.
রাষ্ট্র মেরামতের জন্য দুই বছর আগে সংস্কার প্রস্তাব পেশ করেছে বিএনপি। প্রথমে ২৭ দফা এবং পরে আরও ৪টি সংযোজন করে ৩১ দফা সংস্কার প্রস্তাব দেয় দলটি। এ প্রস্তাবের পক্ষে জনমত তৈরি করতে সারাদেশে লিফলেট বিতরণ ও সভা-সমাবেশসহ বিভিন্ন কর্মসূচি পালন শেষে এখন চলছে জেলায় জেলায় প্রশিক্ষণ কর্মশালা। ইতোমধ্যে দেশের বিপুল সংখ্যক মানুষের মাঝে ব্যাপক সাড়া জাগায় বিএনপির সংস্কার রাজনীতি এখন তুঙ্গে। তবে ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আগে মাত্র ৫টি প্রস্তাব বাস্তবায়ন চায় দলটি। বাকি প্রস্তাবগুলো নির্বাচনের পর সংসদে আলোচনা করে বাস্তবায়নের কথা বলছে তারা। ৩১ দফার বাইরে না যাওয়ার কথাও তারা বলছে। আর এ জন্যই অন্তর্বর্তীকালীন সরকারকে সংস্কারের জন্য আর বেশি সময় না নিয়ে দ্রুত নির্বাচনের তারিখ ঘোষণার দাবি জানাচ্ছে বিএনপি।
দুই বছর আগে সংস্কার প্রস্তাব ঘোষণা করে দল ক্ষমতায় গেলে এই প্রস্তাবগুলো বাস্তবায়নের কথা বলে সারাদেশে জনমত তৈরি শুরু করে বিএনপি। দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন বর্জনের পর এ বিষয়ে জনমত তৈরির কাজে ভাটা পড়ে। তবে দলের জন্য অনুকূল পরিবেশ এনে দেয় ছাত্র-জনতার আন্দোলনে গত বছর ৫ আগস্ট আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর। অনেক নেতা গ্রেপ্তার এবং আরও অনেক নেতা বিদেশে চলে যাওয়াসহ আত্মগোপনে থাকায় নেতৃত্ব শূন্য হয়ে পড়ে আওয়ামী লীগ। এ পরিস্থিতিতে বিএনপি এখন দেশের রাজনীতিতে আধিপত্য বিস্তার করছে।
অভিজ্ঞ মহলের মতে, দেশের রাজনৈতিক পরিস্থিতি দীর্ঘ ১৮ বছর পর সার্বিকভাবে বিএনপির অনুকূলে আসায় সারাদেশে গণসংযোগ করে নতুন উদ্যমে ৩১ দফা সংস্কার প্রস্তাবের পক্ষে জনমত তৈরি করতে সক্ষম হয় দলের নেতাকর্মীরা। সারাদেশের সর্বস্তরের মানুষের কাছে লিফলেট বিতরণের পর এখন ৩১ দফা সংস্কার প্রস্তাবের ওপর জেলায় জেলায় চলছে প্রশিক্ষণ কর্মশালা। এতে অন্য সিনিয়র নেতাদের পাশাপাশি লন্ডন থেকে ভার্চুয়ালি সংযুক্ত হয়ে বক্তব্য রাখছেন বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান। এ সময় নেতাকর্মীদের বিভিন্ন প্রশ্নের জবাবও দিচ্ছেন তিনি। তাই ৩১ দফা নিয়ে বিএনপির বিভিন্ন কর্মসূচি শুধু দেশে নয় দেশের বাইরেও ব্যাপক সাড়া ফেলেছে। দলের ভবিষ্যৎ রাজনীতি নিয়েও বিভিন্ন মহলে ইতিবাচক ধারণা জন্মেছে। আওয়ামী লীগ সরকারের পদত্যাগের পর এ পর্যন্ত যতগুলো দেশের রাষ্ট্রদূত ও আন্তর্জাতিক সংস্থার প্রতিনিধি বিএনপি নেতাদের সঙ্গে বৈঠক করেছে তাদের প্রত্যেকেই দলটির সংস্কার প্রস্তাব সম্পর্কে জানার পর ইতিবাচক মন্তব্য করেছেন বলে সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়।
