ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ০১ ফেব্রুয়ারি ২০২৫, ১৮ মাঘ ১৪৩১

রাজনীতিবিদরা বলে সাথে আছি, বাইরে গিয়ে নিজের মত কথা বলে

প্রকাশিত: ০০:২৩, ১ ফেব্রুয়ারি ২০২৫

রাজনীতিবিদরা বলে সাথে আছি, বাইরে গিয়ে নিজের মত কথা বলে

ছবি : সংগৃহীত

যদি ওইভাবে চিন্তা করেন যে, ইউনুস সাহেবকে নির্বাচন, রাজনৈতিক দল যারা নির্বাচন চায়, যৌক্তিক, তারা চাইবেই। কিন্তু আমার ব্যক্তিগতভাবে ১৬ বছরের স্বৈরাচার সরকার, টানা ১০ বছর তারা নির্যাতিত, তাদের লোক গুম হইছে, খুন হইছে, হত্যা হইছে। ইলিয়াস আলী গায়েব হয়ে গেছে, এরকম বহু লোক, তাদের তো রক্ত আরো বেশি গরম হওয়া দরকার। কোন কথা নাই, আগে বিচার। আগে বিচার, এই জায়গাটায় আমাদের আসা উচিত।

সম্প্রতি এনটিভি আয়োজিত “রাজনীতি ও সমসাময়িক প্রসঙ্গ” শিরোনামের এক টকশোতে অ্যাড. আবু হেনা রাজ্জাকী এ মন্তব্য করেন। 

তিনি বলেন, বাট, পাশাপাশি নির্বাচন চাইবে, নির্বাচনের রাস্তায় সরকারকে আগাইতে হবে। ইউনুস সাহেব যখন টেক ওভার করছে, তখন দলমত নির্বিশেষে আওয়ামী লীগের লোকগুলো আমি বাদই দিলাম, এগুলো বাদে যারা ছিল, সবাই তাকে সমর্থন করছিল, এতে কোন সন্দেহ নাই। কিন্তু তারপরে অল্প কিছুদিনের মধ্যেই বিভাজন শুরু হয়ে গেল, অল্প কয়দিনের মধ্যেই।

ড. মুহাম্মদ ইউনূস নিউ এইজ পত্রিকার নুরুল কবির সাহেবের সাথে একটা ইন্টারভিউ দিচ্ছিল, উনি সেখানে বলছিল যে, আপনারা জাতীয়, ন্যাশনাল ঐক্য বলতে যেটা, সেটা কতদূর কি হলো?

উনি বলল যে, আপনি তো ঐক্য করতে পারছেন না। আমরা তো দেখছি না। আমি তো বুঝতেছি না, যে আমার এখানে যখন সবাই দেখা করতে আসে, তখন সবাই আমার সাথে আছে। কিন্তু যখন কিন্তু বেরিয়ে যায়, তখন কিন্তু যার যার মতো করে কথা বলে, তো এখন আমি এটা কি করব। এটা ড. ইউনূসের বক্তব্য আমার বানানো না।

তার মানে এটা কিন্তু একটা বার্তাও দিয়ে দিচ্ছে উনি, মানে খুব সহজ-সরল কায়দায় বার্তা দিয়ে দিচ্ছে ,সেটা কি?

আসলে রাজনীতিবিদ আমাকে বলে একটা, বাইরে গিয়ে বলে আরেকটা। এই মুহূর্তে ইউনুস সাহেব যেই সমর্থনটা নিয়ে বসছিল, সেটা ওখানে তার প্রতি নাই, তা না হইলে এই কথাটা উনি বলতেন না। যদি একই কায়দায় থাকে, উনি তো আর বানাইয়া বলতেছেন না।

নুরুল হক কবির সাহেব আরেকটা প্রশ্ন তাকে করছিল, যে আপনার অনেক উপদেষ্টা তো ব্যর্থ হচ্ছে। তাদের কথা কি বলবো, আমি নিজেই তো ব্যর্থ হচ্ছি। আমি নিজেই যখন ব্যর্থ হচ্ছি, তখন আমি তাদেরকে কি বলবো। এই কথাগুলো উনি বলছেন, এটা পরিষ্কার।

এখন আমার বক্তব্যটা যেমন উনি বলছেন, আমার ব্যাংক মানে টাকার ক্রাইসিস, ডলারের ক্রাইসিস, দ্রব্যমূল্যের উর্ধগতি, তারপরে আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতি, সব ঠিক আছে। টোটালটা কিন্তু ওনার ডিমেরিটস। আমি বলছি, আমি কিন্তু ব্যক্তিগতভাবে জানিনা, পত্রিকান্তরে আর অন্যরা যা বলেন। 

আমি কাউকে দোষারোপ করি না, পক্ষপাতিত্বও করি না। বাট ইট ইজ এ ফ্যাক্ট যে, দ্রব্যমূল্যের উর্ধ্বগতি, যানজট, এগুলা কি ৬ই আগস্ট থেকে হইছে, নাকি তার আগের থেকে ছিল? ৫ই আগস্ট শেখ হাসিনা চইলা গেল। 

