.
বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান বলেছেন, বিএনপিকে সংগঠিত করে দেশ মেরামত করতে হবে। আর এ জন্য মেধাবী ও পরিশ্রমীদের সামনে আনতে হবে। তিনি বলেন, ঝড় কেটে গেছে। ঝড়ের পর দলকে পুনর্গঠন করতে চাই। জনগণের সমর্থন আমরা পাব বলে দৃঢ় বিশ্বাস করতে চাই। জনগণের সমর্থন পাবার পর দেশকে পুনর্গঠিত করতে হবে। দলকে সঠিকভাবে পুনর্গঠিত করতে না পারলে দেশকে পুনর্গঠিত করতে পারব না।
সোমবার বিকেলে রাজধানীর গুলশানে বিএনপি চেয়ারপারসনের রাজনৈতিক কার্যালয়ে বিএনপির সদস্যপদ নবায়ন কর্মসূচির উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে তিনি এ আহ্বান জানান। তারেক রহমান অনুষ্ঠানে লন্ডন থেকে ভার্চুয়ালি যুক্ত হন এবং নিজের সদস্যপদ নবায়ন করেন।
গুম-খুম-নির্যাতনের পরও বিএনপি দমে যায়নি উল্লেখ করে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান বলেন, পুরো দেশের ওপর দিয়ে একটি ঝড় গেছে। দেশকে লণ্ডভণ্ড করে দিয়েছে। প্রতিটি সেক্টরকে লণ্ডভণ্ড করে দেওয়া হয়েছে। রাজনৈতিক দলের নেতাকর্মীদের গুম-খুন করা হয়েছে। আমাদের দলের শতশত নেতাকর্মী খুন-গুমের শিকার হয়েছেন, তবু বিএনপি টিকে আছে।
তিনি বলেন, রাজনৈতিকভাবে, প্রাকৃতিকভাবে আমরা আমাদের অনেক সহকর্মীকে হারিয়েছি। যে মানুষগুলো এত ঝড়ের পরও দলটিকে ধরে রেখেছে, যে মানুষগুলো দলকে নিয়ে গেছে সাধারণ মানুষের কাছে, মানুষের মধ্যে দলকে ধরে রেখেছে, যে মানুষগুলোর কারণে আমাদের অবস্থান থেকে কথাগুলো বলতে পারছি-সেই মামুনগুলোকে আমরা আবার একত্রিত করতে চাই, ঐক্যবদ্ধ করতে চাই। সে জন্যই সদস্যপদ নবায়ন করার আনুষ্ঠানিকতা।
তারেক রহমান বলেন, আমাদের এই প্রোগ্রামটি বিএনপির প্রতিটি নেতাকর্মীর জন্যই অত্যন্ত আনন্দের। যে প্রতিষ্ঠানটির সঙ্গে আমরা এত কিছুর পরও আছি, সেই প্রতিষ্ঠানটির সদস্য নবায়ন অত্যন্ত আনন্দের। এই আনন্দ বাংলাদেশের লাখো কোটি নেতা-কর্মীর মধ্যে ছড়িয়ে দিতে চাই।
তিনি বলেন, দেশকে মেরামত করার জন্য ৩১ দফা উপস্থাপন করেছি আমরা। সেটি বাস্তবায়ন করতে হলে দলকে ঐকবদ্ধ ও পুনর্গঠিত করতে হবে। মেধাবীদের সামনে নিয়ে আসতে হবে। যারা পরিশ্রমী, যাদের মধ্যে সততা, আদর্শ আছে এমন মানুষদের আরও ঐক্যবদ্ধ করতে হবে। তাদেরকে আরও দলের কাছে নিয়ে আসতে হবে। আমাদের ভালো মানুষ দরকার, ইফেক্টিভ মানুষ দরকার, প্রডাক্টিভ মানুষ আমাদের আগামীদিনে দরকার।
রাজনীতিতে স্লোগান নয়, এখন মেধা-বুদ্ধির প্রতিযোগিতাÑমির্জা ফখরুল ॥ বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেছেন, এখন রাজনীতিতে যে প্রতিযোগিতা চলছে, এটা কিন্তু স্লোগান দেওয়ার প্রতিযোগিতা নয়। এখন কিন্তু মেধা এবং বুদ্ধির প্রতিযোগিতা। সোশ্যাল মিডিয়াতে কে কেমন লিখতে পারেন, কথা বলতে পারেন, তার প্রতিযোগিতা। এ বিষয়গুলো মাথার মধ্যে রাখতে হবে। শুধু স্লোগান দিয়ে সামনের যুদ্ধে জয় করতে পারব না।
