অন্তর্বর্তী সরকারের নিরপেক্ষতা আর শিক্ষার্থীদের দল খোলার সম্ভাবনা নিয়ে হঠাৎ করেই মুখোমুখি অবস্থানে বিএনপি ও জুলাই অভ্যুথানের ছাত্র নেতারা। বিশ্লেষকরা বলছেন, এমন বিরোধের সুফল নিতে পারে তৃতীয় কোন শক্তি। কারা সেই তৃতীয় শক্তি? এমন প্রশ্ন ঘুরে বেড়াচ্ছে বাংলাদেশের রাজনীতির অলি গলিতে।
গত কয়েক দিনে বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরের কিছু বক্তব্য নিয়ে সরগরম হয়ে উঠেছে রাজনীতির মাঠ। কিছু বিষয়ে সরকার নিরপেক্ষ ভূমিকা পালন করতে পারছে না। কিংবা জুলাই অভ্যুত্থানে নেতৃত্ব দেয়া শিক্ষার্থীরা সরকারে নিজেদের প্রতিনিধি রেখে নতুন রাজনৈতিক দল গঠন করে আগামী নির্বাচনে অংশ নিতে চাইলে অন্য রাজনৈতিক দলগুলো বিষয়টি মেনে নেবে না।
মির্জা ফখরুলের এমন বক্তব্যের পরেই আলোচনার ঝড় উঠেছে রাজনীতির মাঠে। বিএনপি মহাসচিবের এই বক্তব্যের বিষয়ে অন্তর্বর্তী সরকারের উপদেষ্টা নাহিদ ইসলাম, আসিফ মাহমুদ ও বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলনের কেউ কেউ নানা মন্তব্য ও প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করেছেন। নাহিদ ইসলাম বলেছেন, অন্তর্বর্তী সরকার নিয়ে বিএনপির কথার টোন আওয়ামী লীগের সঙ্গে মিলে যাচ্ছে। এছাড়াও অভ্যুত্থান ও আওয়ামী লীগ সরকার পতনের পর বিএনপি ও অংশীজনদের সমর্থনেই সরকার গঠন হয়েছে বলে উল্লেখ করে তিনি বিএনপি মহাসচিবের নিরপেক্ষতা নিয়ে সন্দেহ প্রকাশ করেন।
আবার বিএনপির দিক থেকেও এসব নিয়ে নানা ধরনের বক্তব্য আসছে। বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী বলেছেন, সব পক্ষের সমর্থনে অন্তর্বর্তী সরকার গঠন হলেও যখন শুনি আগে সংস্কার, পরে নির্বাচন এ যেন মনে হয় শেখ হাসিনার কথারই প্রতিধ্বনি। এসব বক্তব্য ও নানা প্রতিক্রিয়ায় চলমান রাজনীতি নতুন মোড় নিয়েছে। ওই সময় বিরোধী ছাত্র আন্দোলন ও জাতীয় নাগরিক কমিটির রাজনৈতিক দল গঠনের প্রক্রিয়ার মধ্যে প্রধান রাজনৈতিক দলের শীর্ষ নেতার সঙ্গে সরকারের উপদেষ্টাদের এই বাহাসকে নতুন রাজনৈতিক মেরুকরণের ইঙ্গিত বলেও মনে করছেন কেউ কেউ। বিশ্লেষকদের ধারণা, রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে ছাত্র নেতাদের বিভেদ বা মতপার্থক্য বাড়তে থাকলে তৃতীয় শক্তি হিসেবে সামরিক অথবা বেসামরিক কোনো গোষ্ঠী দেশ পরিচালনায় হাত বাড়িয়ে দিতে পারে, যা বাংলাদেশের গণতান্ত্রিক চর্চাকে বড় ধরনের হুমকির মধ্যে ফেলতে পারে।
মুহম্মদ রাশেদুল আলম ভুঁইয়া এ বিষয়ে বলেন, প্রশ্ন হচ্ছে যে, এই নির্বাচনে কি এই উপস্থিতি কি কোনো প্রভাব ফেলবে কিনা? নিরপেক্ষতা নিয়ে যেটা। মির্জা ফখরুল ইসলাম যেটা প্রশ্ন তুলেছেন, আমার কাছে মনে হয় যে, গণ অভ্যুত্থানের নেতা হিসেবে তাদের সেখানে এই সরকারের উপস্থিতি অত্যন্ত জরুরি ছিল। এটা আমি মনে করি। ফ্যাসিস্ট সরকারের এগেনেস্টে তাদের যে ম্যান্ডেট এবং তাদের যে জীবন বিলিয়ে দিয়েছে, সেখানে আমাদের মনে হয় তরুণদের একটা বিশাল অ্যাসপিরেশন আছে। একটা ফ্যাসিস্ট কাঠামোর বিলুপ্তি সাধন এবং একটা ব্যাসিক স্ট্রাকচারাল চেইঞ্জ আমাদের এই এই অভ্যুত্থানের মধ্য দিয়ে। সেই অ্যাসপিরেশন নিয়েই কিন্তু ছাত্র জনতার এই সরকারের প্রতি শুরু থেকে একটা সমর্থন ছিল।
