ঢাকা, বাংলাদেশ   রোববার ১২ জানুয়ারি ২০২৫, ২৮ পৌষ ১৪৩১

‘ব্র্যান্ডিং বাংলাদেশ’ শীর্ষক ওয়ার্ল্ড কনফারেন্স সিরিজের উদ্বোধন

শীঘ্রই নির্বাচনী রোডম্যাপ এসে যাবে ॥ পররাষ্ট্র উপদেষ্টা

কূটনৈতিক রিপোর্টার

প্রকাশিত: ২২:৪৭, ১১ জানুয়ারি ২০২৫

শীঘ্রই নির্বাচনী রোডম্যাপ এসে যাবে ॥ পররাষ্ট্র উপদেষ্টা

রাজধানীতে ‘ব্র্যান্ডিং বাংলাদেশ’ শীর্ষক অনুষ্ঠানে বক্তব্য রাখেন পররাষ্ট্র উপদেষ্টা মো. তৌাহিদ হোসেন

পররাষ্ট্র উপদেষ্টা মো. তৌহিদ হোসেন বলেছেন, বিদেশে প্রবাসীদের রাজনৈতিক বিভেদে দেশের সুনাম ক্ষুণœ হচ্ছে। এ থেকে বেরিয়ে এসে প্রবাসীদের সেই দেশের স্থানীয় রাজনীতিতে জড়িত হতে হবে। তা হলেই বাংলাদেশকে ব্র্যান্ডিং করা সম্ভব হবে। ভারত বহির্বিশ্বে এগিয়ে গেছে কারণ তাদের প্রবাসীদের মধ্যে রাজনৈতিক বিভাজন নেই। দেশটির প্রধানমন্ত্রী বিদেশে গেলে বিরোধী রাজনৈতিক মতাদর্শের অনুসারীরা দুয়োধ্বনি দেয় না। যেটা আমাদের ক্ষেত্রে ঘটে থাকে।   
শনিবার রাজধানীর প্যান প্যাসিফিক সোনারগাঁও হোটেলে এক অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এ কথা বলেন। বছরব্যাপী বিশ্বের বিভিন্ন দেশে প্রবাসীদের নিয়ে ‘ব্র্যান্ডিং বাংলাদেশ’ শীর্ষক ‘ওয়ার্ল্ড কনফারেন্স সিরিজ-২০২৫’ উদ্বোধনী ও ব্যাংক রেমিটেন্স অ্যাওয়ার্ড অনুষ্ঠানের আয়োজন করে সেন্টার ফর নন রেসিডেন্স বাংলাদেশী।
তৌহিদ হোসেন বলেন, যত দ্রুত সম্ভব নির্বাচিত সরকারের কাছে ক্ষমতা হস্তান্তরে কাজ করছে সরকার। তিনি বলেন, রাজনৈতিক পরিস্থিতি নিয়ে একটা অনিশ্চয়তা চলে আসছে। আশা করি, দ্রুত সময়ে নির্বাচনী রোডম্যাপ এসে যাবে। এটা হলে বিনিয়োগকারীরা নিরাপদ বোধ করবেন, তখন বিনিয়োগ আসবে। এই অনিশ্চয়তা থেকে খুব শীঘ্রই দেশ মুক্ত হবে বলে তিনি আশা প্রকাশ করেন।
পররাষ্ট্র উপদেষ্টা বলেন, আমি প্রথমে বাংলাদেশের ব্র্যান্ডিংয়ের বিষয়ে বলব। আমাদের পজিটিভ ইমেজ বাড়াতে হবে। ইমেজ একদিনে সৃষ্টি হয়  না। দীর্ঘ সময়ে গড়ে তুলতে হয়। আমাদের শান্তিরক্ষীরা আফ্রিকায় আমাদের বিশাল ইমেজ গড়ে তুলেছেন। এসব পজিটিভ ইমেজ। আবার ভূমধ্যসাগর পাড়ি দিলে আমাদের ইমেজ ক্ষুণœ হয়।
উপদেষ্টা বলেন, আওয়ামী লীগ, বিএনপি পৃথিবীর মধ্যে সবচেয়ে বড় দল। বিশ্বের সব দেশে তাদের শাখা পাবেন। প্রবাসে এই রাজনৈতিক বিভেদ ইমেজ ক্ষতি করছে। ভারতের দিকে তাকান। তাদের প্রবাসে এমন দল নেই। এ থেকে বেরোতে হবে। আমাদের প্রবাসীদের সেই দেশের স্থানীয় রাজনীতিতে জড়িত হতে হবে। এটাই আমাদের ব্র্যান্ডিংয়ের আসল রাস্তা। 
বিদেশে বাংলাদেশের বিরুদ্ধে এখন অপপ্রচার চালানো হচ্ছে। ভারতীয় মিডিয়া সংখ্যালঘুদের নিয়ে এই মিথ্যা প্রচার চালাচ্ছে। এ বিষয়ে প্রবাসীদের সঠিক ভূমিকা পালন করতে হবে। তিনি বলেন, প্রবাসীরা বিমানবন্দরে হয়রানি যেন না হয়, এটা দেখতে হবে। বিমানবন্দরে সম্প্রতি একজন প্রবাসীকে হয়রানি করা হয়েছে। এ ঘটনায় দোষীদের শাস্তি যেন হয়।
অনুষ্ঠানে লন্ডনের টাওয়ার হ্যামলেটের স্পিকার ব্যারিস্টার সাইফ উদ্দিন খালেদ বলেন, বাংলাদেশে আমাদের রক্তঋণ আছে। এখানে আঘাত হলে, লন্ডনেও আমরা গর্জে উঠি। আপনাদের যখন কিছুতে আঘাত লাগে, আমাদেরও আঘাত লাগে। আপনাদের দুঃখে আমাদেরও বুক ভেসে ওঠে। আমরা সব সময় আপনাদের পাশে আছি।
অনুষ্ঠানে বাংলাদেশ ব্যাংক গভর্নর ড. আহসান এইচ মনসুর বলেন, সুশাসনের জন্য বর্তমানে বিদেশে অর্র্থ পাচার কমেছে। এই কারণেই বিদেশী মুদ্রার রিজার্ভ বাড়ছে। তিনি আরও বলেন, আমাদের দুর্বলতা অনেকাংশেই কাটিয়ে উঠেছি। রেমিটেন্স গত ছয় মাসে গড়ে ২৬ শতাংশ  করে আছে। ছয় মাসে তিন বিলিয়ন ডলার। রপ্তানি ২ দশমিক ৫ বিলিয়ন ডলার। আমরা একটি ভালো পরিবেশ তৈরির চেষ্টা করছি।
গভর্নর আরও বলেন, বিদেশে কর্মরতদের আওয়ামী লীগ, বিএনপি ও জামায়াতের নয় একত্রে প্রবাসীদের হয়ে কাজ করতে হবে। ভারতীয়দের মধ্যে রাজনৈতিক বিভাজন থাকলেও বিদেশে প্রধানমন্ত্রীসহ অন্যান্য গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তির সফরের সময় ব্যানার নিয়ে দাঁড়িয়ে যায় না। তারা একে অপরকে বিরুদ্ধে মিটিং মিছিল করে না। যদিও তাদের মধ্যে রাজনৈতিক বিভাজন রয়েছে।

