ছবি: সংগৃহীত
বাংলাদেশ-ভারত সীমান্তের একটি জটিল ইতিহাসের সাক্ষী ছিল দহলা খাগড়াবাড়ি। এটি বিশ্বের একমাত্র থার্ড-অর্ডার ছিটমহল, যেখানে একটি দেশের ছিটমহলের মধ্যে অন্য দেশের ছিটমহল, তার ভেতর আবার প্রথম দেশের আরেকটি ছিটমহল বিদ্যমান ছিল। এই ধরনের সীমান্ত সমস্যাগুলো দুই দেশের জন্য যেমন কূটনৈতিক চ্যালেঞ্জ তৈরি করেছিল, তেমনি তা আন্তর্জাতিক অঙ্গনে সীমান্ত নির্ধারণের ইতিহাসকে আরো জটিল করেছিল। দহলা খাগড়াবাড়ি, তার ক্ষুদ্র আকার সত্ত্বেও, ভারত-বাংলাদেশ সম্পর্কের এক গুরুত্বপূর্ণ অধ্যায় হিসেবে চিহ্নিত হয়ে আছে।
পশ্চিমবঙ্গের কোচবিহার জেলার অন্তর্গত দহলা খাগড়াবাড়ি ছিল একটি ভারতীয় ছিটমহল, যা বাংলাদেশী গ্রাম 'উপনচৌকী ভজনী' দ্বারা ঘেরা ছিল। এই উপনচৌকী ভজনী আবার ভারতীয় ছিটমহল 'বালাপাড়া খাগড়াবাড়ি'র অন্তর্গত ছিল, যা নিজেই বাংলাদেশের দেবীগঞ্জে অবস্থিত। ফলে দহলা খাগড়াবাড়ি হয়ে ওঠে এক বিরল জ্যামিতিক কূটনৈতিক সমস্যা, যেখানে এক ছিটমহলের ভেতর আরেক ছিটমহল এবং তার মধ্যে আরেকটি ছিটমহল ছিল।
দহলা খাগড়াবাড়ির আয়তন ছিল মাত্র ৭,০০০ বর্গমিটার (১.৭ একর), এবং এটি মূলত চাষযোগ্য জমি হিসেবে ব্যবহৃত হতো। বাস্তবে এটি কোনো বাসযোগ্য এলাকা ছিল না। এর মালিক ছিলেন একজন বাংলাদেশি কৃষক, যিনি আশেপাশের ছিটমহলে বসবাস করতেন। ছোট আকার সত্ত্বেও এটি সবচেয়ে ছোট ছিটমহল ছিল না। সবচেয়ে ছোট ছিল রংপুরের পানিসালা (৭৯ নং), যার আয়তন ছিল মাত্র ১,০৯০ বর্গমিটার (০.২৭ একর)।
দহলা খাগড়াবাড়ি ২০১৫ সালের ১ আগস্ট ভারতের পক্ষ থেকে বাংলাদেশের কাছে হস্তান্তর করা হয়। ভারত ও বাংলাদেশের মধ্যে ছিটমহল বিনিময়ের ঐতিহাসিক চুক্তির আওতায় এটি বাস্তবায়িত হয়। এই বিনিময়ের মাধ্যমে দীর্ঘদিনের সীমান্ত জটিলতার সমাধান হয় এবং দুই দেশের কূটনৈতিক সম্পর্ক আরও মজবুত হয়।
দহলা খাগড়াবাড়ি এখন একটি ইতিহাস, যা দুই দেশের সীমান্ত সমস্যার সমাধান এবং কূটনৈতিক সহযোগিতার একটি অনন্য উদাহরণ হিসেবে পরিচিত।
নাহিদা