ঢাকা, বাংলাদেশ   বুধবার ১৫ জানুয়ারি ২০২৫, ২ মাঘ ১৪৩১

জুলাই-আগস্টের মধ্যেই সংসদ নির্বাচন সম্ভব

আগে স্থানীয় সরকার নির্বাচনের প্রশ্নই আসে না ॥ ফখরুল

​​​​​​​স্টাফ রিপোর্টার

প্রকাশিত: ২২:৫৬, ১৪ জানুয়ারি ২০২৫

আগে স্থানীয় সরকার  নির্বাচনের প্রশ্নই  আসে না ॥ ফখরুল

বছর জুলাই-আগস্টের মধ্যেই ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠান সম্ভব, তাই ব্যাপারে উদ্যোগ নিতে অন্তর্বর্তী সরকারের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। মঙ্গলবার দুপুরে বিএনপি চেয়ারপারসনের গুলশান কার্যালয়ে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে দলের পক্ষ থেকে তিনি আহ্বান জানান। এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, সংসদ নির্বাচনের আগে স্থানীয় সরকার নির্বাচনের প্রশ্নই আসে না।

মির্জা ফখরুল বলেন, আমরা মনে করি, যেহেতু নির্বাচন কমিশন গঠন করা হয়ে গেছে এবং দেশে মোটামুটি একটা স্থিতিশীলতা এসেছে সেহেতু জাতীয় সংসদ নির্বাচন বিলম্বিত হওয়ার কারণ নেই। আর মনে হয় বুধবার সংস্কার সংক্রান্ত কমিশনের রিপোর্টও এসে যাবে। জাতীয় সংসদ নির্বাচন যত বিলম্ব হচ্ছে দেশে ততই রাজনৈতিক অর্থনৈতিক সংকট বৃদ্ধি পাচ্ছে।

ফখরুল বলেন, নির্বাচনের জন্য কতগুলো ফরমালিটিজ আছে যেমন- ভোটার তালিকা। এই ভোটার তালিকা প্রস্তুত করতে বেশিদিন লাগার কথা নয়, এক মাসের মধ্যেই যদি কেউ হালনাগাদ করতে চায় সেটা করতে পারবে। এরপর প্রিসাইডিং অফিসার নিয়োগসহ বিভিন্ন কাজ শেষ করতে দুই মাসের বেশি সময় লাগার কথা নয়। অবশ্য নির্বাচন কমিশন বলেছে, জাতীয় সংসদ নির্বাচন করার জন্য তারা প্রস্তুত। যে কোনো সময় তারা জাতীয় সংসদ নির্বাচন করার জন্য তৈরি আছে। আর তারা পরিষ্কার করে বলে দিয়েছে জাতীয় স্থানীয় এই দুইটি নির্বাচন একসঙ্গে করা সম্ভব নয়।

সোমবার রাতে অনুষ্ঠিত বিএনপির স্থায়ী কমিটির বৈঠকের সিদ্ধান্ত জানাতে মঙ্গলবার দুপুরে সংবাদ সম্মেলনে দলের মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর দলের পক্ষ থেকে জুলাই-আগস্টের মধ্যে নির্বাচন অনুষ্ঠানের আহ্বান জানানোর পাশাপাশি এজন্য সরকার, নির্বাচন কমিশন সকল রাজনৈতিক দলকে ঐকমত্যে আসার আহ্বান জানান।

ফখরুল বলেন, আমরা বারবার বলছি যে, নির্বাচিত সরকারের কোনো বিকল্প নেই। এটা গণতন্ত্রের জন্য সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। তাই আমরা মনে করি যে, বছরের মাঝামাঝি সময়ে অর্থাৎ জুলাই-আগস্টের মধ্যেই নির্বাচন সম্ভব। কারণেই আমরা সরকার, নির্বাচন কমিশন রাজনৈতিক দলগুলোর প্রতি আহ্বান জানাচ্ছি দেশের বৃহত্তর স্বার্থে বছরের মাঝামাঝি সময়ের মধ্যে নির্বাচন অনুষ্ঠানের জন্য আমরা ব্যবস্থা নিতে পারি।

