন। ইজতেমা মাঠে উপস্থিত লাখ লাখ মুসল্লির উদ্দেশে যথারীতি তবলিগের ছয় উসুল অর্থাৎ কালেমা, নামাজ, এলেম ও জিকির, একরামুল মুসলেমিন, সহীহ নিয়ত ও তবলিগ বিষয়ে আমবয়ানের মাধ্যমে ইজতেমার প্রথম পর্বের দ্বিতীয় দিন (প্রথম ধাপ) শনিবার অতিবাহিত করছেন মুসল্লিরা।
ইজতেমার মুরব্বিরা জানান, আগে একপর্বে বিশ্ব ইজতেমা অনুষ্ঠিত হলেও মতপার্থক্যের কারণে গত ২০১৫ সাল হতে দেশের একাধিক পর্বে বিভক্ত করে ইজতেমার আয়োজন করা হচ্ছে। এবারেও ইজতেমা দুই ভাগে (পর্ব) অনুষ্ঠিত হচ্ছে। প্রথম পর্বের নেতৃত্বে থাকছেন শূরায়ী নেজামের (জোবায়েরপন্থি) তবলিগ অনুসারীগণ। ছয় দিনব্যাপী এ পর্বের ইজতেমা আবার দুটি ধাপে অনুষ্ঠিত হচ্ছে।

এরপর ১৪ ফেব্রুয়ারি থেকে দ্বিতীয় পর্বে মাওলানা সাদপন্থিদের তিনদিনের ইজতেমা হওয়ার কথা রয়েছে। ইজতেমার প্রথম পর্বের প্রথম ধাপে ৪২ জেলার মুসল্লিরা অংশগ্রহণ করছেন। বাকি ২২ জেলার মুসল্লিরা আগামী ৩ থেকে ৫ ফেব্রুয়ারি অনুষ্ঠিত ইজতেমার প্রথম পর্বের দ্বিতীয় ধাপে অংশগ্রহণ করবেন।
শনিবার বয়ান করলেন যারা ॥ ইজতেমায় জোবায়ের অনুসারীদের মিডিয়া সমন্বয়কারীর দায়িত্বে থাকা মো. হাবিবুল্লাহ রায়হান জানান, নির্ধারিত কর্মসূচি অনুযায়ি বিশ্ব ইজতেমার প্রথম পর্বের দ্বিতীয় দিন শনিবার মুসল্লিদের উদ্দেশে বাদ ফজর বয়ান করেন পাকিস্তানের মাওলানা খোরশেদ। এরপর বাদ জোহর বয়ান করেন ভারতের মাওলানা ইসমাইল গোদরা। বাদ আছর বয়ান করেন ভারতের মাওলানা জুহাইরুল হাছান।

বয়ান শেষে তিনি যৌতুকবিহীন বিয়ে পড়ান। এরপর বাদ মাগরিব বয়ান করেন ভারতের মাওলানা ইব্রাহিম দেওলা। এর আগে সকাল ১০টায় ইজতেমা ময়দানের খিত্তায় খিত্তায় মুসল্লিদের তালিম হয়। ভারতের মাওলানা ইব্রাহিম দেওলা ওলামাদের উদ্দেশে বিশেষ বয়ান করেন। ভারতের অপর মুরব্বি মাওলানা আকবর শরিফ তলাবাদের (মাদ্রাসার ছাত্রদের) উদ্দেশ্যে নামাজের মিম্বরে বয়ান করেন।
তিনি আরও জানান, এ পর্বের আখেরি মোনাজাতের দিন রবিবার বাদ ফজর বয়ান করবেন ভারতের মাওলানা আব্দুর রহমান। তাঁর বয়ানের পর হতে আখেরি মোনাজাত পর্যন্ত নসিহতমূলক বক্তব্য দেবেন ভারতের মাওলানা ইব্রাহিম দেওলা। 
যা বয়ান করলেন ॥  তবলিগ জামাতের মুরব্বিগণ ইজতেমার সুবিশাল ময়দানে সমবেত দেশ-বিদেশের লাখ লাখ মুসল্লির উদ্দেশে তবলিগের ছয় উসুল যথা কালিমা, নামাজ, ইলম ও জিকির, ইকরামুল মুসলিমিন, তাসহিয়ে নিয়ত এবং তবলিগ সম্পর্কে গুরুত্বপূর্ণ বয়ান করেন। বয়ানে তবলিগ মুরব্বিরা বলেন, যতদিন দ্বীন থাকবে, তত দিন দুনিয়া থাকবে। আর দ্বীন টিকে থাকবে দাওয়াতের মাধ্যমে।

