ঢাকা, বাংলাদেশ   মঙ্গলবার ২১ জানুয়ারি ২০২৫, ৮ মাঘ ১৪৩১

ফাঁসির সেল থেকে দেখা বাংলাদেশ

সাবেক সেনাপ্রধান মইন ইউ আহমেদকে রাষ্ট্রপতি করার প্রতিশ্রুতি দিয়েছিল ভারত!

প্রকাশিত: ১৩:০৪, ২১ জানুয়ারি ২০২৫; আপডেট: ১৩:০৭, ২১ জানুয়ারি ২০২৫

সাবেক সেনাপ্রধান মইন ইউ আহমেদকে রাষ্ট্রপতি করার প্রতিশ্রুতি দিয়েছিল ভারত!

সেনাসমর্থিত সরকার এক পর্যায়ে দুই নেত্রীকে মুক্তি দিতে বাধ্য হয়। মুক্তি দেওয়ার আগে তারা দুই নেত্রীর সঙ্গে আলাদাভাবে আলোচনা করে। বলা যায়, সেনাসমর্থিত সরকারের অপরিণামদর্শিতার কারণেই কার্যত দুই নেত্রী আরো শক্তিশালী হয়ে রাজনীতিতে প্রত্যাবর্তন করেন। এই সময়ে সেনাবাহিনী প্রধান মইন ইউ আহমেদ খালেদা জিয়ার সঙ্গেও যোগাযোগের চেষ্টা করেন। কিন্তু বেগম খালেদা জিয়ার অনমনীয় মনোভাবের কারণে তা সম্ভব হয়নি। মৃত্যুদণ্ড কার্যকর হওয়া জামায়াত নেতা মুহাম্মদ কামারুজ্জামান সদ্য প্রকাশিত ফাঁসির সেল থেকে দেখা বাংলাদেশ শীর্ষক বইতে এক এগারোর সময়ের দেশের রাজনৈতিক প্রেক্ষাপটের কাহিনী এভাবেই তুলে ধরেন।

তিনি লিখেছেন, আমরা কেউ কেউ চেয়েছিলাম যে, এই বৈঠকটি হওয়া উচিত। আমরা অনুভব করেছিলাম সেনাবাহিনীর সঙ্গে হয়তোবা আওয়ামী লীগের একটি সমঝোতা হয়ে যাচ্ছে। সম্ভবত সেনাবাহিনীর ভেতর থেকে। মইন ইউ আহমেদর একটা চাপের কারণেই খালেদা জিয়ার সঙ্গে বৈঠক করতে চেয়েছিলেন।

এ বৈঠক হলেও তা আদৌ কোনো ফলদায়ক হতো নাকি একটি লোক দেখানো ব্যাপার ছিল, তা বলা মুশকিল। ওদিকে মইন ইউ আহমেদর ছয় দিনের ভারত সফর, বিপুল সংবর্ধনা এবং সেটা যে একটি বড় ধরনের মিশন ছিল বাংলাদেশের রাজনীতির জন্য, সে বার্তাও আমরা পাচ্ছিলাম।

ভারতীয় নেতৃবৃন্দ যেভাবে মইন ইউ আহমেদকে রেড কার্পেট সংবর্ধনা দিয়েছিল তা নজিরবিহীন। আমরা বিশ্বস্তসূত্রে জানতে পারি, ভারত সফরকালে কতিপয় বিষয়ে মইন ইউ আহমেদর সঙ্গে সেখানকার সংশ্লিষ্টদের একটি চুক্তি হয়। এ চুক্তির প্রধান শর্ত ছিল আওয়ামী লীগকে ক্ষমতায় আসতে সহায়তা করা।

দ্বিতীয় শর্ত ছিল, বাংলাদেশে ইসলামী শক্তির উত্থান রোধ করতে জামায়াতে ইসলামীকে নিষিদ্ধ করা এবং তথাকথিত যুদ্ধাপরাধের বিচার শুরু করা। বিনিময়ে মইন ইউ আহমেদ রাষ্ট্রপতি করার প্রতিশ্রুতি দিয়েছিল ভারত।

নবম জাতীয় সংসদ নির্বাচনের যে আয়োজন করা হচ্ছিল, সেটা মূলত শেখ হাসিনাকে ক্ষমতায় বসানোর একটি নীলনকশা। ইসলামী ও জাতীয়তাবাদী শক্তিকে খতম করে ধর্ম নিরপেক্ষতার দাবিদারদের ক্ষমতায় বসানোর এ সাজানো নির্বাচনের পেছনে পশ্চিমা শক্তি ও ভারত একযোগে কাজ করেছে।

