ওয়ান ইলেভেন
২০০৭ সালের ১১ জানুয়ারি বাংলাদেশের রাজনৈতিক ইতিহাসে একটি গুরুত্বপূর্ণ দিন। সেদিন সকাল থেকে পুরো দেশজুড়ে ছিল নানা জল্পনা-কল্পনা। রাজনৈতিক অস্থিরতার মধ্যে দিনটি কাটছিল আন্দোলন, কূটনৈতিক বৈঠক এবং বঙ্গভবনে সেনা কর্মকর্তাদের তৎপরতার মাধ্যমে।
সেদিন দুপুরে তৎকালীন সেনাপ্রধান জেনারেল মইন ইউ আহমেদ এবং নবম পদাতিক ডিভিশনের জিওসি জেনারেল মাসুদ উদ্দিন চৌধুরীসহ শীর্ষ সামরিক কর্মকর্তারা বঙ্গভবনে রাষ্ট্রপতি ইয়াজউদ্দিন আহমেদের সঙ্গে বৈঠকে বসেন। বৈঠকে জাতীয় ও আন্তর্জাতিক বিভিন্ন পরিস্থিতি আলোচিত হয়। বিশেষ করে জাতিসংঘ শান্তিরক্ষা মিশন থেকে বাংলাদেশ সেনাবাহিনীকে প্রত্যাহারের সম্ভাব্য হুমকি গুরুত্ব পায়। জেনারেল মইন তার স্মৃতিচারণমূলক বই ‘শান্তির স্বপ্নে: সময়ের স্মৃতিচারণ’-এ এ বৈঠকের বিস্তারিত তুলে ধরেছেন।
জেনারেল মইন লিখেছেন, “আমি প্রেসিডেন্টকে দেশের সাম্প্রতিক পরিস্থিতি, বিরোধী দলের আল্টিমেটাম এবং জাতিসংঘের কঠোর অবস্থান সম্পর্কে জানাই। নৌ ও বিমান বাহিনীর প্রধানরাও পরিস্থিতির গুরুত্ব বোঝাতে সচেষ্ট ছিলেন। আমরা রাষ্ট্রপতিকে জানাই যে পরিস্থিতি ক্রমেই নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে যাচ্ছে।”
একই দিনে আওয়ামী লীগ নেতারা ঢাকাস্থ কানাডীয় হাই কমিশনারের বাসায় কয়েকটি প্রভাবশালী দেশের রাষ্ট্রদূতদের সঙ্গে বৈঠকে অংশ নেন। সেখানে আওয়ামী লীগের সিনিয়র নেতা শেখ ফজলুল করিম সেলিমসহ কয়েকজন নেতা উপস্থিত ছিলেন। বৈঠকে কূটনীতিকরা দুই রাজনৈতিক দলের সমঝোতার অভাবের কারণে দেশের স্থিতিশীলতা নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেন।
সেদিনের ঘটনা প্রসঙ্গে শেখ ফজলুল করিম সেলিম বলেন, “রাষ্ট্রদূতদের কথাবার্তা শুনে মনে হচ্ছিল, দেশ নিয়ে তারা উদ্বিগ্ন। পরিস্থিতি সামাল দিতে বড় কিছু হতে পারে, এমন ইঙ্গিত দিয়েছিলেন তারা।”
বিএনপি তখন ২২ জানুয়ারি অনুষ্ঠিতব্য নির্বাচনের প্রস্তুতিতে ব্যস্ত। ১০ জানুয়ারি গভীর রাতে বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া কুমিল্লায় নির্বাচনী প্রচারণায় ছিলেন। তবে ১১ জানুয়ারির বিকেলে তারা জানতে পারেন বঙ্গভবনে সেনা কর্মকর্তারা জরুরি বৈঠক করছেন এবং একটি বড় পরিবর্তনের পরিকল্পনা চলছে।
সেই সময়ে রাষ্ট্রপতি ইয়াজউদ্দিন আহমেদের নেতৃত্বে গঠিত তত্ত্বাবধায়ক সরকার কার্যত অকার্যকর হয়ে পড়ে। দেশজুড়ে সহিংসতা এবং অরাজক পরিস্থিতি বিরাজ করছিল। আন্তর্জাতিক চাপ এবং দেশের রাজনৈতিক অস্থিরতার ফলে ১১ জানুয়ারির রাতে জরুরি অবস্থা জারির ঘোষণা আসে।
জরুরি অবস্থা ঘোষণার পর তত্ত্বাবধায়ক সরকার ভেঙে নতুন সরকারের প্রধান হিসেবে প্রথমে নোবেল বিজয়ী ড. মুহাম্মদ ইউনূসকে প্রস্তাব দেওয়া হয়, যা তিনি প্রত্যাখ্যান করেন। এরপর ড. ফখরুদ্দিন আহমদকে প্রধান উপদেষ্টা হিসেবে নিয়োগ দেওয়া হয়।
ড. ফখরুদ্দিন আহমেদের সরকার শপথ নেওয়ার সময় আওয়ামী লীগ নেত্রী শেখ হাসিনা, জাতীয় পার্টির এইচএম এরশাদসহ মহাজোটের নেতারা উপস্থিত ছিলেন। তবে সরকারের কার্যক্রম পরবর্তী সময়ে সমালোচিত হয়, বিশেষ করে রাজনৈতিক নেতাদের গ্রেফতার এবং গণমাধ্যমের ওপর কড়া নিয়ন্ত্রণ আরোপের জন্য।
দুই বছরের সেনা-সমর্থিত তত্ত্বাবধায়ক সরকারের শাসন শেষে ২০০৮ সালের ২৯ ডিসেম্বর অনুষ্ঠিত সাধারণ নির্বাচনের মাধ্যমে বাংলাদেশ গণতন্ত্রের পথে ফিরে আসে। এ নির্বাচনে আওয়ামী লীগ বিজয়ী হয় এবং রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা ফিরে আসে।
সূত্র: https://www.youtube.com/watch?v=duFadi0qxSk
আশিক