প্রকৃত সেবা দিতে ব্যর্থ সড়ক পরিবহন কর্তৃপক্ষ (বিআরটিএ)
প্রকৃত সেবা দিতে ব্যর্থ সড়ক পরিবহন কর্তৃপক্ষ (বিআরটিএ) কার্যক্রম বন্ধ করে দেওয়া হবে বলে জানিয়েছেন বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ, সড়ক পরিবহন ও সেতু এবং রেলপথ মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা মুহাম্মদ ফাওজুল কবির খান। তিনি বলেন, ‘বিআরটিএ’র সেবার মান উন্নতির জন্য এক মাস সময় বেঁধে দেওয়ার পরও কিছুটা উন্নয়ন ঘটলেও তা কাক্সিক্ষত পর্যায়ে পৌঁছায়নি।
এবার দ্রুত সেবার উন্নতি না করতে পারলে সংস্থাটিকে বন্ধ করে দেওয়ার মতো কঠোর সিদ্ধান্ত নেওয়ার হুঁশিয়ারি দেওয়া হয়েছে।’ শনিবার রাজধানীর বনানীতে বিআরটিএ’র প্রধান কার্যালয় পরিদর্শন ও রোড সেফটি বিষয়ক এক মতবিনিময় সভা শেষে সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে তিনি এ কথা বলেন।
এর আগে গত ১৯ডিসেম্বর রাজধানীর বিদ্যুৎ ভবনে এক সভায় এক মাসের মধ্যে বিআরটিএকে সেবার মান উন্নয়নে একমাস সময় বেঁধে দিয়েছিলেন সড়ক উপদেষ্টা। সেই সময়সীমা শেষের দিকে হওয়ায় সংস্থাটির কী উন্নয়ন হয়েছে, তা উপদেষ্টার কাছে জানতে চান সাংবাদিকরা। এর জবাবে সড়ক উপদেষ্টা বলেন, ‘বিআরটিএকে এক মাসের সময় দেওয়া হয়েছিল। গ্রহণযোগ্যভাবে উন্নতি না হলেও কিছুটা উন্নতি হয়েছে।
বিআরটিএ’র কর্মকর্তাদের স্পষ্টভাবে বলে দেওয়া হয়েছে। তারা যে আচরণ করছে সেটা গ্রহণযোগ্য নয়। তাদের এটাও বলেছি, সরকারি বিভিন্ন দপ্তর বিলুপ্ত হয়ে গেছে। বিআরটিএ-এর কাজের যদি উন্নতি না হয়, তাহলে আমরা বিআরটিএ বন্ধ করে দেওয়ার কথা চিন্তা করব। আমরা বিআরটিএ কে প্রতিনিয়ত মনিটরিংয়ের মধ্যে রাখব।’
সড়ক দুর্ঘটনা ১২ শতাংশ বৃদ্ধি ॥ সভায় সড়ক দুর্ঘটনা বৃদ্ধির বিষয়ে উপদেষ্টা জানান, সম্প্রতি রোড সেফটি ফাউন্ডেশন আমাদের সড়ক দুর্ঘটনা বিষয়ে তথ্যউপাত্য দিয়েছে। ২০২৪ সালে সারাদেশে ৭ হাজার ২৯৪ জন প্রাণ হারিয়েছে, আহত হয়েছে ১২ হাজারের বেশি। যা ২০২৩ সাল থেকে ১২ শতাংশ বেশি। আমরা অন্তর্বর্তীকালীন সরকার হিসেবে দায়িত্বগ্রহণ করার পর সড়ক দুর্ঘটনা কমাতে পারিনি। এর জন্য দায় নিচ্ছি আমরা।
এ সময় জীবনের কোনো মূল্য হয় না মন্তব্য করে মুহাম্মদ ফাওজুল কবির খান বলেন, ‘অপরাধ স্বীকারের অংশ হিসেবে সড়ক দুর্ঘটনায় নিহত ও আহতদের আইন অনুযায়ী ক্ষতিপূরণ দিতে বিআরটিএসহ সংশ্লিষ্ট সবাইকে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।
ভবিষ্যতে সড়ক দুর্ঘটনা কমানোর জন্য বিআরটিএ’র কর্মকর্তাদের পরিষ্কার বলে দেওয়া হয়েছে- গাড়ির ফিটনেস সনদ ও চালকের লাইসেন্স না থাকার জন্য দুর্ঘটনা ঘটলে তাদের সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাকে সরাসরি দায়ী করা হবে। যে মৃত্যুর দায়িত্ব তাদের ওপর আসবে এবং তাদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া হবে। একইভাবে সড়কের কারণে বা পুলিশের গাফিলতির কারণে কোনো দুর্ঘটনা ঘটলে সংশ্লিষ্টদের দায় নিতে হবে।
