ঢাকা, বাংলাদেশ   মঙ্গলবার ১৪ জানুয়ারি ২০২৫, ১ মাঘ ১৪৩১

আক্রান্তকে সাধারণ ফ্লুর চিকিৎসা দিতে হবে ॥ ডা. সায়েদুর

এইচএমপি ভাইরাস নিয়ে আতঙ্কের কিছু নেই

স্টাফ রিপোর্টার

প্রকাশিত: ২২:৪১, ১৩ জানুয়ারি ২০২৫

এইচএমপি ভাইরাস নিয়ে আতঙ্কের কিছু নেই

.

করোনা মহামারি শুরুর পাঁচ বছর পর চীনের উত্তরাঞ্চলে হিউম্যান মেটানিউমোভাইরাস বা এইচএমপি ভাইরাস ছড়িয়ে পড়ায় বিশ্বজুড়ে নতুন করে উদ্বেগ বাড়ছে। তবে বাংলাদেশে এইচএমপি ভাইরাসের সংক্রমণ নিয়ে আতঙ্কের কিছু নেই। বাংলাদেশে এটি মহামারি আকারে ছড়িয়ে পড়ার আশঙ্কাও নেই বলে মন্তব্য করেছেন প্রধান উপদেষ্টার বিশেষ সহকারী অধ্যাপক ডা. মো. সায়েদুর রহমান।
সোমবার সচিবালয়ে নিজ দপ্তরে সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে তিনি এ কথা বলেন। এইচএমপি ভাইরাসে আক্রান্ত ব্যক্তিকে সাধারণ ভাইরাস জ্বরের চিকিৎসা দিতে হবে উল্লেখ করে তিনি বলেন, এটির চিকিৎসায় গাইডলাইন করতে একটি বিশেষজ্ঞ কমিটিও গঠন করা হচ্ছে।
তিনি বলেন, এইচএমপি ভাইরাসে সাধারণ ফ্লুর মতো চিকিৎসা চলবে। যেটিকে আমরা কমন ফ্লু বা ভাইরাল ফ্লু বলি, অনেকগুলো ভাইরাসের কারণে এটি হয়, এইচএমপি ভাইরাস তাদের একটি। বাংলাদেশে এটি ২০ বছরের বেশি সময় ধরে রয়েছে। ভাইরাল ফ্লুর ক্ষেত্রে কোনো ভাইরাস দিয়ে এটি হয়েছে তা চিহ্নিত করার কোনো রিকমেন্ডেড পদ্ধতি নেই।
ডা. মো. সায়েদুর রহমান বলেন, আমরা স্পষ্টভাবে বলতে চাই, আতঙ্কিত হওয়ার মতো কোনো পরিস্থিতি নেই। এমনকি এই ভাইরাস সম্পর্কে বিজ্ঞানের যতটুকু জানা আছে, সে অনুযায়ী এটি দিয়ে বড় ধরনের মহামারি হওয়ার ঝুঁকিও নেই। তবে যারা একটু অসুস্থ তারা একটু সাধারণ স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলবেন। এতে তাদের ঝুঁকির  পরিমাণ কমবে। সিওপিডি, কিডনি রোগ, একেবারে শিশু বা বৃদ্ধ, রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা কম, ক্যান্সারের ওষুধ সেবন করছেন- এ ধরনের রোগীরা ছাড়া অন্যদের জন্য এই ভাইরাসটি একেবারেই সাধারণ ফ্লু। যারা ঝুঁকিতে আছেন তাদের এই ফ্লু থেকে নিউমোনিয়া হওয়ার ঝুঁকি রয়েছে
তিনি আরও বলেন, যাদের এইচএমপি ভাইরাস শনাক্ত হবে তারা সাধারণ ফ্লুর চিকিৎসা নেবেন। পানি একটু বেশি পান করবেন, পুষ্টিকর খাবার খাবেন। এটি নিয়ে আতঙ্কিত হওয়ার কিছু নেই। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা, পৃথিবীর অন্য কোনো দেশ বা যেখান থেকে রোগটি এসেছে সেই চীনও কোনো সতর্কতা জারি করেনি। তবুও আমরা প্রস্তুতি নিয়েছি। আমরা কিটস সংগ্রহ করেছি। তবে এটি ওই ধরনের কোনো ঝুঁকি নেই।
সীমান্তে বিধিনিষেধ আরোপের মতো কোনো কথা ইন্টারন্যাশনাল হেলথ রেগুলেশনে বলা হয়নি উল্লেখ করে ডা. সায়েদুর বলেন, এখনো বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা এ বিষয়ে কোনো সতর্কবাণী দেয়নি। বাংলাদেশে মাত্র একজন এইচএমপি ভাইরাসে আক্রান্ত হয়েছেন জানিয়ে তিনি বলেন, তার (আক্রান্ত ব্যক্তি) বয়স ৩০ বছরের মতো। তিনি আক্রান্ত হওয়ার ২০ দিনের মাথায় আমাদের কাছে এসেছেন।।
