ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৪ জানুয়ারি ২০২৫, ১০ মাঘ ১৪৩১

শ্রমিকদের দাবি অযৌক্তিক ॥ ড. সাখাওয়াত

বেক্সিমকোর অস্তিত্বহীন ১৬ প্রতিষ্ঠানের নামে ১২ হাজার কোটি টাকা ঋণ

স্টাফ রিপোর্টার

প্রকাশিত: ২৩:৩২, ২৩ জানুয়ারি ২০২৫

বেক্সিমকোর অস্তিত্বহীন ১৬ প্রতিষ্ঠানের নামে ১২ হাজার কোটি টাকা ঋণ

১৬ কোম্পানির বিপরীতে ১২ হাজার কোটি টাকা ঋণ

বেক্সিমকো ইন্ডাস্ট্রিয়াল পার্কের ৩২টি কারখানার মধ্যে ১৬টিরই কোনো অস্তিত্ব নেই। এই ১৬ কোম্পানির বিপরীতে ১২ হাজার কোটি টাকা ঋণ নেওয়া হয়েছে বলে জানিয়েছে বেক্সিমকো ইন্ডাস্ট্রিয়াল পার্কের শিল্পপ্রতিষ্ঠানগুলোর শ্রম ও ব্যবসায় পরিস্থিতি পর্যালোচনা সংক্রান্ত উপদেষ্টা পরিষদ কমিটি।

এ সময় শ্রম ও কর্মসংস্থান উপদেষ্টা ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব) ড. সাখাওয়াত হোসেন বলেন, শ্রমিকদের দাবিগুলো ‘অত্যন্ত অযৌক্তিক’। বেক্সিমকো গ্রুপের বন্ধ কারখানাগুলো পুনরায় চালু করা সম্ভব নয়। বৃহস্পতিবার সচিবালয়ে সংবাদ সম্মেলনে তিনি এ তথ্য জানান।
বেক্সিমকো ইন্ডাস্ট্রিয়াল পার্কের শিল্পপ্রতিষ্ঠানগুলোর শ্রম ও ব্যবসা পরিস্থিতি পর্যালোচনা সংক্রান্ত উপদেষ্টা পরিষদ কমিটির আহ্বায়ক ড. সাখাওয়াত হোসেন বলেন, বেশকিছু দিন আমরা একটা শান্ত পরিবেশে ছিলাম। হঠাৎ বুধবার তারা (বেক্সিমকোর শ্রমিকরা) সমাবেশ করে বলেছে, তাদের তিনটা দাবি।

