ছবি : সংগৃহীত
স্নাতক সম্পন্ন করার পর সমাবর্তনের মাধ্যমে আনুষ্ঠানিকভাবে শিক্ষার্থীদের হাতে তুলে দেওয়া হয় মূল সনদপত্র। এ কারণে সমাবর্তন প্রতিটি শিক্ষার্থীর জীবনে বিশেষ গুরুত্ব বহন করে। এই দিনে কালো গাউন পরে শিক্ষার্থীরা আনন্দ-উল্লাসে মেতে ওঠে। তবে বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ে (বেরোবি) এর সম্পূর্ণ বিপরীত এক চিত্র দেখা যায়।
প্রতিষ্ঠার ১৭ বছর পেরিয়ে গেলেও রংপুরের ঐতিহ্যবাহী এই বিশ্ববিদ্যালয়ের ১০টি ব্যাচের স্নাতক শেষ করা শিক্ষার্থীরা এখনো সমাবর্তন পাননি। প্রায় ১০ হাজারেরও বেশি স্নাতক শিক্ষার্থী দীর্ঘদিন ধরে অধীর আগ্রহে অপেক্ষা করছেন। সময়ের সঙ্গে এই সংখ্যা বেড়েই চলেছে।
পূর্বের উপাচার্য প্রফেসর ড. হাসিবুর রশীদ ২০২৩ সালের জুন মাসে সমাবর্তন ছাড়াই শিক্ষার্থীদের মূল সনদপত্র প্রদান করায় তীব্র সমালোচনার মুখে পড়েন। পরে শিক্ষার্থীদের চাপে তিনি ২০২৪ সালের প্রথম কোয়ার্টারে সমাবর্তনের ঘোষণা দেন। তবে সেই সময়সীমাও পেরিয়ে গেলেও এখনো কোনো সমাবর্তন আয়োজন করা সম্ভব হয়নি।
এ বিষয়ে একাধিক সাবেক শিক্ষার্থী বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের ব্যর্থতাকেই দায়ী করেছেন।
রসায়ন বিভাগের ২০১৩-১৪ সেশনের প্রধানমন্ত্রী স্বর্ণপদকপ্রাপ্ত সাবেক শিক্ষার্থী শ্রাবনী আক্তার বলেন, “কিছুক্ষণ আগেই ভাবছিলাম, কবে হবে আমাদের সমাবর্তন। আমাদের বিশ্ববিদ্যালয়টি শুরু থেকেই অবহেলিত। সমাবর্তন যে একটি প্রয়োজনীয় আয়োজন, তা কর্তৃপক্ষ ভুলেই গেছে। তবে কি আমার মেয়ে যখন এই বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়বে, তখন কি সমাবর্তন হবে?”
রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগের চতুর্থ ব্যাচের সাবেক শিক্ষার্থী মো. জহুরুল ইসলাম জীবন বলেন, “প্রত্যেক শিক্ষার্থীর আশা থাকে গ্রাজুয়েশন শেষে সমাবর্তনের মাধ্যমে সনদ নেওয়া। কিন্তু ১৭ বছর পেরোলেও বেরোবি একটি সমাবর্তনের আয়োজন করতে পারেনি। আমার ধারণা, বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসিদের কখনোই সমাবর্তন আয়োজনের সদিচ্ছা ছিল না। তবে এখন পরিবর্তনের সময়, অতীতের এই ব্যর্থতার ইতিহাস বদলে যত দ্রুত সম্ভব একটি সমাবর্তন আয়োজন করা উচিত।”
ইতিহাস ও প্রত্নতত্ত্ব বিভাগের সাবেক শিক্ষার্থী স্বপন মাহামুদ বলেন, “সমাবর্তন শিক্ষার্থীদের জীবনের একটি গুরুত্বপূর্ণ অধ্যায়। এই দিনে শিক্ষার্থীরা কালো ক্যাপ ও গাউন পরে প্রথমবারের মতো সনদ হাতে পায়। এটি তাদের অধিকার। অথচ বেরোবির বয়স ১৭ বছর পার হয়ে গেছে। দেশের বাইরেও এই বিশ্ববিদ্যালয়ের নাম ছড়িয়ে পড়েছে। এখান থেকে পাস করা অনেক শিক্ষার্থী আন্তর্জাতিক পর্যায়ে কাজ করছে, বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষক হিসেবে কর্মরত। অথচ বিশ্ববিদ্যালয়টি এখনো একটি সমাবর্তনের আয়োজন করতে পারেনি। একজন সাবেক শিক্ষার্থী হিসেবে বলতে চাই—সমাবর্তন, তুমি কোথায়?”
সমাবর্তনের বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রপরামর্শ ও নির্দেশনা দপ্তরের পরিচালক অধ্যাপক ড. মো. ইলিয়াছ প্রামাণিক বলেন, “আমরা সমাবর্তন নিয়ে কাজ করছি। খুব শিগগিরই এর আয়োজন করব।”
বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য প্রফেসর ড. শওকাত আলী বলেন, “আমরা সমাবর্তন নিয়ে পরিকল্পনা করছি এবং ইতোমধ্যে মিটিংও করেছি। ইনশাআল্লাহ, এ বছরের সেপ্টেম্বর মাসে আমরা সমাবর্তন আয়োজন করব।”
মারিয়া