১০ লাখ টন চাল-গম আমদানির সিদ্ধান্ত
দেশে খাদ্যশস্যের মজুত ও সরবরাহ ঠিক রাখতে ১০ লাখ মেট্রিক টন চাল-গম আমদানির সিদ্ধান্ত নিয়েছে সরকার। বর্তমানে দেশে প্রায় ১৩ লাখ মেট্রিক টন চাল-গম মজুত আছে। বুধবার সচিবালয়ে খাদ্য পরিকল্পনা ও পরিধারণ কমিটির বৈঠকে এই সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। এতে সভাপতিত্ব করেন অর্থ উপদেষ্টা ড. সালেহউদ্দিন আহমেদ। অর্থ উপদেষ্টা বলেন, মহার্ঘ্য ভাতার সঙ্গে ভ্যাট বাড়ানোর কোনো সম্পর্ক নেই। তিনি বলেন, বাংলাদেশ হচ্ছে সবচেয়ে কম করদাতার দেশ।
খাদ্য উপদেষ্টা আলী ইমাম মজুমদার সাংবাদিকদের বলেন, অভ্যন্তরীণ সংগ্রহ যেটা, আউশ ও আমনে ঘাটতি একটা হয়েছে। এখন সামনে আছে বোরো ফসল। আমরা আশা করছি, বোরোতে যদি ফলন ভালো হয় আমদানির ওপর নির্ভরতা কমাতে পারব। তার জন্য আমরা অপেক্ষা করব না। আমাদের বিদেশ থেকে আমদানি কার্যক্রম অব্যাহত থাকবে। চাল এবং গম মিলিয়ে প্রায় দশ লাখ টনের মতো আমদানি পাইপলাইনে আছে।
তিনি আরও বলেন, ভারত, মিয়ানমার, পাকিস্তান, ভিয়েতনামসহ বিভিন্ন দেশ থেকে এসব খাদ্যশস্য আমদানি করা হবে। দেশে প্রায় ১৩ লাখ মেট্রিক টন চাল ও গম মজুত আছে। এর মধ্যে ৮ লাখ ৮২ হাজার মেট্রিক টন চাল এবং তিন লাখ ৪১ হাজার মেট্রিক টন গম মজুত আছে। সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের উত্তরে খাদ্য উপদেষ্টা বলেন, চালের দাম এখন বাড়ছে না। চালের দাম আরও কমলে খুশি হব।
তিনি বলেন, বিদেশ থেকে আমাদের আমদানি অব্যাহত থাকবে। আমদানির সোর্স হবে মাল্টিপল। প্রতিবেশী দেশ থেকে আমদানি করলে সহজে আনা যায়, দামও কম পড়ে। প্রতিবেশী দেশকে আমরা যেমন- গুরুত্ব দিচ্ছি পাশাপাশি অন্যান্য দেশে দাম একটু বেশি হলেও আমরা আমদানি করছি। মাল্টিপল সোর্সকে আমরা সামনে রাখছি। এই সিদ্ধান্ত আমরা নিয়েছি।
তিনি আরও বলেন, অভ্যন্তরীণ সংগ্রহের ক্ষেত্রে ধান সংগ্রহ কম হয়। কারণ ধানে যেমন- আর্দ্রতা চাওয়া হয় সেটা তারা দিতে পারে না। মিলগুলো কাঁচা ধান নিয়ে যাচ্ছে। করপোরেট মিলগুলোর সঙ্গে প্রতিযোগিতা করে পারা যাচ্ছে না। আশা করছি, যে মজুত ও সরবরাহ রয়েছে তাতে কোনো ঘাটতি হবে না।
খাদ্য উপদেষ্টা বলেন, গম আমদানি হবে তিন লাখ টন। এরমধ্যে দুই লাখ টন গম রাশিয়া থেকে গভর্নমেন্ট-টু-গভর্নমেন্টের (জিটুজি) ভিত্তিতে ডেফার্ড পেমেন্ট আমদানি করব। মিয়ানমারের সঙ্গে এক লাখ টন চাল আমদানির চুক্তি হয়েছে। ২২ হাজার টন চাল এরই মধ্যেই চলে এসেছে। বাকি চাল আসবে ভিয়েতনাম, ভারত ও পাকিস্তান থেকে।
তিনি বলেন, আমদানি করা চালের কেজি ৫৬ থেকে ৬০ টাকা পড়ছে। চাল ও গম মিলিয়ে প্রায় ১০ লাখ টন আমদানি করা হবে। তবে এটা নির্ভর করবে বোরো ধানের সংগ্রহের ওপর। বোরো ধান যদি আল্লার রহমতে সংগ্রহ করা যায় তাহলে আমদানির পরিমাণ কমবে। আর বোরো উৎপাদন যদি ব্যাহত হয় তাহলে আমদানি বেড়ে যেতে পারে।
