
অগ্নিকাণ্ড আতঙ্কে দিনযাপন করছে উখিয়া-টেকনাফে আশ্রয় নেওয়া ১৫ লক্ষাধিক রোহিঙ্গা। বাঁশ ও পলিথিন দিয়ে নির্মিত ঝুপড়ির ঘনবসতি হওয়াই অগ্নিকান্ডে বেশি ঝুঁকিপূর্ণ বলে মনে করছে তারা। এসব ঝুপড়িতে বসবাসকারী রোহিঙ্গারা দেশি চুলায় খোলামেলা ভাবে রান্নার কাজ করে। হাতে তৈরি চুলার আগুনের পাশাপাশি বিভিন্ন বেসরকারি সংস্থার সহায়তায় যেখানে সেখানে গ্যাস সিলিন্ডার ব্যবহার এই ঝুঁকি আরও বাড়িয়েছে। পলিথিন দিয়ে তৈরি এ ঝুপড়ি ঘর শীত মৌসুমে অগ্নিকাণ্ডের জন্য অত্যন্ত ঝুঁকিপূর্ণ।
গেল ২৩ জানুয়ারি ৮নং রোহিঙ্গা ক্যাম্পের এ ব্লকে নুর জাহান নামে এক বৃদ্ধার ঘরে রোহিঙ্গা দুষ্কৃতিকারীরা পরিকল্পিতবভাবে আগুন লাগিয়ে দেয়। ঘরের চারদিকে আগুন ছড়িয়ে পড়ার আগেই আশ-পাশের লোকজনের সচেতনতায় বেচে যায় পুরো ব্লকের ঝুপড়ি ঘরগুলো। এই আগুনের সুত্রপাত হিসাবে অনুমান করা গেছে বৃদ্ধার সাথে দুষ্কৃতিকারী রোহিঙ্গার পুর্ব-শত্রুতা।
১৬ জানুয়ারি নয়াপাড়া মুচনী ২৬নং ক্যাম্পে একি কায়দায় আগুন লেগে দুই শতাধিক ঝুপড়ি ঘর পুড়ে ছাই হয়ে যায়। এই আগুনে পুড়ে যায় আয়েশা সিদ্দিকা নামে এক শিশু'ও। আহত হয় ৫ জন। এই আগুনের সুত্রপাত হিসাবে পাওয়া গেছে এনজিও থেকে দেওয়া গ্যাস সিলিন্ডারের অপব্যবহার।
গত ২৪ ডিসেম্বর কুতুপালং ১নং রোহিঙ্গা ক্যাম্পে অগ্নিকাণ্ডে দুইজনের মৃত্যু হয় এবং পুড়ে যায় পাঁচ শতাধিক বসত-ঘরসহ নানা স্থাপনা। এইখানে আগুনের সুত্রপাত হিসাবে লোক-মুখে শুনা যায় এনজিও'র বাজেট মেয়াদ বাড়ানো। এর আগেও পালংখালী ১৩নং ক্যাম্পে অগ্নিকান্ডে দুই শতাধিক ঘর পুড়ে যায়। সেখানে বিদ্যুৎ সার্কিট থেকে আগুনের সুত্রপাত ঘটে বলে জানা যায়।
স্থানীয়রা বলছে, রোহিঙ্গাদের মধ্যে বিভিন্ন গ্রুপে গ্রুপে শত্রুতা,সন্ত্রাসী কার্যলাপের জের ধরেও প্রতিপক্ষের ক্ষতি করার উদ্যোশ্যে তারা একে অপরের ঘরে আগুন লাগিয়ে দেয়। আবার অনেকেই বলছে, বিভিন্ন এনজিও সংস্থার প্রজেক্ট'র মেয়াদ বাড়াতে কাজ দেখানোর কারণ হিসাবে রোহিঙ্গাদের মাধ্যমে অগ্নিকান্ড ঘটায়।
জনকণ্ঠের অনুসন্ধানে উঠে এসেছে, বিভিন্ন এনজিও সংস্থার বাজেটের মেয়াদ বাড়াতে চিহ্নিত রোহিঙ্গা দুষ্কৃতিকারীদের মাধ্যমে ক্যাম্পে পরিকল্পিত ভাবে আগুন লাগানো হয়। আবার অনেক ক্ষেত্রে রান্নার চুলা থেকেও এই আগুনের সুত্রপাত ঘটে। প্রতিবছর ডিসেম্বর-জানুয়ারি মাসে অগ্নিকান্ডের ঘটনা বেশি ঘটে ক্যাম্পে। অগ্নিকান্ডের ঘটনা