যুগে যুগে নবী-রাসূলগণ দ্বীনের দাওয়াতের কাজ করে গেছেন। ফেরাউনের কাছেও দ্বীনের দাওয়াত পৌঁছে দিতে আল্লাহ্ হজরত মুসা (আ.)-কে পাঠিয়েছিলেন। আল্লাহ যাল্লে জালালুহু নবী-রাসুলদের তাদের নিজের পরিবার ও বিভিন্ন গোত্রের মানুষের কাছে দ্বীনের দাওয়াত দেওয়ার জন্য পাঠিয়েছেন। আখেরি নবী হজরত মুহম্মদ মোস্তফা (সা)-কে সারা দুনিয়ায় দ্বীনের দাওয়াত দেওয়ার জন্য পাঠিয়েছিলেন। আজ তিনি নেই। এ কাজের জিম্মাদারি এখন তার উম্মতের ওপর।
শেষ দিনের আখেরি মোনাজাত ও বয়ান ॥  বিশ্ব তবলিগ জামাতের প্রথম পর্বের শেষদিন রবিবার শীর্ষ মুরব্বি বাংলাদেশের হাফেজ মাওলানা জোবায়ের আখেরি মোনাজাত পরিচালনা করবেন বলে জানিয়েছেন আয়োজক কমিটি। এর আগে সকালে হেদায়াতি বয়ান ও বিশেষ নসিহত করা হবে। 
বয়ানের তাৎক্ষণিক অনুবাদ ॥ বিশ্ব ইজতেমায় বাংলাদেশ, ভারত ও পাকিস্তানের তবলিগ মারকাজের ১৫-২০ জন শূরা সদস্য ও বুজর্গ বয়ান পেশ করেন। মূল বয়ান উর্দুতে হলেও বাংলা, ইংরেজি, আরবি, তামিল, মালয়, তুর্কি ও ফরাসি ভাষায় তাৎক্ষণিক অনুবাদ হচ্ছে।

বিভিন্ন ভাষাভাষি মুসল্লিরা আলাদা আলাদা বসেন এবং তাদের মধ্যে একজন করে মুরব্বি মূল বয়ানকে তাৎক্ষণিক অনুবাদ করে শোনান। মূল বক্তা বয়ানের একটি নির্দিষ্ট অংশ শেষ করার পর অনুবাদের জন্য বিরতি দেন। অনুবাদ শেষ হলে তিনি আবার বয়ান শুরু করেন। এভাবেই ইজতেমা ময়দানে তবলিগ জামাতের মুরব্বিদের বয়ান চলে। 
যৌতুকবিহীন বিয়ে ॥ বিশ্ব ইজতেমার অন্যতম আকর্ষণ যৌতুকবিহীন বিয়ে। সম্পূর্ণ শরিয়ত মেনে তবলিগের রেওয়াজ অনুযায়ী ইজতেমার দ্বিতীয় দিন শনিবার বাদ আছর ইজতেমার বয়ান মঞ্চের পাশেই বসে যৌতুকবিহীন বিয়ের আসর। এ আসরে ৬৩টি বিয়ে অনুষ্ঠিত হয়। ভারতের মাওলানা জুহাইরুল হাসান এসব বিয়ে পড়ান। তবলিগের রেওয়াজ অনুযায়ী ইজতেমার দ্বিতীয় দিন বাদ আছর বয়ান মঞ্চের পাশে বসে যৌতুকবিহীন বিয়ের আসর।