তিনি আরও বলেন, বোরো সংগ্রহ শুরু হয় ১৪ এপ্রিল বা পহেলা বৈশাখে। হাওড়ের বোরো ধান প্রথমে আসে। মে মাসের মাঝামাঝি পর্যন্ত যদি সময় পাওয়া যায় (আগাম অতিবৃষ্টি না হয়) তাহলে হাওরের ফসলটা শতভাগ উঠে যায়। হাওড়ে ২৫ লাখ টন পর্যন্ত ধান উৎপাদন হতে পারে।
খাদ্য উপদেষ্টা বলেন, যে চালটা বিদেশ থেকে আনছি এটার মান ভালো। এটা আমরা ওএমএসের মাধ্যমে ৩০ টাকা কেজিতে দিচ্ছি। দেশের কৃষকদের কথাও আমাদের মাথায় রাখতে হয়।
মহার্ঘ্য ভাতার সঙ্গে ভ্যাট বাড়ানোর কোনো সম্পর্ক নেই জানিয়ে অর্থ উপদেষ্টা ড. সালেহউদ্দিন আহমেদ বলেছেন, বাংলাদেশ হচ্ছে সবচেয়ে কম করদাতার দেশ। তিনি বলেন, মহার্ঘ্য ভাতা যদি দেই, সেটা আলাদা হিসাব করব। এলডিসির চেয়েও আমাদের ট্যাক্স কম ট্যাক্সে। ভুটান, নেপাল, আইভরি কোস্ট, বুরকিনা ফাসোর চেয়েও কম। এত কম ট্যাক্স দিয়ে কীভাবে চান যে, আপনাকে সবকিছু দেব? এটা এক্সপেক্ট করা ঠিক হয় না।
আমরা চশমার ভ্যাট বাড়িয়েছি। ১২৫ টাকায় পৃথিবীর কোন দেশে চশমা পাওয়া যায়? ওখানে ১৫ টাকা বাড়বে। খাবেন ৬০০ থেকে ৭০০ টাকা, ২০ টাকা ভ্যাট দেবেন না? ভাতের হোটেলে তো ভ্যাট জিরো করে দিয়েছি। গ্লোরিয়া জিন্স থেকে এক কাপ কফি খাবেন, ওখানে ১৫ টাকা দিতে আপনার বাধে? এই রকম অ্যাটিচিউড থাকলে তো জটিল। দরকার হলে ২০ টাকা বেশি দিয়ে মিষ্টি খাব। আমাদের রেভিনিউ এত কম যে, পুরো পিকচারটা আপনাদের কাছে এখনো আসেনি, আসার কথাও না।
সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে অর্থ উপদেষ্টা বলেন, আমি কিছুদিন আগে ইসলামিক ডেভেলপমেন্ট ব্যাংকে গেলাম। আমরা যখন আসি ১৩৫ মিলিয়ন ডলার এলএনজি আমদানির বিল পাওনা ছিল। আমরা সেটা পেমেন্ট করেছি। এখন আবার এক মিলিয়ন ডলার পাওনা হয়েছে। রাশিয়ান অ্যাম্বাসাডার বলছে যে, তোমরা টাকা দিচ্ছ না, গম আমদানির বিল। ওই সময় এমন ছিল, এখন খারাপ হচ্ছে বলে আপানারা বলছেন।
ওই সময় যে খুব ভালো ছিল তা কিন্তু না। আমার যারা সমালোচনা করে, বেশিরভাগই আমার ছাত্র। ওরা বলে রাজস্ব জাল বাড়াতে, কোনো জায়গায় আমরা বাড়াব? খালি বলে দিলেই তো হবে না। আমরা ক্ষেত্রগুলো খুঁজছি। যেই জায়গায় র্যাশনাল হয়, আমরা চেষ্টা করব।
সালেহউদ্দিন আহমেদ আরও বলেন, ব্যয়ের দিকটায় আমরা সাশ্রয়ী হব। অনেক অপ্রয়োজনীয় সরকারি ব্যয় আছে। পাঁচ বছরের প্রকল্প ১০ বছর নিয়ে যাচ্ছে। বড় বড় প্রকল্প আছে যেখানে খরচ হওয়ার কথা ছিল ২৫ হাজার কোটি টাকা, খরচ হয়েছে ৫২ হাজার কোটি টাকা। টাকা কোত্থেকে আসবে, এগুলো তো আমাদের শোধ দিতে হবে।