ছবি : সংগৃহীত
১৯৭১ সালের ১৬ ডিসেম্বর স্বাধীনতা অর্জনের মধ্য দিয়ে বাংলাদেশ নামে নতুন একটি রাষ্ট্রের অভ্যুদয় ঘটে। তবে এরপর থেকে আওয়ামী লীগ এবং শেখ হাসিনার শাসনামলে ঢাকা-ইসলামাবাদের দ্বিপক্ষীয় সম্পর্ক প্রায়ই টানাপোড়েনের মধ্যে দিয়ে গেছে। বিশেষত ২০১৪ সালে শেখ হাসিনার নেতৃত্বাধীন আওয়ামী লীগ তৃতীয়বারের মতো ক্ষমতায় আসার পর দুই দেশের সম্পর্ক একদম তলানিতে পৌঁছায়। তবে তার ক্ষমতা হারানোর পর থেকে পরিস্থিতি ধীরে ধীরে পরিবর্তন হতে শুরু করেছে।
গত বছর অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা নোবেলজয়ী ড. মুহাম্মদ ইউনূস ও পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী শাহবাজ শরীফ একটি বৈশ্বিক অনুষ্ঠানে দুইবার সাক্ষাৎ করেন। এ বছর ১৪ জানুয়ারি বাংলাদেশের উচ্চ পর্যায়ের সামরিক কর্মকর্তা জেনারেল এস এম কামরুল হাসান ইসলামাবাদ সফর করেন এবং পাকিস্তানের সেনাপ্রধান জেনারেল অসিম মুনিরের সঙ্গে বৈঠক করেন।
এরপর গত সপ্তাহে পাকিস্তানের ফেডারেশন অব চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রিজের (এফপিসিসিআই) একটি প্রতিনিধি দল বাংলাদেশ সফর করেছে। এটি ছিল গত এক দশকের মধ্যে পাকিস্তানের কোনো উচ্চ পর্যায়ের ব্যবসায়িক দলের প্রথম সফর। সফরে তারা বাংলাদেশের বাণিজ্যমন্ত্রী, ঢাকা চেম্বার অব কমার্সের কর্মকর্তা এবং ব্যবসায়ীদের সঙ্গে বৈঠক করে।
এই সফরের অন্যতম উল্লেখযোগ্য অগ্রগতি ছিল পাকিস্তান-বাংলাদেশ যৌথ ব্যবসায়িক কাউন্সিল গঠনে একটি সমঝোতা স্মারক সই। এছাড়া, প্রতিনিধি দলটি দুই দেশের মধ্যে মুক্ত বাণিজ্য চুক্তিরও আহ্বান জানিয়েছে।
সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ক্ষমতাচ্যুতির পর বাংলাদেশের সঙ্গে পাকিস্তানের বাণিজ্যিক সম্পর্ক নতুন করে জোরদার হয়েছে। পাকিস্তান সরকার ও ব্যবসায়িক মহল আশা করছে, আগামী এক বছরের মধ্যে দ্বিপাক্ষিক বাণিজ্য তিনগুণ বেড়ে ৩০০ কোটি ডলারে পৌঁছাবে, যা বর্তমানের চেয়ে চারগুণ বেশি।
মঙ্গলবার (২১ জানুয়ারি) নিক্কেই এশিয়ার এক প্রতিবেদনে এ তথ্য জানানো হয়েছে।
এফপিসিসিআইয়ের সিনিয়র ভাইস প্রেসিডেন্ট সাকিব ফাইয়াজ মাগুন বলেন, "বাংলাদেশের বাণিজ্য উপদেষ্টা জানিয়েছেন, তারা আমদানির জন্য পাকিস্তানকে অগ্রাধিকার দিচ্ছেন।"
তিনি আরও বলেন, বাংলাদেশের কেবল পোশাক ও প্লাস্টিকশিল্প রয়েছে, ফলে দেশটি জনগণের প্রয়োজন মেটাতে অনেক পণ্য আমদানি করে। এটি পাকিস্তানের জন্য নতুন সুযোগ সৃষ্টি করেছে।
তিনি জানান, বাংলাদেশ ইতোমধ্যেই পাকিস্তান থেকে ৫০ হাজার টন চাল ও ২৫ হাজার টন চিনি আমদানির আদেশ দিয়েছে। এছাড়া খেজুর আমদানির পরিকল্পনাও রয়েছে।
মাগুন বলেন, "বাণিজ্য নিষেধাজ্ঞা দূর হলে বার্ষিক বাণিজ্য ৩০০ কোটি ডলারে পৌঁছাতে এক বছরও লাগবে না। চাল, চিনি, তেল, তুলার সুতা ও নারীদের পোশাকের মতো অনেক পণ্য বাংলাদেশে রপ্তানি করা সম্ভব।"
দুই দেশের সম্পর্কের আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ অগ্রগতি হলো চট্টগ্রাম-করাচি জাহাজ চলাচলের পুনরায় সূচনা, যা গত ৫২ বছর ধরে বন্ধ ছিল। এছাড়া, সরাসরি ফ্লাইট চালুর বিষয়টি যাচাই-বাছাই চলছে। উল্লেখ্য, ২০১৮ সালের পর থেকে এই বিমান যোগাযোগ বন্ধ রয়েছে।
মো. মহিউদ্দিন