বিচারপতি তোমার বিচার করবে যারা আজ জেগেছে সেই জনতা। বিগত ১৫ বছরে আমরা শুধু বিচারপতি মানিকদেরকেই চিনি।আজ এমন একজন এমন একজন বিচারক নিয়ে অনুসন্ধান করা হয়েছে, যার মাথায় অস্ত্র ঠেকিয়েও অন্যায়ের রায় দেওয়া যায় নি।আইনকে সমুন্নত রাখতে তিনি হারিয়েছেন স্ত্রী সন্তান এমনকি পুরো সংসার।
সম্প্রতি বেসরকারী একুশে টেলিভিশনের অনুসন্ধানে এমনই তথ্য বেরিয়ে এসেছে।অনুসন্ধানে সহায়তা করেছেন প্রবাসী সাংবাদিক ইলিয়াস হোসেন।
১৫ই নভেম্বর ২০১৩,তৎকালীন বিচারক মোতাহার হোসেনের তাঁর ব্যক্তিগত গাড়িতে চড়ে গ্রীন রোড থেকে ধানমন্ডির দিকে যাচ্ছিলেন। গন্তব্য তাঁর আরেক সহকর্মী আশীষ রঞ্জনের ধানমন্ডির বাসা।
যাওয়ার পথে মোতাহের হোসেনের গাড়িটিকে অনুসরণ করতে থাকে সন্দেহজনক দুটি গাড়ি। এভাবে পুরো রাস্তায় তাঁর গাড়ির পেছনে ছুটেছে গাড়ি দুটো।
ধানমন্ডির বাড়িতে পৌঁছানোর পরপরই তৎকালীন আইন সচিব শেখ মোঃ জহিরুল হক দুলাল এবং ঢাকার আদালতের ম্যাজিস্ট্রেট বিকাশ কুমার শাহাসহ বেশ কয়েকজন ডিজিএফআই এর কর্মকর্তারা পুরো বাড়িটি ঘিরে ফেলেন। এরপর গাড়ি থেকে তিনজন বের হয়ে বিচারক মোতাহারের সামনে এসে দাঁড়ান।
সিসিটিভি ক্যামেরা ফুটেজে দেখা যায়, বাড়িতে ঢোকার মুহূর্তে দুলাল বারবার পিস্তল বের করে সেটা সবাইকে দেখাচ্ছিলেন যেন সবার মধ্যে একটি ভীতিকর পরিস্থিতি তৈরি হয়। এরপর আশীষ রঞ্জনের বাসার ভেতরে পিস্তল মাথায় ধরে ঘণ্টাব্যাপী বিচারক মোতাহের হোসেনের বিচার করেছে, অস্ত্রধারী বিকাশ আর দুলাল। সেই ঘরের ভেতরে যা ঘটেছে সেই দৃশ্য ক্যামেরায় ধরা না পড়লে এখনো মনে রেখেছেন বিচারক মোতাহের হোসেন।
এ বিষয়ে,ব্যারিস্টার এ. কে. এম. ফখরুল ইসলাম বলেন, নিচে বসে সে (দুলাল) একটা পিস্তল বের করে উপরেে উঠেছে এবং পিস্তলটা সে নিজেই তার কোমরে গুঁজে নিচ্ছে গাড়িতে ওঠার আগে। যে দৃশ্য আমাদের এখানকার সিসি ক্যামেরায় প্রেমবন্দী হয়েছে। সে সময় এ ফ্ল্যাটটাই, এ ফ্ল্যাটটা হল ১০৪ ।
উকিল-মুক্তার, জজ, ব্যারিস্টার বিহীন সে আদালতে মোতাহার ছিলেন আসামি আর পিস্তল হাতে দুলাল বিকাশ ছিলেন বিচারক।উকিল ব্যারিস্টার বিহীন সে আদালতে দেওয়া হয়েছিল অদ্ভুত দুটি রায়।
আদালতে মোতাহার ছিলেন আসামি এবং পিস্তল হাতে বিকাশ ছিলেন বিচারক। পিস্তলধারী বিচারকদের সেই আদালত বিকাশ কুমার কুমার সাহাকে দেয়া হয়েছিল অদ্ভুত দুটি রায়।
রায়ের প্রথমটি তারেক রহমানের বিরুদ্ধে অপরটি খোদ ওই মামলার বিচারক মোতাহ্রার হোসেনের বিরুদ্ধে দেওয়া হয়েছিল। এর আগে থেকেই মোতাহার হোসেনকে তৎকালীন প্রধান বিচারপতি এবিএম খাইরুল হকসহ বিভিন্ন জায়গা নিয়ে নানা ধরনের প্রলোভনসহ হুমকি দেওয়া হয়েছিল ।
এ বিষয়ে বিচারক মোতাহার হোসেন বলেন, তারপর নানা ধরনের প্রলোভনের পাশাপাশি তাঁকে হুমকিও দেয়া হয়েছিল। আইন সচিব দুলাল এবং চীফ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট বিকাশ সাহা আশীষ স্যারের বাসায় ঢুকলো। ঢুকে তাদের পকেট থেকে পিস্তল বের করল। এই পিস্তল বের করে গুলি লোড করতেছে আর আমাকে বুকের সঙ্গে পিস্তল ঘুরিয়ে ঘুরিয়ে বলতেছে, যদি আপনি এই মামলায় তারেক রহমানকে পানিশমেন্ট না দেন; আপনার বুক কিন্তু ঝাঝরা করে দেবো।
তিনি আরো বলেন, এই একটা পিস্তল দিয়ে একবার ট্রিগার টিপলে আর দশটা গুলি বের হয়ে যাবে। আপনি কিন্তু কোনক্রমে রেহাই পাবেন না।
প্রতিবাদের কথা উল্লেখ করে মোতাহের হোসেন আরো বলেন, আইন সচিব দুলালের এই সমস্ত কার্যক্রম দেখে তাৎক্ষণিকভাবে প্রতিবাদ করে আমি বললাম তারেক রহমানের মামলাগুলোর কোন স্বাক্ষ্য প্রমাণ নেই। কিভাবে আপনি আমাকে এই মামলার শাস্তি দেওয়ার জন্য চাপ দিচ্ছেন? এটা তো হতে পারে না আমি তো একজন বিচারক।
(প্রথম পর্ব)
ফুয়াদ