প্রধান উপদেষ্টার বিশেষ সহকারী আরও বলেন, আমরা আজকালের মধ্যে একটি বিশেষজ্ঞ কমিটি গঠন করে দেব, যারা চিকিৎসায় গাইডলাইন ঠিক করে দেবেন। তবে প্রটোকলে (বর্তমানে ফ্লু চিকিৎসা পদ্ধতি) বড় ধরনের কোনো পরিবর্তন হবে বলে আশা করছি না। গাইডলাইন তৈরি হলে আমরা সেটি চিকিৎসকদের মধ্যে শেয়ার করব।
শাহজালালে বিশেষ নির্দেশনা ॥ চীনসহ পার্শ্ববর্তী দেশগুলোতে আতঙ্ক ছড়ানো হিউম্যান মেটানিউমো ভাইরাস (এইচএমপিভি) বাংলাদেশেও শনাক্ত হয়েছে। এ অবস্থায় ভাইরাসটি নিয়ন্ত্রণে বিশেষ নির্দেশনা জারি করেছে হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর কর্তৃপক্ষ।
সোমবার বিমানবন্দরের নির্বাহী পরিচালক কামরুল ইসলাম দেশের সব এয়ারলাইন্স ও বিমানবন্দর সংশিষ্ট সব পক্ষকে নির্দেশনার বিষয়ে চিঠি দিয়েছেন। ওই নির্দেশনায় বলা হয়, সম্প্রতি স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের রোগ নিয়ন্ত্রণ শাখার নির্দেশনা অনুযায়ী বিমানবন্দর সংশ্লিষ্ট সবাইকে এইচএমপিভির বিষয়ে সতর্কতামূলক ব্যবস্থা নিতে বলা হয়েছে। তবে বিষয়টি নিয়ে আপাতত আতঙ্কিত হওয়ার কিছু হয়নি। বিমানবন্দরের যাত্রী, স্টাফ ও দর্শনার্থীদের সবাইকে মুখে মাস্ক রাখা ও হ্যান্ড স্যানিটাইজার ব্যবহারে উৎসাহিত করা হয়েছে। যদি কারও মধ্যে জ্বর, কফ, শ্বাস ছোট হওয়ার মতো এইচএমপিভির লক্ষণ দেখা দেয় সেক্ষেত্রে তাৎক্ষণিকভাবে বিমানবন্দরের হেলথ সার্ভিসে জানাতে হবে।
দেশের বিমানবন্দরে ফ্লাইট পরিচালনাকারী দেশী ও বিদেশী এয়ারলাইন্সগুলোকে নিজ নিজ অবস্থান থেকে এবং যেসব দেশে এইচএমপিভির আক্রান্ত রোগী রয়েছে সেসব দেশ থেকে যাত্রী আনার ক্ষেত্রেও সতর্কতামূলক ব্যবস্থা নিতে হবে। প্লেনের ভেতর যদি কারোর জ্বর, কফের মতো এইচএমপিভির লক্ষণ দেখা দেয় সেক্ষেত্রে তাৎক্ষণিকভাবে বিমানবন্দরের হেলথ সার্ভিসকে জানাতে হবে। ফ্লাইটে এইচএমপিভির আক্রান্ত রোগী থাকলে তাদের কীভাবে হ্যান্ডেল করতে হবে সে বিষয়ে এয়ারলাইন্সের ক্রু ও যাত্রীদের স্বাস্থ্য সংক্রান্ত নির্দেশনাবলি জানার নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে।
এ ছাড়াও চিঠিতে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের জারি করা ৭টি নির্দেশনা মানতে বলা হয়েছে। সংক্রমণ প্রতিরোধে নির্দেশনাগুলো হলো- শীতকালীন শ্বাসতন্ত্রের রোগগুলো থেকে নিজেকে রক্ষার জন্য মাস্ক ব্যবহার, হাঁচি/কাশির সময় বাহু/টিস্যু দিয়ে নাক-মুখ ঢেকে রাখা, ব্যবহৃত টিস্যুটি অবিলম্বে ঢাকনাযুক্ত ময়লা ফেলার ঝুড়িতে ফেলুন এবং হ্যান্ড স্যানিটাইজার অথবা সাবান পানি দিয়ে হাত ধুয়ে ফেলা, আক্রান্ত হয়েছেন এমন ব্যক্তিদের সম্পন্ন এড়িয়ে  চলা এবং কমপক্ষে ৩ ফুট দূরত্ব বজায় রাখা, ঘন ঘন সাবান ও পানি কিংবা হ্যান্ড স্যানিটাইজার দিয়ে হাত ধৌত করা,  অপরিষ্কার হাতে চোখ, নাক, মুখ না ধরা,  জ্বর, কাশি এবং শ্বাসকষ্ট আক্রান্ত হলে সুস্থ না হওয়া পর্যন্ত বাড়িতে থাকা, প্রয়োজন হলে নিকটস্থ হাসপাতালে যোগাযোগ করা।

×