দাবিগুলো আমার মনে হয় কোনো সরকারের পক্ষে পূরণ করা সম্ভব নয়। অত্যন্ত অযৌক্তিক এসব দাবি। তার পরও তারা বলেছে মানববন্ধন করবে, রাস্তাঘাট বন্ধ করবে। তারা করেছেও, আমরা কিছু বলিনি। পুলিশ মোতায়েন ছিল, আর্মি মোতায়েন ছিল, তারাও তাদের বাধা দেয়নি।
তিনি বলেন, আমরা বিশ্বাস করেছিলাম তাদের (শ্রমিকদের) নেতা যারা আছেন, তারা অত্যন্ত রেসপনসিবল। মনে করেছি এবং এখনো মনে করি তারা রেসপনসিবল হিসেবে তাদের দাবিগুলো তুলে ধরবে। তাতে কোনো আপত্তি নেই। 
ড. সাখাওয়াত আরও বলেন, বুধবার যা হয়েছে আপনারা জানেন। ১০০টির বেশি বাস জ্বালানো হয়েছে, বিভিন্ন স্থাপনা ভাঙচুর করা হয়েছে। এটি করার কথা ছিল না। এটি কখনো হয়নি। হঠাৎ করে এটি কেন হলো, তা আমরা খতিয়ে দেখে বের করব।
তিনি বলেন, ‘আমি মনে করি এটি করে তারা সম্পূর্ণভাবে দায়িত্বহীনতার পরিচয় দিয়েছে। শ্রমিকদের যারা নেতৃত্ব দিচ্ছেন তারা টোটালি ফলস কাজ করেছেন। তারা দেশবাসীর জন্য বড় সংকট তৈরি করতে যাচ্ছিল’।
শ্রম উপদেষ্টা বলেন, চরম ধৈর্য দেখানো হয়েছে। কিন্তু সেই ধৈর্যের মর্যাদা তারা (শ্রমিকরা) রাখেননি। বুধবার মিটিংয়ের সময় সচিব কথা বলেছেন, তখন তারা বলেছেন যে আমরা আপনাদের সঙ্গে কথা বলবো শান্তিপূর্ণভাবে। আজকে তারা এসে কথা বলছে। যিনি আন্দোলনের ডাক দিয়েছেন তিনিও এসেছিলেন। এখন পর্যন্ত তো কারও গায়ে হাত দেওয়া হয়নি। এখন তো দেখছি এটি আমাদের দুর্বলতা। অনেক পুলিশ আহত হয়েছে। পুলিশকে মেরেছে। এমনকি সেনাবাহিনীর গাড়ি পর্যন্ত জ্বালিয়ে দিয়েছে।
বেক্সিমকোর বন্ধ কারখানা পুনরায় চালু করার চিন্তা-ভাবনা করছেন কি না- সাংবাদিকদের এমন প্রশ্নে তিনি বলেন, ‘কী দিয়ে, হাউ?’ তাহলে কি বায়াররা আসতে পারবেন না- এমন প্রশ্নে তিনি বলেন, বায়াররা আসতে পারবে না, এই কারণে এই সম্পদের দায় কে নেবে? (বেক্সিমকো আর্থিক অবস্থার দিকে ইঙ্গিত করে) এই অবস্থায় কারখানা চালানো সম্ভব কী? আপনি চালাবেন?
২৩ একর জমি বন্ধক রেখে ৭০০ কোটি টাকা ঋণ দেওয়ার দাবি জানিয়েছেন বেক্সিমকোর কর্মীরা। এ নিয়ে শ্রম উপদেষ্টা বলেন, ‘ওই জায়গাও তো বন্ধক রয়েছে।’
গাজীপুরের সারাব এলাকার ‘বেক্সিমকো ইন্ডাস্ট্রিয়াল পার্কে’র বন্ধ ১৬টি কারখানা চালুর দাবিতে বুধবার আবার বিক্ষোভ শুরু করেন শ্রমিকরা। বিকেলে উত্তেজিত শ্রমিকরা চন্দ্রা-নবীনগর সড়কে অবস্থান নিয়ে অসংখ্য যানবাহন ভাঙচুর করেন। একটি পণ্যবোঝাই ট্রাক ও তিনটি বাসে আগুন দেন। পেশাগত দায়িত্ব পালনকালে শ্রমিকদের হামলায় তিন সংবাদকর্মী আহত হন।
বুধবারের এসব ঘটনার জেরে বেক্সিমকো ইন্ডাস্ট্রিয়াল পার্ক, গ্রামীণ ফেব্রিকসসহ আশপাশের এলাকায় যৌথবাহিনীসহ আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্য মোতায়েন করেছে সরকার।
গ্রুপের ১৬ কোম্পানির ঋণ ১২ হাজার কোটি টাকা ॥ বেক্সিমকো ইন্ডাস্ট্রিয়াল পার্কে মোট ৩২টি ফ্যাক্টরির মধ্যে ১৬টির কোনো অস্তিত্ব নেই। এই ১৬ কোম্পানির বিপরীতে ১২ হাজার কোটি টাকা ঋণ নেওয়া হয়েছে বলে জানিয়েছে বেক্সিমকো ইন্ডাস্ট্রিয়াল পার্কের শিল্পপ্রতিষ্ঠানগুলোর শ্রম ও ব্যবসায় পরিস্থিতি পর্যালোচনা সংক্রান্ত উপদেষ্টা পরিষদ কমিটি।
বৃহস্পতিবার সংবাদ সম্মেলনে কথা বলেন শ্রম ও কর্মসংস্থান উপদেষ্টা এবং বেক্সিমকো ইন্ডাস্ট্রিয়াল পার্কের শিল্পপ্রতিষ্ঠানগুলোর শ্রম ও ব্যবসায় পরিস্থিতি পর্যালোচনা সংক্রান্ত উপদেষ্টা পরিষদ কমিটির আহ্বায়ক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব.) ড. সাখাওয়াত হোসেন।
তিনি বলেন, গত ২১ জানুয়ারি বেক্সিমকো ইন্ডাস্ট্রিয়াল পার্কের কর্মচারী ও শ্রমিকরা গাজীপুরের শ্রীপুর মায়ানগর মাঠে জমায়েত হয়ে লে-অফ প্রত্যাহার করে ফ্যাক্টরিসমূহ খুলে দেওয়ার দাবি জানান। তারা ঘোষণা দেন, ২২ জানুয়ারি বিকেল ৩টার মধ্যে ফ্যাক্টরি খুলে না দিলে ঢাকা-টাঙ্গাইল মহাসড়ক অবরোধসহ শাটডাউন কর্মসূচি গ্রহণ করবেন।
শ্রম ও কর্মসংস্থান উপদেষ্টা বলেন, বেক্সিমকোর কর্মকর্তা-কর্মচারী, শ্রমিক ও দেশবাসীর অবগতির জন্য জানানো যাচ্ছে যে, বেক্সিমকো ইন্ডাস্ট্রিয়াল পার্কে মোট ৩২টি ফ্যাক্টরির মধ্যে ১৬টির কোনো অস্তিত্ব নেই, কিন্তু এই ১৬ কোম্পানির বিপরীতে ১২ হাজার কোটি টাকা ঋণ নেওয়া হয়েছে। ১২টি ফ্যাক্টরি ম্যানেজমেন্ট কর্তৃক লে-অফ করা হয়েছে, যা সরকারের কোনো সিদ্ধান্ত নয়।
তিনি আরও বলেন, তিনটি ফ্যাক্টরি বর্তমানে চলমান। বেক্সিমকো ইন্ডাস্ট্রিয়াল পার্কে অবস্থিত ৩২টি ফ্যাক্টরির বিপরীতে ২৯ হাজার ৯২৫ কোটি টাকাসহ বেক্সিমকো লিমিটেডের মোট ব্যাংক ঋণ বর্তমানে ৪০ হাজার কোটি টাকারও বেশি। এর মধ্যে শুধু জনতা ব্যাংকের পাওনা ২৩ হাজার ২৮৫ কোটি টাকা।

×