যে কোনো কারণেই হোক, বিএনপি বিশেষ করে পশ্চিমা শক্তির আস্থা হারিয়েছিল এবং বিএনপিকে তারা পুনরায় ক্ষমতায় দেখতে চায়নি।

নবম সংসদ নির্বাচনে বিএনপি যে ক্ষমতায় ফিরতে পারবে না এবং বিএনপিকে পার্লামেন্টে একটি নগণ্য দলে পরিণত করে, সংবিধান সংশোধন করার মতো দুই তৃতীয়াংশ আসনে ধর্মনিরপেক্ষ আওয়ামী লীগকে জিতিয়ে আনার জন্য যা কিছু করা প্রয়োজন, তার সব পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছিল।

খালেদা জিয়ার কাছে খবর ছিল যে, কোনো মতেই নির্বাচনে বিএনপিকে ভালো করতে দেয়া হবে না এবং ৩০ থেকে ৪০ টি আসন দেওয়া হবে। তিনি চার দলীয় জোটের এক বৈঠকে এ ব্যাপারে পরিষ্কার ভাবে এ কথা বলেছিলেন। তিনি নির্বাচনে যেতে চাননি। আবার তিনি নির্বাচন বিরোধী এমন দায়দায়িত্ব নিতে দ্বিধান্বিত ছিলেন।

কামারুজ্জামান আরও লিখেছেন, তাছাড়া প্রার্থী মনোনয়নে বিএনপির যে সতর্কতা অবলম্বন করা উচিত ছিল তা হয়নি। ক্ষমতায় থাকার কারণে যেসব মন্ত্রী বা এমপির বিরুদ্ধে দুর্নীতিসহ বিভিন্ন অভিযোগ ছিল, তাদের মনোনয়ন না দিয়ে সেসব আসনের নতুন মুখের ব্যাপারে সিদ্ধান্ত নেওয়া রাজনৈতিক দূরদৃষ্টির পরিচায়ক হতো। কিন্তু তা করা হয়নি।

অথচ আওয়ামী লীগ কিন্তু এ ব্যাপারে যথেষ্ট সতর্কতার পরিচয় দিয়েছিল। প্রতিদ্বন্দ্বিতা ছিল আওয়ামী লীগের সঙ্গে। কিন্তু বিএনপির নির্বাচনী অভিযানে ফখরুদ্দীন মঈন ইউ আহমেদর সমালোচনাই প্রাধান্য পায়। ফলে আওয়ামী লীগের জন্য সুবিধা হয়ে যায়। আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় ফিরে এলে যে গণতন্ত্রের সংকট হবে এ বিষয়টি আড়ালে চলে যায়। আওয়ামী লীগের ফ্যাসিস্ট চরিত্র জনগণের দৃষ্টির আড়ালে চলে যায়।

একদলীয় শাসন, বাকশাল, মানবাধিকার লঙ্ঘন, বিশেষ দেশের প্রতি আনুগত্য, সংবাদপত্র দলন, জনগণের অধিকার হরণ এসব বিষয়ে প্রচারাভিযানে জোর দেয়ার পরিবর্তে ফখরুদ্দীনের তত্ত্বাবধায়ক সরকারের নানা ব্যর্থতা এবং সেনাপ্রধান তথা সেনাবাহিনীর ভূমিকার সমালোচনা প্রাধান্য পায়।

এই প্রচারাভিযানের ফলে মঈন ইউ আহমেদরা সশস্ত্র বাহিনীকে বুঝাতে সক্ষম হয় যে, বিএনপি ক্ষমতায় এলে জরুরি আইন জারি এবং দুই বছর অবৈধ ক্ষমতায় থাকার জন্য তাদের বিচার হবে। ফলে নিজেদের অস্তিত্বের স্বার্থেই তারা নির্বাচনে আওয়ামী লীগকে বিজয়ী করার সিদ্ধান্ত নেয়। নির্বাচনী প্রচার কৌশল। এই মারাত্মক ভুলের কারণে বিপুল জনমত বিএনপির পক্ষে থাকা সত্ত্বেও সেনা প্রশাসন নির্বাচনকে প্রভাবিত করে এবং তাদের নীলনকশা বাস্তবায়ন করে।

ভিডিও: https://www.youtube.com/watch?v=ltQMdMZUnz8

ফুয়াদ

×