এ বিষয়ে বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর জানিয়েছেন, দেশের রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে বিএনপিই প্রথম রাষ্ট্র সংস্কারের জন্য আনুষ্ঠানিকভাবে প্রস্তাব পেশ করেছে। দলের ৩১ দফা প্রস্তাবের মধ্যে রাষ্ট্র মেরামতের জন্য সব সংস্কারের কথা বলা আছে। তাই বিএনপির এই সংস্কার প্রস্তাব সর্বমহলে প্রশংসিত হয়েছে। তবে আমরা চাই সুষ্ঠু নির্বাচনের জন্য প্রয়োজন অতি দ্রুত এমন ক’টি সংস্কার কাজ শেষ করে নির্বাচনের তারিখ ঘোষণা করা হোক। আর বাকি সংস্কারগুলো নির্বাচনের পরে করা হোক। বিএনপি ক্ষমতায় গেলে জাতীয় সংসদে আলোচনা করে রাষ্ট্র সংস্কার প্রস্তাবগুলো বাস্তবায়ন করা হবে।
সূত্র জানায়, বিএনপির রাজনীতিতে এখন সবচেয়ে বেশি গুরুত্ব দেওয়া হচ্ছে ৩১ দফা সংস্কার প্রস্তাবকে। ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আগে দলীয় নির্বাচনী ইশতেহারেও এই ৩১ দফা সংস্কার প্রস্তাব স্থান দেওয়া হবে। ক্ষমতায় গেলে কিভাবে এই প্রস্তাবগুলো বাস্তবায়ন করা হবে তাও জনসম্মুখে প্রকাশ করা হবে নির্বাচনী প্রচারকালে।
বিএনপি প্রায় ২ বছর আগে প্রথমে দলীয়ভাবে ২৭ দফা সংস্কার প্রস্তাব ঘোষণা করে। পরে সমমনা দল ও দেশী-বিদেশী বিভিন্ন মহলের মতামত নিয়ে আরও ৬ মাস পর অর্থাৎ এখন থেকে প্রায় দেড় বছর আগে নতুন ৪টি প্রস্তাব সংযোজন করে ৩১ দফা সংস্কার প্রস্তাব ঘোষণা করে। তবে এই সংস্কার প্রস্তাব নিয়ে দেশবিদেশের বিভিন্ন মহল ইতিবাচক মন্তব্য করলেও বিএনপি দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন বর্জন করায় এ বিষয়টি কার্যত ঢাকা পড়ে যায়। কিন্তু ছাত্র-জনতার আন্দোলনের তোপে ৫ আগস্ট আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর অন্তর্বর্তীকালীন সরকার ক্ষমতায় আসে। এ সরকারের অধীনেই অনুষ্ঠিত হবে ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন। অন্তর্বর্তীকালীন সরকারও ক্ষমতা গ্রহণের পর থেকেই সর্বস্তরে সংস্কারের ওপর জোর দেয়। নির্বাচনের আগেই বেশকিছু সংস্কার কাজ শেষ করতে চায় এ সরকার। এ জন্য বেশ ক’টি কমিটিও করা হয়েছে। সংস্কার কমিটিগুলো এ মাসেই তাদের প্রস্তাব সংবলিত রিপোর্ট পেশ করবে।
