গোপনে আশ্রয় নিয়ে শেখ হাসিনার সঙ্গে যোগাযোগ রাখছে আওয়ামী লীগের নেতারা। আইনের শাসন ফেরার অপেক্ষায় এমন শিরোনামে একটি প্রতিবেদন প্রকাশ করে ভারতীয় গণমাধ্যম ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস। ওই প্রতিবেদনে রাজনীতিতে নিজেদের ভুলের কথা স্বীকার করেছেন আওয়ামী লীগের শীর্ষ নেতারা। এমনকি এই পলাতক নেতারা আগামী ছাব্বিশ মার্চ বাংলাদেশে আসার পরিকল্পনা করছেন বলে উল্লেখ করা হয়।
শেখ হাসিনার পতনের পরই আত্মগোপনে চলে যায় আওয়ামী লীগের শীর্ষ নেতারা। ক্ষমতাচ্যুত হওয়ার প্রায় ছয় মাস পর এবার ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেসের সঙ্গে কথা বলেছেন আওয়ামী লীগের বেশ কয়েকজন নেতা। ভারতীয় এই গণমাধ্যমে আওয়ামী লীগের যেসব নেতারা বক্তব্য দিয়েছেন তারা হলেন আকম মোজাম্মেল হক, নাহিম রাজ্জাক, আফম বাহাউদ্দিন নাসিম, পঙ্কজ দেবনাথ, সাইফুজ্জামান শিখর, আসাদুজ্জামান খান কামাল ও মাহবুব উল আলম হানিফ। ওই প্রতিবেদনে আওয়ামী লীগের নেতারা বলেন, ভারতে বসেই দলকে পুনরুজ্জীবিত করার চেষ্টা করছেন তারা। এছাড়া দেশ থেকে সর্বোচ্চ চল্লিশ জন সাবেক এমপি মন্ত্রী হোয়াটসঅ্যাপ গ্রুপের মাধ্যমে এ প্রচেষ্টায় যুক্ত রয়েছেন। সেই সঙ্গে শাসন প্রক্রিয়া ও রাজনীতিতে ভুলের কথা স্বীকার করে বাংলাদেশে ফেরার ইচ্ছা প্রকাশ করেন আওয়ামী লীগ নেতারা।
সাবেক মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রী আকম মোজাম্মেল হক জানান, আওয়ামী লীগের হাজারো নেতাকর্মী এখন তাদের ঘরবাড়ি ছেড়ে আত্মগোপনে রয়েছেন। তাদের অনেকের খাবার কিনে খাওয়ার মতো টাকা নেই। তবুও তৃণমূল কর্মীদের মনোবল শক্ত রয়েছে। এছাড়া জ্যেষ্ঠ নেতাদের বক্তব্য তুলে ধরে তিনি বলেন, স্বাধীনতা দিবসে বিদেশে অবস্থিত আওয়ামী নেতাদের বাংলাদেশে ফেরা উচিত।
দলকে পুনরুজ্জীবিত করতে আওয়ামী লীগ নেতাদের মধ্যে জোরালো আলোচনা চলছে বলে জানান দলটির প্রয়াত নেতা আব্দুর রাজ্জাকের ছেলে নাহিম রাজ্জাক। তিনি বলেন, এই আলোচনায় দেশ থেকে ত্রিশ থেকে চল্লিশ জন সাবেক এমপি, মন্ত্রী, হোয়াটসঅ্যাপ গ্রুপের মাধ্যমে যুক্ত রয়েছেন। এই হোয়াটসঅ্যাপ গ্রুপের অন্যতম সদস্য বাহাউদ্দিন নাছিম জানান, তিনি বাংলাদেশের প্রায় সব জেলার নেতা কর্মীদের সঙ্গে যোগাযোগ রাখছেন। এছাড়াও তার কাছে প্রতিদিন নেতাকর্মীদের থেকে ২০০ থেকে ৩০০ টি কল আসে। এভাবেই আওয়ামী লীগের নেতারা কর্মীদের সঙ্গে এবং কর্মীরা জনগণের সঙ্গে যোগাযোগ রাখছেন। সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল বলেন, ২০২৪ সালের আগস্টের আগেও আওয়ামী লীগ বহু বছর ধরে বিরোধী দলে ছিল।
কিন্তু দলটি এমন পরিস্থিতির মুখোমুখি আগে কখনো হয়নি। আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহবুবুল আলম হানিফ জানান, তাদের তিন লাখের বেশি কর্মী এখন বাংলাদেশে আত্মগোপনে রয়েছে। পাঁচ আগস্টের আগের হত্যাকাণ্ডের জন্য শুধু আওয়ামী লীগকে দায়ী করা অন্যায়। এদিকে আওয়ামী লীগ নেতাদের বক্তব্য নিয়ে ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেসের প্রতিবেদনকে ভালো চোখে দেখছে না বাংলাদেশের অন্তর্বর্তী সরকার। প্রধান উপদেষ্টার প্রেস উইং বলছে, সংঘবদ্ধ অপপ্রচারের অংশ হিসেবে এসব প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস। এক বিবৃতিতে প্রেস উইং বলেছে, ভারতীয় গণমাধ্যমটি যাদের বক্তব্য প্রকাশ করেছে তারা সবাই সন্দেহভাজন অপরাধী ও গণহত্যায় অভিযুক্ত। সাংবাদিকতার মৌলিক নিয়ম অনুসরণ না করে প্রকাশিত এই প্রতিবেদন মিথ্যা এবং বিভ্রান্তিকর তথ্যে পরিপূর্ণ।
ফুয়াদ