.
মুক্তির জন্য তিন জিম্মির নাম প্রকাশের পর অবশেষে ইসরাইল ও হামাসের মধ্যে যুদ্ধবিরতি কার্যকর শুরু হয়েছে। এর মধ্য দিয়ে প্রায় ১৫ মাসের যুদ্ধে সাময়িক বিরতি নিশ্চিত হলো। রবিবারের এই চুক্তির ফলে মধ্যপ্রাচ্যের অস্থিতিশীলতা কিছুটা কমবে বলে প্রত্যাশা করা হচ্ছে। এদিকে, চুক্তির প্রতিবাদে ইসরাইলের তিন মন্ত্রী পদত্যাগ করেছেন। আর যুদ্ধবিরতি চুক্তি কার্যকর হওয়ায় হাজার হাজার ফিলিস্তিনি তাদের বাড়ি-ঘরে ফিরতে শুরু করেছেন। খবর বিবিসি ও রয়টার্সের।
এর আগে রবিবার স্থানীয় সময় সকাল ৮টা ৩০ মিনিটে (বাংলাদেশ সময় দুপুর সাড়ে ১২টা) এই চুক্তি কার্যকর হওয়ার কথা থাকলেও শেষ মুহূর্তে ইসরাইলি প্রধানমন্ত্রীর দপ্তর থেকে জানানো হয়, তিনি ইসরাইলি বাহিনীকে নির্দেশনা দিয়েছেন, যুদ্ধবিরতি কার্যকর হওয়ার জন্য হামাসের কাছ থেকে জিম্মিদের তালিকা পাওয়া আবশ্যক। এর পরই হামাসের এক কর্মকর্তা জানান, ইসরাইলের সঙ্গে যুদ্ধবিরতি চুক্তির অধীনে জিম্মিদের একটি তালিকা যে কোনো মুহূর্তে হস্তান্তর করা হবে। তবে গাজায় জটিলতা এবং ইসরাইলি বোমা হামলার কারণেই যুদ্ধবিরতি কার্যকর করতে বিলম্ব হয়।
এদিকে, চুক্তি কার্যকরে বিলম্ব হওয়ায় হামাসকে দায়ী করেছে ইসরাইল। চুক্তির অধীনে যেসব জিম্মিদের মুক্তি দেওয়া হবে, নেতানিয়াহুর চাওয়া অনুযায়ী তাদের তিনজনের নাম প্রদানে ব্যর্থ হওয়ার কারণেই এই বিলম্ব হয়েছে বলে দাবি করেছে তারা। অবশ্য হামাস আত্মপক্ষ সমর্থন করে দাবি করেছে, যুদ্ধবিরতি কার্যকরে তাদের আন্তরিকতার কোনো ঘাটতি ছিল না। মাঠ পর্যায়ে কারিগরি জটিলতার কারণে তারা সময়মতো জিম্মিদের নাম দিতে ব্যর্থ হয়েছে।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক ফিলিস্তিনি কর্মকর্তা বলেছেন, যুদ্ধবিরতি কার্যকরের আগের ৪৮ ঘণ্টায় কোনো হামলা না হওয়ার নিশ্চয়তা চেয়েছিলেন সমঝোতাকারীরা। কিন্তু নির্ধারিত সময় পর্যন্ত ইসরাইলি হামলা অব্যাহত থাকায় নামের তালিকা পাঠানো কঠিন হয়ে পড়ে। নির্ধারিত সময়ের দু’ঘণ্টা পর নামের তালিকা পাঠানোর কথা জানায় হামাস। পরে ওই তালিকা পাওয়ার কথা নিশ্চিত করেন ইসরাইলি কর্মকর্তারা। রবিবার প্রাথমিকভাবে মুক্তি পেতে যাওয়া তিন জিম্মির নাম জানিয়েছে হামাস, তারা হলেন- রমি গোনেন, ডোরোন স্টেইনব্রেকার ও এমিলি ডামারি।
যুদ্ধবিরতির আলোচনায় অংশ নেওয়া কাতারের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র মাজেদ আল-আনসারি এক বিবৃতিতে বলেন, আমরা নিশ্চিত করছি যে, আজ (রবিবার) মুক্তি পাওয়া তিন জিম্মির নাম ইসরাইলের কাছে হস্তান্তর করা হয়েছে। তারা তিনজন ইসরাইলি নাগরিক। এদের মধ্যে একজনের রোমানিয়ার এবং অন্যজনের ব্রিটিশ নাগরিকত্ব রয়েছে। তাৎক্ষণিকভাবে অবশ্য নামগুলো নিশ্চিত করেনি ইসরাইল।
প্রতিবাদে ইসরাইলের তিন মন্ত্রীর পদত্যাগ ॥ গাজায় যুদ্ধবিরতি চুক্তির বিরোধিতা করে ইসরাইলের অতি-ডানপন্থি জাতীয় নিরাপত্তা মন্ত্রী ইতামার বেন গভির পদত্যাগ করেছেন। সঙ্গে তার জাতীয়তাবাদী-ধর্মীয় দল ওজামা ইয়েহুদিতের আরও দুই মন্ত্রীও পদত্যাগ করেছেন। রবিবার গাজায় যুদ্ধবিরতি কার্যকর হওয়ার দিনেই এমন খবর আসে। খবর রয়টার্সের।
প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ওজমা ইয়েহুদি বা ইহুদি শক্তি পার্টি এখন থেকে আর ক্ষমতাসীন জোটে থাকবে না। তবে দলটি বলেছে, তারা নেতানিয়াহুর সরকারের পতন ঘটানোর চেষ্টা করবে না। যুদ্ধবিরতি ঘোষণার আগের সপ্তাহে বেন গভির পদত্যাগের হুমকি দিয়েছিলেন এবং তিনি এটিকে ‘বেপরোয়া চুক্তি’ বলে অভিহিত করেন। সেই সঙ্গে তিনি অন্য কট্টরপন্থি, বসতি স্থাপনকারীপন্থি পক্ষগুলোকেও একই পদক্ষেপ অনুসরণ করার আহ্বান জানান।
তিনি বলেন, প্রস্তাবিত চুক্তিটি শত শত ফিলিস্তিনি কয়েদিকে মুক্ত করে দেবে এবং গাজার কৌশলগত এলাকা থেকে সেনা প্রত্যাহার করে আমাদের অর্জনগুলোকে মুছে ফেলবে। এতে হামাস অপরাজিত থাকবে।