.
জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের (জবি) দ্বিতীয় ক্যাম্পাসের কাজ সেনাবাহিনীর কাছে হস্তান্তরসহ তিন দফা দাবি আদায়ে সোমবার সচিবালয়ের সামনের সড়ক অবরোধ করেন জবি শিক্ষার্থীরা। এ সময় নিরাপত্তার জন্য সচিবালয়ের সব গেট বন্ধ করে দেয় আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা। এতে অফিস শেষে ভোগান্তিতে পড়েন কর্মকর্তা-কর্মচারীরা। দীর্ঘক্ষণ পর সচিবালয়ের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের বের হওয়ার জন্য প্রেস ক্লাবের দিকের ৫ নম্বর গেট খুলে দেওয়া হয়। এতে আরও হুড়োহুড়ি সৃষ্টি হয় বলে কর্মকর্তারা জানান।
এদিকে সোমবার সন্ধ্যা ৭টায় জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের দ্বিতীয় ক্যাম্পাসের কাজ আগামী বুধবার সেনাবাহিনীর নিকট হস্তান্তর করা হবে বলে শিক্ষা মন্ত্রণালয় থেকে লিখিত চিঠি পাওয়ার পর অনশন প্রত্যাহার করেন আন্দোলনরত জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা। এর পাশাপাশি মন্ত্রণালয়ের সভার সিদ্ধান্ত সামনে না আসা পর্যন্ত জবি পুরোপুরি শাটডাউন থাকবে বলে আন্দোলনকারীরা জানান। এ বিষয়ে অনশনরত শিক্ষার্থী একেএম রাকিব জানান, আমাদের তিনটি দাবির মধ্যে দুটি পুরোপুরি মেনে নিয়ে লিখিত চিঠি দেওয়া হয়েছে। বাকি একটি আলোচনা সাপেক্ষে মেনে নেওয়া হবে। লিখিত চিঠি পাওয়ায় আমরা অনশন প্রত্যাহার করছি। তবে মন্ত্রণালয়ের সভার সিদ্ধান্ত সামনে না আসা পর্যন্ত আমাদের শাটডাউন কর্মসূচি চলবে।
তাদের দাবিগুলো হলো- ১. সেনাবাহিনীর কাছে দ্বিতীয় ক্যাম্পাসের কাজ হস্তান্তরের চুক্তি অনতিবিলম্বে স্বাক্ষর করতে হবে। প্রয়োজনে বিশেষ বৈঠকের মাধ্যমে তা সম্পূর্ণ করতে হবে এবং দৃশ্যমানভাবে সবার সামনে তা উপস্থাপন করতে হবে। শিক্ষার্থীরা অনশনে থাকাবস্থায় সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয় ও দপ্তর কর্তৃপক্ষের কাছ থেকে লিখিত অঙ্গীকার নিয়ে তা প্রকাশ করতে হবে। কয়েক মাস সময় নেওয়ার নাম করে কোনো প্রকার দীর্ঘসূত্রতা করা চলবে না। ২. পুরান ঢাকার বাণী ভবন ও ড. হাবিবুর রহমান হলের স্টিল বেইজড ভবনের কাজ দ্রুত শুরু এবং শেষ করতে হবে। ৩. যতদিন পর্যন্ত আবাসন ব্যবস্থা না হয়, ততদিন পর্যন্ত ৭০ শতাংশ শিক্ষার্থীর আবাসন ভাতা নিশ্চিত করতে হবে।