তিনি আরো বলেন, এখন যেটা নির্বাচন অনুষ্ঠান একটা এই সরকারের অন্যতম একটা বড় ম্যান্ডেট। তো সেখানে রাজনৈতিক দল হিসেবে আমরা জানি যে, বিগত কয়েক বছরে বাংলাদেশের প্রধান দুটি রাজনৈতিক দল বিএনপি এবং আওয়ামী লীগ। আওয়ামী লীগের মধ্যে যে ফ্যাসিস্ট কাঠামোটি গড়ে উঠেছে সেটার বিরুদ্ধেই কিন্তু আমাদের এই গণ অভ্যুত্থান এবং এই আন্দোলনটি গড়ে উঠেছে। এখন আওয়ামী লীগ এই রাজনীতিতে অংশগ্রহণ বা নির্বাচনে অংশগ্রহণ করবে কিনা এটা নিয়েও কিন্তু কিছু প্রশ্ন তৈরি হয়েছে। এবং মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বা বিএনপির যে একটা বা জামাতের কয়েকজন নেতার মধ্যেও এটা উঠে আসছে যে, আওয়ামী লীগকে আবার রাজনীতিতে অংশগ্রহণ করতে দেওয়া বা দেওয়া এগুলো নিয়ে অনেকগুলো বক্তব্য আছে। কিন্তু ছাত্রদের যে অ্যাসপিরেশন সেটা হচ্ছে যে, এই গণঅভ্যুত্থানের মূল স্পিরিট হচ্ছে অ্যান্টি ফ্যাসিজম।
আমরা কোনো ভাবেই ফ্যাসিস্ট স্ট্রাকচারটা এখানে পুনরায় স্থাপন করতে চায় না এবং ছাত্ররা সেই নতুন রাজনীতির সূচনা করতে চায় এখানে। এবং সে কারণেই ছাত্রদের রাজনৈতিক দল হিসেবে মার্জ করার প্রশ্নটি এখানে এসেছে।
রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের মতে, হাসিনা সরকার পতনে ছাত্র জনতা ও রাজনৈতিক দলের ঐক্যবদ্ধ গোষ্ঠী স্বার্থের কারণে খুলে গেলে তার ফল হতে পারে ১/১১ মতো। ফ্যাসিস্টদের পুনর্বাসনের চেয়েও এই বিরোধ ভূমিকা রাখতে পারে বলেও মনে করছেন সচেতনরা।
সচেতন নাগরিক সাইফুলের দাবি, এই যে বিপদটা শুরু হয়েছে, আপনি যদি বলেন যে এটি কাম্য নয় বিএনপির সাথে ছাত্রদের এতে করে কি? যদি এই বিপদটা আসলে এভাবেই চলমান থাকে, এতে করে কি অন্য কেউ সুযোগ নেয়ার ই রয়েছে কি না। তবে শঙ্কা রয়েছে।
মুহম্মদ রাশেদুল আলম ভুঁইয়া আরো বলেন, এ বিষয়ে অবশ্য এখানেও আমার কাছে মনে হয় যে, এখনো কিন্তু আমার কাছে মনে হয় যে দেশটা কিন্তু চালাচ্ছে বিহাইন্ড দ্য সিন এ সামরিক-বেসামরিক আমলাতন্ত্র। আমার কাছে মনে হচ্ছে, এখানে যদি এই বিভাজনটা তৈরি হয়, তাহলেই দেশে অস্থিতিশীলতা তৈরি হতে পারে এবং সেক্ষেত্রে সামরিক বেসামরিক আমলাতান্ত্রিক একটা সরকার এটার সুযোগ নিতে পারে আমার কাছে মনে হয়। সেখানে সামরিক সরকার কর্তৃক ক্ষমতা দখল করাও প্রশ্ন সেখানে তৈরি হতে পারে। কিন্তু এবং গত কয়েকদিন থেকে কিন্তু আমরা এই গুজবগুলো দেখতে পাচ্ছি সোশ্যাল মিডিয়াতে।
সরকারে থাকা ছাত্র প্রতিনিধিরা নির্বাচন ব্যবস্থায় হস্তক্ষেপ না করলে সরকারে তাদের থাকা না থাকা কোনো প্রভাব ফেলবে না বলেও মনে করেন রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা। ফ্যাসিবাদ থেকে মুক্তির পর ঐক্য ধরে রাখার আহ্বান তাদের।
ফুয়াদ