ছবি : সংগৃহীত
বাংলাদেশের মানচিত্রের একেবারে মাথার কাছে এই অংশটির নাম দহলা খাগড়াবাড়ি। একসময় এটি পরিচিত ছিল বিশ্বের সবচেয়ে জটিল ভৌগোলিক সমস্যা জর্জরিত ছিটমহল হিসেবে। এটি ছিল একসময় ভারতের অংশ কিন্তু বাংলাদেশের ভূমির অভ্যন্তরে। আবার সেই ভূমি ছিল ভারতের ভূমি দিয়ে ঘেরা। পুরো অঞ্চলটি এমন এক জটিল ভৌগোলিক সমস্যা সংকুল এলাকা ছিল, যার দুর্ভোগ পোহাতে হতো স্থানীয় মানুষকে। তারা ছিলেন অনেকটা দেশহীন মানুষের মত। শিক্ষা, চিকিৎসার মতো মৌলিক চাহিদা পূরণের জন্য তাকে থাকতে হতো সীমান্তরক্ষীদের মর্জির ওপর।
দীর্ঘ ৬৮ বছর ধরে তারা পোহান এমন দুর্ভোগ। এনক্লেভ বা ছিটমহল হলো একটি রাষ্ট্র বা অঞ্চলের এমন একটি অংশ যার চারদিকে অন্য কোন দেশ দ্বারা মূল অংশ থেকে ভৌগোলিকভাবে বিচ্ছিন্ন, এই যেমন ওমানের মাধা এলাকা। ওমানের এই অংশটির অবস্থান আরব আমিরাতের ভেতরে। মজার ব্যাপার হলো ওমানের এই অংশটির ভেতর আবার আরেকটি ভূখণ্ড রয়েছে যার নাম নাওয়া। এটি আবার ইউএই ভূখণ্ড অর্থাৎ মাধার কোন বাসিন্দা যদি তার নিজের দেশ ওমানের মূল ভূখণ্ডে যেতে চায় তবে তাকে ইউএই পাড়ি দিয়ে তারপর যেতে হবে। আবার ইউএই এর কোন বাসিন্দাকে যদি তার নিজের শহর দুবাইতে যেতে হয়, তবে তাকে ভিন্ন একটি দেশের ভূখণ্ড পাড়ি দিয়ে যেতে হবে।
বিশ্বের বিভিন্ন জায়গায় এরকম জটিল ভৌগোলিক সমীকরণ রয়েছে। তবে সবচেয়ে বেশি জটিল সমীকরণটি ছিল বাংলাদেশ ভারত সীমান্তে। বাংলাদেশ এবং ভারতের মাঝে মোট ১৬২ টি ছিটমহল ছিল, যা ২০১৫ সালে একটি চুক্তির মাধ্যমে সমাধান করা হয়েছে। যার ফলে ভারতের ১১১ টি ছিটমহল বাংলাদেশের মূল ভূখণ্ডের সঙ্গে মিলিত হয়, অন্যদিকে ভারতে যুক্ত হয় বাংলাদেশের ৫১ টি ছিটমহল।
২০১৫ সালে ছিটমহল সমস্যার অবসান হলেও রয়ে গেছে একটি ছিট মহল। বাংলাদেশের লালমনিরহাট জেলার পাটগ্রাম উপজেলার একটি ইউনিয়ন দহগ্রাম, যা বাংলাদেশের একটি ভূখণ্ড হওয়া সত্ত্বেও এর অবস্থান ভারতের অভ্যন্তরে। এখানকার আয়তন ২২.৬৮ বর্গ কিলোমিটার এবং চারপাশে ভারত দিয়ে ঘেরা এই ছোট্ট এক টুকরো বাংলাদেশে প্রায় ২০০০০ মানুষ বাস করে। এখানকার বাসিন্দাদের বাংলাদেশের মূল ভূখণ্ডের সাথে যোগাযোগ স্থাপনের জন্য ১৭৮ বাই ৮৫ মিটার আয়তনের একটি ভূমি বাংলাদেশকে ইজারা হিসেবে দেয়, যা বর্তমানে তিন বিঘা করিডোর হিসেবে খ্যাত। আগে করিডরটি দিনের ১২ ঘন্টা সময়ের জন্য উন্মুক্ত করে দেয়া হতো। এতে দহগ্রাম আঙ্গরপোতার অধিবাসীদের কঠিন সমস্যার সম্মুখীন হতে হতো কারণ সে সময় সেখানে কোন হাসপাতাল ও শিক্ষা প্রতিষ্ঠান ছিল না। ২০১১ সালের ৬ সেপ্টেম্বর ঢাকায় বাংলাদেশ ও ভারতের প্রধানমন্ত্রীর মধ্যে একটি চুক্তি অনুযায়ী বর্তমানে করিডরটি ২৪ ঘন্টায় উন্মুক্ত থাকছে।
মো. মহিউদ্দিন