ভার্চুয়ালি বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের সভাপতিত্বে সোমবার রাতে দলের স্থায়ী কমিটির বৈঠকে ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা হওয়ার কথা উল্লেখ করে মির্জা ফখরুল বলেন, নির্বাচনের বিষয়ে প্রধান উপদেষ্টার বক্তব্য ছিল বছরের শেষের দিকে অথবা পরবর্তী বছরের মাঝামাঝি সময়ে নির্বাচন হতে পারে।  বিষয়ে বিএনপির স্থায়ী কমিটিতে দীর্ঘক্ষণ আলোচনা হয়েছে। আমরা মনে করি যে, এত বিলম্বে নির্বাচন করার কোনো কারণ নেই।

বিএনপি মহাসচিব বলেন, আমরা আগে জাতীয় সংসদ নির্বাচন চাই। জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আগে স্থানীয় সরকার নির্বাচন অনুষ্ঠানের প্রশ্নই উঠে না। স্থানীয় সরকার নির্বাচনের বিষয়ে আমাদের সুস্পষ্ট সিদ্ধান্ত হচ্ছে, জাতীয় সংসদ নির্বাচনের পূর্বে স্থানীয় সরকার নির্বাচন নয়। কারণ, এখন তো দেশের পুরো ফোকাসটা জাতীয় সংসদ নির্বাচনের ওপর।

ফখরুল বলেন, নির্বাচন নিয়ে সংকটটা এই জায়গাতে যে বিগত তিনটি জাতীয় সংসদ নির্বাচন হতে পারেনি, মানুষ সেজন্য নির্বাচনের মধ্য দিয়ে গণতন্ত্রে উত্তরণের যে পথ সেটাকে তারা পূরণ করতে চায়। তাই অন্তর্বর্তী সরকারকে বুঝতে হবে স্থানীয় সরকার দেশ চালায় না, দেশ চালায় জাতীয় সংসদ। কারণ, আইন প্রণয়ন করে জাতীয় সংসদ, গণতন্ত্রের মূল বিষয়টা হচ্ছে জাতীয় সংসদ, এটা কার্যকর হলে গণতন্ত্র ফাংশনাল হয়।

বিএনপি মহাসচিব বলেন, দেশে এখন ক্রান্তিকাল চলছে। সময়ে জাতীয় সংসদ নির্বাচন ছাড়া অন্য নির্বাচন করার চিন্তাটা আসে কোত্থেকে? নির্বাচন পেছানোর চিন্তাটাই বা আসে কোত্থেকে? কারণ এটা তো অন্তর্বর্তী সরকারের প্রথম কাজ। আপনি দেশকে যদি একটা রেললাইনের ওপর তুলতে চান তাহলে নির্বাচনের কোনো বিকল্প নাই।

সংস্কার চলমান প্রক্রিয়া বলে মন্তব্য করে মির্জা ফখরুল বলেন, বিএনপিই তো সংস্কার প্রস্তাব আগে তৈরি করেছে। ২০১৬ সালে আমরা জাতির কাছেভিশন-২০৩০দিয়েছি। ২০২৩ সালে ৩১ দফা সংস্কার প্রস্তাব দিয়েছি। আমরাই তো সবচেয়ে বেশি সংস্কার করেছি। বিএনপির প্রতিষ্ঠাতা জিয়াউর রহমান ক্ষমতায় এসে দেশে একদলীয় শাসন ব্যবস্থা থেকে বহুদলীয় গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠা করেন। দেশের রাজনীতিতে এটি একটি বড় সংস্কার।

ফখরুল বলেন, বিএনপির স্থায়ী কমিটির সভায় সাইবার সুরক্ষা অধ্যাদেশ বিষয়ে বিস্তারিত আলোচনা হয়। এই আইন সম্পর্কে আরও বিস্তারিত তথ্য সংবলিত একটি সংবাদ সম্মেলনের সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়। বিষয়ে দলের স্থায়ী কমিটির সদস্য . আব্দুল মঈন খানকে প্রধান করে এবং প্রফেসর কে এম ওয়াহিদুজ্জামান ব্যারিস্টার কায়সার কামালসহ জনকে নিয়ে একটি কমিটি গঠন করা হয়। কমিটি অবিলম্বে বিষয়ে প্রতিবেদন প্রস্তুত করবে।

