ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৩ জানুয়ারি ২০২৫, ৯ মাঘ ১৪৩১

গাজীপুরে বেক্সিমকো কারখানা খোলার দাবিতে ফের শ্রমিক বিক্ষোভ,সড়ক অবরোধ

প্রকাশিত: ২১:০৬, ২২ জানুয়ারি ২০২৫

গাজীপুরে বেক্সিমকো কারখানা খোলার দাবিতে ফের শ্রমিক বিক্ষোভ,সড়ক অবরোধ

চন্দ্রা-নবীনগর মহাসড়ক

 

গাজীপুরে বেক্সিমকো ইন্ডাস্ট্রিয়াল পার্কের বন্ধ সকল কারখানা খুলে দেওয়ার দাবিতে ফের বিক্ষোভ করেছে শ্রমিকরা। এসময় তারা ৪টি বাসে অগ্নিসংযোগ ও অর্ধশতাধিক যানবাহন ভাংচুর করে।  বিক্ষুব্ধ শ্রমিকরা কাঠ ও টায়ারে আগুন জ্বালিয়ে চন্দ্রা-নবীনগর মহাসড়ক অবরোধ করে রাখে। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যরা টিয়ারশেল ও রাবার বুলেট ছুড়েছে। শ্রমিকদের হামলায় সাংবাদিক ও পুলিশসহ অন্ততঃ ১৫ জন আহত হয়েছে। 


বুধবার বিকেলে গাজীপুর মহানগরীর চক্রবর্তীর মোজার মিল এলাকায় এ ঘটনা ঘটে। এদিকে সন্ধ্যায় শ্রমিকরা স্থানীয় গ্রামীণ ফেব্রিক্স নামের একটি পোশাক কারখানায় অগ্নিসংযোগ করে।

পুলিশ, শ্রমিক ও স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, গাজীপুর মহানগরীর কাশিমপুর থানাধীন সারোবো এলাকায় বেক্সিমকো ইন্ডাস্ট্রিয়াল পার্কের ১৬টি কারখানায় রয়েছে। এসব কারখানায় প্রায় ৪২ হাজার শ্রমিক-কর্মচারী ও কর্মকর্তা কাজ করেন। ওই কারখানাগুলোর মালিক সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বেসরকারি শিল্প ও বাণিজ্য উপদেষ্টা সালমান এফ রহমান। 

গত কয়েক মাস ধরে এসব শ্রমিক-কর্মচারীদের বেতন ভাতা নিয়মিত পরিশোধ করতে পারে নি কর্তৃপক্ষ। এজন্য বকেয়া পরিশোধের দাবিতে শ্রমিকরা বেশ কয়েকদফা আন্দোলনে নেমে চন্দ্রা-নবীনগর মহাসড়ক অবরোধ ও বিক্ষোভ করে। এক পর্যায়ে সরকার ঋণ দিয়ে শ্রমিকদের আংশিক বেতন পরিশোধের ব্যবস্থা করে। এদিকে গত ১৫ ডিসেম্বর শ্রম ও কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়ের সভাকক্ষে বেক্সিমকোর শিল্প প্রতিষ্ঠানগুলোর শ্রম ও ব্যবসায় পরিস্থিতি পর্যালোচনা সংক্রান্ত উপদেষ্টা পরিষদের কমিটির সভার সিদ্ধান্তের পর বেক্সিমকো ইন্ডাস্ট্রিয়াল পার্কের ১৬ কারখানা বন্ধ করা হয়। এতে শ্রমিকরা বেকার হয়ে পড়ে। এরপর থেকে শ্রমিকরা বকেয়া বেতনসহ বন্ধ কারখানা খুলে দেওয়ার দাবিতে আন্দোলন করে আসছে।

মঙ্গলবার শ্রমিকরা বকেয়া পাওনাদি পরিশোধ ও ব্যাংকিং সুবিধাসহ কারখানাগুলো খুলে দেওয়ার দাবিতে স্থানীয় সানসিটি মাঠে বিশাল গণসমাবেশ করে। সমাবেশে বুধবার (২২ জানুয়ারি) বিকেল ৩ টা পর্যন্ত সরকারকে আল্টিমেটাম দেয়। ওই সময়ের মধ্যে সরকার যদি দাবী না মেনে নেয় তাহলে কমপ্লিট শাট ডাউন কর্মসূচি পালন করার কঠোর হুঁশিয়ারি দেওয়া হয়। এর জের ধরে বুধবার বিকেল ৩টার দিকে শ্রমিকরা ফের ওই এলাকায় জড়ো হয়ে বিক্ষোভ শুরু করে।

