ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৪ জানুয়ারি ২০২৫, ১০ মাঘ ১৪৩১

৯ কলেজের ৭শ’ কোটি টাকার প্রকল্প

উন্নয়নের নামে অর্থ অপচয়

আসিফ হাসান কাজল

প্রকাশিত: ২৩:০৯, ২৩ জানুয়ারি ২০২৫

উন্নয়নের নামে অর্থ অপচয়

উন্নয়নের নামে অর্থ অপচয়

স্কুল-কলেজে ভবন নির্মাণের নামে প্রকল্প তৈরিতে সিদ্ধহস্ত শিক্ষা প্রকৌশল অধিদপ্তর (ইইডি)। প্রয়োজন-অপ্রয়োজনে রাজনৈতিক প্রভাবে এই দপ্তরটি নিয়েছে যত্রতত্র প্রকল্প। নেতার প্রভাবে কোনো কোনো জায়গায় দুই-তিনটি উন্নয়ন প্রকল্প চলমান থাকলেও নিগৃহিত ছিল পিছিয়ে পড়া অঞ্চল। এতে একই প্রকল্পে একটি জেলার তিন কলেজের উন্নয়ন চলে।

কিন্তু পিছিয়ে পড়া জেলার খবর থাকে না। বছরের পর বছর চলা এমনই একটি প্রকল্পের নাম ৯ সরকারি কলেজের উন্নয়ন প্রকল্প। এক দশকের মতো চলা এ প্রকল্প চলতি বছর শেষ হওয়ার কথা। কিন্তু ৭০০ কোটি টাকার এই প্রকল্পের এখন পর্যন্ত কাজ শেষ হয়েছে ৫০ শতাংশেরও কম।
প্রকল্প সূত্র বলছে, গত বছরের শেষে প্রকল্পের পরিচালক অবসরে গেছেন। কিন্তু নতুন বছরের প্রথম মাসের শেষ পর্যায়ে এলেও নিয়োগ দেওয়া হয়নি নতুন পরিচালক। শিক্ষা প্রকৌশলের অধিকাংশ প্রকল্পগুলোয় অর্থের অপচয় তৈরি করছে। এসব প্রকল্পের যে সুফল আসার কথা শিক্ষায় তার ছিটেফোঁটাও কাজে আসছে না। সংশ্লিষ্টরা বলছেন, ৯ কলেজের উন্নয়ন প্রকল্পে ব্যয় করা হচ্ছে ৭০০ কোটি টাকা।

কিন্তু এটি নির্ধারিত সময়ে শেষ করার সুযোগ নেই। সে কারণে প্রকল্পের মেয়াদ আরও দুই বছর সেই সঙ্গে অর্থ ব্যয় বৃদ্ধি পেতে পারে। এছাড়াও যে কলেজগুলোর উন্নয়ন করা হচ্ছে তা প্রয়োজনের তুলনায় ক্ষমতার দাপটে অগ্রাধিকার পেয়েছে।
প্রকল্প সূত্রে জানা যায়, যেসব কলেজ এই প্রকল্পের আওতায় এসেছে তা হলো- জামালপুরের আশেক মাহমুদ কলেজ, একই জেলার জাহিদা শফিক মহিলা কলেজ, ময়মনসিংহের আনন্দ মোহন কলেজ। এদিকে শুধুমাত্র কুমিল্লা জেলায় তিনটি কলেজ এই উন্নয়ন প্রকল্পের আওতায় এসেছে। সেগুলো হলো- কুমিল্লা মহিলা কলেজ, কুমিল্লা টিচার্স ট্রেনিং কলেজ, কুমিল্লা ফয়জুন্নেছা কলেজ, লাকসাম।