কনের সম্মতিতে ও তার অনুপস্থিতিতে বর এবং কনে পক্ষের লোকজনের উপস্থিতিতে অনুষ্ঠিত হয় ওই বিয়ে। বিয়েতে মোহরানা ধার্য করা হয় ‘মোহর ফাতেমী’র নিয়মানুযায়ী। এ নিয়ম অনুযায়ী মোহরানার পরিমাণ ধরা হয় দেড়শ’ তোলা রুপা বা উহার সমমূল্য অর্থ। বিয়ের পর নব-দম্পতিদের সুখ-সমৃদ্ধিময় জীবন কামনা করে আল্লাহ রাব্বুল আলামিনের দরবারে দোয়া করে মোনাজাত করা হয়। এ সময় মঞ্চের আশপাশের মুসল্লিদের মাঝে খুরমা খেজুর ও মিষ্টি বিতরণ করা হয়।
তাশকিলের কামরায় চিল্লাভুক্ত মুসল্লি ॥ ইজতেমার প্যান্ডেলের উত্তর-পশ্চিমে তাশকিলের কামরা স্থাপন করা হয়েছে। বিভিন্ন খিত্তা থেকে বিভিন্ন মেয়াদে চিল্লায় অংশগ্রহণেচ্ছু মুসল্লিদের এ কামরায় আনা হচ্ছে এবং তালিকাভুক্ত করা হচ্ছে। পরে কাকরাইলের মসজিদের তবলিগি মুরব্বিদের চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত অনুযায়ী এলাকা ভাগ করে তাদের দেশের বিভিন্ন এলাকায় তবলিগি কাজে পাঠানো হবে। 
আখেরি মোনাজাতের প্রস্তুতি ॥ বিশ^ ইজতেমার মিডিয়া সমন্বয়ক মো. হাবিবুল্লাহ রায়হান জানান, রবিবার অনুষ্ঠিত হবে ইজতেমার মূল আকর্ষণ আখেরি মোনাজাত। ইজতেমা মাঠের বিদেশী নিবাসের পূর্বপাশে বিশেষ মোনাজাত মঞ্চ থেকে রবিবার সকাল সাড়ে ১০টার মধ্যে আখেরি মোনাজাত শুরু হওয়ার কথা রয়েছে। এর আগে হবে হেদায়তি বয়ান। রবিবার আখেরি মোনাজাতের আগ পর্যন্ত মুসল্লিদের ঢল অব্যাহত থাকবে।

ইজতেমার আখেরি মোনাজাতে শরিক হতে বিপুল সংখ্যক মহিলা টঙ্গীর আশপাশে এসে ইতোমধ্যে অবস্থান নিয়েছেন। অনেকে তাদের আত্মীয়স্বজনদের বাড়িতে উঠেছেন। রবিবার হেদায়তি বয়ান ও আখেরি মোনাজাতের মধ্য দিয়ে শেষ হবে এবারের বিশ্ব ইজতেমার প্রথম পর্বের তিন দিনের প্রথম দফা। এরপর সোমবার হতে শুরু হবে তিনদিনের বিশ্ব ইজতেমার দ্বিতীয় দফা। 
এবার প্রায় ৬ হাজার জামাত তবলিগের দাওয়াত নিয়ে বিশ্বে ছড়িয়ে পড়বে ॥ ইজতেমার মিডিয়া সমন্বয়ক মো. হাবিবুল্লাহ রায়হান বলেন, তবলিগের একমাত্র কাজই আল্লাহর পথে মানুষকে ডাকা। রাসূল (সা)-এর বিদায় হজের ভাষণের মূল বাণী হিসেবে আমরা আল্লাহর পথে ডেকে থাকি। আল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জনই এর একমাত্র লক্ষ্য। একমাত্র আল্লাহ্ রাব্বুল আলামিনের একক আনুকূল্যে এই ইজতেমা হয়ে থাকে।

