ছবিঃ সংগৃহীত
নির্বাচন কমিশনার ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব:) আবুল ফজল মোঃ সানাউল্লাহ বলেছেন, ‘সার্বিকভাবে নির্বাচনে স্বচ্ছতা আনা এবং সুষ্ঠুভাবে নির্বাচন সম্পন্ন করা শুধুমাত্র একটি বাড়ি বা একটি প্রতিষ্ঠান দ্বারা সম্ভব না, এটি একটি সামগ্রিক প্রক্রিয়া। একদম শুরু থেকেই সঠিক ভোটার তালিকা হওয়া থেকে শুরু করে ফলাফল ডিক্লেয়ার করা পর্যন্ত। আমি বিশ্বাস করি এবারের নির্বাচনে আস্থাহীনতার জায়গাটা থাকবে না। নিরাপত্তা ইয়েস, এটি একটি এলাকাভিত্তিক সংবেদনশীলতার উপর নির্ভরশীল। এ কারণে বিভিন্ন এলাকাকে বিভিন্নভাবে গ্রেট করা হয়ে থাকে। আমি নিশ্চিত যে, সব জায়গাতেই এ ধরনের সংবেদনশীলতা থাকবে। রাজনৈতিক এ্যালগো স্পেসিং এ সেখানে যথাযথ ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’
আজ সোমবার (২৭ জানুয়ারি) নীলফামারী সরকারি কলেজ হল রুমে ভোটার তালিকা হালনাগাদ উপলক্ষে সদর উপজেলা নির্বাচন কাযালয় আয়োজিত তথ্য সংগ্রহকারী, সুপারভাইজার ও নতুন ভোটারদের সাথে মতবিনিময় সভায় তিনি এসব কথা বলেন।
তিনি আরও বলেন, ‘নির্বাচন ব্যবস্থার সংস্কার কমিশনে একটা প্রস্তাব এসেছে যে, আইন শৃঙ্খলা বাহিনীর সংজ্ঞার মধ্যে সশস্ত্র বাহিনীকে সংযুক্ত করা। আমরা অপেক্ষা করি, দেখি এটা সংযুক্ত হয় কি না। হলে পরে একটা ভ্যালু অ্যাড হবে বলে আমরা আশা করি। পাশাপাশি আমরাও নির্বাচন কমিশনের পক্ষ থেকে সুপারিশ করেছি যে বিএনসিসি কেও এটার সাথে সংযুক্ত করা। কারণ বিএনসিসির সিনিয়র ডিভিশনে প্রায় দশ হাজার সদস্য আছে। আমি এখানে ঢোকার সময়ই আমি একটা প্লাটুন কমান্ডার এর সাথে কথা বলছিলাম এখানে। তারাও কিন্তু আমাদেরকে এ্যাড করতে পারে। সর্বোপরি আমি মনে করি আগামী নির্বাচনে আমরা সবাই অত্যন্ত সচেতন থাকব, সজাগ থাকব এবং সেই পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে।’
নির্বাচন কমিশনের ভাবমূর্তি নষ্টের বিষয়ে কমিশনার বলেন, ‘নির্বাচন কমিশন শুধুমাত্র একটা এপেক্স বডি যে সামনে থেকে নীতিমালা প্রণয়ন করে, গাইড করে, নির্দেশনা দেয়, নিয়ন্ত্রণ করে। কিন্তু মাঠ পর্যায়ে কাজ করে জনপ্রশাসন, আইন শৃঙ্খলা বাহিনী থেকে শুরু করে আপনারা যারা এখানে সামনে বসে আছেন, আগামী কালকে হয়তো প্রিজাইডিং অফিসার, পোলিং অফিসার, একজন প্রিজাইডিং অফিসার হিসেবে কাজ করবেন। কিন্তু যখন ভাবমূর্তি নষ্ট হয় এটার সাথে সম্পৃক্ত সবারই ভাবমূর্তি নষ্ট হয়। আমি মনে করি আমরা একটা খারাপ সময় পার করেছি এবং আমাদের সবার ভাবমূর্তি ভূলুণ্ঠিত হয়েছে খারাপ নির্বাচনের জন্য। আমাদের সামনে একটা সুবর্ণ সুযোগ আমাদের সবার ভাবমূর্তি পুনরুদ্ধার করার। আমি নিশ্চিত সবাই এই সুযোগ গ্রহণ করবে।’
নির্বাচনের চ্যালেঞ্জ নিয়ে আবুল ফজল মোঃ সানাউল্লাহ বলেন, ‘নির্বাচনে তো কিছু চ্যালেঞ্জ থাকে। তবে এবারের নির্বাচনে আমরা চ্যালেঞ্জের থেকে সুবিধা বেশি দেখতে পাচ্ছি। বর্তমানে যেসব রাজনৈতিক দল মাঠে ময়দানে নির্বাচনের কথা বলছেন, তারা দীর্ঘদিন গণতন্ত্র পুনরুদ্ধার, সঠিক নির্বাচন, সুষ্ঠু নির্বাচন, নিরপেক্ষ নির্বাচন কমিশন ইত্যাদি নিয়েই দাবি তুলেছেন, কথা বলেছেন। আমার মনে হয় আমাদের সময় এসেছে তাদের কাছে দাবি করা যে, আপনারা এতদিন ধরে যে দাবি নিয়ে আন্দোলন করেছেন, আমাদেরকে সেই দাবি পূরণ করার সুযোগ করে দেন। পাশাপাশি আমি মনে করি আমাদের ইয়াং জেনারেশন এই জুলাই এবং অগাস্টের অভ্যুত্থানের মাধ্যমে আমাদের সবার চোখ খুলে দিয়েছে। যে ব্যক্তি নাগরিকের অধিকার কী জিনিস এবং ব্যক্তি নাগরিকের অধিকার খর্ব হলে কী হতে পারে? আমার মনে হয় এটাকে আমাদের কাজে লাগানো উচিত।’
বিগত নির্বাচনগুলো নিয়ে তিনি বলেন, ‘ আমরা নির্বাচন কমিশন বিশ্বাস করতে চাই, নির্বাচন কমিশন একটি পাত্র। তার অধীন সকলে পানির মতন রং ধারণ করবে। আমরা চাইলেও রাতারাতি সকলকে যারা পূর্ববর্তী নির্বাচনের সাথে সম্পৃক্ত ছিল অপসারণ করতে পারব না। এটা সম্ভব নয়। তাহলে আমাদের যেটা করতে হবে, দেখতে হবে যে কারা এখানে অংশীজন বনে গিয়েছিল আর কারা বাধ্য হয়েছিল। আমরা বিশ্বাস করতে চাই আমরা নির্বাচন কমিশন শক্ত থাকি, স্বচ্ছ থাকি, সৎ থাকি । আমাদের অধীনে যারা নির্বাচন করবেন তারাও সৎ থাকতে বাধ্য।’
মতবিনিময় সভায়, জেলা নির্বাচন কর্মকর্তা মোহাম্মদ জাহাঙ্গীর হোসেনের সভাপতিত্বে জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ নায়িরুজ্জামান, নীলফামারী সরকারি কলেজের অধ্যক্ষ অধ্যাপক মাহাবুবুর রহমান ভূঁইয়া, রংপুর আঞ্চলিক নির্বাচন কর্মকর্তা মোহাম্মদ আজিজুল ইসলাম সহ আরও অনেকে উপস্থিত ছিলেন।
আসিফ