ফখরুল বলেন, স্থায়ী কমিটির সভায় দ্রব্যমূল্যের ক্রমাগত ঊর্ধ্বগতিতে গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করা হয়। একদিকে নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্যাদির মূল্য বৃদ্ধি, ক্রমবর্ধমান মুদ্রাস্ফীতি অন্যদিকে ভ্যাট অন্যান্য করের হার বৃদ্ধি অর্থনীতিতে নেতিবাচক প্রভাব ফেলবে বলে মনে করা হয়। বিষয়ে একটি বিস্তারিত তথ্য সংবলিত সংবাদ সম্মেলন অনুষ্ঠানের সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়। দলের স্থায়ী কমিটির সদস্য আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরীকে আহ্বায়ক বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা ইসমাইল জবিউল্লাহর সমন্বয়ে একটি কমিটি গঠন করা হয়। এই কমিটি অবিলম্বে উপরোক্ত বিষয়ে বিস্তারিত প্রতিবেদন প্রস্তুত করবেন।

এক প্রশ্নের জবাবে তিনি জানান, লন্ডন ক্লিনিকে চিকিৎসাধীন খালেদা জিয়া এখন আগের চেয়ে ভালো আছেন এবং হাঁটতে পারছেন। আরেক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, রাজনৈতিক সরকার ক্ষমতায় আসলে ফ্যাসিবাদীদের বিচার হবে না এটা ঠিক নয়। কারণ, আওয়ামী লীগ আমলে বিএনপি জামায়াতের ওপর অনেক অত্যাচার হয়েছে, অনেকের বিচার হয়েছে। তাই এবারও রাজনৈতিক সরকার এলে ফ্যাসিবাদের বিচার হবে। তাই আমরা মনে করি ফ্যাসিবাদীদের বিচার তাড়াহুড়া করে করলে গ্রহণযোগ্য হবে না।

বিএনপি মহাসচিব বলেন, ভারতের সঙ্গে আওয়ামী লীগ সরকারের করা চুক্তিগুলো জনসম্মুখে প্রকাশ করা উচিত। আর দেশের স্বার্থবিরোধী চুক্তি জনগণ মেনে নেবে না। আরও এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের ভূমিকা দেশের জন্য সম্মানজনক।

জামায়াতের সঙ্গে বিএনপির দূরত্ব আছে কি না জানতে চাইলে ফখরুল বলেন, হতেই পারে। কারণ, প্রত্যেকটি রাজনৈতিক দলের নিজস্ব চিন্তাভাবনা থাকে। জামায়াতের দৃষ্টিভঙ্গি এক আর বিএনপির দৃষ্টিভঙ্গি আরেক। তবে আমাদের সঙ্গে জামায়াতের কোনো দূরত্ব নেই। কারণ, আগেও আমরা নিজ নিজ অবস্থানে থেকে যুগপৎ আন্দোলন কর্মসূচি পালন করেছি। আর জামায়াতের সঙ্গে জাতীয় নির্বাচনের সময় নিয়েও খুব বেশি পার্থক্য নেই। তারাও বছরের মধ্যে নির্বাচন চায়, তবে আমরা চাই বছরের মাঝামাঝি নির্বাচন হোক। তবে নির্বাচনের সময় নিয়ে জামায়াতের সঙ্গে বিএনপির কোনো আলোচনা হয়নি।

ছাত্রদের ঘোষণাপত্রের বিষয়ে বিএনপির অবস্থান জানতে চাইলে মির্জা ফখরুল বলেন, উপদেষ্টা মাহফুজ আলমের কাছ থেকে আমরা ঘোষণাপত্রের খসড়া পেয়েছি। আমাদের মতামত দিতে বলেছেন। তাই আমরা বিষয়ে দলের মধ্যে আলাপ-আলোচনা করেছি, আরও আলাপ-আলোচনা করব। এখানে কিছু বিষয় আছে যা নিয়ে সংবিধান বিশেষজ্ঞদের সঙ্গে আলাপ-আলোচনা করতে হবে। তারপর আমরা বিষয়ে আমাদের মতামত দেব।

সংবাদ সম্মেলনে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য . আবদুল মঈন খান বলেন, স্থানীয় সরকারের তৃণমূল স্তর হচ্ছে ইউনিয়ন পরিষদ। সেই ইউনিয়ন পরিষদই তো সরকার বাতিল করেনি। সেটা যদি বাতিল না করে সেখানে কিভাবে স্থানীয় সরকার নির্বাচন হবে?

×