ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৩ জানুয়ারি ২০২৫, ১০ মাঘ ১৪৩১

কাশিমপুর কারাগার থেকে মুক্তি পেলেন ১২৯ জন বিডিআর সদস্য

স্টাফ রিপোর্টার, গাজীপুর ॥

প্রকাশিত: ১৮:১৬, ২৩ জানুয়ারি ২০২৫

কাশিমপুর কারাগার থেকে মুক্তি পেলেন ১২৯ জন বিডিআর সদস্য

ছবিঃ সংগৃহীত

ঢাকার পিলখানায় হত্যাকান্ডের ঘটনায় বিস্ফোরক দ্রব্য নিয়ন্ত্রণ আইনে দায়ের করা মামলার আসামীদের মধ্যে ১২৯ জন বিডিআর সদস্য (বর্তমানে বিজিবি) গাজীপুরের কাশিমপুর কারা কমপ্লেক্সের তিনটি কেন্দ্রীয় কারাগার থেকে মুক্তি পেয়েছেন। এদের মধ্যে কাশিমপুর কেন্দ্রীয় কারাগার-১ থেকে ২৭জন, কাশিমপুর কেন্দ্রীয় কারাগার-২ থেকে ৮৯জন ও কাশিমপুর হাইসিকিউরিটি কেন্দ্রীয় কারগার থেকে ১৩জন মুক্তি পান।
বৃহষ্পতিবার সকাল ১০টা থেকে তাদের মুক্তি দেওয়া শুরু হয়। বিডিআর সদস্যদের মুক্তির খবরে কারা কমপ্লেক্সের প্রধান ফটকের সামনে তাদের স্বজনরা সকাল হতে ভীড় জমায়। এসময় তাদের চোখে মুখে ছিল আনন্দের হাসি। কেউ কেউ ফুল, মিষ্টি নিয়ে তাদের প্রিয়জনদের জন্য অপেক্ষা করছিলেন। মুক্তির পর বিডিআর সদস্যরা কারা ফটকে পৌছলে স্বজনরা তাদেরকে জড়িয়ে ধরেন। জামিনে মুক্তি পাওয়া বিডিআর-এর অনেক সদস্য তাদের পরিবারের সদস্যদের দেখে কান্নায় ভেঙ্গে পড়েন।

কাশিমপুর কেন্দ্রীয় কারাগার-১ এর জেলার মোঃ তরিকুল ইসলাম জানান, পিলখানায় হত্যাকান্ডের ঘটনায় দায়ের হওয়া মামলার আসামীদের মধ্যে এ কারাগার থেকে ২৭জন সাবেক বিডিআর সদস্য মুক্তি পেয়েছেন। তাদের জামিনের কাগজপত্র বৃহস্পতিবার ভোরে কারাগারে পৌছে। যাচাই বাছাই শেষে অন্য কোন মামলায় আটকাদেশ না থাকায় তাদেরকে মুক্তি দেওয়া হয়। এ কারাগারে বিডিআর সদস্য ৮৪ জন বন্দি ছিলেন।

কাশিমপুর কেন্দ্রীয় কারাগার-২ এর সিনিয়র জেল সুপার মোঃ আল মামুন জানান, পিলখানায় হত্যাকান্ডের ঘটনায় দায়ের হওয়া মামলার আসামীদের মধ্যে এ কারাগার থেকে ৮৯জন সাবেক বিডিআর সদস্য মুক্তি পেয়েছেন। এ কারাগারে ৩৭৮ জন বিডিআর সদস্য বন্দি ছিলেন।

কাশিমপুর হাইসিকিউরিটি কেন্দ্রীয় কারাগারের সিনিয়র জেল সুপার আব্দুল্লাহ আল মামুন জানান, একই ঘটনায় দায়ের হওয়া মামলায় এ কারাগার থেকে ১৩ জন সাবেক বিডিআর সদস্য মুক্তি পেয়েছেন। এ কারাগারে ১২৮ জন বিডিআর সদস্য বন্দি ছিলেন।

জামিনে মুক্তি পাওয়া ময়মনসিংহ ৪৫ ব্যাটেলিয়নের সিপাহী এনামুল বলেন, আমাদেরকে মিথ্যা মামলা দিয়ে জেল খাটিয়েছে ফ্যাসিস্ট হাসিনা সরকার। আমরা যারা নিরাপরাধ ছিলাম তাদের সবাইকে পূনরায় চাকরীতে পূনর্বহাল করার দাবী করছি। তিনি আরো বলেন, আমাদের প্রাপ্য সকল প্রকার সুযোগ সবিধা দিতে হবে। এঘটনায় যারা প্রকৃত অপরাধীদের চিহ্নিত করে তাদেরকে শাস্তির আওতায় আনতে হবে।

তিনি বলেন, বিডিআর বিদ্রোহের বিষয়ে আমাদেরকে কোন কিছু বলা হয়নি, শুধু বলেছে সাক্ষী দিতে হবে। কার নামে সাক্ষী দিতে হবে আমরা কিছুই জানিনা। সাক্ষী দিতে অস্বীকৃতি জানালে আমাদেরকে মিথ্যা মামলায় কারাগারে পাঠায় ফ্যাসিস্ট হাসিনা সরকার।

সদ্য মুক্তি পাওয়া ঢাকা সদর ব্যাটেলিয়নের সিপাহী আবু হাসান জানান, যখন বিডিআর বিদ্রোহের ঘটনা ঘটে তখন আমার চাকরির বয়স ছয় মাস। পিলখানাতে পাঁচটি গেট আছে সেই পাঁচটি গেটই আমি চিনতাম না। অথচ আমাকে করা হয়েছে আসামি। যেসব সিনিয়র স্যারদের আমরা পিতৃ সমতুল্য সম্মান করতাম আজকে তাদেরকে হত্যার দায়ে আমাদেরকে ১৬টি বছর মিথ্যা মামলায় কারা ভোগ করতে হয়েছে। সরকারের কাছে আমাদের দাবি আমরা যেন আমাদের হারানো সম্মান ফিরে পাই।

ঢাকা সদর ব্যাটলিয়নের আরেক সিপাহী জামাল উদ্দিন খানের মেয়ে জুয়েনা জামাল ঐশী বলেন, আমার বাবাকে আমি চিনিনা। বড় হয়ে শুনেছি আমার বয়স যখন এক বছর তখন আমার বাবাকে বিডিআর হত্যা মামালায় আসামি করে কারাগারে বন্দি রাখা হয়েছে। দীর্ঘ ১৭ বছর পর বাবার মুখ দেখতে পারবো। এই অনুভূতির কথা বলে শেষ করা যাবে। কোনদিন বাবার আদর পাই নি। আজ মন ভরে বাবাকে দেখবো। জুয়েনা জামাল ঐশী যখন কথা বলছিলেন তার চোখের পানি টলমল করে গাল বেয়ে পরছিল।

প্রসঙ্গত, ২০০৯ সালে পিলখানা হত্যাকাণ্ডের  জড়িত থাকার অভিযোগে বিস্ফোরক মামলায় বিডিআরের ওই সদস্যদের বিভিন্ন মেয়াদে সাজা দেওয়া হয়েছিল। গত ২০ জানুয়ারি (রবিবার) ঢাকার বিশেষ ট্রাইব্যুনাল-১ এর বিচারক ইব্রাহিম মিয়ার অস্থায়ী আদালত তাদের জামিন দেন। দীর্ঘদিন কারাভোগের পর আদালতের আদেশে তাদের মুক্তি দেওয়া হলো।
 

টিটু/জাফরান

×