.
লন্ডন ক্লিনিকের বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকদের তত্ত্বাবধানে মাত্র এক সপ্তাহের চিকিৎসায় বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়ার শারীরিক অবস্থার উন্নতি হয়েছে। ছেলে তারেক রহমানের বাসায় রান্না করা খাবার তৃপ্তিসহকারে খেতে পারছেন। অন্যের সাহায্য ছাড়া হাঁটতে পারছেন। তারেক রহমান ছাড়াও দুই পুত্রবধূ ও নাতনিদের সঙ্গে হাসিমুখে কথা বলতে পারছেন। তাই তিনি এখন শারীরিক ও মানসিকভাবে আগের চেয়ে ভালো আছেন। চিকিৎসা শেষে ছেলের বাসায় কিছুদিন বিশ্রাম নিয়ে মার্চ মাসের মাঝামাঝি তিনি দেশে ফিরে আসবেন বলে সংশ্লিষ্ট সূত্র জানিয়েছে।
উন্নত চিকিৎসার জন্য কাতারের আমিরের পাঠানো বিশেষ এয়ার অ্যাম্বুলেন্সে ৭ জানুয়ারি রাতে ঢাকা থেকে রওনা দিয়ে ৮ জানুয়ারি স্থানীয় সময় বিকেল ৩টায় লন্ডন পৌঁছেন খালেদা জিয়া। হিথ্রো বিমানবন্দর থেকে সরাসরি তাকে লন্ডন ক্লিনিকে নিয়ে ভর্তি করা হয়। ওইদিন থেকেই স্বনামধন্য লিভার
বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক অধ্যাপক জন প্যাট্রিক কেনেডির অধীনে তার চিকিৎসা শুরু হয়। জরুরি ভিত্তিতে প্রয়োজনীয় কিছু পরীক্ষা-নিরীক্ষার পর প্রাথমিক চিকিৎসা শুরু হলেও পর্যায়ক্রমে আরও কিছু পরীক্ষা করে চিকিৎসা ব্যবস্থায় পরিবর্তন আনা হয়। মাত্র এক সপ্তাহের চিকিৎসাতেই খালেদা জিয়ার শারীরিক অবস্থা আগের চেয়ে উন্নতি হয়েছে বলে সূত্র জানায়।
খালেদা জিয়ার ব্যক্তিগত চিকিৎসক ও বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য অধ্যাপক ডা. এ জেড এম জাহিদ হোসেন জানান, লন্ডন ক্লিনিকে বেশকিছু পরীক্ষা-নিরীক্ষার পর তার চিকিৎসা চলছে। লন্ডনের বিখ্যাত চিকিৎসক অধ্যাপক জন প্যাট্রিক কেনেডি তার চিকিৎসার বিষয়টি তদারকি করছেন। কয়েকদিনের চিকিৎসার পর তার শারীরিক ও মানসিক অবস্থা আগের চেয়ে ভালো। তাকে নিয়মিত নেফ্রোলজিস্ট, কার্ডিওলজিস্ট ও ইনটেনসিভিস্ট চিকিৎসকরা দেখেছেন। এছাড়া তাকে নিয়মিত ফিজিওথেরাপি দেওয়া হচ্ছে।
লন্ডন ক্লিনিকে খালেদা জিয়া স্বজনদের সঙ্গে খুশি মনে কুশল বিনিময় করছেন। বিশেষ করে বাসায় রান্না করা খাবার নিয়ে প্রতিদিনই ছেলে তারেক রহমান, পুত্রবধূ ডা. জোবাইদা রহমান, নাতনি ব্যারিস্টার জাইমা রহমান, প্রয়াত ছোট ছেলে আরাফাত রহমান কোকোর স্ত্রী শর্মিলা রহমান, তার দুই মেয়ে জাসিয়া রহমান ও জাহিয়া রহমান হাসপাতালে গেলে তাদের সঙ্গে খোশগল্প করে সময় কাটান খালেদা জিয়া। আর বাসায় রান্না করা পছন্দের খাবার প্রতিদিনই ছেলে তারেক রহমান হাসপাতালে নিয়ে যান। পছন্দের খাবার খেতে পেরে তিনি তৃপ্তি পান। এ ছাড়া খালেদা জিয়ার সফরসঙ্গী চিকিৎসক, বিএনপি নেতা ও ব্যক্তিগত কর্মকর্তাদের কাছ খেকে নিয়মিত দেশের খোঁজ-খবরও নেন খালেদা জিয়া। তিনি এখন মানসিকভাবে উৎফুল্ল রয়েছেন।
