প্রকাশকদের দশ দফা দাবি
এবারের একুশে বইমেলায় দীর্ঘদিন ধরে মেলায় অংশগ্রহণকারী ১৫টি প্রকাশনা সংস্থার প্যাভিলিয়ন বরাদ্দ বাতিল করেছে মেলার আয়োজক বাংলা একাডেমি। পাশাপাশি তিনটি প্রকাশনীর প্যাভিলিয়নের আকার ছোট করেছে বইমেলা পরিচালনা কমিটি। এসব প্রকাশনীর প্রকাশকরা অবনমনের শিকার হয়েছে অভিযোগ করে সুবিচারের প্রত্যাশায় দশ দফা দাবি জানিয়ে বাংলা একাডেমির মহাপরিচালক অধ্যাপক মোহাম্মদ আজমের কাছে চিঠি দিয়েছেন।
সুবিচার প্রত্যাশী প্রকাশকবৃন্দ ব্যানারে রবিবার এই চিঠি দেওয়া হয়। এ সময় উপস্থিত ছিলেন সময় আগামী প্রকাশনীর প্রকাশক ওসমান গনি, সময় প্রকাশনের ফরিদ আহমেদ, অন্যপ্রকাশের মাজহারুল ইসলাম, অনুপম প্রকাশনীর মিলন নাথ, অন্বেষা প্রকাশনীর শাহাদাত হোসেন, শ্যামল পালসহ অবনমনের স্বীকার হওয়া বেশ কয়েকজন প্রকাশক।
এ বিষয়ে বইমেলা পরিচালনা কমিটির সদস্য সচিব ড. সরকার আমিন জনকণ্ঠকে বলেন, আমরা প্রকাশকদের দশ দফা দাবির চিঠি পেয়েছি। মেলা পরিচালনা পর্ষদ কমিটিতে তাদের দাবিনামা পাঠানো হবে। মেলা পরিচালনা কমিটির পরবর্তী বৈঠকে এ বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে।
এ বিষয়ে সময় প্রকাশনের ফরিদ আহমেদ জনকণ্ঠকে বলেন, কোনো তথ্য-প্রমাণ এবং কারণ দর্শানো ছাড়াই আমাদের কিছু প্রকাশকের বিরুদ্ধে একটি মিথ্যা প্রচারণা চালানো হয়েছে। বিগত সরকারের দোসর হিসেবে আখ্যা দেওয়া হয়েছে। অথচ মেলার আয়োজক বাংলা একাডেমির পক্ষ থেকে এ ধরনের অভিযোগ তোলা হয়নি।
আর যেসব প্রকাশক এমন অভিযোগ করেছেন তাদের অনেকেই মেলা পরিচালনা কমিটির সদস্য হিসেবে আমাদের প্যাভিলিয়ন বরাদ্দ বাতিল থেকে প্যাভিলিয়নের আকার ছোট করার মতো সিদ্ধান্ত দিচ্ছেন। তারা উদ্দেশ্যপ্রণোদিতভাবে স্বৈরাচারের দোসর ট্যাগ লাগিয়ে আমাদের ব্যবসায়িক ক্ষতির পাশাপাশি জীবনের নিরাপত্তাকে হুমকির মুখে ফেলছে। এই বাস্তবতায় আমরা বাংলা একাডেমির মহাপরিচালকের কাছে দশ দফা দাবিযুক্ত চিঠি দিয়ে সুবিচার প্রত্যাশা করছি।
বাংলা একাডেমির মহাপরিচালককে অবনমনের স্বীকার হওয়া প্রকাশকদের দেওয়া ওই চিঠিতে বলা হয়, এবারের মেলায় প্যাভিলিয়ন/স্টল বরাদ্দের ক্ষেত্রে বেশ কয়েকটি প্রকাশনা প্রতিষ্ঠানের অবস্থানকে পূর্ববর্তী বছরগুলোর চেয়ে অবনমন করা হয়েছে। এ বিষয়ে একাডেমি কর্তৃপক্ষ কোনো ব্যাখ্যা দেয়নি। অবনমনের শিকার প্রকাশকদের কোনো রকম কারণ দর্শানোও হয়নি।
সকল নীতিমালা অনুসরণ করে আবেদন করার পর যদি কোনো প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে কোনো ব্যবস্থা গ্র্রহণ করতে হয়, তবে অবশ্যই ওই প্রতিষ্ঠানকে কারণ দর্শানো নোটিস দেওয়া প্রয়োজন, এ বিষয়ে তার বক্তব্য শোনাটা সঙ্গত। কিন্তু এক্ষেত্রে ওইসব প্রতিষ্ঠানকে কোনো কিছুই অবহিত করা হয়নি। আমরা এর প্রতিবাদ জানিয়ে সুবিচার প্রত্যাশা করছি।
বইমেলাকে ‘সকল অপরাজনীতি এবং বৈষম্যের ঊর্ধ্বে’ রাখার আহ্বান জানিয়ে দশ দফা দাবিনামায় বলা হয়, প্যাভিলিয়ন/স্টল অবনমনকৃত প্রকাশনা প্রতিষ্ঠানগুলোর বরাদ্দ পূর্ববর্তী বছরগুলোর পর্যায়ে পুনর্বহাল করা। যদি কোনো প্রকাশকের বিরুদ্ধে সুনির্দিষ্ট অভিযোগ থাকে, তাহলে তাকে আত্মপক্ষ সমর্থনের সুযোগ দেওয়া, তারপর যৌক্তিক সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা।
অনিবন্ধিত সংগঠনগুলোর প্রতিনিধিদের বইমেলা পরিচালনা কমিটি থেকে বাদ দেওয়া। যেসব প্রকাশক উদ্দেশ্যপ্রণোদিতভাবে কিছুসংখ্যক প্র্রকাশকের বিরুদ্ধে ‘বিগত সরকারের দোসর এবং সুবিধাভোগী’র অভিযোগ উত্থাপন করেছে, অভিযোগের পক্ষে প্রমাণ দাখিলে তাদের বাধ্য করা।
অভিযোগ যাচাইয়ের জন্য নিরপেক্ষ একটি কমিটি গঠন। যেসব প্রতিষ্ঠানের স্থান বরাদ্দ বৃদ্ধি করা হয়েছে তা নিরপেক্ষ কমিটির মাধ্যমে যাচাই করা। বইমেলা প্রাঙ্গণে ‘অন্যায়ভাবে অভিযুক্ত’ প্রকাশনা প্রতিষ্ঠানগুলোর মাল ও জানের নিরাপত্তার নিশ্চিতে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা। বইমেলার প্যাভিলিয়ন/স্টল ভাড়া দেওয়ার শেষ সময়ের অন্তত একদিন আগে বঞ্চিত প্রকাশকদের আগের বরাদ্দ বহাল করে নোটিস দেওয়া।