নোয়াখালীর কবিরহাট কলেজ ও ঢাকার হাজারীবাগে শেখ ফজিলাতুন নেছা কলেজ। এই নয় কলেজের মধ্যে এখনো কিছু কলেজ রয়েছে যার অবকাঠামো এখনো মাটির মধ্য থেকে উপরে উঠেনি। কিছু কলেজের উন্নয়ন দৃশ্যমান হলেও সেটি ব্যবহার উপযোগী হয়নি। এরমধ্যে সবচেয়ে পিছিয়ে আছে সিলেটের কলেজ।
এসব বিষয়ে জানতে প্রকল্পের সাবেক পরিচালক ও শিক্ষা প্রকৌশল অধিদপ্তরের তত্ত্বাবধাক প্রকৌশলী হাসেম সরদার  (পিআরএল) জনকণ্ঠকে জানান, গত বছরের শেষ দিন ছিল আমার চাকরিজীবনের শেষ কর্মদিবস। এই দিনের পর থেকে আমি আর কোনো খবর রাখিনি। 
তবে অন্য প্রকৌশলীরা জানান, এই প্রকল্পটি শিক্ষার অন্যতম দুর্দশাগ্রস্ত প্রকল্প। প্রকল্পের মেয়াদ শেষ হতে চললেও এর থেকে কোনো সুফল আসবে কী না সেটি নিয়েও যথেষ্ট সন্দেহ রয়েছে। অবস্থা বিবেচনায় এই প্রকল্প স্থগিত করতে চেয়েছিলেন শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের বর্তমান সিনিয়র সচিব। কিন্তু অধিদপ্তরের কর্মকর্তাদের অনুরোধে এর মেয়াদ আবারও বাড়ানো হচ্ছে। এর সঙ্গে প্রকল্পের ব্যয় আরও বাড়বে বলেও নিশ্চিত হওয়া গেছে।
প্রকল্প সূত্র বলছে, এই প্রকল্পে এমন কিছু কলেজ নির্বাচন করা হয়েছে যেগুলোতে নতুন ভবন নির্মাণের প্রয়োজনই ছিল না। অনেক কলেজে দেখা গেছে পুরাতন তিন তলা ভবন ভেঙে নতুন ভবন নির্মাণ করতে হয়েছে। ভাঙতে ও গড়তে সবদিক দিয়েই অর্থের অপচয় হয়েছে। এছাড়াও বেশ কিছু কলেজের মাঠ নষ্ট করে এ ভবন নির্মাণ করা হয়েছে বলেও অভিযোগ রয়েছে।
উদাহরণ দিয়ে প্রকল্পের সঙ্গে জড়িত এক কর্মকর্তা জনকণ্ঠকে বলেন, ময়মনসিংহ আনন্দমোহন কলেজে দুইটা ভবন নির্মাণ করা হচ্ছিল। কিন্তু মাঠের জায়গা নষ্ট হওয়ায় ডিজাইনের পরিবর্তন করা হয়। এর জন্য পরিকল্পনা মন্ত্রণালয় থেকে পুনরায় অনুমোদন নিতে হয়েছে।
কি হচ্ছে এই প্রকল্পে তা জানতে শিক্ষা প্রকৌশল অধিদপ্তরের নির্বাহী প্রকৌশলী ফাহিম ইকবাল জনকণ্ঠকে জানান, কলেজের অবস্থা বুঝে একাডেমিক ভবন, ডরমেটরি ও শিক্ষার্থীদের জন্য ছাত্রাবাস করা হবে। কলেজ ভেদে অর্থের তারতম্যও এই প্রকল্পে রয়েছে। কোনো কলেজে একাডেমিক ভবন হবে ৪ তলা। আবার কোনো কলেজে একই একাডেমিক ভবন করা হচ্ছে ৬ তলা। এসব ভবনে প্রতি তলায় ৩ থেকে ৫টি কক্ষ থাকবে। তিনি বলেন, ডরমেটরিগুলোতে ফার্নিচার ধরা নেই। তবে ছাত্রাবাসে বিছানা ও একটি পড়ার টেবিল বরাদ্দ দেওয়া হবে। 
তবে এর আগেও অনেক শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে শিক্ষার্থীদের জন্য ছাত্রাবাস করা হলেও তা কোনো কাজে আসেনি। তাই সংশ্লিষ্টরা মনে করেন, মনগড়া এসব প্রকল্প শিক্ষায় কোনো প্রভাব তো রাখছেই না। বরং সরকারি অর্থের জলাঞ্জলি হচ্ছে। নাম প্রকাশ না করার শর্তে ইইডির তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী বলেন, অনেক স্কুল কলেজ রয়েছে যেখানে ছাত্রাবাস করা হয়েছে। কিন্তু কোনো শিক্ষার্থী থাকে না। থাকার প্রয়োজনও নেই।

ভবনগুলো পরে থেকে নষ্ট হচ্ছে। আবার অনেক স্কুল-কলেজে একাধিক ভবন করা হলেও শিক্ষার্থী নেই। ওসব ভবনে স্থানীয়রা গরু-ছাগল ভেড়া রাখছে। তিনি মনে করেন, রাজনৈতিক নেতার প্রভাবে এ ধরনের প্রকল্প বন্ধ হওয়া উচিত। যেসব স্কুলে প্রকৃত ভবন দরকার সেখানে করা হয় না। শুধুমাত্র নেতার প্রভাবে আনুগত্য প্রকাশ করে প্রকৌশল দপ্তরটি।

×