না, আমি বলছি ৬ই আগস্ট থেকে তো এগুলো হয় নাই? কারণ দ্রব্যমূল্যের উর্ধ্বগতির সিন্ডিকেট, পতিত সরকার, যাকে আমি এখন আর সবসময় বলি, লেডি ভার্সন অফ হিটলার।

তার মন্ত্রী  টিপু মুন্সী বলছিল, সিন্ডিকেট নিয়ে আমরা কিছু করতে পারতেছি না। তার মানে কি? দ্রব্যমূল্যের উর্ধ্বগতি ছিল। সেটা পলিটিক্যাল গভমেন্ট, সো কল্ড হোক, যে কল্ড হোক না।

পরবর্তী প্রশ্নে জানতে চাওয়া হয়, কিন্তু এই গভমেন্ট কেন সিন্ডিকেট ভাঙতে পারলো না?

জবাবে তিনি বলেন, আমি বলতেছি সেটাই, কেন পারলো না। কেন বলতেছি, নির্বাচিত সরকার পারে নাই। আমি কেন বলছি, সোল্ড নির্বাচন বলেন আর যাই বলেন। তারপরে আসেন আইন শৃঙ্খলা পরিস্থিতি। আইন শৃঙ্খলা পরিস্থিতির উন্নতি হয় নাই। আমরা রাস্তা হাঁটলে টের পাই, যে আইন পরিস্থিতি মানে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী সরকারকে খুব একটা কোঅপারেট করে না।

কিন্তু একটা জিনিস আপনাকে মাথায় রাখতে হবে, সেটা কি? আপনার ছেলে বাসা থেকে বের হয়ে যাওয়ার পর, সঠিক সময় বাসায় আসবে, না ইয়াবার মামলায় থানায় যাবে, এই টেনশনটা কিন্তু আপনার এই মুহূর্তে নাই।

নাম্বার টু, যত আয়নাঘর ছিল, যত বিচারবহিভূত হত্যা ছিল, যত গুম, খুন, সব ছিল, কারা করছে? আইনশৃঙ্খলা বাহিনী, সেই আইনশৃঙ্খলা বাহিনী কিন্তু এটা করার সুযোগ পাচ্ছে না।

এটা মাথায় রাখতে হবে, আমার সরকার আমাকে ভাত-মাছ দেয় না, বাট আই এম টকিং দা রিয়ালিটি। আয়নাঘর ভাঙছে, গুম-খুন বন্ধ হইছে, এটা একটা বিশাল অর্জন।

আমরা যদি অতীতে যাই, ৫৩ বছর কিন্তু রাজনীতিবিদরাই চালাইছে।

নুরুল কবির সাহেব প্রশ্ন করছিল ইউনুস সাহেবকে, যে ইউনুস সাহেব বলতেছে, দেশ চালানোর অভিজ্ঞতা আমার নাই, রাষ্ট্রপতির অভিজ্ঞতা নাই অর্থাৎ তাকে কোণঠাসা করা হচ্ছে, অভিজ্ঞতা নাই। আমি বলি, বাংলাদেশের রাষ্ট্র না, পৃথিবীর যেকোনো দেশে যখন যিনি রাষ্ট্রপতি প্রথম হন, কোন অভিজ্ঞতা নিয়ে হন? আরেকটা দেশ চালায় এসে দেশ চালান। আমাদের দেশে যারা ক্ষমতায় আসছে, তারা কে কোথা থেকে দেশ চালায় আসছিল। আপনি যদি বলেন, চাকরি করতে গেলে অভিজ্ঞতা আছে। তখন বলি, আমি বেক্সিমকোতে চাকরি করছিলাম, অভিজ্ঞতাটা নিয়ে আসছি।

কিন্তু দেশ চালানোর ব্যাপারে, আরে ভাই আপনি দেশ চালাবেন, কোন কোন দেশ চালায় আসছেন আপনি? এটা কি প্রশ্ন আসে, এটা একটা অবান্তর প্রশ্ন। প্রশ্ন হচ্ছে, আমি মনে করি, যদি ওইভাবে চিন্তা করেন, যে ইউনুস সাহেবকে নির্বাচন, রাজনৈতিক দল যারা নির্বাচন চায়, যৌক্তিক। তারা চাইবেই। কিন্তু আমার ব্যক্তিগতভাবে  ১৬ বছরের স্বৈরাচার সরকার, টানা ১০ বছর তারা নির্যাতিত। তাদের লোক গুম হইছে, খুন হইছে, হত্যা হইছে।

ইলিয়াস আলী গায়েব হয়ে গেছে, এরকম বহু লোক। তাদের তো রক্ত আরো বেশি গরম হওয়া দরকার, কোন কথা নাই, আগে বিচার, আগে বিচার, আমার মনে হয়, এই জায়গাটায় আমাদের আসা উচিত। বাট, পাশাপাশি নির্বাচন চাইবে, নির্বাচনের রাস্তায় সরকারকে আগাইতে হবে।

মো. মহিউদ্দিন

×