সোমবার বিকেল ৪টায় বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রধান ফটক থেকে পদযাত্রা শুরু করে জবির শিক্ষার্থীরা। অনশনকারী অসুস্থ শিক্ষার্থীরা রিক্সায় এবং সাধারণ শিক্ষার্থীরা হেঁটে যাত্রা করেন। বিকেল পৌনে পাঁচটার দিকে সচিবালয়ের সামনের সড়ক অবরোধ করেন তারা। এর আগে তারা তিন দফা দাবিতে গণঅনশন করে সোমবার সকালে বিশ্ববিদ্যালয়ে ‘কমপ্লিট শাটডাউন’ ঘোষণা করেন। ক্যাম্পাসের মূল ফটক, প্রশাসনিক ভবন ও বিভিন্ন অনুষদের ভবনে তালা ঝুলিয়ে দেন শিক্ষার্থীরা।
এ বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. রেজাউল করিম বলেন, আগামী বুধবার যথাযথ প্রক্রিয়া অনুযায়ী জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের দ্বিতীয় ক্যাম্পাস নির্মাণের কাজ সেনাবাহিনীর কাছে হস্তান্তর করা হবে। সোমবার বিকেল ৩টায় সচিবালয়ের মিটিং শেষে ক্যাম্পাসে উপস্থিত হয়ে সাংবাদিকদের তিনি জানান, ইউজিসি থেকে চিঠি মন্ত্রণালয়ে গেছে। আগামী বুধবার সভা নির্ধারিত হয়েছে। সভায় সংশ্লিষ্ট সবার সঙ্গে আলোচনা হবে এবং যথাযথ প্রক্রিয়ার মাধ্যমে কাজ হস্তান্তর হবে। সেনাবাহিনীকে কাজ দেওয়ার প্রসঙ্গে আমরা ইউজিসির সঙ্গে আগেই কমিটমেন্ট ছিলাম।
তিনি বলেন, শিক্ষার্থীদের আন্দোলনের ফলে আমাদের এই কার্যক্রম আরও সহজ ও ত্বরান্বিত হয়েছে। আমাদের কাজ অনেক এগিয়ে গেছে। আগামী মিটিংয়ে প্রকল্পের অবস্থাও বিশ্লেষণ করা হবে। তারপর একটা চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত হবে দ্বিতীয় ক্যাম্পাসের কাজ সেনাবাহিনীর কাছে হস্তান্তরসহ তিন দফা দাবিতে সচিবালয়ের সামনে অবস্থান নিয়েছেন জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা। সোমবার বিকেল সোয়া ৪টার দিকে ক্যাম্পাস থেকে সচিবালয়ের পথে রওনা হন শিক্ষার্থীরা। বিকেল ৫টার দিকে তারা সচিবালয়ের সামনে পৌঁছান। শিক্ষার্থীরা দাবি আদায়ে স্লোগান দিতে থাকে।
শিক্ষার্থীরা জানান, তিন দফা দাবি পূরণ না হওয়া পর্যন্ত তারা সচিবালয়ের সামনে অবস্থান করবেন। সেখানে আমরণ অনশনও শুরু করেছেন তারা। এ সময় শিক্ষার্থীরা ‘বিপ্লবে বলীয়ান, নির্ভীক জবিয়ান’, ‘অ্যাকশন টু অ্যাকশন, ডাইরেক্ট অ্যাকশন’, ‘আপস না সংগ্রাম, সংগ্রাম সংগ্রাম’, ‘লজ্জা লজ্জা, ইউজিসি ইউজিসি’, ‘অনশন চলছে চলবে’, ‘কবে দিবা ক্যাম্পাস’, ‘প্রশাসন কী করে’, ‘আমার ভাই অনশনে’সহ নানা স্লোগান দেন।