সোমবার গুলশান কার্যালয়ে বিএনপির ‘প্রাথমিক সদস্যপদ নবায়ন’ কার্যক্রমের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানের আগে সভাপতির বক্তব্যে তিনি এ কথা বলেন।
মির্জা ফখরুল বলেন, যারা সদস্য ছিলেন তাদের পদই নবায়ন হবে। এ বইগুলো জেলা, উপজেলায়, ইউনিয়ন, ওয়ার্ড পর্যায়ে যাবে। এ ক্ষেত্রে আমাদের সাংগঠনিক ও সহ-সাংগঠনিক সম্পাদককে এই কাজ নিশ্চিত করতে হবে। এটি যদি করা যায়, আমরা এক মাসের মধ্যে তৃণমূলে পৌঁছে যেতে পারব। তিনি বলেন, এক্ষেত্রে সদস্যদের জানাতে হবে, আপনার সদস্যপদ নবায়ন হচ্ছে, যদি তিনি না জানেন, তবে তিনি আগ্রহ হারাবেন।
এক্ষেত্রে অভিজ্ঞতা শেয়ার করে মির্জা ফখরুল বলেন, অতীতে যেটা হয়েছে, বিশেষ করে আমাদের যারা এমপি পদপ্রার্থী, তারা সব কিনে নিয়ে চলে গেছেন। এই জিনিসটা খেয়াল রাখার পরামর্শ দেন তিনি। এটা যেন সাংগঠনিকভাবেই যায়, যারা এমপি পদপ্রার্থী তারা যেন আবার না নিয়ে চলে যায়। মির্জা ফখরুল বলেন, আমাদের প্রশিক্ষণের প্রয়োজন আছে খুব বেশি। আমাদের নেতা-কর্মীরা কেন জানি না? রাজনীতি থেকে দূরে সরে যাচ্ছেন।
গতকাল জিয়ার মাজারে কিছু কিছু কর্মীর স্লোগানের সমালোচনা করে তিনি বলেন, এটা রাজনীতি না। কোনো রাজনীতি কর্মীর মুখ থেকে এ ধরনের স্লোগান আসা উচিত নয়। এটা রাজনীতির কতবড় দেউলিয়াপনা হতে পারে সেটা এখান থেকে বোঝা যায়। এ জায়গাটাতে আমাদের একটা দৈন্য আছে। এখান থেকে আমাদের বেরিয়ে আসা উচিত। এক্ষেত্রে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান উদ্যোগ নেবে বলে বিশ্বাস করেন মির্জা ফখরুল।
তিনি বলেন, প্রতিটি জেলা ও উপজেলায় রাজনৈতিক প্রশিক্ষণ খুব জরুরি করতে হবে। কিভাবে বক্তৃতা করতে হবে, কিভাবে একটা সভা চলে, কিভাবে উপস্থাপনা করবেন, এড্রেস কিভাবে করবেন? এই জিনিসগুলো খুব বেশি প্রয়োজন, যেটা আমার কাছে মনে হয়।
বিএনপি মহাসচিব বলেন, সত্যিকার অর্থে আমাদের একটা রাজনৈতিক দল তৈরি করা দরকার। একটি পলিটিক্যাল পার্টি তৈরি করা দরকার। আমাদের এখন সত্যিকার অর্থেই একটি আদর্শিক রাজনৈতিক দলে পরিণত হতে হবে।তিনি বলেন, সামনে যখন আমরা রিক্রুট করব দলে, তখন যেন ভালো, মেধাবী মানুষদের সদস্য করি, যাতে দল সামনে আরও শক্তিশালী হয়।
অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন দলটির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। প্রচার সম্পাদক সুলতান সালাউদ্দিন টুকুর সঞ্চালনায় উপস্থিত ছিলেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য নজরুল ইসলাম খান, সালাউদ্দিন আহমেদ, সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী, ভাইস চেয়ারম্যান শামসুজ্জামান দুদু, চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা আবদুস সালাম, যুগ্ম মহাসচিব শহিদ উদ্দিন চৌধুরী এ্যানী, সৈয়দ এমরান সালেহ প্রিন্স, আব্দুস সালাম আজাদ, তথ্য ও গবেষণা সম্পাদক জেড রিয়াজুদ্দিন খান নসু প্রমুখ।