টঙ্গীর এই ইজতেমা থেকেই বিশ্বের অন্তত ১৫০টি দেশে দাওয়াতের এই কাজ করা হয়। প্রতি বছর টঙ্গী ইজতেমা থেকেই পাঁচ থেকে ছয় হাজার জামাত বিশ্বব্যাপী পাঠানো হয়। আগত বছরের বিশাল কর্মযজ্ঞের পরিকল্পনা টঙ্গী থেকেই হয়। তিনি সকল মুসলমানদের কিছুটা সময় হলেও ইজতেমায় ব্যয় করার অনুরোধ জানিয়ে বলেন, এবারও প্রায় ছয় হাজার জামাত বিশ্বের বিভিন্ন দেশে তবলিগের কাজে বেরিয়ে যাবে। 
আরও এক মুসল্লির মৃত্যু ॥ বিশ^ ইজতেমা ময়দানে আগত আরও এক মুসল্লি শুক্রবার মারা গেছেন। তার নাম ইয়াকুব আলী (৬০)। তিনি হবিগঞ্জের বাহুবল থানার রাঘবপুর এলাকার মৃত নওয়াব উল্লার ছেলে। এ নিয়ে ইজতেমা ময়দানে আগত মোট ৪ জন মুসল্লি শনিবার বিকেল পর্যন্ত মারা গেছেন। তাদের প্রায় সবাই হৃদরোগ ও শ্বাসকষ্টজনিত রোগে ভুগছিলেন বলে জানিয়েছেন ইজতেমা ময়দানের জিম্মাদার।  
ফ্রি-মেডিক্যাল ক্যাম্পে চিকিৎসা ॥ শনিবার সকাল থেকে ইজতেমা ময়দান সংলগ্ন ফ্রি-মেডিক্যাল ক্যাম্পগুলোতে মুসল্লিদের চিকিৎসা নিতে ভিড় দেখা গেছে। মুসল্লিদের স্বাস্থ্য সেবা প্রদানের জন্য ময়দানের আশপাশে বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান ও সংগঠনের পক্ষ থেকে স্থাপিত ফ্রি মেডিক্যাল ক্যাম্পে চিকিৎসকরা সেবা দিচ্ছেন। এসব চিকিৎসা ক্যাম্পে চিকিৎসা নিতে আসা অসুস্থদের অধিকাংশই ঠান্ডা, সর্দি, কাশি, আমাশয়, শ্বাসকষ্টের রোগী।   
বিশেষ ট্রেন ॥ বিশ্ব ইজতেমা উপলক্ষে বাংলাদেশ রেলওয়ের পক্ষ থেকে আখেরি মোনাজাত উপলক্ষে আখাউড়া, কুমিল্লা ও ময়মনসিংহসহ বিভিন্ন রুটে বিশেষ ট্রেনের ব্যবস্থা করা হয়েছে। এ ছাড়া আখেরি মোনাজাতের আগে ও পরে সকল ট্রেন টঙ্গী স্টেশনে যাত্রা বিরতি করবে বলে জানিয়েছেন টঙ্গীর রেলওয়ে স্টেশনের কর্মকর্তা।
বিশ্ব ইজতেমায় বিদেশী মুসল্লি ॥ গাজীপুর মেট্রোপলিটন পুলিশের এক সূত্র জানায়, শনিবার সকাল পর্যন্ত বিশ্বের অর্ধশতাধিক দেশের কয়েক হাজার সংখ্যক বিদেশী মুসল্লি ইতোমধ্যে ইজতেমায় অংশ নিয়েছেন। আরও বিদেশী মেহমান টঙ্গীর পথে রয়েছেন। বিভিন্ন ভাষাভাষী ও মহাদেশ অনুসারে ইজতেমা ময়দানে বিদেশী মেহমানদের জন্য পৃথক বিদেশী নিবাস নির্মাণ করা হয়েছে। সেখানে তাদের জন্য প্রয়োজনীয় সুযোগ-সুবিধার পাশাপাশি নিরাপত্তা ব্যবস্থা রাখা হয়েছে। 
আখেরি মোনাজাত উপলক্ষে বাড়তি নিরাপত্তা ও জিএমপি কমিশনারের প্রেস ব্রিফিং ॥ শনিবার মেট্রোপলিটন পুলিশ (জিএমপির) কমিশনার ড. নাজমুল করিম খান এক প্রেস ব্রিফিংয়ে জানান, এ পর্যন্ত বিশ্ব ইজতেমায় কোনো নিরাপত্তা ঝুঁকি ছিল না। বিশ্ব ইজতেমার আখেরি মোনাজাত উপলক্ষে গাজীপুর পুলিশ প্রশাসন বাড়তি নিরাপত্তা ব্যবস্থা নিয়েছে।