শিক্ষার্থীরা জানান, আমরা এক ঘণ্টা সময় বেঁধে দিয়েছিলাম অঙ্গীকারের লিখিত চিঠি নিয়ে আসতে। কিন্তু মন্ত্রণালয় থেকে কোনো চিঠি আসেনি। ফলে পূর্বঘোষিত আলটিমেটাম অনুযায়ী আমরা সচিবালয়মুখী হয়েছি। আমাদের দাবি না মানা পর্যন্ত আমরা রাজপথ ছাড়ছি না। অনশনরত শিক্ষার্থী রায়হান রাব্বি বলেন, ‘আমরা দাবির কথা জানিয়েছি। দাবি না মানা হলে রাজপথ ছাড়ছি না। আমাদের দাবি মেনে নেবে বলে আগামী বুধবারের মিটিংয়ে- এ মর্মে লিখিত অঙ্গীকার করতে হবে। পরে আমরা অনশন ভাঙব। স্বাক্ষর হওয়া আগ পর্যন্ত জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের সকল একাডেমিক ও প্রশাসনিক কার্যক্রম বন্ধ থাকবে।’ এর আগে সোমবার বিকেল ৩টায় ক্যাম্পাসে ব্রিফ করেন শিক্ষার্থীরা। তারা জানান, বিকেল ৪টার মধ্যে তাদের তিন দফা দাবি মেনে না নিলে সচিবালয় অভিমুখে যাত্রা শুরু করবেন। অন্যদিকে শিক্ষার্থীদের তিন দফা দাবি পূরণে করণীয় ঠিক করতে সভা ডেকেছে শিক্ষা মন্ত্রণালয়। আগামী বুধবার এ সভা হবে। সোমবার শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের উপ-সচিব আহমেদ শিবলীর সই করা নোটিসে এ সভা আহ্বান করা হয়।
জানা গেছে, রবিবার সকাল সাড়ে ৯টার দিকে জবি ক্যাম্পাসে গণঅনশন কর্মসূচি শুরু করেন শিক্ষার্থীরা। রাত ৯টা থেকে ১১টার মধ্যে ১৫ জন শিক্ষার্থী অসুস্থ হয়ে পড়েন। তাদের জবি মেডিক্যাল সেন্টারসহ রাজধানীর বিভিন্ন হাসপাতালে চিকিৎসা দেওয়া হয়। ছাত্ররা অনেকে অসুস্থ হয়ে পড়ায় কর্মসূচি চালিয়ে নিতে রাত ২টার দিকে গণঅনশনে বসেন অর্ধশতাধিক ছাত্রী। তারা সকাল পর্যন্ত সেখানে অবস্থান নেয়।
সচিবালয় আটকা পড়েন কর্মকর্তারা ॥ দ্বিতীয় ক্যাম্পাসের কাজ সেনাবাহিনীর কাছে হস্তান্তরসহ তিন দাবিতে সচিবালয়ের সামনে বিকেল ৫টার দিকে অবস্থান নিয়েছেন জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা। শিক্ষার্থীরা সচিবালয়ের সামনে আসার পরপরই সব গেট বন্ধ করে দেওয়া হয়। সচিবালয়ের কর্মকর্তা-কর্মচারীরা রবি থেকে বৃহস্পতিবার পর্যন্ত সকাল ৯টা থেকে বিকেল ৫টা পর্যন্ত অফিস করে থাকেন। অফিস শেষে কর্মকর্তা-কর্মচারীরা শুধু প্রেস ক্লাবের দিকের ৫ নম্বর গেট দিয়ে হেঁটে বের হতে দেওয়া হয়।
একসঙ্গে শত শত কর্মকর্তা-কর্মচারী বের হতে চাইলে ওই গেটের সামনে ভিড় জমে হয়ে যায়। গাড়ি বের হওয়ার ১ ও ২ নম্বর গেট বন্ধ থাকায় কোনো গাড়ি সচিবালয় থেকে বের হতে পারেনি। সন্ধ্যা পৌনে ৬টার দিকে সচিবালয়ের ভেতরের চত্বরে গাড়িগুলোকে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখা গেছে। এক নম্বর বা মূল গেটের সামনে সচিবালয়ের ভেতরে অনেক গাড়ি বাইরে বের হওয়ার জন্য অপেক্ষা করতে দেখা গেছে। সন্ধ্যা ৭টার পরে শিক্ষার্থীরা চলে গেলে গেট খুলে দেয় বলে কর্মকর্তারা জানান।