.
গত ৫ আগস্ট ছাত্র-জনতার আন্দোলনে স্বৈরাচারী সরকারের পতনের পর অন্তর্বর্তী সরকারের কাছে প্রধান চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়ায় দেশের অর্থনৈতিক অবকাঠামো পুনর্গঠন। ইতোমধ্যে অন্তর্বর্তী সরকারের ৫ মাস পেরিয়ে গেছে। এই সময়ে অর্থনৈতিক স্থিতিশীলতা আনতে নানা পদক্ষেপ নিয়েছে সরকার। কিন্তু এখনো পর্যন্ত স্বস্তির আভাস মেলেনি। ক্রমাগত বেড়েই চলেছে মূল্যস্ফীতির হার। ফলে দরিদ্র ও মধ্যবিত্তের কপালে চিন্তার ভাঁজ। তবে স্থিতিশীলতা ফেরাতে সরকারকে সময় দেওয়ার কথাও বলছেন বিশ্লেষক ও অর্থনীতিবিদরা।
জানা গেছে, গত ৫ আগস্ট স্বৈরাচারী সরকারের পতনের অন্যতম কারণ ছিল অর্থনৈতিক বিপর্যস্ত বাংলাদেশকে টেনে তোলায় ব্যর্থতা। এর সঙ্গে মতপ্রকাশের স্বাধীনতা অন্যতম অনুঘটক হিসেবে কাজ করেছে। অনিয়ম আর দুর্নীতির মাধ্যমে সরকার ঘনিষ্ঠরা শত কোটি থেকে হাজার কোটি টাকার মালিক হলেও খাবার ও নিত্যপণ্য কিনতেই হিমশিম খেতো সাধারণ মানুষ। ফলে ছাত্রদের একটি সাধারণ দাবির প্রতি অকুণ্ঠ সমর্থন জানিয়ে সরকার পরিবর্তনে রাস্তায় নেমে আসে সব শ্রেণি পেশার মানুষ।
গণমানুষের এই প্রত্যাশার প্রতি লক্ষ্য রেখে সরকার গঠনের পর থেকেই মত প্রকাশের স্বাধীনতা ও অর্থনৈতিক সংকট নিরসনে নানামুখী উদ্যোগ গ্রহণ করতে থাকে নোবেল বিজয়ী ড. মোহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বাধীন অন্তর্বর্তী সরকার। এর মধ্যে গুরুত্বপূর্ণ ছিল দেশের অর্থনৈতিক খাত থেকে লুটপাট হয়ে যাওয়া হাজার হাজার কোটি টাকা ফেরত নিয়ে আসা এবং মূল্যস্ফীতি কমিয়ে নিত্যপণ্য সাধারণ মানুষের ক্রয় ক্ষমতার মধ্যে নিয়ে আসা। কিন্তু অন্তর্বর্তী সরকারের প্রায় ৪ মাস মেয়াদে এখন পর্যন্ত এ নিয়ে সাধারণ মানুষের জীবনযাত্রায় স্বস্তি ফিরে আসেনি।
অর্থনীতিবিদদের মতে, বাংলাদেশের মানুষকে কয়েক বছর ধরে মূল্যস্ফীতি বিশেষ করে খাদ্যপণ্যের দাম নিয়ে নাজেহাল হতে হচ্ছে। গণঅভ্যুত্থানে সরকার বদলের পাশাপাশি বিভিন্ন জায়গায় পরিবর্তন হলেও এই একটি জায়গায় এখনো কোনো পরিবর্তন আসেনি।
বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর হিসাব অনুযায়ী, ডিসেম্বর শেষে সামগ্রিক মূল্যস্ফীতি ১০ দশমিক ৮৯ শতাংশে দাঁড়িয়েছে। যেখানে খাদ্যপণ্যের মূল্যস্ফীতি ১২ দশমিক ৯২ শতাংশ। অবশ্য আগের মাসে সামগ্রিক মূল্যস্ফীতির হার ছিল ১১ দশমিক ৩৮, যেখানে খাদ্য মূল্যস্ফীতি ছিল ১৩ দশমিক ৮০। অর্থাৎ গত মাসের চেয়ে মূল্যস্ফীতি কিছুটা কমলেও এখন পর্যন্ত তা দরিদ্র ও মধ্যবিত্তদের জন্য বড় দুর্ভাবনার কারণ।