অধিকাংশ সংস্কার কাজ শেষ করলে ২০২৬ সালের জুনের আগে নির্বাচন সম্ভব নয় বলে অন্তর্বর্তী সরকারের পক্ষ থেকে ইতোমধ্যেই জানানো হয়েছে। তবে বিএনপি দাবি করেছে চলতি বছর আগস্টের মধ্যে নির্বাচন করা হোক। তাই বিএনপি চায় অধিক সংখ্যক সংস্কার কাজে হাত দিলে অন্তর্বর্তী সরকারকে জাতীয় সংসদ নির্বাচন আয়োজন করতে বেশি দেরি হয়ে যাবে। তাই যেগুলো সুষ্ঠু নির্বাচনের পরিবেশ তৈরি করার জন্য জরুরি এমন সংস্কারগুলো বাস্তবায়ন করে জাতীয় নির্বাচন দিলে নির্বাচনের পর নতুন সরকার অন্য সংস্কারগুলো জাতীয় সংসদে আলোচনা করে সাংবিধানিকভাবে বাস্তবায়ন করতে পারবে।
বিএনপি ৩১ দফা সংস্কার প্রস্তাবের মধ্যে ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আগে যে ৪-৫টি প্রস্তাবের বাস্তবায়ন চায় সেগুলোর মধ্যে রয়েছে- ১. ‘প্রধান নির্বাচন কমিশনার এবং অন্যান্য নির্বাচন কমিশনার নিয়োগ আইন-২০২২’ সংশোধন করা। ২. একটি প্রশাসনিক সংস্কার কমিশন গঠন করে প্রশাসন পুনর্গঠন করা। ৩. মিডিয়ার সার্বিক সংস্কারের লক্ষ্যে একটি মিডিয়া কমিশন গঠন করা। ৪. সর্বস্তরে আইনের শাসন প্রতিষ্ঠা করা। ‘ইউনিভার্সাল হিউম্যান রাইটস চার্টার’ অনুযায়ী মানবাধিকার বাস্তবায়ন করা। ৫. বিশেষজ্ঞদের সমন্বয়ে একটি অর্থনৈতিক সংস্কার কমিশন গঠন করা।
রাষ্ট্র সংস্কারের জন্য বিএনপির দেওয়া ৩১ দফা সংস্কার প্রস্তাবের মধ্যে রয়েছে- ১. একটি সংবিধান সংস্কার কমিশন গঠন করে আওয়ামী লীগ সরকার গৃহীত সব অযৌক্তিক, বিতর্কিত ও অগণতান্ত্রিক সাংবিধানিক সংশোধনী ও পরিবর্তনসমূহ রহিত/সংশোধন করা। ২. প্রতিহিংসা ও প্রতিশোধের রাজনীতির বিপরীতে বাংলাদেশী জাতীয়তাবাদের ভিত্তিতে একটি অন্তর্ভুক্তিমূলক ‘রেইনবো ন্যাশন’ প্রতিষ্ঠা করা। এ জন্য একটি ন্যাশনাল রিকনসিলেশন কমিশন গঠন করা। ৩. একটি নির্বাচনকালীন দলনিরপেক্ষ তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা প্রবর্তন করা। ৪. রাষ্ট্রপতি, প্রধানমন্ত্রী ও মন্ত্রিসভার নির্বাহী ক্ষমতায় ভারসাম্য আনা। ৫. পর পর দুই টার্মের অতিরিক্ত কেউ রাষ্ট্রপতি ও প্রধানমন্ত্রীর দায়িত্ব পালন করতে পারবেন না। ৬. বিশেষজ্ঞদের সমন্বয়ে রাষ্ট্র পরিচালনার লক্ষ্যে জাতীয় সংসদে উচ্চকক্ষ বিশিষ্ট আইনসভা প্রবর্তন করা। ৭. সংসদ সদস্যদের স্বাধীনভাবে মতামত প্রদানের সুযোগ নিশ্চিত করার লক্ষ্যে সংবিধানের ৭০ অনুচ্ছেদ সংশোধন করার বিষয়টি পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে দেখা। ৮. বর্তমান ‘প্রধান নির্বাচন কমিশনার এবং অন্যান্য নির্বাচন কমিশনার নিয়োগ আইন-২০২২’ সংশোধন করা। ৯. সকল রাষ্ট্রীয়, সাংবিধানিক ও সংবিধিবদ্ধ প্রতিষ্ঠান পুনর্গঠন করা। শুনানির মাধ্যমে