ঢাকা, বাংলাদেশ   মঙ্গলবার ২১ জানুয়ারি ২০২৫, ৮ মাঘ ১৪৩১

আলেম সমাজই পারেন দেশে মাদকগ্রহণকারীর সংখ‍্যা কমাতে

অনলাইন রিপোর্টার

প্রকাশিত: ০৬:৩১, ২১ জানুয়ারি ২০২৫; আপডেট: ০৬:৩১, ২১ জানুয়ারি ২০২৫

আলেম সমাজই পারেন দেশে মাদকগ্রহণকারীর সংখ‍্যা কমাতে

আলোচনা সভা

দেশের যুব সমাজ যেভাবে মাদকের দিকে ঝুঁকছে এভাবে চললে আগামী ১০ থেকে ১৫ বছরেই দেশ মাদকের কারণে ধ্বংস হয়ে যাবে। বিশেষ করে ইয়াবার কারণে শহরে বা গ্রামে কেউই স্বস্তিতে নেই। তাই মাদক প্রতিরোধে প্রচারণার মাধ্যমে সচেতন করে একমাত্র দেশের আলেম সমাজই পারেন মাদক গ্রহণকারীর সংখ্যা কমাতে। 

সোমবার রাজধানীর সেগুনবাগিচায় ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটিতে আয়েজিত এক অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব‍্যে মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের অতিরিক্ত মহাপরিচালক মোহাম্মদ ইউসুফ এসব কথা বলেন। মাদানী মজলিশ বাংলাদেশ আয়োজিত দেশ ও জাতির কল্যাণে: 'মাদকতার কুফল ও প্রতিকার' শীর্ষক জাতীয় সেমিনারে 'মাদকতার কুফল ও প্রতিকার' শিরোনামে গবেষণা-প্রবন্ধ উপস্থাপন করা হয় এবং 'মদ ও মাদকতা' শীর্ষক বইয়ের মোড়ক উন্মোচন করা হয়। সেমিনারে সভাপতিত্ব করেন হেফাজতে ইসলাম বাংলাদেশ'র মহাসচিব আল্লামা সাজিদুর রহমান। 

সেমিনারে প্রধান অতিথি বলেন, আমি দেশে মদ কন্ট্রোলে কতটুকু তা নিয়ে তেমন একটা ভাবি না। তবে ইয়াবা নিয়ে বেশ চিন্তিত। কারণ মাদকের মধ্যে অন‍্যতম নেশা ইয়াবা বর্তমানে কারো নিয়ন্ত্রণে নেই। শহর গ্রাম অলিগলি সবখানেই ইয়াবা মেলে। এখন মুদির দোকানে কেউ যদি ইশারা দিয়ে কথা বলেন তাহলেই বুঝতে হবে যে গ্রাহক ইয়াবা চাচ্ছেন। মূলত শহরের তুলনায় গ্রামে মাদকাসক্ত ব‍্যক্তির সংখ্যা অনেক কম। যার প্রধান কারণ আলেম সমাজের প্রচারণা বেশী। তাই ইয়াবা ও মাদক গ্রহণ নিয়ন্ত্রণে আলেমদের পাশাপাশি অবশ‍্যই পরিবারের অভিভাবকদেরকে সদস‍্যদের প্রতি বিশেষ সময় দিতে হবে। 

অতিরিক্ত মহাপরিচালক বলেন, ইয়াবা গ্রহণকারী ব্যক্তি কোকা-কোলা বা কোন প্রকার কোমল পানীয় গ্রহণ করতে পারেন না। মাদক গ্রহণের কারণে জীবনের আয়ূ কমপক্ষে ৩০ ভাগ কমে যায়। 

মোহাম্মদ ইউসুফ বলেন,মাদকাসক্ত ব্যক্তি ৩-৪ বছরেই মেন্টালি ডেড হয়ে যায়। তাদের ব্রেন সেল মরে যায় ফলে আর ভাল হওয়ার সুযোগ থাকে না। এর ফলে  পরে ধীরে ধীরে সে মারা যান। জনাব ইউসুফ বলেন, একটি ইয়াবা ১০০ দিনের জীবনিশক্তি নষ্ট করে দেয়। মায়ানমার ইয়াবা তৈরী করলেও বিশ্বের একমাত্র বাংলাদেশে তাদের বাজার রমরমা। তাই সীমান্তরক্ষী বাহিনী ও আমরা ইয়াবাসহ সকল মাদক প্রবেশ বন্ধে একযোগে কাজ করে যাচ্ছি। 

সেমিনারে আন্তর্জাতিক আলোচক হিসেবে আওলাদে রাসুল (সাঃ) সায়্যিদ আফফান মানসুরপুরী, ভারত মূল‍্যবান মতামত তুলে ধরেন। তিনি ইসলামের প্রথম যুগে মদ কিভাবে ধাপে ধাপে হারাম করা হয় ও কোরআন শরীফে ও হাদিসে মদ এবং নেশা সম্পর্কে কি রয়েছে তার বিস্তারিত তুলে ধরেন। 

অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথির বক্তব্যে অতিরিক্ত কারা মহাপরিদর্শক কর্ণেল মোহাম্মদ মোস্তফা কামাল বলেন, দেশের ৬৮ কারাগারে মাদকাসক্ত বন্দীর সংখ‍্যা মোট বন্দীর কমপক্ষে ২৫ ভাগের বেশী। মানে সমাজের অপরাধের একটি বড় অংশই মাদকাসক্ত বা মাদক সংশ্লিষ্ট। এডিশনাল আইজি প্রিজন্স বলেন, মাদক মাদক সংশ্লিষ্ট মামলার আসামীরা কারাগারে অতি কম সময় অবস্থান করেন ও মাদক মামলায় বারবার কারাগারে প্রবেশ দেখা যায়। তিনি বলেন,মাদকাসক্ত আসামীদের আলাদা কক্ষে রাখার চেষ্টা করা হয়। তবে তারা কারাগারের ভেতরে এক কোনে নীরবে বসে থাকতে দেখা যায়। কারাগার সংশোধনাগার হিসেবে কারাগারের ভেতরে নিজস্ব ডাক্তার ও কনসালটেন্ট দিয়ে তাদেরকে মাদক থেকে দূরে থাকার জন‍্য নানা পরামর্শ দেয়া হয় এমনকি কারাগারের পক্ষ থেকে তাদের সমাজে পুনর্বাসনেরও চেষ্ঠা করা হয়। তিনি এই প্রথমবারের মতো আলেম সমাজকে মাদক নিয়ে কাজ করতে আগ্রহী হওয়ায় সংশ্লিষ্টদের আন্তরিক ধন্যবাদ জানান।

সেমিনারের প্রধান আলোচক মাদানী মজলিস বাংলাদেশ'র সভাপতি শায়খ মুফতি হাফীজুদ্দীন মাঠ পর্যায়ে মাদকের বিস্তার রোধে ৯ দফা দাবি তুলে ধরেন। দাবীগুলো হচ্ছে ইমাম-খতিবগণ, জন-প্রতিনিধি ও সুশীল সমাজের সমন্বয়ে সরকারী কমিশন গঠন করা।

মাদকদ্রব্য উৎপাদন এবং চোরাচালানের ক্ষেত্রগুলো চিহ্নিত করে তা বন্ধে কার্যকরী পদক্ষেপ গ্রহণ, মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ আইনের যথাযথ প্রয়োগে আরো কার্যকরী ভূমিকা রাখা। মদের নেশার সাথে জড়িত অপরাধীদের বিচারে শরিয়া আইনকে প্রাধান্য দেয়া। অবৈধ বার এবং মাদকদ্রব্য বিক্রয় কেন্দ্রগুলো বন্ধ করা।

বিদেশি অমুসলিম নাগরিকদের জন্য সরকারের লাইসেন্সধারী কোনো বিক্রয়কারী প্রতিষ্ঠান যেন শর্ত লঙ্ঘন করে অবৈধভাবে মদ নেশাদ্রব্য বিক্রি করতে না পারে তা কঠোরভাবে নিয়ন্ত্রণ করা। আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর অভিযানে জব্দ হওয়া মাদকদ্রব্য হল দৃষ্টান্ত হিসাবে জনসমক্ষে প্রকাশ্যে বিনষ্ট করা এবং আটক আসামিদের বিচারিক পদক্ষেপগুলো মিডিয়ার মাধ্যমে জনগণের সামনে তুলে ধরা। মাদকাসক্ত কয়েদিদের মানসিকতা পরিবর্তনের জন্য চিন্তাশীল আলেমদের পাক্ষিক কাউন্সিলের ব্যবস্থা গ্রহণ করা। মাদকাসক্তদের পুনর্বাসনের ব্যবস্থা গ্রহণ করা। 

মুফতি হাফিজউদ্দীন বলেন, মদ ও নেশা বর্তমান সময়ের একটি মারাত্মক ব্যাধি হিসেবে ক্রমশ সারাদেশে বিস্তার লাভ করছে। নতুন প্রজন্ম এর দ্বারা আক্রান্ত হচ্ছে ভয়াবহ রূপে। এটা দেশের আইনশৃঙ্খলা, জনগণের নীতি নৈতিকতাবোধ এবং পারিবারিক, সমাজ ও রাষ্ট্রীয় শৃঙ্খলার ওপর মারাত্মকভাবে কুপ্রভাব ফেলছে। এই ভয়াবহ ব্যাধি থেকে দেশবাসী এবং বিশেষত নতুন প্রজন্মকে উদ্ধার ও মুক্ত রাখার জন্য সরকার, সুশীল সচেতন নাগরিক এবং আলেম-উলামা, ইমাম-খতীব ও ধর্মীয় ব্যক্তিবৃন্দের সমন্বিত পদক্ষেপ গ্রহণ করা অত্যন্ত জরুরি। এ বিষয়ে সুচিন্তিত ও সমন্বিত পদক্ষেপ গ্রহণ এবং মাঠপর্যায়ে কর্ম-তৎপরতা বাড়ানোর বিকল্প নেই।

অনুষ্ঠানে সেমিনারে আরও উপস্থিত ছিলেন শায়খুল হাদীস মাওলানা আব্দুল গাফফার সাহেব, ভাইস প্রিন্সিপাল, জামিয়াতুল উলূমিল ইসলামিয়া, ঢাকা, শিক্ষাবিদ ও গবেষক মাওলানা আব্দুর রাজ্জাক নদভী। শিল্পপতি কমান্ডার মাহবুবর রহমান (অব. নেভি) ক্যাপ্টেন (অব.) এস. এম. হেলাল, সিনিয়র সাংবাদিক মশিউর রহমান খান ও গোলাম দস্তগীর বাবু, মাওলানা মুফতী মুহাম্মদ আলী প্রিন্সিপাল, ইদারাতুল উলূম আফতাবনগর শিল্পপতি, আলহাজ্ব আব্দুল আজিজ, মোল্লা, শিল্পপতি জাকির হোসেন,শিল্পপতি মিজানুর রহমান, শিল্পপতি, ইন্জিনিয়ার মাহবুবুর রহমান।

শহীদ

×