ঢাকা, বাংলাদেশ   সোমবার ২০ জানুয়ারি ২০২৫, ৬ মাঘ ১৪৩১

চীনের সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রের বাণিজ্যযুদ্ধে  বাংলাদেশের লাভের সম্ভাবনা

অর্থনৈতিক রিপোর্টার

প্রকাশিত: ২২:৫৬, ১৯ জানুয়ারি ২০২৫

চীনের সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রের বাণিজ্যযুদ্ধে  বাংলাদেশের লাভের সম্ভাবনা

.

চীন ও মেক্সিকোয় উৎপাদিত পণ্যের ওপর শুল্ক আরোপের যে নীতি নিয়েছেন যুক্তরাষ্ট্রের নবনির্বাচিত প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প তাতে বাংলাদেশ লাভবান হবে বলে মনে করছেন দেশীয় পোশাক রপ্তানিকারকরা।
সাম্প্রতিক মাসগুলোতে যুক্তরাষ্ট্রের বাজারে বাংলাদেশের পোশাক রপ্তানি ধারাবাহিকভাবে বাড়ছে। এই খাতের সঙ্গে সংশ্লিষ্টরা জানান, আমেরিকার পোশাক বিক্রেতা ও ব্র্যান্ডগুলো চীন থেকে সরে আসছে। সেই কার্যাদেশগুলোই পাচ্ছে বাংলাদেশের পোশাক উৎপাদনকারীরা। রপ্তানিকারকরা বলছেন, চীনের পণ্যের ওপর ৬০ শতাংশ পর্যন্ত শাস্তিমূলক শুল্ক আরোপ করায় আমেরিকার প্রতিষ্ঠানগুলো ভবিষ্যতে আরও বেশি বাংলাদেশে আসবে।
দামে কম, বেশি পণ্য উৎপাদনের সক্ষমতা এবং কারখানাগুলোতে কর্মীদের নিরাপত্তার উন্নতির কারণে বাংলাদেশ ইতিমধ্যেই আমেরিকান ক্রেতাদের পছন্দের গন্তব্য। এসব কারণে, যুক্তরাষ্ট্রের বাজারে ১৫ দশমিক ৬২ শতাংশ শুল্ক থাকা সত্ত্বেও বাংলাদেশ বছরের পর বছর ধরে শক্তিশালী অবস্থানে রয়েছে।
যুক্তরাষ্ট্র সরকার স্বল্পোন্নত দেশ (এলডিসি) থেকে ৯৭ শতাংশ পণ্য আমদানিতে শুল্কমুক্ত সুবিধা দিয়ে থাকে। তবে বাংলাদেশ থেকে পোশাক আমদানিতে শুল্কমুক্ত সুবিধা দেয় না যুক্তরাষ্ট্র। বিষয়টি নিয়ে ওয়াশিংটনের সঙ্গে আলোচনার জন্য বাংলদেশ সরকারের প্রতি অনুরোধ জানাচ্ছেন পোশাক রপ্তানিকারকরা।
যুক্তরাষ্ট্রের বাজারে পোশাক রপ্তানিকারী হা-মীম গ্রুপের চেয়ারম্যান ও ব্যবস্থাপনা পরিচালক এ কে আজাদ করেন বলেন, চীন ও মেক্সিকোর পণ্যে উচ্চ শুল্ক বাংলাদেশের জন্য সুযোগ তৈরি করবে। চীন ও মেক্সিকো থেকে অনেক পোশাকের কাজের আদেশ বাংলাদেশ, ভারত ও পাকিস্তানে চলে আসবে বলে আশা করা হচ্ছে। তিনি আরও বলেন, ‘রাজনৈতিক সংকট ও শ্রমিক অসন্তোষের কারণে গত বছর যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক কিছু ব্র্যান্ড বাংলাদেশ থেকে কার্যাদেশ সরিয়ে নিয়েছিল, তারা এখন আরও বেশি ওয়ার্ক অর্ডার নিয়ে ফিরে আসছে। আজাদ বলেন, এই সুযোগ কাজে লাগানোর জন্য বাংলাদেশকে প্রথমে কিছু প্রস্তুতি নিতে হবে। উদাহরণ হিসেবে তিনি বলেন, শিল্প কারখানাগুলো পূর্ণ উৎপাদনে চালানোর জন্য গ্যাস ও বিদ্যুতের পর্যাপ্ত সরবরাহ নিশ্চিত করতে হবে। অথচ শিল্পখাতে গ্যাসের দাম বেশি। প্রায় একই কথা বলেন ডিবিএল গ্রুপের ব্যবস্থাপনা পরিচালক এম এ জব্বার। তিনি বলেন, ট্রাম্প তার ভাষণে চীন ও মেক্সিকোর পণ্যের ওপর উচ্চ শুল্ক আরোপের কথা বলায় ক্রেতারা এখন বাংলাদেশকে অগ্রাধিকার দিচ্ছেন।
সাম্প্রতিক বছরগুলোতে কিছু পোশাকের ক্রয়াদেশ মেক্সিকোতে চলে গিয়েছিল। কিন্তু সেগুলো এখন বাংলাদেশে ফিরে আসছে উল্লেখ করে তিনি কারখানাগুলোকে পূর্ণ ক্ষমতায় চালানোর জন্য পর্যাপ্ত জ্বালানি সরবরাহের কথা বলেন। তিনি বলেন, আমেরিকার বাজারে অবস্থান শক্তিশালী করার জন্য আইনশৃঙ্খলার উন্নতি করতে হবে এবং সংশ্লিষ্ট খাতগুলোতে দ্রুত বিনিয়োগ বাড়াতে হবে।
বিজিএমইএর সাবেক সভাপতি ফারুক হাসান বলেন, ট্রাম্পের বক্তব্যে চীন ও মেক্সিকোর পণ্যের ওপর উচ্চ শুল্ক আরোপের ইঙ্গিত পাওয়া যাচ্ছে। এতে বাংলাদেশের জন্য নতুন সুযোগ তৈরি হতে পারে।
তিনি বলেন, ট্রাম্প প্রশাসন চীন ও মেক্সিকোর পণ্যের ওপর উচ্চ শুল্ক আরোপ করলে দুটি ঘটনা ঘটতে পারে। এতে করে বাংলাদেশে কাজের অর্ডার বাড়তে পারে। আবার, ওই দেশগুলো থেকে বিনিয়োগ বাংলাদেশে স্থানান্তরিত হতে পারে।
২০১৩ সালে রানা প্লাজা ধসের পর বাংলাদেশকে দেওয়া অগ্রাধিকারমূলক বাণিজ্য সুবিধা বা জিএসপি প্রত্যাহার করে যুক্তরাষ্ট্র। এর পরই আন্তর্জাতিক মানদন্ড অনুযায়ী কর্মক্ষেত্রের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে উল্লেখযোগ্য উন্নতি করেছে বাংলাদেশ। বাংলাদেশের এই অগ্রগতিতে সন্তুষ্ট আমেরিকান খুচরা বিক্রেতা ও ব্র্যান্ডগুলো। ফলে দেশের পোশাকের মানও উন্নত হয়েছে।

×