সংসদীয় কমিটির ভেটিং সাপেক্ষে এই সকল প্রতিষ্ঠানের সাংবিধানিক ও গুরুত্বপূর্ণ পদসমূহে নিয়োগ প্রদান করা। ১০. বিচার বিভাগের কার্যকর স্বাধীনতা নিশ্চিত করা। বর্তমান বিচারব্যবস্থা সংস্কারের জন্য একটি জুডিসিয়াল কমিশন গঠন করা। ১১. একটি প্রশাসনিক সংস্কার কমিশন গঠন করে প্রশাসন পুনর্গঠন করা। ১২. মিডিয়ার সার্বিক সংস্কারের লক্ষ্যে একটি মিডিয়া কমিশন গঠন করা।
১৩. দুর্নীতির ক্ষেত্রে কোনো আপস করা হবে না। অর্থপাচার ও দুর্নীতির অনুসন্ধান করে একটি শ্বেতপত্র প্রকাশ করা। সংবিধান অনুযায়ী ন্যায়পাল নিয়োগ করা। ১৪. সর্বস্তরে আইনের শাসন প্রতিষ্ঠা করা। ‘ইউনিভার্সাল হিউম্যান রাইটস চার্টার’ অনুযায়ী মানবাধিকার বাস্তবায়ন করা। ১৫. বিশেষজ্ঞদের সমন্বয়ে একটি অর্থনৈতিক সংস্কার কমিশন গঠন করা। ১৬. ‘ধর্ম যার যার, রাষ্ট্র সবার’ এই মূলনীতির ভিত্তিতে প্রত্যেক ধর্মাবলম্বী নিজ নিজ ধর্ম পালনের পূর্ণ অধিকার ভোগ করবেন। ধর্মীয় ও জাতিগত সংখ্যালঘুদের ঘরবাড়ি, ব্যবসা প্রতিষ্ঠান, উপাসনালয় ভাঙচুর এবং তাদের সম্পত্তি দখলের জন্য দায়ীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণ করা। ১৭. মুদ্রাস্ফীতির আলোকে শ্রমজীবী মানুষের ন্যায্য মজুরি নিশ্চিত করা। নিরাপদ কর্মপরিবেশ ও গণতান্ত্রিক ট্রেড ইউনিয়ন অধিকার নিশ্চিত করা। পাটকল, বস্ত্রকল, চিনিকলসহ সব বন্ধ শিল্প পুনরায় চালুর উদ্যোগ নেওয়া। প্রবাসী শ্রমিকদের জীবন, মর্যাদা ও কর্মের নিরাপত্তা এবং দেশে বিমানবন্দরসহ সব ক্ষেত্রে হয়রানিমুক্ত সেবা প্রাপ্তি ও ভোটাধিকার নিশ্চিতের ব্যবস্থা করা। ১৮. বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজ খাতে দায়মুক্তি আইনসহ সব কালাকানুন বাতিল করা।
১৯. বৈদেশিক সম্পর্কের ক্ষেত্রে বাংলাদেশের জাতীয় স্বার্থকে সর্বোচ্চ প্রাধান্য দেওয়া। বাংলাদেশের ভূ-খন্ডের মধ্যে কোনো প্রকার সন্ত্রাসী তৎপরতা বরদাশত করা হবে না এবং কোনো সন্ত্রাসবাদী তৎপরতা আশ্রয়-প্রশ্রয় পাবে না। সন্ত্রাসবাদ, জঙ্গিবাদ ও উগ্রবাদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা গ্রহণ করা। সন্ত্রাসবিরোধী আইনের অপব্যবহারের মাধ্যমে সন্ত্রাসবাদকে রাজনৈতিক ঢাল বা হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহার করে এবং সন্ত্রাসবাদের তকমা লাগিয়ে ভিন্নমতের বিরোধী শক্তি এবং রাজনৈতিক বিরোধী দল দমনের অপতৎপরতা বন্ধ করা হলে প্রকৃত সন্ত্রাসীদের চিহ্নিত করে এবং আইনের আওতায় এনে শাস্তি প্রদান করা সম্ভব হবে।