৭৯ বছর বয়সী সাবেক প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়া লিভার সিরোসিস, হৃদরোগ, ফুসফুস, আর্থ্রাইটিস, কিডনি, ডায়াবেটিস, চোখের সমস্যাসহ বিভিন্ন জটিল রোগে ভুগছেন। রাজধানীর এভারকেয়ার হাসপাতালে বিভিন্ন সময়ে বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকদের সমন্বয়ে মেডিক্যাল বোর্ডের পরামর্শে তাকে দীর্ঘদিন চিকিৎসা নিতে হয়েছে। এভারকেয়ার হাসপাতালের হৃদরোগ বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক অধ্যাপক শাহাবুদ্দিন তালুকদারের নেতৃত্বে গঠিত খালেদা জিয়ার মেডিক্যাল বোর্ডের টিমে দেশের বেশ কয়েকজন বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক ছাড়াও লন্ডন থেকে দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের স্ত্রী কার্ডিওলস্টি ডা. জোবাইদা রহমান এবং যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য ও অস্ট্রেলিয়ার কয়েকজন চিকিৎসকও ছিলেন। লন্ডন ক্লিনিকে ভর্তির পর তার চিকিৎসার জন্য আবারও একটি মেডিক্যাল বোর্ড গঠন করা হয়েছে।
উল্লেখ্য, ২০১৮ সালের ৮ ফেব্রুয়ারি জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট-সংক্রান্ত মামলায় কারাগারে যান খালেদা জিয়া। সেখানে গুরুতর অসুস্থ হয়ে পড়লে একপর্যায়ে তাকে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান চিকিৎসা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রিজন সেলে নিয়ে চিকিৎসার ব্যবস্থা করা হয়। সেখানে থাকা অবস্থায় ২০২০ সালের ২৫ মার্চ কারাবন্দি খালেদা জিয়ার সাময়িক মুক্তির পর গুলশানের বাসা ফিরোজায় অবস্থানকালে গুরুতর অসুস্থ হয়ে পড়লে পরিবারের সদস্যরা তাকে বিদেশে নিয়ে উন্নত চিকিৎসার জন্য বেশ কয়েকবার আবেদন করলেও আওয়ামী লীগ সরকার সে সুযোগ দেয়নি। তবে বর্তমান অন্তর্বর্তীকালীন সরকার তাকে চিকিৎসার জন্য বিদেশে যাওয়ার বিষয়ে সহযোগিতা করে।
২০২১ সালে করোনায় আক্রান্ত হওয়ার পর থেকে বেশ কয়েকবার এভারকেয়ার হাসপাতালে চিকিৎসা নেন খালেদা জিয়া। করোনাক্রান্ত হয়ে ওই বছর ১৫ এপ্রিল এক ঘণ্টার জন্য খালেদা জিয়াকে এভারকেয়ার হাসপাতালে নিয়ে সিটিস্ক্যান করোনা হয়। রিপোর্ট ভালো আসায় ওইদিন তাকে হাসপাতালে ভর্তি করা হয়নি। ২৭ এপ্রিল খালেদা জিয়াকে আবারও এভারকেয়ার হাসপাতালে নিয়ে সিটিস্ক্যানসহ বিভিন্ন পরীক্ষা করা হয়। পরীক্ষার রিপোর্ট ভালো না আসায় ওইদিনই তাকে ভর্তি করা হয় হাসপাতালে। ৫৪ দিন পর খালেদা জিয়াকে হাসপাতাল থেকে গুলশানের বাসায় নিয়ে যাওয়া হয় ১৯ জুন। এরপর বিভিন্ন দফায় তিনি অসুস্থ হওয়ার পর হাসপাতালে চিকিৎসা নেন।