ঢাকা, বাংলাদেশ   সোমবার ২৭ জানুয়ারি ২০২৫, ১৪ মাঘ ১৪৩১

যুক্তরাষ্ট্রের সহায়তা বন্ধে কি প্রভাব পড়বে বাংলাদেশে?

প্রকাশিত: ১০:২৬, ২৭ জানুয়ারি ২০২৫

যুক্তরাষ্ট্রের সহায়তা বন্ধে কি প্রভাব পড়বে বাংলাদেশে?

ছবি: সংগৃহীত

যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প তাঁর দ্বিতীয় মেয়াদের শপথ গ্রহণের রাতেই ৯০ দিনের জন্য বিদেশি সহায়তা স্থগিত করার ঘোষণা দিয়েছেন, যা সারা বিশ্বে উদ্বেগের জন্ম দিয়েছে। বিশেষ করে বাংলাদেশের মতো দেশগুলোর জন্য, যেখানে যুক্তরাষ্ট্রের সহায়তা উন্নয়ন প্রচেষ্টায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে, এটি গভীরভাবে পর্যালোচনার দাবি রাখে। অংশীদার, উন্নয়ন সহযোগী এবং বিশ্লেষকরা এখন এই সিদ্ধান্তের প্রভাব শুধু বাংলাদেশের জন্য নয়, বিশ্ব স্থিতিশীলতার ওপরও মূল্যায়ন করছেন।

বাংলাদেশের স্বাধীনতার পর থেকেই যুক্তরাষ্ট্র একটি গুরুত্বপূর্ণ উন্নয়ন সহযোগী হিসেবে কাজ করে আসছে। খাদ্য নিরাপত্তা, স্বাস্থ্য, সুশাসন, শিক্ষা ও পরিবেশ সংরক্ষণসহ বিভিন্ন খাতে তাদের অবদান বাংলাদেশের উন্নয়নে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছে। ইউএসএআইডি-এর তথ্য অনুযায়ী, এশিয়ার অন্যতম বৃহৎ যুক্তরাষ্ট্রের উন্নয়ন কার্যক্রম বাংলাদেশে পরিচালিত হয়, যা দক্ষিণ এশিয়ায় বাংলাদেশের কৌশলগত গুরুত্বকে তুলে ধরে।

গত কয়েক বছরে রোহিঙ্গা সংকট মোকাবিলায় যুক্তরাষ্ট্রের সহায়তা উল্লেখযোগ্য ভূমিকা পালন করেছে। ২০১৭ সাল থেকে এই খাতে ২.৫ বিলিয়ন ডলারের বেশি মানবিক সহায়তা প্রদান করে যুক্তরাষ্ট্র সবচেয়ে বড় দাতা হিসেবে ভূমিকা রেখেছে। এই সহায়তা শুধু রোহিঙ্গা শরণার্থীদের জন্য নয়, কক্সবাজারের মতো এলাকার স্থানীয় জনগোষ্ঠীর জন্যও সহায়ক হয়েছে। তবে, এই সহায়তা স্থগিত হলে এই বিশাল চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় কীভাবে পরিস্থিতি সামাল দেওয়া সম্ভব হবে, তা একটি বড় প্রশ্ন।

মানবিক সহায়তার বাইরেও যুক্তরাষ্ট্রের উন্নয়নমূলক প্রকল্পগুলো গুরুত্বপূর্ণ। ২০২৩ সালেই বাংলাদেশ ৪৯০ মিলিয়ন ডলারের সহায়তা পেয়েছে, যা বিভিন্ন খাতে চলমান প্রকল্পগুলোকে সহায়তা করেছে। বাংলাদেশের ২০৩১ সালের মধ্যে উচ্চ-মধ্যম আয়ের দেশে উন্নীত হওয়ার লক্ষ্য পূরণে এই সহায়তা অত্যন্ত প্রয়োজনীয়। এই সহায়তা স্থগিত হওয়ায় চলমান প্রকল্পগুলোর ভবিষ্যৎ এবং গুরুত্বপূর্ণ কর্মসূচিগুলোর ভাগ্য নিয়ে উদ্বেগ দেখা দিয়েছে।

এই সিদ্ধান্ত যুক্তরাষ্ট্রের বৈদেশিক নীতিতে এক বিশাল পরিবর্তনের ইঙ্গিত দেয়। হোয়াইট হাউসের মতে, এই পুনর্মূল্যায়ন যুক্তরাষ্ট্রের নিরাপত্তা, শক্তি এবং সমৃদ্ধির সঙ্গে সম্পর্কিত। পররাষ্ট্র মন্ত্রী মার্কো রুবিও এই নীতির মূল ভাবনাকে এভাবে ব্যাখ্যা করেছেন, "এটি কি যুক্তরাষ্ট্রকে নিরাপদ রাখে? এটি কি যুক্তরাষ্ট্রকে শক্তিশালী করে? এটি কি যুক্তরাষ্ট্রকে আরও সমৃদ্ধ করে?" এই অবস্থান স্পষ্টভাবে দেখায় যে, যুক্তরাষ্ট্রের স্বার্থের সঙ্গে সরাসরি সম্পর্কিত নয় এমন সহায়তা কার্যক্রমগুলো বন্ধ হতে পারে।

এই নীতি পরিবর্তন কেবল বাংলাদেশ নয়, বিশ্বজুড়েই প্রভাব ফেলতে পারে। দীর্ঘদিন ধরে যুক্তরাষ্ট্র বিশ্বব্যাপী দারিদ্র্য দূরীকরণ, স্বাস্থ্য সংকট মোকাবিলা এবং স্থিতিশীলতা রক্ষায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে আসছে। তবে এই নীতি পরিবর্তন আন্তর্জাতিক সহযোগিতায় নেতিবাচক প্রভাব ফেলতে পারে।

বাংলাদেশের জন্য এই পরিস্থিতি কেবল চ্যালেঞ্জ নয়, একটি বার্তা। এই সহায়তা স্থগিতের মধ্যে দিয়ে বাংলাদেশকে নিজের সক্ষমতা বৃদ্ধি, অন্যান্য দেশ এবং বহুপাক্ষিক সংস্থাগুলোর সঙ্গে সম্পর্ক জোরদার এবং স্বনির্ভরতার পথে এগিয়ে যাওয়ার পরিকল্পনা নিতে হবে।

নাহিদা

×