এই পরিস্থিতিতে সংকোচনমূলক মুদ্রানীতি গ্রহণের মাধ্যমে মানুষের দুর্ভোগ লাঘবে পদক্ষেপ নেয় বাংলাদেশ ব্যাংক। একাধিকবার বৃদ্ধি করে নীতি সুদ হার। তুলে নেওয়া হয়েছে আমদানির ক্ষেত্রে বিধিনিষেধ। দেশের অর্থনীতির প্রকৃত চিত্র জানতে গত ২৮ আগস্ট সরকার একটি শ্বেতপত্র প্রণয়ন কমিটি গঠন করে দেয়। গত ২ ডিসেম্বর এই কমিটি তাদের প্রতিবেদন প্রকাশ করে। এ ছাড়া ব্যাংক খাত সংস্কারে ১১ সেপ্টেম্বর একটি টাস্কফোর্স গঠন করা হয়। গত কয়েক মাসে ১১টি ব্যাংকের পরিচালনা পর্ষদ ভেঙে নতুন পর্ষদ গঠন করে দেওয়া হয়েছে। তারল্য সংকটের কারণে ১১ আগস্ট ব্যাংক থেকে টাকা উত্তোলনের সীমা বেঁধে দেয় বাংলাদেশ ব্যাংক। পরে ৭ সেপ্টেম্বর থেকে সেই সীমা তুলে নেওয়া হয়। সম্প্রতি সাতটি দুর্বল ব্যাংককে সাড়ে ছয় হাজার কোটি টাকার তারল্য সহায়তা দেওয়া হয়েছে।
বাংলাদেশ ব্যাংকের মুখপাত্র হুসনে আরা শিখা গণমাধ্যমকে জানিয়েছেন, অতিরিক্ত কোনো টাকা না ছাপিয়ে, সবল ব্যাংকগুলো থেকে ঋণ হিসেবে এই টাকা দেওয়া হয়েছে দুর্বল ব্যাংকগুলোকে। তবে গত ২৮ নভেম্বর এক সংবাদ সম্মেলনে বাংলাদেশ ব্যাংক গভর্নর জানিয়েছেন, দুর্বল ব্যাংকগুলোকে ওই সময় পর্যন্ত নতুনভাবে ছাপিয়ে ২২ হাজার কোটি টাকা তারল্য সহায়তা দেওয়া হয়েছে।
এদিকে সুদহার বৃদ্ধি করায় বিপাকে পড়েছেন দেশের ব্যবসায়ীরা। ঢাকা চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রিজের (ডিসিসিআই) সাবেক সভাপতি আশরাফ আহমেদ জনকণ্ঠকে বলেন, সংকোচনমূলক মুদ্রানীতির ফলে বাজারে চাহিদা এবং সরবরাহ কমে আসছে। এর ফলে ব্যবসা-বাণিজ্যের সম্প্রসারণ এবং কর্মসংস্থান কমে আসার শঙ্কা তৈরি হয়েছে। এদিকে সম্প্রতি বাংলাদেশ ব্যাংকের ঋণ শ্রেণিকরণে নতুন নির্দেশনার বিষয়ে তিনি শঙ্কা প্রকাশ করে বলেন, বাংলাদেশ ব্যাংকের ঋণ শ্রেণিকরণের নতুন নীতিমালার ফলে মন্দ-ঋণের চাপে পড়তে পারেন ব্যাংক এবং ব্যবসায়ীরা।
তবে অন্তর্বর্তী সরকারের সময়ে অর্থনীতির যে উদ্যোগটি সবচেয়ে বেশি সফল বলে মনে করছেন অর্থনীতিবিদরা সেটি হলো বৈদেশিক মুদ্রা বাজার ব্যবস্থাপনা। এর ফলে ডলারের বিপরীতে টাকার দরপতন ঠেকানো গেছে বলে মনে করেন তারা। বিশ্বব্যাংকের সাবেক প্রধান অর্থনীতিবিদ ড. জাহিদ হোসেন মনে করেন, অন্তর্বর্তী সরকারের সময়কালে যে উদ্যোগটি সবচেয়ে বেশি সফল বলে দেখা যাচ্ছে, সেটা বৈদেশিক মুদ্রা বাজার ব্যবস্থাপনার ক্ষেত্রে। এ নিয়ে বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক প্রধান অর্থনীতিবিদ মুস্তফা কে. মুজেরী বলেন, বৈদেশিক মুদ্রার বিনিময় হার বাজারের সঙ্গে অনেকটাই সঙ্গতিপূর্ণ করা সম্ভব হয়েছে। এর ফলে ডলারের বিপরীতে টাকার দরপতন ঠেকানো গেছে। তিনি বলেন, অফিসিয়াল চ্যানেলে মুদ্রা পাঠানোর ক্ষেত্রে যে রেট প্রদান করা হয়, সেটাকে বাজারের সঙ্গে সঙ্গতিপূর্ণ রাখতে পারলে বৈধপথে রেমিটেন্স পাঠানোর ঊর্ধ্বগতি বজায় থাকবে। অবশ্য অন্তর্বর্তী সরকার ক্ষমতায় আসার পরপরই রেমিটেন্সের ঊর্ধ্বমুখী প্রবাহ লক্ষ্য করা গেছে।
