এস আলম গ্রুপের জমি ক্রোকের আদেশ
এস আলম গ্রুপের কর্ণধার সাইফুল আলম (এস আলম) ও তার সঙ্গে সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের নামে থাকা ৩৬৮ কোটি ২৫ লাখ ৬৩ হাজার ৫০০ টাকা দামের ৫৮ একরের বেশি জমি ক্রোকের আদেশ দিয়েছেন আদালত। বৃহস্পতিবার ঢাকা মহানগর সিনিয়র স্পেশাল জজ জাকির হোসেন গালিব দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে এ আদেশ দেন। দুদকের পক্ষে উপ-পরিচালক আবু সাইদ এসব জমি ক্রোক করার জন্য আদালতে আবেদন করেন।
নথি মতে, ক্রোক করা মোট জমির পরিমাণ ৫৮ দশমিক ১৬৪৬ একর। দুদকের আবেদনে বলা হয়েছে, সাইফুল আলম ও তার পরিবারের সদস্যদের বিরুদ্ধে সিঙ্গাপুর, ব্রিটিশ ভার্জিন আইল্যান্ড, সাইপ্রাস ও অন্যান্য দেশে ১ বিলিয়ন ডলার পাচারের অভিযোগ অনুসন্ধাকালে অনেক সম্পদের তথ্য পাওয়া গেছে। এসব সম্পদ ক্রোক না করা হলে অন্যত্র স্থানান্তরের আশঙ্কা আছে।
ক্রোক করা জমিগুলো হলো চট্টগ্রামের ১৮ নম্বর ওয়ার্ড এলাকায় দশমিক ১৬৩৭ একর জমি, যার দাম ১ কোটি ৩৭ লাখ টাকা। একই ওয়ার্ডে আরেকটি জমি, যার পরিমাণ দশমিক ১৩৫০ একর, দাম ১ কোটি ৩৫ লাখ টাকা। চট্টগ্রামের ১ নম্বর পাথরঘাটা ইউনিয়নে এস আলম রিফাইন্ড সুগার ইন্ডাস্ট্রিজ লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মোহাম্মদ সাইফুল আলমের নামে থাকা ৮ দশমিক ৫০ শতাংশ জমি, বাজারমূল্য ৩ কোটি ৫৪ লাখ ৭৯ হাজার ৫০০ টাকা। ওই ইউনিয়নেই দশমিক ৯০ একর জমি, যার দাম ৩৭ লাখ ৪৮ হাজার টাকা এবং ১ দশমিক ২০ একর জমি, দাম ৬০ লাখ টাকা।
পটিয়া উপজেলায় এস আলম কোল্ড স্টিল লিমিটেডের দশমিক শূন্য ৬ একর জমি, যার দাম ৩০ হাজার টাকা। পটিয়ার শিকলবাহা ইউনিয়নের এক কানি দুই কড়া জমি, যার দাম ২১ লাখ টাকা। একই এলাকায় দশমিক ২৮ একর জমি, যার দাম ১৪ লাখ টাকা; দশমিক ৪১৫০ একর জমি, যার দাম ২১ লাখ টাকা; দশমিক ২৬ একর জমি, যার দাম ১৩ লাখ টাকা; দশমিক ৩২ একর জমি, যার দাম ১৬ লাখ টাকা; দশমিক ৮০ একর জমি, যার দাম ৩১ লাখ ৫০ হাজার টাকা; দশমিক ১৪ একর জমি, যার দাম ৮০ হাজার টাকা; শূন্য দশমিক ৬ একর জমি, যার দাম ৩০ হাজার টাকা; দশমিক ১৮৫০ একর জমি, যার দাম ৯ লাখ ৫০ হাজার টাকা; দশমিক শূন্য ৬ একর জমি, যার দাম ৩ লাখ টাকা; দশমিক ১৫ একর জমি, যার দাম ৭ লাখ ৫০ হাজার টাকা; দশমিক ৫৭৫০ একর জমি, যার দাম ২৯ লাখ ৫০ হাজার টাকা; দশমিক ১২ একর জমি, যার দাম ৬০ হাজার টাকা এবং দশমিক শূন্য ৫ একর জমি, যার দাম ১২ হাজার টাকা।
নারায়াণগঞ্জে স্যাভোলা অয়েল লিমিটেডের ১ দশমিক ৩৮৫০ একর জমি ও ২ হাজার বর্গফুটের সেমিপাকা বাড়ি, যার দাম ১২ কোটি ১৭ লাখ ২৫ হাজার টাকা; ২ একর জমি, যার দাম ৭ কোটি ৭০ লাখ টাকা; দশমিক ৩৬৩৬ একর জমি, যার দাম ১ কোটি ২১ লাখ ১৯ হাজার টাকা; দশমিক ৩৪৬৯ একর জমি, যার দাম ১ কোটি ১৫ লাখ ৬৩ হাজার টাকা; ১ দশমিক ৮২৪৩ একর জমি, যার দাম ৬ কোটি ৮ লাখ ৯ হাজার টাকা; ৩ দশমিক ৮২৬৪ একর জমি, যার দাম ১২ কোটি ৭৫ লাখ ৪৬ হাজার টাকা এবং ২ দশমিক ১৮৮৯ একর জমি, যার দাম ৭ কোটি ২৯ লাখ ৬৩ হাজার।