ছাড়া কোন বছর পার করেনি তারা। ডিসেম্বর আসলে এনজিওদের বাজেট শেষ হয়ে যায়। ফলে তাদের কু- প্ররোচনায় ক্যাম্পে পরিকল্পিতভাবে দুষ্কৃতিকারীদের মাধ্যমে অগ্নিকান্ড তান্ডব চলে। মদদ দাতাদের উদ্যোশ্য ঝুপড়ি ঘরগুলো আগুনে একবার পুড়াবে আবার তৈরি করবে। এভাবে তাদের কাজ হাতে রাখতে নতুন নতুন ইস্যু সৃষ্টি করা হয় ক্যাম্পে।
অধিকার বাস্তবায়ন কমিটির সভাপতি ইঞ্জিনিয়ার রবিউল হাসান রবি বলেন, এনজিওরা যেভাবে বাজেটের টাকা নয়-ছয় করে শেষ করছে, তেমনি কোন সংস্থা প্রত্যাবাসনে জোর দিচ্ছে না। এনজিও-আইনএনজিও'রা চাইলে প্রত্যেক সংস্থার সাথে বসে আলাপ আলোচনার মাধ্যমে প্রত্যাবাসন প্রক্রিয়াটি দ্রুতগামী করতে পারতো।
ক্যাম্প থেকে এক বিশ্বস্ত সুত্র বলছে, রোহিঙ্গা সন্ত্রাসী গোষ্ঠী আরসা থেকে বিভক্ত হয়ে যাওয়া গ্রুপের মধ্যে বিভিন্ন কর্মকান্ড নিয়ে অমিল হওয়াতে বেশিরভাগ ক্যাম্পে অগ্নিকান্ডের ঘটনা ঘটছে। রোহিঙ্গা আরসা কমান্ডার জুবায়ের, কলিম, আনাস, আবু মূসাসহ বিশাল একটি সন্ত্রাসী গ্রুপ সম্প্রতি ০৪টি রোহিঙ্গা সংগঠন এক হয়ে আরসা'র বিরুদ্ধে অবস্থান নেয়। যার ফলে তারা প্রতিশোধ পরায়ণ হয়ে ক্যাম্পে অস্থিতিশীল পরিস্থিতি তৈরিসহ বড় ধরনের নাশকতা ঘটাচ্ছে।
লম্বাশিয়া ক্যাম্পের হেড মাঝি বলছে, বছরের শেষ এবং শুরুতে ক্যাম্পে আগুন লাগে বেশি। কিন্ত কেন আগুন লাগে জানি না। আগুনে পূড়ে যাওয়ার পর শুনা যায় ঘরের চুলা নই সিলিন্ডার থেকে আগুন লেগে যায়।
উখিয়া ফায়ার সার্ভিস ইউনিটের ফায়ার অফিসার শফিকুল ইসলাম জনকণ্ঠকে জানিয়েছেন, গত ডিসেম্বর মাসে ৩টি ক্যাম্পে আগুন লেগেছিল এর মধ্যে ২টি ক্যাম্পে আগুন নিয়ন্ত্রণে চেষ্টা চালানোর পরেও অনেক বসতি পুড়ে ছাই হয়েy যাই।এতে ক্ষয়ক্ষতি হয়েছিল আনুমানিক ৫ কোটি ৫ লাখ ৯০ হাজার টাকা। ডিপেন্সের সদস্যরা তৎপরতা চালিয়ে যা মালামাল উদ্ধার করেছিল তার আনুমানিক মূল্য প্রায় ১ কোটি ১০ লাখ টাকা। চলতি মাসেও ৩টি অগ্নিকান্ডের ঘটনা ঘটে ২ টিতে উখিয়া ফায়ার সার্ভিস কাজ করতে পারে নাই। আরেকটিতে টেকনাফ ফায়ার স্টেশন কাজ করেছে।
১৪-এপিবিএন পুলিশের অতিরিক্ত ডিআইজি সিরাজ আমীন জানিয়েছেন, ক্যাম্পে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী জোরদার রয়েছে। রোহিঙ্গা দুষ্কৃতিকারীদের নাশকতা ও অস্থিতিশীল পরিস্থিতি সামাল দিতে বিভিন্ন গোয়েন্দা সংস্থাসহ ক্যাম্প সংশ্লিষ্ট সকল প্রশাসন সার্বক্ষণিক সজাগ রয়েছে।
আফরোজা