আবার মূল্যস্ফীতি কমাতে ব্যাংক খাতে সুদহার ক্রমাগত বৃদ্ধিসহ বিভিন্ন উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। পাশাপাশি ডিম, পেঁয়াজের মতো নিত্যপ্রয়োজনীয় কয়েকটি পণ্যে শুল্ক প্রত্যাহার ও হ্রাস করেছে সরকার। ফ্যামিলি কার্ডধারী ছাড়াও মধ্যবিত্তের জন্য উন্মুক্ত করে দেয়া হয় টিসিবি’র ন্যায্য মূল্যে পণ্য বিক্রয় কার্যক্রম। পাশাপাশি নিয়মিত করা হচ্ছে বাজার তদারকি। কিন্তু এতসব পদক্ষেপের পরও মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণে কোনো ফল দেখা যাচ্ছে না। এমনকি সম্প্রতি আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলও (আইএমএফ) মূল্যস্ফীতির এমন পরিস্থিতিতে উদ্বেগ জানিয়েছে। বাজার মনিটরিংয়েও সুফল না মেলা সম্পর্কে অর্থনীতিবিদ মুস্তফা কে মুজেরী একটি সাক্ষাৎকারে বলেছেন, বাজার তদারকির সময় খুচরা পর্যায়ের বিক্রেতাদের জরিমানা করা হয়। কিন্তু বিক্রেতারা পরে ভোক্তার কাছ থেকেই সেই জরিমানা বাবদ খরচের অর্থ তুলে নেয়।
তবে নিয়ন্ত্রণে ব্যর্থতার পরও মূল্যস্ফীতির এই সূচককে ইতিবাচক হিসেবেই দেখছেন কেন্দ্রীয় ব্যাংকের গভর্নর ড. আহসান এইচ মনসুর। মূল্যস্ফীতি নিয়ে বিবিএস যেদিন তথ্য প্রকাশিত করে, সেদিন গণমাধ্যমকে বাংলাদেশ ব্যাংক গভর্নর বলেন, আগে মূল্যস্ফীতির হিসাব কমিয়ে দেখানো হতো। বর্তমানে মূল্যস্ফীতির প্রকৃত হিসাব দেওয়া হচ্ছে। এছাড়া মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণে বেশ কিছুদিন সময় লাগবে এমনটা জানিয়ে গত ১১ নভেম্বর একটি অর্থনৈতিক সম্মেলনে কেন্দ্রীয় ব্যাংক গভর্নর বলেন, মুদ্রানীতির সুফল পেতে অন্তত এক বছর লাগবে। তিনি এ সময় আরও বলেন, মাত্র চার মাস পার করেছি, মূল্যস্ফীতি কমাতে আরও আট মাস সময় দিতে হবে।
গত ১৫ নভেম্বর এক সাক্ষাৎকারে অর্থ উপদেষ্টা সালেহউদ্দিন আহমেদ বলেছেন, চাঁদাবাজিসহ বাজারে কাঠামোগত কিছু সমস্যা থাকায় এক-দুই মাসে মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণ সম্ভব নয়। অবশ্য বিশ্বব্যাংকের ঢাকা অফিসের সাবেক প্রধান অর্থনীতিবিদ জাহিদ হোসেনও বলছেন, সংকোচনমূলক মুদ্রানীতিতে ফল আসতে সময় লাগে।
অন্তর্বর্তী সরকার গঠনের ৪ মাস পরও ব্যাংক খাতে খেলাপি ঋণের সংখ্যা ক্রমাগত বেড়েছে চলেছে। সেই সঙ্গে পাল্লা দিয়ে বাড়ছে মূলধন ঘাটতি। সম্প্রতি কেন্দ্রীয় ব্যাংকের এক তথ্যে জানা গেছে, ৩০ সেপ্টেম্বর ২০২৪ পর্যন্ত ব্যাংক খাতের মোট বিতরণকৃত ঋণ ১৬ লাখ ৮২ হাজার ৮২২ কোটি টাকা। এরমধ্যে শ্রেণীভুক্ত বা খেলাপি ঋণের (নি¤œমান, সন্দেহজনক এবং মন্দ) পরিমাণ ২ লাখ ৮৪ হাজার ৯৭৭ কোটি টাকা, যা মোট বিতরণকৃত ঋণের ১৬ দশমিক ৯৩ শতাংশ।