ঢেলে সাজানো হয়েছে ট্রাফিক বিভাগকে। যানজট নিয়ন্ত্রণে নানামুখী পরিকল্পনা রয়েছে। আখেরি মোনাজাতে অংশ নিতে মুসল্লিরা যেহেতু ইজতেমা ময়দানে আসবেন, সেহেতু শনিবার মধ্যরাত থেকে কয়েকটি সড়কে যানবাহন চলাচলে বিধিনিষেধাজ্ঞা আরোপ করা হয়েছে। এ উপলক্ষে শনিবার দিবাগত রাত ১২টার পর হতে ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়কের টঙ্গী থেকে ভোগড়া বাইপাস, টঙ্গী-কালীগঞ্জ সড়কের স্টেশন রোড হতে মীরের বাজার সড়ক এবং আব্দুল্লাহপুর ব্রিজ থেকে আশুলিয়ার বাইপাইল ও টঙ্গীর স্টেশন রোড হয়ে কামারপাড়া সড়কে সকল ধরনের যানবাহন চলাচল বন্ধ থাকবে।

তবে এসব রুটের যানবাহন বিকল্প পথে গন্তব্যের উদ্দেশে চলাচল করবে। আখেরি মোনাজাতের দিন রবিবার সকাল থেকে মুসল্লিদের সুবিধার্থে গাজীপুরের ভোগড়া বাইপাস মোড় থেকে ইজতেমাস্থল পর্যন্ত কিছু শাটল বাস চলাচল করবে। 
এ সময় তিনি বলেন, রবিবার সকাল ৯টা হতে সাড়ে ৯টার মধ্যে আখেরি মোনাজাত অনুষ্ঠিত হবে বলে জানিয়েছেন ইজতেমার মুরব্বিরা। 
শূরায়ে নেজামের প্রেস ব্রিফিং ॥ এদিকে শনিবার দুপুরে শূরায়ে নেজামের পক্ষ থেকে পৃথক এক প্রেস ব্রিফিংয়ে সরকারের প্রতি কৃতজ্ঞতা জানিয়ে শূরায়ে নেজামের শীর্ষ মুরব্বি মুফতি কেফায়তুল্লাহ আজহারী বলেন, আমরা এই সরকারের প্রতি কৃতজ্ঞতা জানাই। বিগত সরকার আমাদের দাবি সত্ত্বেও দুই পর্বে ইজতেমা করতে দেয়নি। ফলে আমাদের ইজতেমায় অনেক মানুষের সমাগম হতে পারেনি। 
আয়োজক সূত্রে জানা গেছে, রাজধানীর কাকরাইল জামে মসজিদে প্রথম বিশ্ব ইজতেমার প্রচলন শুরু হয় ১৯৪৬ সালে। এরপর ১৯৪৮ সালে বিশ্ব ইজতেমা অনুষ্ঠিত হয় চট্টগ্রামে। ১৯৫৮ সালে অনুষ্ঠিত হয় নারায়ণগঞ্জের সিদ্ধিরগঞ্জে। ১৯৬৬ সাল থেকে গাজীপুরের শিল্প নগরী টঙ্গীর তুরাগ তীরে বিশ্বের দ্বিতীয় বৃহত্তম মুসলিম জমায়েত অনুষ্ঠিত হয়ে আসছে। সব মিলিয়ে ধারবাহিকভাবে বিশ্ব ইজতেমা পরিচালিত হচ্ছে।

×