ভারতীয়দের মধ্যে  ইহুদিরাও বহির্বিশ্বের কাছে এগিয়ে গেছে। ব্যাঙ্কার অ্যাসোসিয়েশন সভাপতি আব্দুল হাই সরকার বলেন, অনেক সময় দেখি বিদেশে প্রবাসীরা ঝগড়া-বিবাদ করে। এটা খুব খারাপ। এ থেকে বেরিয়ে আসতে হবে। আমাদের কর্মীদের দক্ষতা আরও বাড়াতে হবে।
জাতিসংঘ শান্তিরক্ষী ফোর্সের সাবেক কমান্ডার মে. জেনারেল ফজলে এলাহী আকবর (অব) বলেন, সেনাবাহিনী বিদেশে বাংলাদেশকে ব্র্যান্ডিং করেছে। এর পেছনে অন্যতম কারণ তারা খুব সুশৃঙ্খল বাহিনী। এ ছাড়া তাদের নামে কোনো যৌন হয়রানির অভিযোগ নেই। দেশের বাণিজ্য বাড়াতে শান্তি মিশনরক্ষীদের সম্পৃক্ততা করা যেতে পারে। 
রেমিটেন্স বিশেষজ্ঞ ও বিশিষ্ট ব্যাঙ্কার আব্দুল মান্নান বলেন, রেমিটেন্স যোদ্ধারা বাংলাদেশকে বিশ্বে চিনিয়েছেন। তাদের আমাদের মূল্যায়ন করতে হবে। রেমিটেন্সকে শুধু টাকার অঙ্কে দেখা উচিত নয়। এটাকে আরও গভীরভাবে দেখতে হবে। 
অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন এনআরবি চেয়ারপারসন এমএস সেকিল চৌধুরী। সভাপতির বক্তব্যে তিনি বলেন, বহির্বিশ্বে ব্র্যান্ডিংয়ের জন্য কূটনীতিক মিশনগুলোকে আরও সচেষ্ট ভূমিকা রাখতে হবে। এখন পর্যন্ত বাংলাদেশের মিশনগুলোর প্রতিনিধিদের কেউ কেউ বাংলাদেশকে তুলে ধরতে আপ্রাণ চেষ্টা করছে না বলেও মন্তব্য করেন তিনি।

×