ডেলটা অয়েল রিফাইনারি লিমিটেডের ১ দশমিক ২১৫০ একর জমি এবং ১৫০০ বর্গফুটের পাকাবাড়ি, যার দাম ৭ কোটি ২৯ লাখ ৬৩ হাজার টাকা। দশমিক ১৭ একর জমি ও ৫০০ বর্গফুটের সেমিপাকা বাড়ি, যার দাম ১ কোটি ৫৪ লাখ ৫০ হাজার টাকা। দশমিক ৩৬৫০ একর জমি, যার দাম ৭৩ লাখ টাকা। ১ দশমিক ৬৩৫০ একর জমি, যার দাম ৬ কোটি ২৯ লাখ ৫০ হাজার টাকা।
সানম্যান টেক্সটাইল মিলস লিমিটেডের অবসরপ্রাপ্ত মেজর আব্দুল মান্নানের নামে চট্টগ্রামের সীতাকু- থানার কেশবপুরে এক দশমিক ৮৯ একর জমি, যার দাম ২ লাখ ৮৪ হাজার টাকা। ১ দশমিক ৪৬ একর জমি, যার দাম ২ লাখ ৩৭ হাজার টাকা। এস আলম কোল্ড রোলড স্টিলস লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ওসমান গনির নামে থাকা চট্টগ্রামের কর্ণফুলী থানার শিকলবাহা এলাকার ৯ দশমিক ৪৩ একর জমি, যার দাম ১৫৩ কোটি ৬৮ লাখ ৭৫ হাজার টাকা। ৯ দশমিক ৪৩ একর জমি, যার দাম ৮২ কোটি ৬ লাখ ২৫ হাজার টাকা।
সাইফুল আলমের নিজ নামে চট্টগ্রামের কর্ণফুলী থানার শিকলবাহা এলাকায় ২৩ দলিলের ৪ দশমিক ৭০৭ একর জমি, যার দাম ৫ লাখ টাকা। সাবেক রাষ্ট্রপতি হুসেইন মুহাম্মদ এরশাদের ছেলের কাছ থেকে কেনা গুলশানের-২ এর ১০ কাঠা বা ১৬ দশমিক ৫০ শতক জমি, যার দাম ২ কোটি ৫০ লাখ টাকা।
ইনহেরেন্ট ট্রেডিং অ্যান্ড ইমপ্লেক্স লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক আনসারুল ইসলামের নামে থাকা ঢাকা উত্তর সিটি কর্পোরেশনের তেজতুরি বাজারের ৯০ দশমিক ৮৮ শতাংশ ও ৩ হাজার বর্গফুটের ১ তলা দালান, যার দাম ৫৬ কোটি ৯৬ লাখ টাকা। ব্লাইন্ড লিমিটেডের পক্ষে ব্যবস্থাপনা পরিচালকের আহসানুল আলমের নামে থাকা ধানম-ি আবাসিক এলাকায় ১ বিঘা বা ৩৩ শতাংশ জমি।
চট্টগ্রামে চেয়ারম্যানসহ ৫২ জনের বিরুদ্ধে মামলা ॥ স্টাফ রিপোর্টার, চট্টগ্রাম অফিস থেকে জানান, ইসলামী ব্যাংক চট্টগ্রামের খাতুনগঞ্জ কর্পোরেট শাখা থেকে ৮৫২ কোটি টাকা আত্মসাতের অভিযোগে আলোচিত এস আলম গ্রুপের চেয়ারম্যান সাইফুল আলম মাসুদের ছেলেসহ ৫২ জনের বিরুদ্ধে মামলা দায়ের হয়েছে দুর্নীতি দমন কমিশনে (দুদক)। দুদকের উপ-পরিচালক ইয়াসির আরাফাত বাদী হয়ে বুধবার মামলাটি দায়ের করেন।
এজাহারে বলা হয়, ব্যাংক থেকে ৮২৭ কোটি ৪২ লাখ ১৫ হাজার ৪২৫ টাকা ঋণ নেওয়া হয়, যা সুদসহ এখন প্রায় ৯১৯ কোটি টাকা। বিপুল এ অর্থ আত্মসাত, অর্থের প্রকৃত উৎস গোপন এবং স্থানান্তরের মাধ্যমে মানিলন্ডারিং প্রতিরোধ আইনে মামলা দায়ের হয়েছে।
মামলার আসামিদের মধ্যে রয়েছেন ইসলামী ব্যাংকের সাবেক চেয়ারম্যান আহসানুল আলম, সেঞ্চুরি ফুড প্রোডাক্টস লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মো. আরিফুল ইসলাম চৌধুরী, ব্যাংকের সাবেক নমিনি পরিচালক সৈয়দ আবু আসাদ, ব্যাংকের সাবেক সদস্য ও ভাইস চেয়ারম্যান তানভীর আহমেদ, ব্যাংকের সাবেক সদস্য মো. কামরুল হাসান, সাবেক স্বতন্ত্র পরিচালক মো. সালেহ জহুর এবং ব্যাংকের সাবেক পরিচালক নাজমুল হাসান।