ঢাকা, বাংলাদেশ   সোমবার ১৩ জানুয়ারি ২০২৫, ৩০ পৌষ ১৪৩১

রাখাইনে ঘোলাটে অবস্থা, অন্ধকারে বাংলাদেশও

প্রকাশিত: ০৩:১৫, ১৩ জানুয়ারি ২০২৫

রাখাইনে ঘোলাটে অবস্থা, অন্ধকারে বাংলাদেশও

ছবি : সংগৃহীত

আরো জটিল হয়ে উঠেছে বাংলাদেশ সীমান্তে থাকা মিয়ানমারের রাখাইন পরিস্থিতি। সেখানকার পরিস্থিতি এতটাই ঘোলাটে যে অন্ধকারে আছে প্রতিবেশী বাংলাদেশও। সীমান্ত পুরোপুরি আরাকান আর্মির নিয়ন্ত্রণে থাকলেও রাখাইনের আশা এখনো ছাড়েনি মিয়ানমার সরকার। ফলে কার সাথে যোগাযোগ রাখা হবে তা নিয়ে তৈরি হয়েছে ধোঁয়াশা। বাংলাদেশ সীমান্তে নতুন স্বাধীন দেশ হলে এর সমীকরণ কি হবে তা নিয়ে চলছে চুলচেরা বিশ্লেষণ।

বহু বছর ধরেই স্বাধীন রাখাইনের দাবিতে লড়াই চালিয়ে আসছে রাজ্যটির সশস্ত্র বিদ্রোহী গোষ্ঠী আরাকান আর্মি। দুই সপ্তাহ আগে রাখাইনের নিয়ন্ত্রণ নেয়ার ঘোষণা দেয় দলটি। বর্তমানে রাজ্যটির ১৭ টি টাউনশিপের ১৪ টির নিয়ন্ত্রণ রয়েছে আরাকান আর্মির হাতে। পতন ঘটেছে অঞ্চলটিতে থাকা সেনাবাহিনীর ঘাটির। এর ফলে বাংলাদেশের সাথে থাকা ২৭০ কি. মি. সীমান্তের পুরনো দখলে নেয় সশস্ত্র বিদ্রোহী গোষ্ঠীটি।

এমন পরিস্থিতিতে বাংলাদেশ সীমান্তে আশ্রয় নিতে শুরু করে রোহিঙ্গাদের ঢল। তবে সীমান্তরক্ষী বাহিনীর তৎপরতায় নতুন করে রোহিঙ্গা অনুপ্রবেশ ঘটেনি। এমন পরিস্থিতিতে বাংলাদেশের পাশেই আরাকান আর্মি নতুন রাষ্ট্রের ঘোষণা দিতে যাচ্ছে। এমন তথ্য উঠে আসতে থাকে আন্তর্জাতিক গণমাধ্যমগুলোতে। আরাকান আর্মির সাথে আলোচনা করে রোহিঙ্গা সমস্যার সমাধানের তাগিদ দিতে শুরু করেন বিশ্লেষকরাও।

তবে পরিস্থিতি আরো ঘোলাটে হয়ে উঠেছে মিয়ানমারের জানতা বাহিনীর তৎপরতায়। সব হারিয়ে এখন নতুন উদ্যমে রাখাইনে হামলা শুরু করেছে বাহিনীটি। বিমান হামলায় মাটির সাথে মিশিয়ে দেয়া হচ্ছে শত শত ঘরবাড়ি।

আন্তর্জাতিক গণমাধ্যমগুলো বলছে, সম্প্রতি জানতা সরকারের হামলায় রাখাইনের মুসলিম অধ্যূষিত রামরি টাউনশিপে ৫০০ ঘরবাড়ি ধ্বংস হয়ে গেছে। আরাকান আর্মির নিয়ন্ত্রণে থাকা এই টাউনশিপ নারী শিশুসহ ৪০ জনের মৃত্যু হয়েছে। তাদের প্রায় সবাই মুসলিম।

কয়েক বছর ধরেই গৃহযুদ্ধে উত্তাল মিয়ানমার। রাখাইনের পর পতনের মুখে রয়েছে দেশটির কারেন, কাচিনের মত রাজ্যগুলো। রাখাইন দখলের পর জানতা সরকারের সাথে শান্তি আলোচনার জন্য প্রস্তুত বলে জানিয়েছিল আরাকান আর্মি।

তবে সেসব নাকচ করে দিয়ে সন্ত্রাসীদের দমনের ঘোষণা দিয়ে পূর্ণ শক্তি নিয়ে হামলা শুরু করেছে সরকার। সীমান্তসহ ১৪ টি টাউনশিপের দখল ধরে রাখলেও রাখাইনের রাজধানী সিত্তে রয়েছে সেনাবাহিনীর দখলে। রাজ্য পরিচালনার জন্য প্রয়োজনীয় সম্পদ বা আন্তর্জাতিক সহায়তা কোনটাই পাচ্ছে না আরাকান আর্মি। রোহিঙ্গাসহ রাজ্যের বাসিন্দাদের নিরাপত্তার দায়ও নিচ্ছে না দলটি।

উল্টো বাংলাদেশ ও ভারত থেকে চোড়াই পথে পাচার হওয়া সামগ্রীর উপরেই তাদের জীবন ঝুলে আছে বলে জানাচ্ছে অনেক গণমাধ্যম। এমন পরিস্থিতিতে চরম অনিশ্চয়তায় পড়েছেন থাকা আরো প্রায় ৬ লাখ রোহিঙ্গা।

আরাকান আর্মি ও জানতা সরকারের কেউই এই গোষ্ঠীর দায় নিতে স্বীকৃতি না জানানোয় মিয়ানমার ছাড়ার প্রাণপন চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন এসব রোহিঙ্গা। নদীপথে অনিশ্চিত ও ভয়াল যাত্রায় মিয়ানমার থেকে অন্য দেশগুলোতে পাড়ি জমানোর চেষ্টা করছেন তারা। তবে আঞ্চলিক দেশগুলোর নিরাপত্তা ইস্যুতে তাদের দরজা বন্ধ করছে রোহিঙ্গাদের জন্য।

সম্প্রতি মালয়েশিয়া, ইন্দোনেশিয়া, থাইল্যান্ডের জলপথে ধরা পড়ছে রোহিঙ্গা নৌকা। তবে তাদের আবারো ফেরত পাঠাচ্ছে দেশগুলো।

মো. মহিউদ্দিন

×