তবে খেলাপি ঋণে বরাবরের মতোই সবার ওপরে রয়েছে রাষ্ট্রায়ত্ত ৬টি ব্যাংক। সম্মিলিতভাবে এই ব্যাংকগুলোর মোট বিতরণকৃত ঋণ ৩ লাখ ১২ হাজার ৫৫৫ কোটি টাকার বিপরীতে খেলাপি হয়েছে ১ লাখ ২৬ হাজার ১১৩ কোটি টাকা। অর্থাৎ মোট বিতরণকৃত ঋণের ৪০ দশমিক ৩৫ শতাংশ খেলাপি। এই সময়ে বেসরকারি ব্যাংকগুলোর ১২ লাখ ৬১ হাজার ২৩০ কোটি টাকার মধ্যে খেলাপির পরিমাণ ছিল ১ লাখ ৪৯ হাজার ৮০৬ কোটি টাকা বা ১১ দশমিক ৮৮ শতাংশ।
অপরদিকে বিতরণকৃত ঋণের বিপরীতে ৩০ সেপ্টেম্বর ২০২৪ পর্যন্ত ব্যাংক খাতে মোট মূলধন ঘাটতি ছিল ৫৫ হাজার ৩৭৯ কোটি টাকা। এর মধ্যে রাষ্ট্রায়ত্ত ৬ ব্যাংকের ঘাটতি ছিল ৪০ হাজার ২০৪ কোটি টাকা এবং বেসরকারি ব্যাংকগুলোর ১৫ হাজার ৮৩২ কোটি টাকা।
মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণে ব্যর্থতা, সুদহার বৃদ্ধিতে ব্যবসা সংকট, খেলাপি ঋণ বৃদ্ধি ও মূলধন ঘাটতিতে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের পদক্ষেপ কেন দৃশ্যমান হচ্ছে না- এমনটা জানতে চাওয়া হয় বাংলাদেশ ব্যাংকের মুখপাত্র ও নির্বাহী পরিচালক হোসনে আরা শিখার কাছে। তিনি জনকণ্ঠকে বলেন, অন্তর্বর্তী সরকার গঠনের পর আমরা দায়িত্ব নিয়েছি তো মাত্র কিছুদিন হলো। গত ১৫ বছরের যে অনিয়মÑ সেটা দূর করে মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণ কি এতো তাড়াতাড়ি সম্ভব? এজন্য কিছুদিন সময় দিতে হবে। ব্যাংকের গভর্নর বলেছেন, এক বছর লাগবে। আশা করি এরপর মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণে আসবে। আর মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণে এলে সুদহার এমনিতেই কমে যাবে। তখন ব্যবসায়ীরাও সুফল পাবে।
অপরদিকে মূলধন ঘাটতি ও খেলাপি ঋণ নিয়ে তিনি বলেন, আমরা এখন আন্তর্জাতিক নিয়ম মেনে তথ্য প্রকাশ করছি। তাই সঠিক অবস্থাটাই ফুটে উঠেছে। আগে তথ্য রাখঢাক করা হতো। প্রকৃত অবস্থা ফুটে ওঠার পরই সমাধানে কার্যকর পদক্ষেপ নেওয়া হবে। তাই এখন যে খেলাপি ও মূলধন ঘাটতি দেখা যাচ্ছে, তা ইতিবাচক বলেই মনে করছি।
তবে আর্থিক খাতে সরকারের এতো পদক্ষেপের পরও মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণে ব্যর্থতার কারণ হিসেবে সুদহার বৃদ্ধির ফলে ব্যবসার ব্যয় বেড়ে যাওয়া বলে মনে করেন কনজ্যুর্মাস অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (ক্যাব) সহ-সভাপতি এস এম নাজের হোসেন। তিনি জনকণ্ঠকে বলেন, সরকারের সংকোচনমূলক মুদ্রানীতির কারণে সুদের হার বাড়ানো হচ্ছে আর এ কারণে ব্যবসার ব্যয় বাড়ছে। ফলে ব্যবসার ব্যয় বেড়ে যাওয়ায় তার দায় নিতে হচ্ছে ভোক্তাদের। এরই চূড়ান্ত পরিণতি হলো মূল্যস্ফীতি।
