বাংলাদেশের স্বাধীনতার পর থেকে প্রতিটি জাতীয় নির্বাচনই বিতর্কের ছায়ায় আচ্ছন্ন। ১৯৭৩ সালে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের নেতৃত্বে প্রথম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে আওয়ামী লীগ ২৯৩টি আসনে জয়লাভ করে। তবে বিরোধী দল ভোট কারচুপির অভিযোগ তোলে। এরপরের প্রতিটি নির্বাচনেই অনিয়ম, কারচুপি, ও সহিংসতার অভিযোগ উঠেছে।
১৯৭৯ সালের দ্বিতীয় সংসদ নির্বাচনে জিয়াউর রহমানের অধীনে বিতর্ক এড়ানো সম্ভব হয়নি। ১৯৮৬ সালে এরশাদের জাতীয় পার্টি ১৫৩টি আসন পেলেও বিএনপি নির্বাচন বয়কট করে। ১৯৮৮ সালের নির্বাচনে বড় রাজনৈতিক দলগুলো অংশ নেয়নি, যা নির্বাচনকে আরও বিতর্কিত করে তোলে।
১৯৯১ সালের পঞ্চম সংসদ নির্বাচন প্রথমবারের মতো নির্দলীয় তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে হলেও বিএনপির জয় নিয়ে অভিযোগ ছিল। ১৯৯৬ সালে দুটি নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়—প্রথমটি বিএনপির একক নির্বাচন, যার মেয়াদ ছিল মাত্র ১১ দিন। পরে, তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে নির্বাচনে আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় আসে।
২০০১ সালে বিএনপি নিরঙ্কুশ জয় পেলেও আওয়ামী লীগ ফলাফল প্রত্যাখ্যান করে। ২০০৮ সালে নবম সংসদ নির্বাচনে আওয়ামী লীগ ২৩০টি আসন পায়, কিন্তু সেনা হস্তক্ষেপ নির্বাচনকে প্রশ্নবিদ্ধ করে।২০১৪ ও ২০১৮ সালের নির্বাচনগুলোর ক্ষেত্রে সহিংসতা ও "রাতের ভোট" নিয়ে ব্যাপক সমালোচনা হয়। সর্বশেষ, ২০২৪ সালের দ্বাদশ সংসদ নির্বাচন প্রতিদ্বন্দ্বীহীন ও "ডামি নির্বাচন" হিসেবে পরিচিতি পেয়েছে।
৫ আগস্ট ২০২৪। আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর রাষ্ট্রসংস্কারের দাবি ক্রমশ জোরালো হয়ে ওঠে। এই দাবির প্রেক্ষিতে ১১ টি সংস্কার কমিশন গঠন করে দেশের বিশিষ্ট নাগরিকদের দায়িত্ব দেয় অন্তর্বর্তীকালীন সরকার।
তিন মাস ধরে রাজনৈতিক দল ,কয়েকটি সংস্কার কমিশন তাদের রিপোর্ট জমা দিয়েছে সরকারের কাছে। এগুলোর মধ্যে নির্বাচন ব্যবস্থা এবং সংবিধান সংস্কার কমিটি যে রিপোর্টগুলো দিয়েছে, এই সংস্কারগুলো যদি কার্যকর করা হয় তাহলে বড় ধরনের পরিবর্তন আসবে বাংলাদেশের শাসন ব্যবস্থায়।
অবাধ,নিরপেক্ষ এবং সুষ্ঠু নির্বাচন অনুষ্ঠানের জন্য ১৫০ টি সুপারিশ রেখেছেন নির্বাচন কমিশন সংস্কার কমিটি।এই প্রতিবেদনে রাজনৈতিক দলগুলোর লেজুর ভিত্তিক সংগঠন বিলুপ্ত করার ঘোষণা করা হয়েছে ।দ্বিকক্ষ বিশিষ্ট সংসদে ব্যবস্থা চালু এবং স্থানীয় সরকার ব্যবস্থায় নির্বাচন ব্যবস্থা জাতীয় রাজনৈতিক দলের প্রতীক ব্যবহার না করা ঘোষণা দেওয়া হয়েছে।
এই প্রস্তাবগুলোর উপর ভিত্তি করে যদি সংস্কার করা হয় তাহলে নির্বাচন সুষ্ঠু,অবাধ,নিরপেক্ষ হবে বলে আশা করেন নির্বাচন কমিশন। কমিশন প্রধান বদিউল আলম বলেন,এই সংস্কার গুলো দেশের নির্বাচন কাঠামো পুনর্গঠনে সহযোগিতা করবে।
সংস্কার গুলো কার্যকর করা হবে কিনা এখন সেগুলোই আলোচনার বিষয়। বিশ্লেষকরা বলছেন যদি জাতীয় রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে ঐকমত্য না থাকে তাহলে সংস্কারগুলো কার্যকর করা সম্ভব হবে না।
যদি এই সংস্কার গুলো কার্যকর করা হয় তাহলে বাংলাদেশের রাজনৈতিক প্রেক্ষাপটে এবং দেশের ইতিহাসে একটি বড় ধরনের রদ বদল হতে যাচ্ছে ।
আফরোজা