ড্রাইভিং লাইসেন্স প্রক্রিয়া সহজ করার উদ্যোগ ॥ সভায় সড়ক ও সেতু উপদেষ্টা জানান, ড্রাইভিং লাইসেন্স ও গাড়ির ফিটনেস ইস্যুর প্রক্রিয়া অনেক জটিল। তাই এখন থেকে লাইসেন্স দেওয়ার ব্যবস্থাটা আরও সহজ করা হবে এবং কার্যকর করা হবে। এর জন্য আমরা প্রথমেই চালকদের প্রশিক্ষণের ওপর জোর দিয়েছি। আমরা চালকদের প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করব। প্রয়োজনে বেসরকারি সংস্থার মাধ্যমে চালকদের প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
সড়ক উপদেষ্টা বলেন, ড্রাইভিং লাইসেন্স ও ফিটনেস সার্টিফিকেট নবায়ন করার ক্ষেত্রে বিআরটিএ পক্ষ থেকে মেসেজ দেবে। তখন সেখানে জানিয়ে দেওয়া হবে কত সময়ের মধ্যে লাইসেন্স ও ফিটনেস রিনিউ করতে হবে। যদি ওই সময়ের মধ্যে লাইসেন্স রিনিউ না করা হয়, তাহলে সেটি বাতিল হয়ে যাবে। সড়ক দুর্ঘটনা কমাতে এবং ড্রাইভিং লাইসেন্স ও গাড়ির ফিটনেসের বিষয়ে কি কি করতে হবে, কে করবে, কিভাবে করবে, কত দিনের মধ্যে করবে, সেটি করতে কি কি প্রয়োজন হবে সেটার একটি মেট্রিক্স আমরা দাঁড় করিয়েছি। সেটা আমরা মনিটরিং করব।
সাড়ে ৪ লাখ ড্রাইভিং লাইসেন্স আটকে আছে ॥ বর্তমানে বিআরটিএ’তে সাড়ে ৪ লাখ ড্রাইভিং লাইসেন্স আটকে আছে। যা আগামী মার্চের মধ্যে শেষ করার নির্দেশনা দেন সড়ক উপদেষ্টা। তিনি বলেন, বর্তমানে সাড়ে ৪ লাখ মতো ড্রাইভিং লাইসেন্স পেন্ডিং আছে। এগুলো দ্রুত শেষ করতে হবে। এছাড়া গাড়ি মালিকানা বদল আরেকটি জটিল প্রক্রিয়া।
অসুস্থ অবস্থায় গাড়ির মালিককে বিআরটিএ’র অফিসে আসতে হয়। এটা যেন না হয়। এগুলো আরও সহজ করতে হবে। প্রয়োজনে বিআরটিএ’র লোকজন গাড়ির মালিকের কাছে যাবে। যত দ্রুত সময়ের মধ্যে কাজ শেষ করতে হবে। বছরের পর বছর যেন পড়ে থাকতে না হয়।
মোটরসাইকেল দুর্ঘটনা নিয়ন্ত্রণে কঠোর নির্দেশনা ॥ সভায় মোটরসাইকেল দুর্ঘটনা নিয়ন্ত্রণ বিষয়ক সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে উপদেষ্টা মুহাম্মদ ফাওজুল কবির খান বলেন, মোটরসাইকেল চালকদের তিন মাসের জন্য শিক্ষানবিশ হিসেবে ড্রাইভিং লাইসেন্স দেওয়া হয়। কিন্তু তারপর স্থায়ী লাইসেন্স নেয় না অনেকেই।
ফলে শিক্ষানবিশ ড্রাইভিং লাইসেন্স তিন মাস পর স্থগিত থাকবে এবং স্থায়ী লাইসেন্স না নিলে আইন অনুযায়ী ব্যবস্থা নেওয়া হবে। এ ছাড়া ছোট যানবাহন লাইসেন্স দেওয়ার ক্ষেত্রে স্থানীয় সরকার বিভাগের সিটি করপোরেশন ও পৌরসভায় ব্যবস্থা থাকবে এবং ব্যাটারি চালিত অটোরিক্সা নিয়ন্ত্রণে চার্জিং স্টেশনগুলো মনিটরিংয়ের নির্দেশনা দেওয়া হয় সভায়।