ছবি : সংগৃহীত
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার (ডব্লিউএইচও) দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার আঞ্চলিক পরিচালক সায়মা ওয়াজেদ ওরফে পুতুলের বিরুদ্ধে দুর্নীতির মাধ্যমে পদ অর্জনের অভিযোগে তদন্ত শুরু করেছে বাংলাদেশের দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)।
২০২৪ সালের ফেব্রুয়ারিতে সায়মা ওয়াজেদ আঞ্চলিক পরিচালক হিসেবে নিয়োগ পান। তবে অভিযোগ উঠেছে, তার মা, ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা, ক্ষমতার অপব্যবহার করে তার মেয়ের নিয়োগ নিশ্চিত করেছেন। দুদকের উপ-পরিচালক আকতারুল ইসলাম দ্য ল্যানসেটকে জানিয়েছেন, এসব অভিযোগের ভিত্তিতে তদন্ত চলছে।
দুদকের অভিযোগ
দুদকের পাঠানো এক চিঠিতে পররাষ্ট্র এবং স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়কে জানানো হয়েছে, পুতুলের বিরুদ্ধে আর্থিক অসদাচরণ এবং রাজনৈতিক প্রভাব ব্যবহারের অভিযোগ উঠেছে। একইসঙ্গে ডব্লিউএইচও-কে সায়মা ওয়াজেদের অপসারণের জন্য চাপ দেওয়ার আহ্বান জানানো হয়েছে।
দুদকের মতে, শেখ হাসিনা তার মেয়েকে প্রভাবশালী করতে এবং আন্তর্জাতিক অঙ্গনে পরিচিতি বাড়াতে নিজের ক্ষমতা ব্যবহার করেছেন। উদাহরণ হিসেবে ২০২৩ সালে ভারতে অনুষ্ঠিত জি-২০ শীর্ষ সম্মেলনে সায়মা ওয়াজেদের অংশগ্রহণের বিষয়টি উল্লেখ করা হয়েছে।
যোগ্যতা নিয়ে বিতর্ক
ডব্লিউএইচও-এর নিয়ম অনুযায়ী, আঞ্চলিক পরিচালকের পদে প্রার্থী হতে হলে জনস্বাস্থ্য এবং বৈশ্বিক স্বাস্থ্যে ব্যাপক অভিজ্ঞতা থাকা আবশ্যক। সায়মা ওয়াজেদ ক্লিনিক্যাল সাইকোলজিতে এমএসসি ডিগ্রি অর্জন করেছেন এবং তার কাজ মূলত মানসিক স্বাস্থ্য ও অটিজম কেন্দ্রিক। তবে তার কোনো জনস্বাস্থ্য বা চিকিৎসা বিদ্যায় আনুষ্ঠানিক ডিগ্রি নেই।
অপরদিকে, তার প্রতিদ্বন্দ্বী নেপালের শম্ভু প্রসাদ আচার্যের ডব্লিউএইচও-তে ৩০ বছরের অভিজ্ঞতা রয়েছে এবং তিনি জনস্বাস্থ্যে ডক্টরেট ডিগ্রিধারী।
বিশেষজ্ঞদের মতামত
ম্যানচেস্টার বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক এবং ডব্লিউএইচও-এর সাবেক পরিচালক মুকেশ কপিলা বলেছেন, সায়মা ওয়াজেদের বিরুদ্ধে দুর্নীতির অভিযোগের তদন্ত শুরু করে দুদক সঠিক কাজ করেছে। কাশ্মীরের প্রাক্তন স্বাস্থ্য পরিচালক সেলিম উর রেহমান বলেছেন, আঞ্চলিক পরিচালকের পদে নেতৃত্বের দক্ষতা এবং জনস্বাস্থ্যে প্রশিক্ষণ থাকা অপরিহার্য।
নিয়োগ প্রক্রিয়ায় সংস্কারের দাবি
ডব্লিউএইচও-এর সাবেক কর্মকর্তারা নিয়োগ প্রক্রিয়ায় সংস্কারের প্রয়োজনীয়তার ওপর জোর দিয়েছেন। নেপালি জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞ রীতা থাপা বলেছেন, প্রার্থীদের চিকিৎসা এবং জনস্বাস্থ্যে মৌলিক যোগ্যতা থাকা বাধ্যতামূলক করা উচিত। এছাড়া, একটি স্বাধীন কমিটি গঠন করে প্রার্থীদের মূল্যায়নের মাধ্যমে যোগ্য প্রার্থী চূড়ান্ত করার সুপারিশ করেন তিনি।
ডব্লিউএইচও-এর প্রতিক্রিয়া
ডব্লিউএইচও-এর মুখপাত্র তারিক জাসারেভিচ বলেছেন, সদস্য রাষ্ট্রের নির্বাচনি প্রক্রিয়ায় কোনো অনিয়ম হলে তা সংশ্লিষ্ট জাতীয় কর্তৃপক্ষের মাধ্যমে তদন্ত হওয়া উচিত। তবে তদন্ত চলাকালীন ডব্লিউএইচও এ বিষয়ে মন্তব্য করবে না।
এদিকে, সায়মা ওয়াজেদ দ্য ল্যানসেটের মন্তব্যের অনুরোধের কোনো জবাব দেননি।
মো. মহিউদ্দিন