২০. দেশের সার্বভৌমত্ব সুরক্ষায় প্রতিরক্ষা বাহিনীকে সর্বোচ্চ দেশপ্রেমের মন্ত্রে উজ্জীবিত করে গড়ে তোলা। ২১. ক্ষমতার ব্যাপক বিকেন্দ্রীকরণের লক্ষ্যে স্থানীয় সরকার প্রতিষ্ঠানগুলোকে অধিকতর স্বাধীন, শক্তিশালী ও ক্ষমতাবান করা। ২২. রাষ্ট্রীয় উদ্যোগে মুক্তিযুদ্ধে শহীদদের একটি তালিকা প্রণয়ন করা এবং তাদের যথাযথ রাষ্ট্রীয় মর্যাদা ও স্বীকৃতি প্রদান করা। ১৯৭১ সালে স্বাধীনতা যুদ্ধে যার যার অবদানের রাষ্ট্রীয় স্বীকৃতি প্রদানের ব্যবস্থা করা। ২৩. যুব সমাজের ভিশন, চিন্তা ও আকাক্সক্ষাকে ধারণ করে আধুনিক ও যুগোপযোগী যুব উন্নয়ন নীতিমালা প্রণয়ন করা। এক বছরব্যাপী অথবা কর্মসংস্থান না হওয়া পর্যন্ত, যেটাই আগে হবে, শিক্ষিত বেকারদের বেকার ভাতা প্রদান করা। আন্তর্জাতিক মানদন্ড অনুযায়ী সরকারি চাকরিতে প্রবেশের বয়সসীমা বৃদ্ধি বিবেচনা করা।
২৪. নারীর ক্ষমতায়ন নিশ্চিত করার লক্ষ্যে সুনির্দিষ্ট কর্মসূচি গ্রহণ করা। জাতীয় সংসদে মনোনয়নের ক্ষেত্রে নীতিগতভাবে নারীদের প্রাধান্য দেওয়া। ২৫. চাহিদাভিত্তিক ও জ্ঞানভিত্তিক শিক্ষাকে প্রাধান্য দেওয়া। ২৬. সবার জন্য স্বাস্থ্য এই নীতির ভিত্তিতে যুক্তরাজ্যের ‘এনএইচএস’-এর আদলে সার্বজনীন স্বাস্থ্যসেবা প্রবর্তন করা। সবার জন্য স্বাস্থ্য কার্ড চালু করা ২৭. কৃষিপণ্যের ন্যায্যমূল্য নিশ্চিত করা। পর্যায়ক্রমে সব ইউনিয়নে কৃষিপণ্যের জন্য সরকারি ক্রয়কেন্দ্র স্থাপন এবং কৃষি, মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ খাতের উন্নয়ন এবং গবেষণার জন্য অগ্রাধিকার ভিত্তিতে কর্মকৌশল প্রণয়ন ও বাস্তবায়নের কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণ এবং সংশিষ্ট রপ্তানিমুখী কৃষি প্রক্রিয়াকরণ শিল্প খাতকে প্রণোদনা দেওয়া।
২৮. দেশের যোগাযোগ অবকাঠামো উন্নয়নে সড়ক, রেল ও নৌপথের প্রয়োজনীয় সংস্কার করে সারা দেশে সমন্বিত বহুমাত্রিক যোগাযোগ ব্যবস্থা গড়ে তোলা। দেশের সমুদ্রবন্দর ও নৌবন্দরসমূহের আধুনিকায়ন, উন্নয়ন ও দক্ষতা বৃদ্ধির মাধ্যমে আঞ্চলিক ও আন্তর্জাতিক বাণিজ্য বৃদ্ধির ব্যবস্থা করা। ২৯. জলবায়ু পরিবর্তনজনিত সংকট ও ক্ষতি মোকাবিলায় টেকসই ও কার্যকর কর্মকৌশল গ্রহণ করা। বন্যা, জলোচ্ছ্বাস, ঘূর্ণিঝড় ও ভূমিকম্পের মতো প্রাকৃতিক দুর্যোগ মোকাবিলায় সর্বাধুনিক ইকুইপমেন্ট সংগ্রহ করে প্রাতিষ্ঠানিক সক্ষমতা বৃদ্ধি করা। নদী ও জলাশয় দূষণ প্রতিরোধে কার্যকর ব্যবস্থা নেওয়া এবং বন্যা ও খরা প্রতিরোধে খাল ও নদী খনন ও পুনর্খনন কর্মসূচি বাস্তবায়ন করা। সামুদ্রিক সম্পদের বিজ্ঞানসম্মত জরিপ ও মজুতের ভিত্তিতে তা আহরণ এবং অর্থনৈতিক ব্যবহারের ব্যবস্থা নেওয়া।