একপর্যায়ে বিক্ষুব্ধ শ্রমিবরা চক্রবর্তীর মোজার মিল এলাকায় কাঠ ও টায়ারে আগুন জ্বালিয়ে চন্দ্রা-নবীনগর মহাসড়ক অবরোধ করে। এসময় উত্তেজিত শ্রমিকরা ৪টি বাসে অগ্নিসংযোগ ও অর্ধশতাধিক যানবাহন ভাংচুর করে এবং পুলিশকে লক্ষ্য করে ইটপাটকেল ছুঁড়তে থাকে। এতে ওই মহাসড়কে যানবাহন চলাচল বন্ধ হয়ে যায়। ঘটনার সময় বিক্ষোভ কারীদের বাঁধা দিলে পুলিশের সঙ্গে শ্রমিকদের ধাওয়া পাল্টা ধাওয়া হয়। 


এসময় ঘটনাস্থলে ছবি তুলতে গেলে সাংবাদিকদের উপর হামলা চালিয়ে বেধড়ক মারধোর করে শ্রমিকরা। তারা সাংবাদিকদের মোটরসাইকেল ও ক্যামেরা-মোবাইলও ভাংচুর করে। শ্রমিকদের হামলায় দীপ্ত টিভির গাজীপুর প্রতিনিধি জাহাঙ্গীর আলম, বাংলাভিশন টিভির চিত্র সাংবাদিক আমির হোসেন রিয়েল ও প্রতিদিনের বাংলাদেশ পত্রিকার কালিয়াকৈর প্রতিনিধি আবু সাঈদসহ ৪জন সাংবাদিক আহত হন। ঘটনার সময় পুলিশের কয়েক সদস্যসহ অন্ততঃ ১৫জন আহত হয়েছেন বলে জানান পুলিশ।

 

পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যরা কয়েক রাউন্ড টিয়ারসেল ও রাবার বুলেট ছুড়ে। তবে শ্রমিকরা সন্ধ্যার পর (সোয়া ৭টায়) এ রিপোর্ট লেখা পর্যন্ত ওই মহাসড়ক অবরোধ করে রাখে।
এদিকে সন্ধ্যা ৬টার দিকে শ্রমিকরা স্থানীয় তেঁতুইবাড়ি এলাকার গ্রামীণ ফেব্রিক্স নামের একটি পোশাক কারখানায় অগ্নিসংযোগ করে।

গাজীপুর ফায়ার সার্ভিসের উপ-সহকারী পরিচালক মোহাম্মদ মামুন জানান, তেঁতুইবাড়ি এলাকার একটি পোশাক কারখানায় অগ্নিসংযোগের খবর পেয়ে ফায়ার সার্ভিসের ডিইপিজেড, সারাবো ও জয়দেবপুর স্টেশনের ৫টি ইউনিট ঘটনাস্থলে গিয়ে আগুন নেভানোর কাজ শুরু করে। এরআগে কয়েকটি গাড়িতে অগ্নিসংযোগ করা হয়। আগুন নেভাতে যাওয়ার পথে ফায়ার সার্ভিসের কর্মীদের বাঁধা দেয় শ্রমিকরা।  
 
বেক্সিমকো ইন্ডাস্ট্রিয়াল পার্কের জনসংযোগ কর্মকর্তা তরিকুল ইসলামের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি গণপরিবহন ভাংচুর ও গণমাধ্যম কর্মীদের উপর হামলার বিষয়ে দুঃখ প্রকাশ করেন।

গাজীপুর শিল্প পুলিশ-২ কোনাবাড়ি জোনের সিনিয়র সহকারী পুলিশ সুপার আবু তালেব জানান, বেক্সিমকো ইন্ডাস্ট্রিয়াল পার্কের কারখানা খুলে দেওয়ার দাবিতে বিক্ষুব্ধ শ্রমিকরা কয়েকটি বাসে অগ্নিসংযোগ ও অর্ধশতাধিক যানবাহন ভাংচুর করে। তারা সন্ধ্যা সোয়া ৭টা পর্যন্ত চন্দ্রা-নবীনগর মহাসড়ক অবরোধ করে বিক্ষোভ করছে। আইন শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যরা শ্রমিকদের বুঝিয়ে মহাসড়ক থেকে সরিয়ে দিয়ে যানচলাচল স্বাভাবিক করার চেষ্টা করছে।

সাজিদ

সম্পর্কিত বিষয়:

×