তিনি বলেন, সরকার মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণে অনেকগুলো পণ্যের আমদানি পর্যায়ে শুল্ক কমালেও ভোক্তারা তার সুফল পাচ্ছে না। এর কারণ হলো আমদানি শুল্ক বা কর কমনো হলেও ব্যবসায়ীরা দাম কমাতে গেলে নানা অজুহাত সামনে নিয়ে আসে। অথচ বিশ্ব বাজারে কোনো পণ্যের দাম বাড়লে সে পণ্য দেশে আমদানি না হলেও ব্যবসায়ীরা দাম বাড়িয়ে দেন। ব্যবসায়ীদের এই অসাধু নিয়মের কারণে মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণ হচ্ছে না।
ক্যাব সহ-সভাপতি বলেন, সরকার ভোক্তা অধিদপ্তরের মাধ্যমে বাজার তদারকি করছেন, টিসিবির মাধ্যমে সাশ্রয়ী মূল্যে খাদ্যপণ্য বিক্রি করছেন। কিন্তু বাজার তদারকি যেভাবে হওয়া দরকার বা যে সময়টুকু দেওয়া দরকার তা সেভাবে হচ্ছে না। অনেক জায়গায় মিডিয়া ট্রায়াল হচ্ছে। এজন্য বাজার তদারকির সুফল আসছে না। আর উৎসস্থলে তদারকি করা গেলে সেখান থেকে সুফল পাওয়া কঠিন। আলু, পেঁয়াজ ও সবজির বেলায় হাতবদল, আড়তদার, কমিশন এজেন্ট নামে মধ্যস্বত্বভোগীদের তৎপরতা বন্ধ করা না গেলে, কৃষকরা সরাসরি ভোক্তা পর্যায়ে বিক্রি করতে না পারলে এবং পণ্য পরিবহনে চাঁদাবাজি বন্ধ করা না গেলে সরকারের এতসব পদক্ষেপেও সুফল পাওয়া কঠিন হবে। একই সঙ্গে কৃষকরা যেন অগ্রিম দাদন দিয়ে পণ্য বিক্রি করে না দেন সেজন্য সহজ শর্তে ঋণ বিতরণ করে তহবিলের যোগান নিশ্চিত করতে হবে।
কিন্তু নিত্যপণ্যের সরবরাহ ব্যবস্থার তথ্য উন্মুক্ত না থাকার সুযোগে এক শ্রেণির ব্যবসায়ী মূল্যস্ফীতি বাড়িয়ে চলেছে বলে মনে করেন বিশ^ব্যাংকের সাবেক প্রধান অর্থনীতিবিদ ড. জাহিদ হোসেন। তিনি জনকণ্ঠকে বলেন, এখানে শুধু খুচরা ব্যবসায়ীদের ওপর পুলিশিং করে নিয়ন্ত্রণ সম্ভব নয়। এ জন্য সাপ্লাই চেইনের যে ডেটা তা সকলের জন্য অবমুক্ত করতে হবে। আমার কোন কোন পণ্য কতটা আমদানি ও উৎপাদন হয়েছে, গুদামে কত আছে- এসব তথ্য সবাইকে জানার সুযোগ করে দিতে হবে। পাশাপাশি পুলিশিংটা যেখানে করা দরকার, যেমন চাঁদাবাজি বন্ধ করাÑ সেখানে করতে হবে। অপরদিকে খেলাপি ঋণ বৃদ্ধি ও মূলধন ঘাটতির বিষয়ে এই অর্থনীতিবিদ বলেন, আমাদের অর্থনীতিতে বর্তমানে যে সমস্যাগুলো আছে তা রাতারাতি পরিবর্তন সম্ভব নয়। এ জন্য অপেক্ষা করতে হবে, ধৈর্য্য ধরতে হবে। সমস্যা মোকাবিলায় আগে আমাদের সমস্যা কতটা গভীর সেটা জানতে হবে। এ জন্যই খেলাপি ঋণ ও মূলধন ঘাটতি বাড়ছে। আগে এসব তথ্য প্রকাশে নিয়ন্ত্রণ আরোপ করা হতো, সেটা এখন হচ্ছে না। ফলে প্রকৃত তথ্য বেরিয়ে আসছে। এতে প্রকৃত তথ্য উঠে আসলে পরিকল্পনা প্রণয়নে সহজ হবে।