৩০. তথ্য যোগাযোগ প্রযুক্তি খাতকে বৈশ্বিক মানে উন্নীত করার লক্ষ্যে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণ এবং সর্বক্ষেত্রে এর প্রয়োগকে প্রাধান্য দেওয়া। মহাকাশ গবেষণা এবং আণবিক শক্তি কমিশনের কার্যক্রমের প্রাতিষ্ঠানিক ও প্রায়োগিক সুযোগ সমৃদ্ধ করা এবং ৩১ নম্বর দফায় রয়েছে- জাতীয় মহাপরিকল্পনা প্রণয়নের মাধ্যমে শহরে ও গ্রামে কৃষিজমি নষ্ট না করে এবং নগরে জনসংখ্যার ক্রমবর্ধমান চাপ হ্রাস করে পরিকল্পিত আবাসন ও নগরায়ণের নীতিমালা গ্রহণ ও বাস্তবায়ন করা। পর্যায়ক্রমে দেশের সব দরিদ্র জনগোষ্ঠীর আবাসন নিশ্চিত করা।
এই ৩১ দফার মধ্যে ৮, ১১, ১২, ১৪ ও ১৫ এই ৫টি সংস্কার প্রস্তাবের বাস্তবায়ন ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আগে চায় বিএনপি। তাদের সমমনা দলগুলোও এমনটিই চায় বলে জানা যায়।
ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে মাঠের প্রস্তুতি আরও জোরদার করতে নভেম্বরের প্রথম দিন থেকেই নতুন উদ্যমে সারাদেশের সকল জেলা-উপজেলা ও মহানগরে গণসংযোগ কর্মসূচি পালন শুরু করে বিএনপি। এর আগেই দলের কেন্দ্রীয় কার্যালয় থেকে সকল মহানগর, জেলা ও উপজেলা পর্যায়ের নেতাদের কাছে গণসংযোগ কর্মসূচি সফল করতে নিজ নিজ এলাকায় সবাইকে সক্রিয় হতে বলা হয়। অধিকাংশ জেলা, উপজেলা ও মহানগরে বিএনপির নির্বাচনের প্রস্তুতি জোরদারের পাশাপাশি প্রার্থী বাছাই প্রক্রিয়াও শেষ পর্যায়ে রয়েছে বলে জানা যায়।
সূত্র মতে, ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে সর্বস্তরে দল গুছিয়ে ৩০০ সংসদীয় আসনে নির্বাচনের প্রস্তুতি আরও জোরদার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে বিএনপি হাইকমান্ডের পক্ষ থেকে। নির্বাচনের আগে মাঠ পর্যায়ের নেতাকর্মীরা যেন দলীয় কর্মকান্ডে অধিকতর সক্রিয় থাকে তারই অংশ হিসেবে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান প্রায় প্রতিদিনই ভার্চুয়ালি সংযুক্ত হয়ে বিভিন্ন জেলা-উপজেলার নেতাকর্মীদের সঙ্গে মতবিনিময় করছেন। এ সময় ৩১ দফা সংস্কার প্রস্তাবের বিষয়টি প্রাধান্য পাচ্ছে। এ ছাড়া তিনি বিভিন্ন মাধ্যমে প্রতিটি সংসদীয় এলাকার সম্ভাব্য প্রার্থীদের সম্পর্কে খোঁজখবর নিচ্ছেন। প্রায় দেড় যুগ ক্ষমতার বাইরে থাকা বিএনপি ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে সর্বাধিক গুরুত্ব দিয়ে ভোটের মাঠে সক্রিয় রয়েছে বলে দলীয় সূত্র জানায়।