ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৪ জানুয়ারি ২০২৫, ১১ মাঘ ১৪৩১

ক্ষমতার উত্তাপ নাকি স্বার্থের দ্বন্দ্ব, ঐক্যের ইস্পাত গলছে কিসে?

মেহেদী কাউসার

প্রকাশিত: ১৫:০৩, ২৪ জানুয়ারি ২০২৫

ক্ষমতার উত্তাপ নাকি স্বার্থের দ্বন্দ্ব, ঐক্যের ইস্পাত গলছে কিসে?

ছবি: সংগৃহীত

দেশের রাজনৈতিক অঙ্গন আবার উত্তপ্ত হয়ে উঠেছে অন্তর্বর্তী সরকারের দুই উপদেষ্টার ফেসবুক পোস্টকে ঘিরে।

বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরের বিবিসি বাংলায় দেওয়া সাম্প্রতিক এক সাক্ষাৎকারের প্রতিক্রিয়ায় অন্তর্বর্তী সরকারের তথ্য উপদেষ্টা নাহিদ ইসলাম এবং যুব ও ক্রীড়া উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদ কড়া মন্তব্য করেছেন। এই প্রতিক্রিয়াগুলোকে ঘিরে ক্ষমতা ভাগাভাগি ও জাতীয় ঐক্যের ভিত্তি নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে।

গত ৫ আগস্ট অন্তর্বর্তী সরকারের গঠনের সময় যে ঐক্য দেখা গিয়েছিল, সাম্প্রতিক মাসগুলোতে তা নড়বড়ে হতে শুরু করেছে। বিশেষত, বিএনপি ও বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের বিভিন্ন ইস্যুতে দ্বন্দ্ব ক্রমশ প্রকট হয়ে উঠেছে। আসন্ন নির্বাচন এবং ছাত্র-জনতার নিজস্ব রাজনৈতিক দল গঠনের পরিকল্পনা নিয়ে দুই পক্ষ প্রায় মুখোমুখি অবস্থানে পৌঁছেছে।

তথ্য উপদেষ্টা নাহিদ ইসলাম তার ফেসবুক পোস্টে দাবি করেছেন, বিএনপি পুনরায় ১/১১-এর মতো একটি সরকার গঠনের ষড়যন্ত্র করছে। তিনি বলেন, "১/১১ থেকেই আওয়ামী ফ্যাসিজমের উত্থান ঘটেছিল, আর বর্তমান সরকার সেই ধারাবাহিকতাকে রুখে দিয়ে গণঅভ্যুত্থানের নেতৃত্বে নতুন সরকার গঠন করেছে।"

নাহিদ অভিযোগ করেন, বিএনপি ছাত্র-জনতার গণঅভ্যুত্থানের নেতৃত্বকে খাটো করার চেষ্টা করছে, যা কোনোভাবেই গ্রহণযোগ্য নয়।

অন্যদিকে, যুব ও ক্রীড়া উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদ তার পোস্টে সরাসরি কারো নাম উল্লেখ না করলেও বলেছেন, "কোনো উপদেষ্টা যদি রাজনীতি করতে চায়, তাহলে সরকার থেকে সরে দাঁড়িয়েই তা করবে।"

তিনি সরকারের ওপর রাজনৈতিক দলের চাপ প্রয়োগের সমালোচনা করেন এবং এটিকে অনুচিত হিসেবে অভিহিত করেন।

বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের আহ্বায়ক হাসনাত আব্দুল্লাহ এই বিষয়ে আরও সরাসরি অবস্থান নিয়েছেন। তিনি বিএনপির সমালোচনা করে বলেছেন, "গণঅভ্যুত্থানের মাধ্যমে গঠিত অন্তর্বর্তী সরকারের ম্যান্ডেট দেশের অধিকাংশ ভোটের চেয়েও শক্তিশালী।"

হাসনাত আরও অভিযোগ করেন, বিএনপি এটি হুমকি হিসেবে দেখছে এবং পুরনো ১/১১ ফর্মুলা নিয়ে ষড়যন্ত্র করছে।

বিএনপির পক্ষ থেকে উপদেষ্টাদের এসব মন্তব্যকে গুরুত্ব না দেওয়ার ইঙ্গিত দেওয়া হয়েছে। দলের একজন জ্যেষ্ঠ নেতা এই প্রতিক্রিয়াগুলোকে "অভিজ্ঞতার অভাব" বলে অভিহিত করেছেন।

তবে জামায়াতে ইসলামীর পক্ষ থেকে এ বিষয়ে সরাসরি কোনো মন্তব্য আসেনি। দলটি বরং ফ্যাসিবাদ প্রতিরোধে ঐক্যবদ্ধ প্রচেষ্টার ওপর জোর দিয়েছে।

রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা মনে করছেন, ক্ষমতার উত্তাপ এবং তরুণদের রাজনৈতিক দল গঠনের উচ্চাভিলাস হয়তো রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে স্বার্থের সংঘর্ষ সৃষ্টি করেছে। জুলাই-আগস্টের ইস্পাতসম ঐক্য এমন দ্রুত ভাঙতে শুরু করার পেছনে কারণ খুঁজছেন বিশেষজ্ঞরা।

এই উত্তপ্ত পরিস্থিতিতে প্রশ্ন থেকেই যায়—ক্ষমতার ভারসাম্য ও জাতীয় ঐক্যের সংকট কি রাজনৈতিক ভবিষ্যতের জন্য আরও বড় চ্যালেঞ্জ নিয়ে আসছে? মাঘের শীতে রাজনীতির এই উত্তাপ কতটা দীর্ঘস্থায়ী হবে, তা নিয়েও সংশয় রয়েছে।

এম.কে.

×