চাকরিচ্যুত পুলিশ সদস্যরা পুনর্বহালের দাবিতে বৃহস্পতিবার রাজধানীর শিক্ষা ভবনের সামনের সড়ক অবরোধ করেন
বিগত সরকারের আমলে নানা অভিযোগে চাকরি হারানো পুলিশ সদস্যরা চাকরিতে পুনর্বহালের দাবি আদায়ে রবিবার সকালে ফের সচিবালের সামনে অবস্থান নেবেন। বৃহস্পতিবার বিকেল সোয়া ৩টার দিকে সচিবালয়ের মোড়ে সাংবাদিকদের এ কর্মসূচির কথা জানান তাদের প্রতিনিধিরা।
এর আগে সকালে ১১টার দিকে ’ভিকটিম পুলিশ পরিবার’ ব্যানারে মিছিল নিয়ে শতাধিক মানুষ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় এলাকা থেকে সচিবালয়ের দিকে তাদের দাবি জানাতে যেতে চাইলে শিক্ষাভবনের সামনে পুলিশ তাদের আটকে দেয়। বাধা পেয়ে সেখানে সড়কে তারা বসে পড়েন। চাকরি ফিরে পেতে বক্তব্য দেন তারা।
আন্দোলনরত চাকরিচ্যুত পুলিশ সদস্যরা বলেন, আমাদের আশ্বাস দিয়ে এখন চাকরি ফিরিয়ে দিচ্ছে না। যারা আমাদের আশ্বাস দিয়েছিল তারা অন্যায় করেছেন এবং আইন ভঙ্গ করেছেন। বিগত সরকারের আমলে পুলিশের অনেক ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাকে বাধ্যতামূলক অবসরে পাঠানো হয়। তারা তো এখন ঠিকই চাকরি ফিরে পেয়েছেন এবং চাকরি করছেন। বর্তমান আইজিপি ও ডিএমপি কমিশনার বাধ্যতামূলক অবসরে ছিলেন। কিন্তু পরিবর্তিত প্রেক্ষাপটে আইজিপি ও ডিএমপি কমিশনার চাকরি করছেন। তাহলে আমরা কেন চাকরি করতে পারব না?
আন্দোলনরত কয়েকজন জানান, আমরা গত ছয় মাস ধরে আন্দোলন করে যাচ্ছি। আমরা যখন শুরুতে আন্দোলন করেছিলাম তখন আমরা অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রধান উপদেষ্টার সঙ্গে দেখা করেছি এবং আমাদের দাবি-দাওয়া তুলে ধরেছি। পরে আমরা সাবেক স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব.) এম সাখাওয়াত হোসেনের সঙ্গে দেখা করি। তিনি আমাদের কাগজপত্র দেখেন এবং বলেন যে আমাদের দাবি যৌক্তিক এবং আমাদের চাকরি ফিরিয়ে দেওয়া হবে। তিনি তখন বলেছেন আন্দোলনরতদের মধ্যে প্রায় ৯৮ শতাংশের চাকরি ফিরিয়ে দেওয়া হবে। তার সে আশ্বাসে আমরা আন্দোলন স্থগিত করি। কিন্তু একে একে দিন পার হতে থাকে কিন্তু আমাদের চাকরি ফিরিয়ে দেওয়া হয়নি। তাই আমরা আবারও আন্দোলনে নেমেছি। আমাদের চাকরি ফিরিয়ে না দেওয়া পর্যন্ত আমরা আন্দোলন স্থগিত করব না।
আন্দোলনের এক পর্যায়ে তাদের ৫ জন দাবি-দাওয়া নিয়ে স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টার সঙ্গে কথা বলার জন্য সচিবালয়ের ভেতরে ঢোকেন। দুপুর ১২টা ৫৫ মিনিটের দিকে তারা সচিবালয়ের ভেতরে যান। সচিবালয়ের ভেতরে যাওয়া তাদের প্রতিনিধি দলের সদস্যরা হচ্ছেন, এএসআই সাইফুল, কনস্টেবল সাদ্দাম, মহিদুল এস আই মামুন, সিরাজুল হক ও শাজাহান সাজু। দুই ঘণ্টা অপেক্ষা করেও স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টার দেখা পায়নি প্রতিনিধি দলে সদস্যরা বিকেল পৌনে ৩টার দিকে সচিবালয় থেকে বের হয়ে আসেন। পরে বিকেল সোয়া ৩টার দিকে সচিবালয়ের মোড়ে প্রতিনিধি দলের সদস্যরা সাংবাদিকদের বিগত সরকারের আমলে নানা অভিযোগে চাকরি হারানো পুলিশ সদস্যরা চাকরিচ্যুত পুলিশ সদস্যদের প্রতিনিধি জানান, চাকরিতে পুনর্বহালের দাবি আদায়ে রবিবার সকালে ফের সচিবালের সামনে অবস্থান নেবেন। এর পর তারা কর্মসূচি স্থগিত করে সচিবালয় থেকে ফিরে যান।
এক প্রেস রিলিজে ভিকটিম পুলিশ পরিবারের পক্ষ থেকে জানানো হয়, গত স্বৈরাচার আমলে অন্যায়ভাবে ২২০০ পুলিশ সদস্যকে চাকরিচ্যুত করা হয়েছে।
এতে আরও বলা হয় স্বৈরাচার সরকারের আমলে বাহিনীর বেশিরভাগ সিনিয়র কর্মকর্তা পুলিশ বাহিনীকে ভয়ংকর দানবে পরিণত করতে আমাদের বিরুদ্ধে মিথ্যা, বানোয়াট, ভিত্তিহীন মামলা দিয়ে চাকরিচ্যুত করেছে।
আজকে যখন গণঅভ্যুত্থানের মুখে স্বৈরশাসক পালিয়ে গেছে তখন পুলিশ বাহিনীর কিছু পুরোনো দোসর আমাদের চাকরিতে পুনর্বহাল করার কথা দিয়েও টালবাহানা করছে বলে অভিযোগ তাদের।
তারা বলেন, অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের সাবেক স্বরাষ্ট উপদেষ্টা এম সাখাওয়াত হোসেন মানবিক বিবেচনায় পুলিশ সদস্যদের পুনর্বহালের আদেশ দেওয়ার পরও তা বাস্তবায়ন হচ্ছে না।
চাকরিচ্যুত এ এস আই তৌহিদ ম-ল বলেন, চাকরি যাওয়ার পর আমরা তো প্রত্যেকে জীবিত লাশ হয়ে বেঁচে ছিলাম। আমরা তো কোনো মারপিট করিনি, জ্বালাও পোড়াও করিনি, ভাঙচুর করিনি। আমরা ২ হাজার ভিকটিম পরিবার আছি। আমরা দুর্নীতিবাজ কিনা তদন্ত করে দেখেন। আমাদের বর্তমান অবস্থা দেখেন। কিছু পাবেন না। তাহলে আপনারা কিসের ভয়ে কার ভয়ে মিথ্যা আশ্বাস দিয়েছিলেন স্যার। তাদের দাবি, সব সুযোগ সুবিধাসহ তাদের যেন চাকরিতে পুনর্বহাল করা হয়।